২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আসামিদের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক লিভ টু আপিলের শুনানির জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ।

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ আজ সোমবার এ দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত ১৫ মে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ ২৬ মে পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ সোমবার লিভ টু আপিল দুটি শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় এক নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান। পরে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিভ টু আপিল শোনা হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি আজ আদালতে নেই। সে জন্য আগামীকাল শুনানির জন্য রেখেছেন আপিল বিভাগ।’

আরও পড়ুন২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: সব আসামি খালাস০১ ডিসেম্বর ২০২৪

দুই দশক আগে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা পৃথক মামলায় (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজার রায় বাতিল করে গত বছরের ১ ডিসেম্বর রায় দেন হাইকোর্ট।

আসামিদের ডেথ রেফারেন্স, আপিল, জেল আপিল ও বিবিধ আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেন। এই রায়ের ফলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিরা খালাস পান।

আরও পড়ুন২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা: নতুন করে তদন্তের জন্য মামলা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উচিত১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৭৯ পৃষ্ঠা করে পৃথক দুটি মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক লিভ টু আপিল করে। গত ১৩ মার্চ আবেদন দুটি আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। চেম্বার আদালত সেদিন আবেদন দুটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় আবেদন দুটি একসঙ্গে আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আসে।

আরও পড়ুন২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় দেখে, নির্দেশনা নিয়ে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত: অ্যাটর্নি জেনারেল০১ ডিসেম্বর ২০২৪

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। এতে ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলটির শতাধিক নেতা-কর্মী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ন ন র জন য আপ ল ব ভ গ র ড স ম বর ব চ রপত

এছাড়াও পড়ুন:

ইয়ামালের জন্মদিন: ১৮ বছরে ১৮ জাদুকরি মুহূর্ত

১৮ বছর বয়সে বেশির ভাগ ফুটবলারের পেশাদার ক্যারিয়ারই শুরু হয় না। লামিনে ইয়ামাল অবশ্য বেশির ভাগ ফুটবলারদের মধ্যে পড়েন না। আজ ১৩ জুলাই তাঁর ১৮ বছর পূর্ণ হলো। এরই মধ্যে বার্সেলোনা ও স্পেনের এই বিস্ময়বালক ইউরো জিতেছেন, লা লিগা জিতেছেন, চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল খেলেছেন, রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে হয়েছেন ফুটবলের দুনিয়ায় এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সেনসেশন।

বিস্ময়কর হলেও এটাই সত্যি—লিওনেল মেসি বা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মতো কিংবদন্তিরাও ১৮ বছর বয়সে এতটা উজ্জ্বল ছিলেন না। এর মানে এই নয় যে ইয়ামাল নিশ্চিতভাবেই একসময় তাঁদের ছাপিয়ে যাবেন। কিন্তু যদি তিনি এভাবেই উন্নতি করতে থাকেন, তাহলে সেই সম্ভাবনা খুবই খুবই বেশি।

একজন প্রতিভাবান তরুণ থেকে ফুটবলবিশ্বের মহাতারকা হয়ে ওঠার পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিনয়ী থাকা, মাটিতে পা রাখা এবং নানান প্রলোভন এড়িয়ে চলা। এখন পর্যন্ত ইয়ামাল সেই পথেই আছেন।

১৮তম জন্মদিনে চলুন দেখা যাক, তাঁর ক্যারিয়ারের ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, যা তাঁকে আজকের ইয়ামাল বানিয়েছে।

১. মেসির সংস্পর্শে আসা

একদিন ইয়ামাল মেসির উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচিত হবেন, এটা যেন নিয়তির লেখা ছিল। নইলে কি আর পাঁচ মাস বয়সেই ইয়ামাল সুযোগ পেয়ে যান মেসির সংস্পর্শে আসার! ২০০৭ সালে বার্সেলোনা ও ইউনিসেফের একটি দাতব্য ক্যালেন্ডারের জন্য শিশু ইয়ামালকে জুটিবদ্ধ করা হয়েছিল মেসির সঙ্গে। প্রতি মাসে বার্সেলোনার একজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে কাতালুনিয়ার একটা শিশুর ছবি তুলে ক্যালেন্ডারের জন্য বাছাই করা হতো। শিশুটিকে নির্বাচিত করা হতো লটারির মাধ্যমে। ওই বছরের ক্যালেন্ডারে জানুয়ারি মাসের ছবিতে দেখা যায়, বার্সায় ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের মেসি গোসল করাচ্ছেন ৫ মাস বয়সী ইয়ামালকে। আর ইয়ামালের মা পাশে দাঁড়িয়ে তা দেখছেন। সেই ছবি পরে ভাইরাল হয়ে যায় ২০২৪ ইউরোর সময়। সেই সময় ছবির ফটোগ্রাফার জোন মনফর্ট ইএসপিএনকে বলেন, ‘আগে আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করতাম না, কিন্তু এখন করি।’

২. ‘৩০৪’ নম্বরের প্রতি ভালোবাসা

প্রতিবার গোল করে হাতের আঙুল দিয়ে বাতাসে ৩০৪ নম্বর একেঁ উদ্‌যাপন করেন ইয়ামাল। এটি আসলে তাঁর জন্মস্থান রোকাফোন্ডা (বার্সেলোনার উত্তরেই মাতারো শহরের একটি এলাকা) এর পোস্টাল কোডের শেষ তিন অঙ্ক। সেই শহরের দেয়ালে দেয়ালে এখন ৩০৪ নম্বর লেখা। ইয়ামাল শুধু তাঁর শহরকে আলোচনায় আনেননি, হয়ে উঠেছেন তাঁর মতো অভিবাসীদের জন্য বড় এক প্রেরণাও। অভিবাসীদের পরবর্তী প্রজন্ম দেখছে, সীমা ডিঙিয়ে কী করা সম্ভব!

৩. তিন পতাকায় শিকড়কে মনে রাখা

বার্সার হয়ে অভিষেক হওয়ার পর থেকে ইয়ামালের বুটে প্রায়ই মরক্কো, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি এবং স্পেনের পতাকা দেখা যায়। তাঁর বাবা মুনির মরক্কোর এবং মা শেইলা ইকুয়েটোরিয়াল গিনির, তাঁর জন্ম স্পেনে। তিনটি শিকড়ই কখনো ভোলেননি ইয়ামাল। চাচাতো ভাই মোহাম্মদের সঙ্গেও তিনি খুব ঘনিষ্ঠ। মোহাম্মদ এখন তাঁর গাড়িচালক ও ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করেন। তাঁর দাদি ফাতিমা এখনো রোকাফোন্ডায় থাকেন, ইয়ামাল নিয়মিত খোঁজখবর নেন তাঁর। এ বছরের শুরুতে ইএসপিএনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইয়ামাল বলেছিলেন, ‘আমার মা-বাবার খুশি দেখার মতো আনন্দদায়ক কিছু আমার জীবনে আর নেই। দাদি যখন ফোন করে বলেন, তিনি কতটা ভালো আছেন, আমার কাছে সেটা অমূল্য মনে হয়।’

৪. বার্সেলোনার বাজি

২০১৪ সালে সি এফ লা তোরেতা থেকে ইয়ামালকে বার্সেলোনা নিয়ে গিয়েছিল শুধু একটা প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে—সেখানকার স্থানীয় একটি টুর্নামেন্টে বার্সা তাদের যুবদল পাঠাবে! বার্সা একাডেমির তখনকার পরিচালক জর্দি রৌরা পরে বলেন, ‘ওকে (ইয়ামাল) দেখে আমাদের মনে হয়েছিল, তার ওপর বাজি ধরা যায়।’

৫. বার্সেলোনার মূল দলে অভিষেক

২৯ এপ্রিল ২০২৩। রিয়াল বেতিসের বিপক্ষে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে ডাগআউটের ইলেকট্রনিক বোর্ডে দেখা গেল ৩০: ৪১। মানে ৩০ নম্বর জার্সির খেলোয়াড় গাভি মাঠের বাইরে চলে যাবেন, ঢুকবেন ৪১ নম্বর খেলোয়াড়—ইয়ামাল! ১৫ বছর ৯ মাস ১৬ দিন বয়সেই ইয়ামালের বার্সেলোনা মূল দলে অভিষেক হয়েছিল তখনকার কোচ জাভি হার্নান্দেজের অধীনে। ক্যাম্প ন্যুতে এখন পর্যন্ত ওই একটি ম্যাচই খেলার সুযোগ পেয়েছেন ইয়ামাল। কারণ, এর পরই স্টেডিয়াম সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে যায়।

৬. রেকর্ডের পর রেকর্ড

লা লিগায় বার্সার সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হওয়ার পর ইয়ামাল একের পর এক রেকর্ড ভাঙতেই থাকেন। লা লিগায় গোল করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়, স্পেনের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেক, সবচেয়ে কম বয়সে গোল, ইউরোতে সবচেয়ে কম বয়সে গোল, ইউরো ফাইনালে খেলা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়, ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে গোল করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়, বার্সার হয়ে ১০০টি ম্যাচ খেলা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে গোল করা সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়...এবং আরও অনেক!

৭. মেসির সঙ্গে তুলনা

বার্সার হয়ে অভিষেকের পর কিছুদিন ডান উইংয়ে খেলার জন্য ইয়ামালকে রাফিনিয়া ও উসমান দেম্বেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্তিতা করতে হয়েছে। পরে দেম্বেলে পিএসজিতে চলে যাওয়ায় এবং হেতাফের বিপক্ষে রাফিনিয়া লাল কার্ড পাওয়ার পর জাভি তাঁকে ডান উইংয়ে খেলানো শুরু করেন। এরপর তাঁকে সেখান থেকে সরানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর ডান দিক থেকে বাঁ পায়ে খেলা, গোল, অ্যাসিস্ট—মেসির সঙ্গে তুলনা অবধারিতভাবে চলেই আসে। এমনকি কোচ জাভিও বলে দেন, ‘মেসির ঝলক পাওয়া যায় ওর মধ্যে।’

৮.  ফ্রান্সের বিপক্ষে সেই গোল

২০২৪ ইউরোর সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে স্পেনের জয়ে এক দারুণ গোল করে ইয়ামাল বিশ্বমঞ্চে নিজের আগমনী বার্তা ঘোষণা করেন। দূরের কোণে বাঁ পায়ে নেওয়া বাঁকানো শট! ম্যাচের আগে ফ্রান্সের মিডফিল্ডার আন্দ্রিয়াঁ রাবিওঁ বলেছিলেন, নিজেকে প্রমাণ করার জন্য ইয়ামালের আরও অনেক কিছু করতে হবে। ইয়ামাল ম্যাচের আগে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে জবাব দেন—‘নীরবে কাজ করো। শুধু চেকমেট বলার সময় কথা বলো।’ ম্যাচ শেষে ফ্রান্সকে ইউরো থেকে ছিটকে দেওয়ার পর ইয়ামাল ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে রাবিওঁকে ইঙ্গিত করে বলেন—‘এখন কথা বলো।’ এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটাই শব্দ লেখেন—‘চেকমেট!’

৯. ইউরো জয়

ইয়ামালের ১৭তম জন্মদিনের পরদিন ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে ইউরো জেতে স্পেন। নকআউট পর্বে প্রতিটি ম্যাচেই ইয়ামাল গোল বা অ্যাসিস্ট করেন। জেতেন টুর্নামেন্টের সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কার।

১০. নতুন অস্ত্র: ট্রিভেলা পাস

গত ডিসেম্বরে মায়োর্কার বিপক্ষে রাফিনিয়ার গোলে ‘ট্রিভেলা’ পাস (বুটের বাইরের অংশ দিয়ে পাস) দিয়ে আলোচনায় চলে আসেন ইয়ামাল। আগেও টুকটাক এই কাজটা করার চেষ্টা করেছেন। তবে ২০২৪ ইউরোর পর বার্সা কোচ হানসি ফ্লিকের অধীনে ইয়ামাল নিজেকে শাণিয়ে এই পাসের মাস্টার হয়ে ওঠেন। এমনকি ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে এক ম্যাচে রাফিনিয়াকে ৪০ গজ দূর থেকেও ট্রিভেলা পাস দিয়েছেন ইয়ামাল।

২০২৪ ব্যালন ডি’অরে কোপা ট্রফি জেতেন ইয়ামাল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ