চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বৈষম্যবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাচেষ্টা মামলার এক আসামি পালানোর ঘটনা ‘আড়াল’ করার অভিযোগ উঠেছে কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ঘটনার ২৫ দিন পার হলেও ওই বন্দী, মো. এমরানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।

কারাবিধি অনুযায়ী, বন্দী পালানোর ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে থানায় মামলা করতে হয় এবং নিকটস্থ থানা, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সুপারকে জানাতে হয়। কিন্তু ১ মে পালানোর ঘটনায় এসব কিছুই হয়নি। ঘটনার সময় বাজানো হয়নি অ্যালার্মও (পাগলা ঘণ্টা), যা কিনা বাধ্যতামূলক।

এর আগে ২০২১ সালে বন্দী পালানোর ঘটনায় মামলার পর আদালত সাজা দিয়েছিলেন। সর্বশেষ এপ্রিল মাসে আদালত থেকে দুই বন্দী পালানোর ঘটনায়ও মামলা হয়।

কীভাবে পালান এমরান

১ মে ভোরে নগরের বাকলিয়া থানার সেকান্দর চেয়ারম্যান ঘাট এলাকার বাসিন্দা মো.

এমরানকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে গত বছরের ২ আগস্ট রাহাত্তারপুল এলাকায় শিক্ষার্থী সুজানা আক্তারকে হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় এবং আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান।

সেদিন বিকেলে অন্য আসামিদের সঙ্গে এমরানকে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু নিচতলায় কারাধ্যক্ষ কার্যালয়ের পাশে থাকা শৌচাগারের জানালা ভেঙে তিনি বেরিয়ে পড়েন। পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে আবার নিচে নেমে মূল ফটক দিয়ে বেরিয়ে যান।

এর আগে ২০২১ সালে বন্দী পালানোর ঘটনায় মামলার পর আদালত সাজা দিয়েছিলেন। সর্বশেষ এপ্রিল মাসে আদালত থেকে দুই বন্দী পালানোর ঘটনায়ও মামলা হয়।

সেদিন ৩৪ জন আসামি আদালত থেকে কারাগারে গিয়েছিলেন। ওয়ার্ডে একজন কম থাকায় খোঁজ শুরু হয়। কারাগারের ভেতরে তাঁকে না পেয়ে বিষয়টি গোপন রাখা হয়। অ্যালার্মও বাজানো হয়নি।

রাত ১০টার দিকে কারা কর্তৃপক্ষ জানতে পারে এমরান বাড়িতে ফিরে গেছেন। পরে তাঁকে বাড়ি থেকে আটক করে পুনরায় কারাগারে পাঠানো হয়।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমরান পেশায় কাঠমিস্ত্রি। তাঁর দুই ছেলে ও স্ত্রী রয়েছে। কিন্তু তাঁদের বাসায় গিয়ে পাওয়া যায়নি। এমরান কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তবে মাদকাসক্ত ছিলেন। নেশার টাকার জন্য পরিবারের লোকজনকে মারধর করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় গ্রেপ্তারের আগে জিডিও করেছিলেন তাঁর মা।

আরও পড়ুনচট্টগ্রাম কারাগারে দুধ বিক্রি করছেন ডিআইজি প্রিজন৩০ জানুয়ারি ২০২৫

পুলিশ জানত না, শুরু হয়নি তদন্তও

এমরানের ভাই মো. ইরফান প্রথম আলোকে বলেন, ও (এমরান) পালিয়ে সোজা বাড়ি চলে আসে। পরে এলাকায় জানাজানি হলে পুলিশ ও কারাগারের লোকজন এসে ধরে নিয়ে যান।

তবে পুলিশ কেন তাঁকে আদালতে না নিয়ে সরাসরি কারাগারে ফেরত পাঠাল—জানতে চাইলে বাকলিয়া থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানায়নি কারা কর্তৃপক্ষ। আমাদের পুলিশও ছিল না।’

কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল করিম বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে কেউ আমাদের জানায়নি। থানায় কোনো মামলা হয়নি।’

বন্দী পালানোর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। নিয়ম অনুযায়ী মামলা না হলে ভবিষ্যতে পালানোর ঘটনা বাড়বে। শামসুল হায়দার সিদ্দিকী, সাবেক উপমহাপরিদর্শক, কারা অধিদপ্তর

ঘটনার ১০ দিন পর ১০ মে চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক টিপু সুলতান তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সদস্য হিসেবে রয়েছেন কক্সবাজারের জেল সুপার জাবেদ মেহেদী, বান্দরবানের জেলার নাশির আহমেদ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডেপুটি জেলার মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন।

কক্সবাজারের জেল সুপার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো চট্টগ্রাম কারাগারে গিয়ে কাজ শুরু করিনি।’

আগের ঘটনায় সাজা

২০২১ সালের ৬ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৬০ ফুট উঁচু দেয়াল টপকে পালিয়ে যান বন্দী ফরহাদ হোসেন। পরে নরসিংদী থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাঁর এক বছরের সাজা হয়।

গত এপ্রিলেও চট্টগ্রাম আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে পুলিশের হেফাজত থেকে পালিয়ে যান লোহাগাড়া থানার হত্যা মামলার আসামি ইকবাল হোসেন ও সীতাকুণ্ড থানার মাদক মামলার আসামি আনোয়ার হোসেন। দুজনের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে এবং তাঁরা এখন কারাগারে।

কারাগার থেকে বন্দী পালানোর ঘটনায় মামলা না করার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ মাসুদ হাসান বলেন, ‘কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ তবে কেন ফৌজদারি মামলা হয়নি—সে বিষয়ে কোনো উত্তর দেননি তিনি।

কারা অধিদপ্তরের সাবেক উপমহাপরিদর্শক শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, বন্দী পালানোর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। নিয়ম অনুযায়ী মামলা না হলে ভবিষ্যতে পালানোর ঘটনা বাড়বে।

আরও পড়ুনকারাগারে গরু পালনে সরকারি কর্মচারী ও অর্থ ব্যবহার করা যাবে না০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল ন র ঘটন য় অন য য় ঘটন র এমর ন

এছাড়াও পড়ুন:

এখন মাথাপিছু আয় ২৮২০ ডলার, যা যাবৎকালের রেকর্ড

বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন ২ হাজার ৮২০ মার্কিন ডলার। এই মাথাপিছু আয় এ যাবৎকালের রেকর্ড। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এ তথ্য দিয়েছে। গত অর্থবছরের চেয়ে মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৮২ ডলার। গত অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২৭৩৮ ডলার।

আজ মঙ্গলবার বিবিএস ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাথাপিছু আয়, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সাময়িক হিসাব দিয়েছে। সেখানে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৭৯৩ ডলার মাথাপিছু আয় হয়েছিল। এরপর ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাথাপিছু আয় ডলারের হিসাবে বাড়েনি।

মাথাপিছু আয় ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরীণ আয়ের পাশাপাশি প্রবাসী আয়সহ যত আয় হয়, তা একটি দেশের মোট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে এই হিসাব করা হয়।

বিবিএসের হিসাবে দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৯৩ ডলার। এরপর ২০২২-২৩ অর্থবছরের মাথাপিছু আয় কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৪৯ ডলারে। গত অর্থবছরে তা আরও কমে ২৭৩৮ ডলার হয়।

মূলত ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় বিবিএসের হিসাবে মাথাপিছু আয়ের পার্থক্য হয়। চলতি অর্থবছরের বিবিএসের মাথাপিছু আয় হিসাব করতে প্রতি ডলারের গড় বিনিময় হার ধরা হয়েছে ১২০ টাকা ২৯ পয়সা। গতবার এই বিনিময় হার ধরা হয়েছিল ১১১ টাকা ৬ পয়সা।

চলতি অর্থবছরে টাকার অঙ্কে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২২১ টাকা। গত অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪ হাজার ১০২ টাকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এখন মাথাপিছু আয় ২৮২০ ডলার, যা যাবৎকালের রেকর্ড
  • আদালতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়লেন পরীমনি, পেছাল মামলার শুনানি
  • ১২০ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য চুরি করার দাবি হ্যাকারের, সত্য না মিথ্যা
  • আদালতে অসুস্থ পরীমণি, পেছাল জেরা
  • গরমে অসুস্থ হয়ে আদালত ছাড়লেন পরীমনি, পেছাল জেরা
  • মারধর ও যৌন হয়রানির মামলায় সাক্ষ্য দিতে আদালতে পরীমণি
  • শ্লীলতাহানির মামলায় আদালতে পরীমনি