অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একদল শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান এবং রাত ১টা থেকে ১টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে সমাবেশ করেন। এতে সড়কের উভয় পাশে যানজট সৃষ্টি হয়।

সমাবেশে গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘যারা আওয়ামী লীগকে পরিশুদ্ধ করে আবারও বাংলার মাটিতে রাজনীতি করার অধিকার দিতে চান এবং তাঁদের সঙ্গে আঁতাত করার চেষ্টা করছেন, আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে জুলাইয়ের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবার লড়াই করব। আমাদের প্রায় দুই হাজার ভাই-বোন জীবন দিয়েছেন। আমরা বিপ্লবীরা যারা জীবিত আছি তাঁরা আবারও জীবন দেব, তবু আওয়ামী লীগকে কোনোদিন রাজনীতি করার অধিকার দেব না। কেউ যদি তাদের রাজনীতি করার অধিকার দিতে চান, তাহলে তার পরিণতিও স্বৈরাচার হাসিনার মতো হবে।’ 

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক মো.

মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার এই যৌক্তিক দাবিতে এত প্রহসন সহ্য করতে চাই না। আমরা দেখতে পাচ্ছি, এ দেশে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা হচ্ছে। যে আওয়ামী লীগের দোসররা ও প্রশাসন আমার ভাইয়ের বুকের ওপর পা রেখে গুলি চালিয়েছে, শিশুদেরকে হত্যা করেছে, আমাদের বোনদের বেধড়ক পিটিয়েছে; সে আওয়ামী লীগকে এ দেশের মাটিতে ঠাঁই দেওয়া হবে না, এই কথাই ফাইনাল।’

সমাপনী বক্তব্যে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার আহবায়ক আরিফুজ্জামান বলেন, ‘৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফয়সালা হয়ে গেছে, আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারবে কি পারবে না। আমাদের ভাই-বোনেরা জীবন দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করে দিয়ে গেছে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, আওয়ামী লীগ ফিরবে, তবে রাজনীতি করতে পারবে না; আওয়ামী লীগ ফিরবে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে, কাঠগড়ায় দাঁড়াতে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত দ ধ কর আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

প্যারাস্যুট দুর্ঘটনায় স্বপ্ন ভঙ্গ, ১৭ বছরে বিয়ে, অভিনেত্রী মাহির

সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের চাকা তাকে নিয়ে আসে অভিনয় জগতে। সাহসী দৃশ্যে অভিনয় করে লাইমলাইটে এসেছিলেন। ১৭ বছয় বয়সে বিয়ে করেন। গোপন রেখেছিলেন সন্তানের কথাও। বলছি, বলিউড অভিনেত্রী মাহি গিলের কথা।

১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে ভারতের চণ্ডীগড়ে জন্ম মাহি গিলের। তার আসল নাম রিম্পি কৌর গিল। পরে অবশ্য নাম বদলে ফেলেন। মাহির বাবা ছিলেন পাঞ্জাব সরকারের অর্থ দপ্তরের উপদেষ্টা। কলেজে শিক্ষকতা করতেন মাহির মা। বাবা-মা এবং দুই ভাইয়ের সঙ্গে চণ্ডীগড়ে মাহির বেড়ে ওঠা।

 

আরো পড়ুন:

কারগিল যুদ্ধে কীভাবে অংশ নিয়েছিলেন অভিনেতা নানা পাটেকর?

পাকিস্তানে ভারতের হামলা: তারকারা কী বলছেন?

চণ্ডীগড়ের স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করেন মাহি। তারপর সেখানকার কলেজ থেকে ইংরেজি, মনোবিদ্যা এবং সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। তাই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মাহি। কিন্তু তিন মাসের প্রশিক্ষণ পর্ব চলার সময় দুর্ঘটনার শিকার হন। প্রশিক্ষণ চলাকালীন প্যারাসুটের দড়ি ছিঁড়ে গুরুতর আহত হন। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন চিরতরে ভেঙে যায় তার।

 


সুস্থ হওয়ার পর নাটকে স্নাতকোত্তর করতে পাঞ্জাবের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন মাহি। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন বাদ দেন। শোনা যায়, মাহির মায়ের ইচ্ছা ছিল অভিনেত্রী হওয়ার। কিন্তু রক্ষণশীলতার চাপে তা হতে পারেননি। তাই মেয়ের মাধ্যমে নিজের স্বপ্নপূরণ করতে চেয়েছিলেন। ২০০৩ সালে পাঞ্জাবি ভাষার ‘হাওয়ায়েঁ’ সিনেমার মাধ্যমে অভিনয়জগতে পা রাখেন মাহি। নাটকের পাশাপাশি একাধিক পাঞ্জাবি ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেন। চার বছর পর বলিপাড়ায় ক্যারিয়ার শুরু করেন এই অভিনেত্রী।

 

২০০৭ সালে মুক্তি পায় মাহি অভিনীত ‘খোয়া খোয়া চাঁদ’ নামে হিন্দি সিনেমা। সুধীর মিশ্রা পরিচালিত এই সিনেমায় অভিনয় করেন সাইনি আহুজা, সোহা আলী খান। ক্যারিয়ারের প্রথম হিন্দি সিনেমায় খুবই ছোট চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। বলিপাড়ায় কানাঘুষা শোনা যায়, জন্মদিনের পার্টিতে মাহিকে নাচতে দেখে নায়িকাকে মনে ধরে বলিউডের জনপ্রিয় এক পরিচালকের। তার সিনেমায় মুখ্যচরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন সেই নির্মাতা। সেই পরিচালক আর কেউ নন, অনুরাগ কাশ্যপ।

 

২০০৯ সালে অনুরাগ নির্মিত ‘দেব. ডি’ সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। এই সিনেমায় অভয় দেওল, কলকি কোচলিনের পাশাপাশি মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন মাহি। এই সিনেমায় একাধিক সাহসী দৃশ্যে দেখা যায় তাকে। অভিনয়ের জন্য বহু পুরস্কারও পেয়েছেন মাহি। ‘দেব. ডি’ সিনেমায় অভিনয়ের পর মাহি একাধিক জায়গা থেকে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে শুরু করেন। কিন্তু প্রতি সিনেমায়ই সাহসী দৃশ্যে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতেন। এক সাক্ষাৎকারে মাহি জানিয়েছিলেন, তাকে চিত্রনাট্যের খসড়া দেওয়া হতো না। শুধু জানানো হতো, কিছু সাহসী দৃশ্যে তাকে অভিনয় করতে হবে।

 


সময়ে সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিতে মাহির প্রতিভা স্বীকৃতি পেতে শুরু করে। ২০১০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দাবাং’ সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পান মাহি। এতে আরবাজ খানের বিপরীতে দেখা যায় তাকে। তবে সেই চরিত্র নাকি তার ক্যারিয়ার ধ্বংস করে দিয়েছে।

 

“দেব.ডি’ সিনেমার পর প্রচুর প্রশংসা পাচ্ছিলাম। অনেক সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাবও পেয়েছিলাম। তবে ‘দাবাং’ সিনেমায় অভিনয় করার পর সব বদলে গেল। তারপর থেকেই প্রযোজকেরা আমাকে স্বল্পদৈর্ঘ্যের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিতে শুরু করেন। খুব খারাপ লেগেছিল। সেই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত বুঝতে পারছিলাম না।”

 

মাহির ক্যারিয়ার যখন থমকে যাচ্ছে, তখন পরিচালক তিগমাংশু ধুলিয়া তাকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘সাহেব বিবি আউর গ্যাংস্টার’ সিনেমা। মাহির দাবি, “এই ফ্র্যাঞ্চাইজিতে কাজ করে আমি গর্বিত। প্রথমে আমরা ভাবতেই পারিনি সিনেমাটি এত জনপ্রিয় হবে।” তারপর মাহির ক্যারিয়ারের গ্রাফ আবারো বদলে যেতে থাকে। তবে এই পরিচালকের সঙ্গে মাহির প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন চাউর হয়। যদিও তা অস্বীকার করেন মাহি। তা ছাড়া অভিনেতা রণদীপ হুদা, জিমি শেরগিলের সঙ্গে সম্পর্কের গুঞ্জন চাউর হয়েছিল। তবে এ নিয়ে নীরব ছিলেন এই অভিনেত্রী।

 

অভিনয় শুরুর আগেই বিয়ে করেন মাহি। মাত্র ১৭ বছর বয়েসে বিয়ে করেছিলেন এই অভিনেত্রী। যদিও এই বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। বিবাহবিচ্ছেদের মাধ্যমে এই সম্পর্কের ইতি টানেন। এক সাক্ষাৎকারে মাহি বলেছিলেন, “আমার প্রথম বিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। তখন ছোট ছিলাম। সবকিছু বোঝার মতো বয়স ছিল না। মতের অমিল হওয়ায় বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।”

 

২০১৯ সালে মাহি ঘোষণা দেন এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে লিভ-ইন সম্পর্কে রয়েছেন। তাদের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। ২০২৩ সালে জানা যায়, দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন মাহি। সেই ব্যবসায়ী প্রেমিককে বিয়ে করেছেন। তার স্বামীর নাম রবি কেশর। ‘ফিক্সার’ ওয়েব সিরিজে মাহির সঙ্গে অভিনয়ও করেন রবি। এরপর ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন মাহির স্বামী। তবে মাহি এখন অভিনয়ে ততটা সরব নন। তার অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা ‘নাম’। গত বছর মুক্তি পায় অজয় দেবগন অভিনীত এই সিনেমা।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ