শারীরিক সমস্যা নিয়ে চিকিৎসার জন্য মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন ঘিওর উপজেলার তরা গ্রামের মো. লুৎফর রহমান (৪০)। চিকিৎসক তাঁকে রক্তের কয়েকটি পরীক্ষা দেন। তবে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসব পরীক্ষা বন্ধ। তাই হাসপাতালের সামনে বেসরকারি একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে বাড়তি অর্থ খরচ করে তিনি রক্ত পরীক্ষা করান।

বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রোগনির্ণয় কেন্দ্রের সামনে হুইলচেয়ারে বসে ছিলেন লুৎফর রহমান। কিছুক্ষণ পর পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে নিয়ে স্বামীর কাছে আসেন আসমা বেগম। এ সময় কথা হলে আসমা বলেন, এত বড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষা–নিরীক্ষা হয় না। বাইরে থেকে বেশি টাকা খরচ করে পরীক্ষা করাতে হয়েছে। হাসপাতালে পরীক্ষা করা গেলে বাইরে রোগী টানাহেঁচড়া করতে হয় না, টাকাও কম লাগে।

শুধু লুৎফর রহমানই নন, এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা সব রোগীর পরীক্ষা–নিরীক্ষার ক্ষেত্রে এখন বাইরের ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলোই ভরসা। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং ও প্যাথলজি বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে এক্স–রে ও রোগনির্ণয় বন্ধ থাকায় দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা প্রাপ্য সুযোগ–সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাড়তি অর্থ খরচ করে হাসপাতালের সামনে গড়ে ওঠা বেসরকারি ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলো থেকে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করতে হচ্ছে।

হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হলেও শুধু আলট্রাসনোগ্রাম হয়। এক্স–রে, সিটি স্ক্যান ও এমআরআই পরীক্ষাসহ সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ আছে। সেবা না পেয়ে রোগীরা ফিরে যান। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হন রোগীরা।

রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে অত্যাধুনিক তিনটি ডিজিটাল এক্স–রে যন্ত্র আছে। তবে ফিল্ম নেই। তাই এক্স–রে পরীক্ষা বন্ধ। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সিটি স্ক্যানও বন্ধ। এই বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো.

রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ৯০ রোগী এক্স–রে করতে আসেন। তবে ফিল্মের সংকটের কারণে গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এক্স–রে করা বন্ধ। সিটি স্ক্যান পরীক্ষা বন্ধ প্রায় দুই মাস ধরে। প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ জন সিটি স্ক্যান করতে আসেন।

এমআরআই যন্ত্র চালুই করা যায়নি

প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে তিন বছর আগে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি এমআরআই যন্ত্র স্থাপন করা হয়। পরীক্ষামূলকভাবে যন্ত্রটি চালু করা হলে গরম হয়ে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত যন্ত্রটি চালু করা যায়নি।
রেডিওলজি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে যন্ত্রটি সরবরাহ করে এসটিএমএস নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরের বছর যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়। ওই বছরের ৩ মার্চ ন্যাশনাল ইলেকট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের একটি কারিগরি দল এমআরআই যন্ত্রটি পর্যবেক্ষণ করে। তার পরের বছর ২০২২ সালের মার্চে পরীক্ষামূলকভাবে যন্ত্রটি চালু করা হয়। কিন্তু যন্ত্রটি অত্যধিক গরম হয়ে যাওয়ায় বিশেষজ্ঞ কারিগরি দল সেটি না চালানোর পরামর্শ দেয়। এখন পর্যন্ত আর যন্ত্রটি চালু হয়নি।

এসব বিষয়ে রেডিওলজি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক মো. আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এমআরআই ও সিটি স্ক্যান যন্ত্র সচল ও এক্স–রে ফিল্মের সরবরাহের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

বন্ধ প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষাও

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের রাসায়নিক রিএজেন্টসহ অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর দরপত্র খোলা হয় এবং চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে বাজারদরের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যের কারণে দরপত্র বাতিল করা হয়। পরে ১০ মার্চ আবার দরপত্র ডাকা হয়। এ নিয়ে দেরি হওয়ায় কিট ও রিএজেন্টের সংকট দেখা দেয়। হাসপাতালের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা বন্ধ আছে।

মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ ম ড ক ল র ড ওলজ র রহম ন দরপত র পর ক ষ এক স র

এছাড়াও পড়ুন:

বিদ্যুতে কিছু কমিয়ে, আমদানি বাড়িয়ে শিল্পে দেওয়া হবে বাড়তি গ্যাস

শিল্পে সংকট কাটিয়ে উঠতে এ খাতে বাড়তি ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেছেন, শিল্পে বাড়তি এই গ্যাস সরবরাহ করা হবে বাড়তি আমদানি ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যবহার কিছুটা কমিয়ে।

আজ বুধবার সচিবালয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান জ্বালানি উপদেষ্টা। ব্রিফিংকালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, জ্বালানি সচিব মো. সাইফুল ইসলাম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, নিট পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) প্রেসিডেন্ট আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী প্রমুখ।

শিল্প খাতে গ্যাস সংকট বাড়ায় বেশ কিছু দিন ধরে উদ্বেগ জানাচ্ছিলেন ব্যবসায়ীরা। তাঁরা গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির দাবি নিয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে যান।

বৈঠক শেষে ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের বলেন, শিল্পে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক. পবিত্র রমজান মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস এখন শিল্প খাতে দেওয়া হবে। দুই. মে থেকে আগস্ট—এই চার মাসে চার জাহাজ বাড়তি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হবে। এতে আরও ১০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে। সব মিলিয়ে শিল্পের জন্য ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

উপদেষ্টা জানান, বাড়তি এই গ্যাস বরাদ্দ দেওয়া হবে শিল্পঘন এলাকায়। কোথায় কোথায় গ্যাস দিতে হবে, তা ব্যবসায়ীরা ঠিক করে দেবেন। সে অনুযায়ী সরবরাহ বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে নজরদারি বাড়ানো হবে।

ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আজকের বৈঠকে শিল্পোদ্যোক্তারা আরেকটি কথা জানিয়েছেন, অবৈধ সংযোগের কারণে অনেক ক্ষেত্রে গ্যাস পাওয়া যায় না। অবৈধ গ্যাস–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে একটি যৌথ টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। দ্রুত অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাল্টা শুল্ক আরোপ করার কারণে শিল্পের প্রতি এই সরকার খুবই সংবেদনশীল ও সতর্ক বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, দেশীয় গ্যাস উৎপাদন প্রতিনিয়তই কমছে। এ কারণে এলএনজির আমদানি বাড়াতে হচ্ছে। আবার দেশে নতুন নতুন শিল্পকারখানাও গড়ে উঠছে। এর মধ্যেও সরকার শিল্প খাত থেকে গ্যাসের সরবরাহ কমায়নি।

বাড়তি গ্যাস আমদানি করলে ভর্তুকির চাপ বাড়বে কি না, বা গ্যাসের দামের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, চার জাহাজ এলএনজি আমদানির ফলে ১১ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি হবে। তবে শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হলে সেটির ক্ষতি হবে আরও বেশি। এ জন্য সরকার একটি ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘সরকার বেশি দামে গ্যাস এনে কম দামে সরবরাহ করছে; তবু জনস্বার্থ ও শিল্পের স্বার্থে সরকার গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করছে না।’

ভবিষ্যতে গ্যাসের সংকট হবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা সরকার দেবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘সরকার এমন গ্যারান্টি দিতে পারে না। এই সংকট বর্তমান সময়ে হয়নি। এটা আগে থেকে চলে আসছে। এটার সমাধান করতে হবে। আমরা স্বল্প মেয়াদে দায়িত্বে এসেছি। তবু চেষ্টা করছি।’

বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের সরবরাহ কমালে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘তখন আমরা তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশি চালাব। এখনো চালানো হচ্ছ। তখন আরও বেশি পরিমাণে চালানো হবে।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার রমজানে অগ্রাধিকার দিয়েছে বিদ্যুৎ ও সেচে। এখন অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে শিল্প খাতে।

দেশে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সরকার এই বছর ৫০টি কূপ অনুসন্ধান করার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী বছর ১০০টি কূপ অনুসন্ধান করা হবে। ভোলায় নতুন কূপ অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। পুরোনো কূপ সংস্কার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে ২ কোটি ৭০ লাখ ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে, যা ইতিমধ্যে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে।

সরকারের সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা সন্তুষ্ট কি না, জানতে চাইলে এ কে আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সমস্যাগুলো আমরা সময়ে–সময়ে উপদেষ্টাকে জানিয়েছি, পেট্রোবাংলাকে জানিয়েছি, তিতাসকে জানিয়েছি। তাঁরা জানেন। আজ উপদেষ্টা যে সমাধান দিয়েছেন, এতে আমরা সন্তুষ্ট। উনি যে ব্যাকআপ প্ল্যান দিয়েছেন, সেটি উনি বলেছেন। আমি মনে করি, এটা যদি অব্যাহত রাখতে পারেন, আশা করি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাকিস্তানের শেয়ারবাজারে রক্তপাত হলেও গতকাল দিনশেষে বাড়ল ভারতের সূচক
  • অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ: যশোরে ‘কাচ্ছি ভাই’সহ তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা
  • এবারের এপ্রিলে লোডশেডিং কেন কমল
  • দাম কমেছে, সিঙ্গাপুর থেকে আসছে দুই কার্গো এলএনজি
  • বিদ্যুতে কিছু কমিয়ে, আমদানি বাড়িয়ে শিল্পে দেওয়া হবে বাড়তি গ্যাস
  • দুই কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন
  • ২৫ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আমদানির অনুমোদন
  • চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উন্নয়নে দুই প্রকল্প অনুমোদন
  • দুই কার্গো এলএনজি ক্রয়ে অনুমোদন, ব্যয় ১১০৪ কোটি