গ্রীষ্মের খরতাপে প্রকৃতি যখন ক্লান্ত-শ্রান্ত, তখন কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) হয়ে উঠেছে বিচিত্র রঙের আলোকমালায় মোড়া এক প্রান্তর। এপ্রিল থেকে মে মাস জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি পথ, মোড়, ভবন আর চত্বরে ফুটে থাকে কৃষ্ণচূড়া, কনকচূড়া, জারুল, সোনালুসহ বৈচিত্রময় বাহারী ফুল।

কৃষ্ণচূড়ার আগুনরাঙা শাখা, কনকচূড়ার সোনালি মায়া, জারুলের বেগুনি বর্ণচ্ছটা আর সোনালুর ঝুলন্ত কণ্ঠরথ- সব মিলিয়ে এক অনবদ্য শোভা বর্ণিল করে তোলে প্রতিটি প্রভাত। ক্যাম্পাস জুড়ে ছড়িয়ে দেয় এক অনির্বচনীয় প্রশান্তি।

শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যাচ্ছেন, লাইব্রেরিতে পড়ছেন, হাঁটছেন বা বসে গল্প করছেন- এই বিচিত্র ফুলগুলো তাদের সঙ্গ দেয় নীরবে। বিষণ্ন দুপুরে, ক্লান্ত বিকেল বা একাকী সন্ধ্যা-রাতে এই ফুলগুলো হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের প্রেরণার উৎস, দর্শনার্থীদের বিস্ময় আর প্রকৃতির সঙ্গে তৈরি হয় এক গভীর আত্মিক বন্ধন।

আরো পড়ুন:

বরিশালে মেডিকেল ছাত্রের আত্মহত্যা, চিরকুট উদ্ধার

রাকসুর তফসিল ঘোষণাসহ ৯ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

রুক্ষ-শুষ্ক মৌসুমে রক্তিম ফুল কৃষ্ণচূড়া যেন জুলাই শহীদদের রক্তের প্রতিচ্ছবি। অদম্য সাহসের প্রতিধ্বনি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রশাসন ভবন, টিএসসিসির মূল ফটক, স্মৃতিসৌধ, রবীন্দ্র-নজরুল ও মীর মোশাররফ হোসেন ভবন, আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে। কৃষ্ণচূড়ার নরম ছায়া, ডালে দুলতে থাকা লাল তুলতুলে পাপড়ি আর হালকা বাতাস যেন গ্রীষ্মের ক্লান্তিতে এনে দেয় এক প্রশান্তি।

ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী ফখরুল ইসলাম বলেন, “কৃষ্ণচূড়া আমাদের ক্যাম্পাসের অন্যতম চিহ্ন। রঙে যেমন উজ্জ্বল, তেমনি প্রাণে উদ্দীপ্ত। এই ফুল শুধু প্রকৃতিকে নয়, আমাদের মনকেও রাঙিয়ে তোলে। শীতল পরশে আমাদের ক্লান্তি দূর করে নবউদ্যমে জাগিয়ে তোলে এই রক্তরাঙা ফুল।”

প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম রূপে সাজিয়ে তুলতে সোনালু ফুলের জুড়ি নেই। পরিবেশ ও প্রকৃতির শোভা বর্ধনে সোনালু দারুণ এক নিসর্গ মায়া এনে দিয়েছে। দীর্ঘ মঞ্জুরিতে ঝুলে থাকা পাঁচ পাঁপড়ি বিশিষ্ট সোনালু ফুলের থোকা অনেকটা অলংকারের মতো। সোনালু ফুলের অলংকারে ক্যাম্পাসের ডায়না চত্বরে নিয়মিতই অলংকৃত হচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ দর্শনার্থীরা। স্নিগ্ধ রঙ, সুশৃঙ্খল সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে নারী শিক্ষার্থীরা ফুলটি কানে ঝুলিয়ে রাখতে বেশ পছন্দ করেন। মাঝে মাঝে প্রেমিকরা ঠিক কবির ভাষায় প্রস্তাব দেয়- ‘ওগো মেয়ে ফুলেশ্বরী, ফুল নেবে কি ফুল?/হাতে দিও হলুদ গাঁদা, কানে গুঁজো সোনালু-দুল।’

আইন বিভাগের ছাত্রী তাসমিয়া বলেন, “সোনালু গাছের নিচে দাঁড়ালে মনে হয় যেন রূপকথার কোনো দরবারে দাঁড়িয়ে আছি।”

বেগুনি ও হালকা নীল রঙের জারুল ফুলগুলো যেন গ্রীষ্মের মাঝে এক শীতল বার্তা নিয়ে আসে। বেগুনি রঙের ফুল দেখে কিছুটা কোমলতা অনুভব করা যায়। এই ফুলে নেই কৃষ্ণচূড়ার উগ্রতা, নেই কনকচূড়ার দীপ্তি, তবু সে মন কাড়ে নিজের সৌম্য গাম্ভীর্যে। গাছগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ, লাইব্রেরি চত্বর, আবাসিক হলসহ জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে আছে শান্ত ও সমহিমায়।

আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিম বলেন, “হঠাৎ বৃষ্টিতে জারুল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগে। ফুলগুলো ভিজে গিয়ে অন্যরকম এক দৃশ্য সৃষ্টি করে। সেই দৃশ্য ক্যামেরায় নয়, মনে ধরে রাখি।”

সোনালি দিনের আহ্বানে কৃষ্ণচূড়ার সঙ্গে যেন গোপন প্রতিযোগিতা চলে কনকচূড়ার। দূর থেকে দেখলে হলুদ মনে হলেও কনকচূড়া ফুলের রঙ উজ্জ্বল কমলা আর সোনালীর মিশেল। হলুদাভ কমলা রঙের এই ফুলটি গ্রীষ্মের সূর্যের মতোই দীপ্ত, পাতা গাঢ় সবুজ, ফলের রঙ তামাটে।

সবমিলিয়ে ফুল ফুটলে এই গাছের সারিকে প্রাকৃতিক ক্যানভাস মনে হয়। যে ক্যানভাসে সবুজ, হলুদ আর তামাটে রঙের আধিক্য বেশি। গাঢ় সবুজ নিবিড় সন্নিবেশিত পাতার ওপর যখন হলুদ রঙের প্রলেপের মতো ফুলগুলোর প্রচুর প্রস্ফুটন ঘটে। তখন মনে হয় রোদ ঝলমলে গ্রীষ্মের দিনে রুক্ষ-তপ্ত শহরের বুকে কেউ শান্তির পরশ বুলিয়ে দিয়েছে।

ইংরেজি বিভাগের জাহিদ হাসান বলেন, “কনকচূড়ার দিকে তাকালে মনে হয় প্রকৃতি যেন নিজেই রঙ তুলিতে আকাশের নিচে ছবি এঁকে গেছে। এই ফুলগুলো গ্রীষ্মকেও সহনীয় করে তোলে। এর উজ্জল রঙে বিষণ্ন মনও প্রফুল্ল হয়ে ওঠে।”

উপাচার্য অধ্যাপক ড.

নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৫ একর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। যেখানে প্রতিটি ঋতুতে বাহারি ফুলের সমারোহ ক্যাম্পাসকে করে তোলে নয়নাভিরাম। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের শিক্ষার্থীসহ বাইরের দর্শনার্থীদেরও আকৃষ্ট করে, যা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।”

তিনি বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসকে আরো প্রাণবন্ত, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও শিক্ষাবান্ধব গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং ভবিষ্যতে আরো কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। এই সৌন্দর্য রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য সবার সহযোগিতা কাম্য।”

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কনকচ ড় র স ন দর য প রক ত আম দ র এই ফ ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ