সাংবাদিক ও উদ্ধারকর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল
Published: 25th, May 2025 GMT
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ২৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন স্থানীয় সাংবাদিক এবং একজন জ্যেষ্ঠ উদ্ধারকর্মী রয়েছেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দক্ষিণে খান ইউনিস, উত্তরে জাবালিয়া এবং মধ্য গাজা উপত্যকার নুসাইরাত-এ পৃথক ইসরায়েলি হামলায় সর্বশেষ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
রবিবার সকালে স্থানীয় সাংবাদিক হাসান মাজদি আবু ওয়ার্দার বাড়িতে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে হাসান ও তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হয়েছেন।
চিকিৎসকরা আরো জানিয়েছেন, নুসাইরাত-এ আরেকটি বিমান হামলায় ভূখণ্ডের বেসামরিক জরুরি পরিষেবার একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আশরাফ আবু নার এবং তার স্ত্রী তাদের বাড়িতেই নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
হামাস পরিচালিত গাজা সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, আবু ওয়ার্দার মৃত্যুর ফলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নিহত ফিলিস্তিনি সাংবাদিকের সংখ্যা ২২০ জনে দাঁড়িয়েছে।
শুক্রবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা রাতভর গাজায় আরও হামলা চালিয়েছে, অস্ত্র সংরক্ষণের সুবিধা এবং রকেট লঞ্চার সহ ৭৫টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইব্রাহিমের হার না মানা ২৬ বছরের সংগ্রাম
তখনো ভোরের আলো ঠিক মতো ফোটেনি। মসজিদে ফজরের নামাজ শেষে একে একে বেরিয়ে পড়ছেন মুসল্লিরা। কেউ প্রাতঃভ্রমণ করছেন, কেউবা বাড়ির পানে চলেছেন ধীর পদক্ষেপে। কেউবা ছুটেছেন নিজ নিজ কাজে। এঁদেরই একজন মো. ইব্রাহিম। তিনিও ছুটেছেন নিজের গন্তব্যে।
এদের মধ্যে অনেকেই চলেছেন খবরের কাগজের স্টলের দিকে। গরম গরম তাজা খবর পেতে। নরসিংদীর ঘোড়াশালে এই তাজা খবর সরবরাহকারী ইব্রাহিম চঞ্চল গতিতে ততক্ষণে খবরের কাগজের গাইট নিয়ে হাজির হয়েছেন বিক্রি স্থলে। এখন হবে খবরের বিকিকিনি।
পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল বাজারে খুব সকালের নিয়মিত দৃশ্য ছিল এটি। একটানা গত ২৬ বছর ধরে প্রতিদিন এখানে পত্রিকা বিক্রি করে আসছেন ইব্রাহিম। সময় বদলেছে, সমাজ বদলেছে, মানুষের পাঠাভ্যাস বদলেছে কিন্তু বদলায়নি ইব্রাহিমের দায়িত্ববোধ, নিষ্ঠা, কঠোর পরিশ্রম আর পত্রিকা বিক্রির সংগ্রাম। হ্যা, আধুনিক ডিজিটাল যুগে পত্রিকা বিক্রি এক প্রকার সংগ্রামই বটে!
ইব্রাহিম কেবল একজন পত্রিকা বিক্রেতাই নন, তিনি একজন কুরআনের হাফেজও। শৈশবে গ্রামের মাদ্রাসায় কুরআন হিফজ করে শুরু হয়েছিল জীবন। পরিবারে অভাব-অনটনের হাত থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে গিয়ে হাতে তুলে নেন পত্রিকার ব্যাগ। সেই থেকেই শুরু হয় জীবন যুদ্ধের নতুন অধ্যায়।
একসময় হাজার কপিরও বেশি পত্রিকা বিক্রি হতো দিনে। দোকানদার, চাকরিজীবী, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি কিংবা সাধারণ পাঠক-সবাই অপেক্ষা করতেন খবরের কাগজের জন্য। ইব্রাহিমের টেবিল হয়ে উঠতো বাজারের তথ্য কেন্দ্র।
“আগে পত্রিকা মানেই ছিল মানুষের চোখের আলো, কানের শব্দ। সবাই জানার জন্য মুখিয়ে থাকতো। এখন মোবাইলে চোখ, খবর পড়ে না কেউ।” বলছিলেন ইব্রাহিম।
আজকের দিনে যেখানে কাগজের পত্রিকার বাজার ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে, সেখানে ইব্রাহিম এখনও সেই পুরোনো পথেই হেঁটে চলেছেন দৃঢ় চিত্তে।
তিনি বলেন, “আগে দৈনিক হাজার কপি বিক্রি করতাম, এখন ২০০ কপিও বিক্রি হয় না। তবুও কাজটা ছাড়িনি। এটা আমার রিজিক, এতে লজ্জা কিসের? আমি গর্ব করি এই কাজ নিয়ে। সারাদিন পত্রিকা বিক্রি শেষে সময় দেই কোরআন তিলাওয়াতে, নামাজে ও ধর্মীয় শিক্ষায়। জীবিকার জন্য ছোট কাজ বলে কিছু নেই। যদি তাতে থাকে ইমান, যদি থাকে সম্মান আর দায়িত্ববোধ, তাহলেই সেই কাজ হয়ে ওঠে ইবাদতের মতো।”
স্থানীয় বাসিন্দা আরিফুর ইসলাম বলেন, “তিনি একজন আলোকিত মানুষ, যিনি জীবিকার প্রয়োজনে হাতের কাজ বদলালেও হৃদয়ের ধর্মবিশ্বাস বদলাননি। তার জীবন যেন এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত-কীভাবে দ্বীন ও দুনিয়ার মাঝে ভারসাম্য রাখা যায়।”
বাজারের দোকানদার থেকে শুরু করে স্থানীয় লোকজন পর্যন্ত সবাই ইব্রাহিমকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। বাজারের এক পুরোনো ব্যবসায়ী পারভেজ বলেন, “উনি শুধু একজন পত্রিকা বিক্রেতা না, উনি আমাদের এলাকার গর্ব। যতটুকু আয় করেন, তাতেই সন্তুষ্ট। কখনো কারো কাছে হাত পাতেন না, খুব ইমানদার মানুষ।”
মিডিয়ার আলো থেকে বহু দূরে, কোনো খবরের হেডলাইন না হয়ে, ইব্রাহিম নিজের জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে লিখে যাচ্ছেন এক অসাধারণ সংগ্রামের গল্প। যিনি প্রমাণ করেছেন-সততা, পরিশ্রম ও আত্মমর্যাদা কখনো পুরোনো হয় না। সময় যতই বদলাক না কেন, এমন মানুষেরাই সমাজের মেরুদণ্ড হয়ে থাকেন।
ঢাকা/এস