Prothomalo:
2025-07-01@18:39:24 GMT

ছোট বোনের শ্বশুরবাড়ি

Published: 17th, May 2025 GMT

অনেক বছর ধরে যাব যাব করেও যাওয়া হয়নি। আসলে অপেক্ষা করছিলাম পদ্মা সেতুর জন্য। শেষ পর্যন্ত যাওয়া হলো গত ২ এপ্রিল। আমরা উত্তরার বাসা থেকে রওনা করলাম সকাল ৮টা ২০ মিনিটে। গাড়িতে আমার পরিবার, সঙ্গে মা। যাচ্ছি শরীয়তপুর সদর উপজেলার বুড়িরহাটের মুন্সিবাড়ি। আমার ছোট বোনের শ্বশুরবাড়ি।

রাস্তাঘাটে লোকজন তেমন নেই। চারপাশে মুগ্ধ করার মতো পরিবেশ। আমরা যাচ্ছি আর গল্প করছি। ইচ্ছা হলে ছবি তুলছি। ভিডিও করছি।

১১টা ১০–এ আমরা মুন্সিবাড়ির গেটে পৌঁছে গেলাম। মস্ত বড় গেট পার হয়ে আমাদের গাড়ি বাড়ির ভেতরে চলে গেল। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিল আমার ছোট বোনের জামাই রাজু, ভাগনে মাহিদ, আরও কেউ কেউ। বাড়ির গেট খুললেই চোখে পড়ল কাঠের একটা পুরোনো দোতলা কাছারিঘর।

পাকিস্তান আমলে আমার বোনের দাদাশ্বশুর ছিলেন এখানকার চেয়ারম্যান। তখন চেয়ারম্যানকে বলা হতো প্রেসিডেন্ট। তিনি এই ঘরে বসে কাজকর্ম করতেন। বিচার–সালিস করতেন। ভারতের আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।

কাছারিঘরের দুই পাশ দিয়ে দুটি রাস্তা চলে গেছে বাড়ির ভেতর। আমরা বাঁ দিকের রাস্তা দিয়ে ঢুকলাম। ভেতরে কাঠের গেট পেরোলেই পুরোনো সব ঘর। বাড়িটিতে বড় বড় প্রায় ১০টি এ রকম ঘর আছে। একটা ঘরের ভেতর অনেকগুলো কক্ষ।

আমরা ভেতরে চলে গেলাম। আমাদের জন্য ফুল ও মিষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির সবাই । একে একে আমাদের ফুল দিয়ে বরণ করা হলো। মিষ্টিমুখ করানো হলো সবাইকে। আমরাও সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করলাম। তারপর নানা রকম মিষ্টি, পায়েস, ফলমূল দিয়ে নাশতার আয়োজন। গাছ থেকে ডাব পাড়া হলো। জম্পেশ নাশতার পর আমরা বেরিয়ে পড়লাম বাড়িটা একটু ঘুরে দেখার জন্য।

বাড়ির দুই পাশে দুটো পুকুর, ঘাট বাঁধানো। পুকুরের পাশেই বারবিকিউ করার জায়গা। জানলাম পুকুরঘাটে বিকেলবেলা বসে সবাই গল্প করে। আমার ছেলেমেয়েরা তো গিয়েই পুকুরে নেমে গেল। আমিও আর বাধা দিলাম না।

এ বাড়িটা মূলত আমার বোনের চার দাদাশ্বশুরের। তাঁরা কেউ দেশে থাকতেন, কেউ বিদেশে। তাঁদের ছেলেপুলেরা আছেন। তাঁরাও অনেকে দেশের বাইরে থাকেন। বেশির ভাগই থাকেন ঢাকায়। শত ব্যস্ততার মধ্যেও নানা উপলক্ষে বাড়িতে গিয়ে সময় কাটান তাঁরা। আমার ছোট বোনের ভাশুর সুফি ভাই আর চাচাশ্বশুর বাবু চাচা দুজনে মিলে এ বাড়ির সবকিছু দেখভাল করেন।

এ বাড়িতে আমরা যা–ই দেখছিলাম, তাতেই মুগ্ধ হচ্ছিলাম। আমার বোনের ভাশুর বাজারে গিয়ে প্রতিদিন নানা রকম মাছ, সবজি, ফলমূল আর বাচ্চাদের খাবার কিনে আনছিলেন। আর তাঁদের পুকুরের মাছ তো ছিলই। আমরা যাওয়ার পর ঢাকা থেকে আমার বোনের চাচিশাশুড়ি, ওনার বোন, আরও দুজন চাচাতো ভাই আমাদের সঙ্গে যুক্ত হন়। বাড়িতে আগে থেকেই আত্মীয়স্বজন ছিল। সব মিলে ৩০–৩৫ জন প্রতি বেলায় একসঙ্গে খাবার খেয়েছি।

এ বাড়ির নিয়মই হচ্ছে এক ঘরে মেহমান এলে পাশের চাচিরাও তখন একসঙ্গে হয়ে যান। সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমি, আমার স্বামী, বোনের ছেলেমেয়ে চলে গেলাম একটা ইজিবাইক ভাড়া করে এলাকাটা ঘুরে দেখতে। অটোওয়ালা আমাদের নিয়ে গেল একটা বড় দিঘির পাশে। সেখান বিভিন্ন খাবারের দোকান। ওখানে নেমে আমরা অনেক ছবি তুললাম। সবুজে ঘেরা চারদিকটা ভালো লাগছিল।

ওখান থেকে ফিরে এসে দেখি, দুটি খাসি জবাই করার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। দুপুরের মধ্যে এলেন আরও আত্মীয়স্বজন। রাতের খাবার খেলাম প্রায় ১০০ জন। সেদিন সন্ধ্যায় আমাদের দাওয়াত ছিল বাবু চাচার বাড়িতে। সেখানে গিয়ে দেখি, তাঁর অনেক বন্ধুবান্ধব এসেছেন। উনি বারবিকিউর আয়োজন করলেন। বাচ্চারা খুব হইহুল্লোড় করল।

এই বাড়ির চারপাশে অনেক হিন্দু বসতি। সেখানে চলছিল বাসন্তীপূজা। পূজামণ্ডপের গানবাজনার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। এখানকার মানুষের সম্প্রীতি দেখে মুগ্ধ হলাম।

চারদিকে আজ যেখানে ভাঙনের সুর, সেখানে শরীয়তপুরের বুড়িরহাটের এই মুন্সিবাড়ির সদস্যরা তাঁদের একতা দিয়ে পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন, যা দেখে আমি অনেক কিছু শিখলাম।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র ব ন র র জন য আম র ছ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

বিয়ের শর্তে জামিন: মামলা ও দাম্পত্য একসঙ্গে চলে না

জীবন্ত মানবসত্তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে মর্মান্তিক অপরাধ সম্ভবত ধর্ষণ। এই শব্দ যে পরিমাণ নেতিবাচকতা ছড়ায় তা বোধ হয় অন্য কিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয়। ক্রিমিনাল জুরিসপ্রুডেন্সের ফিলোসফিক্যাল (দার্শনিক) ও থিওরিটিক্যাল (তাত্ত্বিক) ফ্রেমওয়ার্ক মেনে অপরাধের মাত্রা বিবেচনায় মোটা দাগে দুটি বিভাজন দেখা যায়। এক. কম্পাউন্ডেবল অফেন্স বা আপসযোগ্য অপরাধ এবং দুই. নন কম্পাউন্ডেবল অফেন্স বা আপস অযোগ্য অপরাধ। ধর্ষণ কোনো সাধারণ বা স্বাভাবিক অপরাধ নয় আর যে কারণে এই অপরাধের বিচার করার জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ আইনের, যা সাধারণ পেনাল ল’র মতো নয়।

সম্প্রতি আলোচিত এক গায়ক ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। অভিযোগকারী নারীকে বাসায় আটকে রেখে মাসের পর মাস এই ধর্ষণ করা হয়েছে বলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ রকম ঘটনা এই প্রথম নয়; তার আগেও স্ত্রী ওই গায়কের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেছিলেন (এই বিবেচনায় আলোচিত ব্যক্তি সম্ভবত একজন ‘হ্যাবিচুয়াল অফেন্ডার’ বা অভ্যাসগত অপরাধী)।

যাই হোক, অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ ওই গায়ককে গ্রেপ্তার করে। অভিযোগকারীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এবং বিচারকের নির্দেশে অভিযোগকারীর সঙ্গে আটক অবস্থায় কেরানীগঞ্জ কারাগারে গায়কের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।

ধর্ষণ নিঃসন্দেহে পুরুষের যৌন নির্যাতনের হাতিয়ার। এই মর্মান্তিক অপরাধের সঙ্গে নারীকে দমনের ইচ্ছা যুক্ত রয়েছে এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে সেটা করা হয়। এ রকম একজন নির্যাতক, দমন–পীড়নকারীর সঙ্গে বিয়ের মতো ‘পবিত্র’ বন্ধনের জন্য ভুক্তভোগী বাধ্য হচ্ছে; অথচ ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড।

এই গায়কের ঘটনার আগেও একইরকমভাবে বিয়ের আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। এসব ক্ষেত্রে আসামির পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয় যে জামিন দেওয়া হলেও মামলা তো প্রত্যাহার হয়নি। কিন্তু এটা নির্বোধের ভাবনা যে এ ধরনের বিয়ের পর মামলা ও দাম্পত্য সম্পর্ক উভয়ই একসঙ্গে চলবে। স্বাভাবিকভাবেই যেকোনো একটি বহাল থাকবে। তার চেয়ে বড় বিষয়, এ ধরনের বিয়েতে ভুক্তভোগীর স্বাভাবিক মর্যাদার বিষয়টি উপস্থিত থাকে না।

কারা অন্তরিণ অবস্থায় ধর্ষণের আসামির সঙ্গে ভুক্তভোগীর বিয়ের আদেশ আসলে কোন আইনি কাঠামোতে দেওয়া হয়ে থাকে, তা স্পষ্ট নয়। ভুক্তভোগীর ওপর সামাজিক চাপ ও বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বিচারকেরা এই আদেশ দিয়ে থাকেন। ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীরা তাঁদের ভবিষ্যৎ আরও ঝুঁকিপূর্ণ না করার চিন্তা থেকে অনেক সময় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়ে থাকেন।

অনেক ক্ষেত্রে আইন কাঠামোবদ্ধ রূপ পায় আদালতে আইনের চর্চা ও এর ব্যাখ্যার মধ্য দিয়ে। দীর্ঘ সময় ধরে আচরিত প্রথা আইনের মান্যতার অন্যতম উপাদান। কোর্টরুমে একজন আইনজীবী আইনের যে ধরনের ইন্টারপ্রিটেশন (ব্যাখ্যা) দেবেন এবং অপর দিকে উপস্থিত বিচারক আইনজীবীর ব্যাখ্যা কীভাবে গ্রহণ করবেন, সেটি প্রকৃতপক্ষে উভয়ের ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও মতাদর্শ দ্বারা দারুণভাবে প্রভাবিত হয়। সেই মতাদর্শ আবার তাদের রাজনৈতিক বিশ্বাস, আচরিত ধর্ম, লিঙ্গ পরিচয় ও সামাজিক ক্ষমতাকাঠামো সম্পর্কে বোধ–বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত। এখানে ‘ক্রিটিক্যাল রেস থিওরি’ আর প্রোথিত ইন্টারসেকশনালিটি (জন্মগত পরিচয় যখন কারও বঞ্চনা ও বৈষম্যের কারণ হয়) বিষয় নিয়ে জানা–বোঝা জরুরি, যার উপস্থিতি আমাদের বিচারক–আইনজীবীদের মধ্যে কতটা আছে সেটা বিবেচনায় রাখা দরকার।

ভারত ও বাংলাদেশে কাছাকাছি সামাজিক-সংস্কৃতির সমাজ ও আইনি কাঠামো বিরাজমান। সাম্প্রতিক ভারতেও এ ধরনের আটক অবস্থায় অভিযোগকারীর আবেদন কিংবা সামাজিক নানা চাপে ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ের শর্তে জামিন হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ‘ম্যারি ইয়োর রেপিস্ট ল’ নামে নতুন এক শব্দসমষ্টিরই সৃষ্টি হয়েছে। আর আমাদের দেশে ‘বিয়ের শর্তে জামিন’ এটিও একাধিকবার ঘটতে দেখা গেছে।

এর আগে উচ্চ আদালতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ ধরনের একটি মামলায় বিয়ের শর্তে জামিন মঞ্জুর করলে তা নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা হয় (তখন একইরকম কিছু মামলায় এই শর্তে জামিন হয়)। সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বাধ্যতামূলক কার্যকারিতা বিবেচনায় নিয়ে জেলা পর্যায়ের বিচারিক আদালতেও একইরকম অনুশীলন দেখা যাচ্ছে। আদালত কর্তৃক এই চর্চার নির্বিচার ব্যবহার (বিয়ের শর্তে জামিন) ভবিষ্যতের অপরাধীদের দায়মুক্তির একটি উপায় হিসেবে দেখার সুযোগ রয়েছে, যা খুবই খারাপ একটা বার্তা দিচ্ছে।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ৯ ধারা অনুসারে, ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। মামলা প্রমাণিত হলে যেখানে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার কথা, সেখানে সেই ব্যক্তির সঙ্গে ভুক্তভোগীকে সংসার করতে হয়। অভিযুক্তের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে এমন ৮ জন ভুক্তভোগী ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো।

এই ভুক্তভোগীরা সংসার তো করতে পারেনইনি, উপরন্তু ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া সন্তানের স্বীকৃতি নিয়ে তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। একজন ভুক্তভোগী হত্যারও শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া আরও ৫ জন ভুক্তভোগী ও পরিবারগুলোর সঙ্গে প্রথম আলো কথা বলেছে, যাঁরা লোকলজ্জার ভয়ে নিজেরাই অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ের মাধ্যমে সমাধান চাইছেন।

যে কিশোরী ও তরুণীরা ধর্ষণের ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা ‘বিয়ে ছাড়া উপায় নেই’—এমন অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ের পরিণতি নির্যাতন, বিচ্ছেদ, মৃত্যু—প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে এ ধরনের বিয়ের ফলাফল নিয়ে একটা প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়।

এ বিষয়গুলো বুঝতে আলাপ করি একজন অতিরিক্ত জেলা জজের সঙ্গে। সেই আলাপে তিনি বলেন, নানা সামাজিক বিবেচনা মাথায় রেখে আদালতের এ ধরনের আদেশ আসলে ‘সোশ্যাল ডিমান্ড থিওরি’র (সামাজিক চাহিদা তত্ত্ব) প্রয়োগ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। তাঁর মতে, এই বিষয়ে ভালোভাবে গবেষণা করে আদালত তাঁর অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে পারেন। তবে এই বিয়ের শর্তে জামিন বিষয়টি স্বাভাবিকতা যেন না পায়, তাহলে পুরুষালি বলপ্রয়োগের কাছে পরাজিত হবে আইন ও ন্যায়বিচার।

এম এম খালেকুজ্জামান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী

মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তোমার শেষ চিঠি
  • বিয়ের শর্তে জামিন: মামলা ও দাম্পত্য একসঙ্গে চলে না
  • তবে কি এ আর রাহমান-জে হোপকে একসঙ্গে দেখা যাবে
  • বিটিএসের জে-হোপ আর রাহমান কি একসঙ্গে কাজ করবেন
  • সিডনিতে ‘উৎসব’–এ মেতেছেন প্রবাসীরা
  • আলকারাজের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন, রাদুকানু কী বললেন