জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম মূলতই স্বাধীনতার কবি ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেছেন, নজরুলের সৃষ্টিগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে, যে লেখাগুলো তিনি ব্রিটিশবিরোধী এই ভূখণ্ডের মানুষের স্বাধীনতার জন্য লিখেছিলেন। সেই একই লেখা চব্বিশ সালে এসে বাংলাদেশের তরুণেরা তাঁদের স্বাধীনতার জন্য ব্যবহার করেছেন। এটাই হচ্ছে শিল্পের শক্তি।’

কুমিল্লায় কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আজ রোববার বিকেলে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবার নজরুলের জন্মবার্ষিকী জাতীয়ভাবে কুমিল্লায় পালিত হচ্ছে। ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান, নজরুলের উত্তরাধিকার’ প্রতিপাদ্যে তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় রয়েছে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন।

অনুষ্ঠানে ফারুকী বলেন, ‘নজরুল কত বছর আগে লিখেছেন, তখন হয়তো জানতেনও না বাংলাদেশে একসময় ‘হাসিনাশাহি’ নামে একজন নাজিল হবে এবং তাঁকে তাড়ানোর জন্য বাংলাদেশের তরুণদের নজরুলের দ্বারস্থ হতে হবে। কিন্তু ঘটনাটা ঘটেছে। চব্বিশের আন্দোলনে দেয়ালে দেয়ালে দেখা গেছে নজরুলের কবিতা আর গান। নজরুল মূলতই ছিলেন স্বাধীনতার কবি।’

সার্বভৌমত্ব ছাড়া কোনো দেশেরই স্বাধীনতার সচল থাকতে পারে না উল্লেখ করে মোস্তফা সরয়ার বলেন, ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পরে আমরা অল্প কয়েক দিনের সরকার, এরপর গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার আসবে। বাংলাদেশকে আর এমন জায়গায় নেওয়া যাবে না, যখন অন্য একটি দেশ থেকে একজন পররাষ্ট্রসচিব এসে বলবে, “এই এরশাদ তোমাকে নির্বাচনে যেতে হবে। তুমি নির্বাচনে না গেলে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসবে” অথবা পাশের দেশ নিয়ে কোনো একটি স্ট্যাটাস দেওয়ার কারণে আমার দেশের কোনো আবরার মারা যাবে না—এই বিশ্বাস আমরা রাখতে চাই।’

জেলা শিল্পকলা একাডেমির আঙিনায় স্থাপিত ‘চেতনায় নজরুল’ ম্যুরালে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। পরে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনার যদি জুলাই মাসজুড়ে আন্দোলনের দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন নজরুল কীভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছিলেন। দেয়ালের লেখনীতে দেখবেন নজরুলের কবিতা-গান কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। নজরুলের স্মৃতিগুলো অনেক স্থানে এখনো অবহেলিত। আমরা স্মৃতি রক্ষা শুরু করি, কিন্তু স্মৃতি সংরক্ষণ করি না। এটি আমাদের খারাপ দিক। তবে আমাদের সুনজর রয়েছে। নজরুলের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য আমাদের চেষ্টা থাকবে।’

জাতীয় কবির জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে চারজনকে ‘নজরুল পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। আজ রোববার বিকেলে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ধ নত র অন ষ ঠ ন র শ ল পকল নজর ল র এক ড ম র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ