মানিকগঞ্জ মেডিকেলে আলট্রাসনোগ্রাম ছাড়া আর কোনো পরীক্ষাই হয় না
Published: 9th, May 2025 GMT
শারীরিক সমস্যা নিয়ে চিকিৎসার জন্য মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন ঘিওর উপজেলার তরা গ্রামের মো. লুৎফর রহমান (৪০)। চিকিৎসক তাঁকে রক্তের কয়েকটি পরীক্ষা দেন। তবে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসব পরীক্ষা বন্ধ। তাই হাসপাতালের সামনে বেসরকারি একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে বাড়তি অর্থ খরচ করে তিনি রক্ত পরীক্ষা করান।
বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রোগনির্ণয় কেন্দ্রের সামনে হুইলচেয়ারে বসে ছিলেন লুৎফর রহমান। কিছুক্ষণ পর পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে নিয়ে স্বামীর কাছে আসেন আসমা বেগম। এ সময় কথা হলে আসমা বলেন, এত বড় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষা–নিরীক্ষা হয় না। বাইরে থেকে বেশি টাকা খরচ করে পরীক্ষা করাতে হয়েছে। হাসপাতালে পরীক্ষা করা গেলে বাইরে রোগী টানাহেঁচড়া করতে হয় না, টাকাও কম লাগে।
শুধু লুৎফর রহমানই নন, এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা সব রোগীর পরীক্ষা–নিরীক্ষার ক্ষেত্রে এখন বাইরের ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলোই ভরসা। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি ও ইমেজিং ও প্যাথলজি বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে এক্স–রে ও রোগনির্ণয় বন্ধ থাকায় দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীরা প্রাপ্য সুযোগ–সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বাড়তি অর্থ খরচ করে হাসপাতালের সামনে গড়ে ওঠা বেসরকারি ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলো থেকে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করতে হচ্ছে।
হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হলেও শুধু আলট্রাসনোগ্রাম হয়। এক্স–রে, সিটি স্ক্যান ও এমআরআই পরীক্ষাসহ সব ধরনের পরীক্ষা বন্ধ আছে। সেবা না পেয়ে রোগীরা ফিরে যান। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হন রোগীরা।
রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে অত্যাধুনিক তিনটি ডিজিটাল এক্স–রে যন্ত্র আছে। তবে ফিল্ম নেই। তাই এক্স–রে পরীক্ষা বন্ধ। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সিটি স্ক্যানও বন্ধ। এই বিভাগের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মো.
প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে তিন বছর আগে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি এমআরআই যন্ত্র স্থাপন করা হয়। পরীক্ষামূলকভাবে যন্ত্রটি চালু করা হলে গরম হয়ে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত যন্ত্রটি চালু করা যায়নি।
রেডিওলজি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে যন্ত্রটি সরবরাহ করে এসটিএমএস নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরের বছর যন্ত্রটি স্থাপন করা হয়। ওই বছরের ৩ মার্চ ন্যাশনাল ইলেকট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের একটি কারিগরি দল এমআরআই যন্ত্রটি পর্যবেক্ষণ করে। তার পরের বছর ২০২২ সালের মার্চে পরীক্ষামূলকভাবে যন্ত্রটি চালু করা হয়। কিন্তু যন্ত্রটি অত্যধিক গরম হয়ে যাওয়ায় বিশেষজ্ঞ কারিগরি দল সেটি না চালানোর পরামর্শ দেয়। এখন পর্যন্ত আর যন্ত্রটি চালু হয়নি।
এসব বিষয়ে রেডিওলজি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক মো. আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এমআরআই ও সিটি স্ক্যান যন্ত্র সচল ও এক্স–রে ফিল্মের সরবরাহের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
বন্ধ প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষাওহাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের রাসায়নিক রিএজেন্টসহ অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর দরপত্র খোলা হয় এবং চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে বাজারদরের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যের কারণে দরপত্র বাতিল করা হয়। পরে ১০ মার্চ আবার দরপত্র ডাকা হয়। এ নিয়ে দেরি হওয়ায় কিট ও রিএজেন্টের সংকট দেখা দেয়। হাসপাতালের প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা বন্ধ আছে।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ ম ড ক ল র ড ওলজ র রহম ন দরপত র পর ক ষ এক স র
এছাড়াও পড়ুন:
পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫-২০ টাকা, ডিমের দাম আগের মতো বাড়তি
আজ ছুটির দিনে রাজধানীর বাজারে ক্রেতার ভিড় চোখে পড়ার মতো। ব্যবসায়ীরাও বলছেন, আজ বাজারে ক্রেতাসমাগম ও বিক্রি দুটিই ভালো। তবে বাজারে পেঁয়াজ ও আদার ঝাঁজ বেড়েছে। ডিমের দাম গত সপ্তাহের মতো ডজনপ্রতি সব ধরনের ডিমে এখনো ১০ টাকা বাড়তি। দাম কমেনি ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির।
গত দুই থেকে তিন সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। পাশাপাশি বাজারে এখনো চড়া আছে সবজি ও কাঁচা মরিচের দাম। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ও কারওয়ান বাজারে এই চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঢাকায় আজ কেজিপ্রতি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল যা ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ, রসুন ও আদার পাইকারি ব্যবসায়ী বশির শেখ বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজের দাম বাড়তি। আগে এক পাল্লা (৫ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি করতাম ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা। এখন বিক্রি করছি ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকায়। এখনো বাজারে কৃষকের সংরক্ষিত পুরোনো পেঁয়াজ আসছে। তাই সরবরাহ কিছুটা কম। সে জন্য দামও কিছুটা বাড়তি। পরের মৌসুমে নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কমে যাবে।’
বাজারে ডিমের দাম উঠেছে ডজনপ্রতি ১৩০-১৪০ টাকা। গত সপ্তাহ থেকে ডজনপ্রতি এই দামেই বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারে পাইকারি দামে সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা ডজন ও লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। এর সঙ্গে ঢাকায় আজ প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তিন সপ্তাহ আগে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি। সপ্তাহ দুয়েক আগে এই মুরগির কেজি ছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। সেই হিসাবে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ২০ টাকা ও সোনালি মুরগি কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে।
খুচরা বিক্রেতা জানান, গতকালও মুরগির দাম কমেছিল। ব্রয়লার মুরগি ১৫০-১৬০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। তবে বিক্রি ভালো ছিল না। আজ ছুটির দিন হওয়ায় বাজারে ক্রেতার ভিড় বেশি থাকবে বলে পাইকারি বাজারে মুরগির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে পাইকাররা। এ কারণে বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে গত দুই থেকে তিন সপ্তাহ মৌসুমি বৃষ্টির কারণে সবজির দাম বেড়েছে। আজ রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে। তবে মৌসুমি বৃষ্টি শুরুর আগে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ কেনা যেত ৮০ থেকে ১২০ টাকায়। বিক্রেতারা জানান, বাজারে এখন দেশে উৎপাদিত কাঁচা মরিচের সরবরাহ কিছুটা কম। এই সুযোগে সরবরাহ বেড়েছে ভারত থেকে আমদানি করা কাঁচা মরিচের। এটিও মরিচের দাম বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির দামও আগের তুলনায় বেশি। করলা, কাঁকরোল, বেগুন, বরবটিসহ অধিকাংশ সবজির কেজি এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকার আশপাশে। দেশি টমেটো এখন পাওয়া যায় না বললেই চলে। এ কারণে আমদানি করা টমেটোর দাম বেশি, প্রতি কেজি ১৪০-১৫০ টাকা। তবে বেড়েছে বেগুনের দাম। গোল ও লম্বা আকৃতির বেগুনের দাম প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ আনিস বলেন, সব ধরনের সবজির দাম বৃষ্টির কারণে কিছুটা বেড়েছে। প্রতি কেজি সবজিভেদে ৫-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে সরবরাহ ভালো। বৃষ্টি থামলে শাকসবজির দাম হয়তো কিছুটা কমবে।
মাস দেড়েক আগে বাজারে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছিল। এখনো সে দামেই বাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে ডায়মন্ড, সাগর, মঞ্জুর প্রভৃতি ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল ৮০ টাকা ও মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের মিনিকেট ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।