চট্টগ্রামে কারাগার থেকে বন্দী পালানোর ঘটনা ‘আড়ালের’চেষ্টা
Published: 26th, May 2025 GMT
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বৈষম্যবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাচেষ্টা মামলার এক আসামি পালানোর ঘটনা ‘আড়াল’ করার অভিযোগ উঠেছে কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ঘটনার ২৫ দিন পার হলেও ওই বন্দী, মো. এমরানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।
কারাবিধি অনুযায়ী, বন্দী পালানোর ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে থানায় মামলা করতে হয় এবং নিকটস্থ থানা, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সুপারকে জানাতে হয়। কিন্তু ১ মে পালানোর ঘটনায় এসব কিছুই হয়নি। ঘটনার সময় বাজানো হয়নি অ্যালার্মও (পাগলা ঘণ্টা), যা কিনা বাধ্যতামূলক।
এর আগে ২০২১ সালে বন্দী পালানোর ঘটনায় মামলার পর আদালত সাজা দিয়েছিলেন। সর্বশেষ এপ্রিল মাসে আদালত থেকে দুই বন্দী পালানোর ঘটনায়ও মামলা হয়।
কীভাবে পালান এমরান
১ মে ভোরে নগরের বাকলিয়া থানার সেকান্দর চেয়ারম্যান ঘাট এলাকার বাসিন্দা মো.
সেদিন বিকেলে অন্য আসামিদের সঙ্গে এমরানকে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু নিচতলায় কারাধ্যক্ষ কার্যালয়ের পাশে থাকা শৌচাগারের জানালা ভেঙে তিনি বেরিয়ে পড়েন। পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে আবার নিচে নেমে মূল ফটক দিয়ে বেরিয়ে যান।
এর আগে ২০২১ সালে বন্দী পালানোর ঘটনায় মামলার পর আদালত সাজা দিয়েছিলেন। সর্বশেষ এপ্রিল মাসে আদালত থেকে দুই বন্দী পালানোর ঘটনায়ও মামলা হয়।সেদিন ৩৪ জন আসামি আদালত থেকে কারাগারে গিয়েছিলেন। ওয়ার্ডে একজন কম থাকায় খোঁজ শুরু হয়। কারাগারের ভেতরে তাঁকে না পেয়ে বিষয়টি গোপন রাখা হয়। অ্যালার্মও বাজানো হয়নি।
রাত ১০টার দিকে কারা কর্তৃপক্ষ জানতে পারে এমরান বাড়িতে ফিরে গেছেন। পরে তাঁকে বাড়ি থেকে আটক করে পুনরায় কারাগারে পাঠানো হয়।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমরান পেশায় কাঠমিস্ত্রি। তাঁর দুই ছেলে ও স্ত্রী রয়েছে। কিন্তু তাঁদের বাসায় গিয়ে পাওয়া যায়নি। এমরান কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, তবে মাদকাসক্ত ছিলেন। নেশার টাকার জন্য পরিবারের লোকজনকে মারধর করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় গ্রেপ্তারের আগে জিডিও করেছিলেন তাঁর মা।
আরও পড়ুনচট্টগ্রাম কারাগারে দুধ বিক্রি করছেন ডিআইজি প্রিজন৩০ জানুয়ারি ২০২৫পুলিশ জানত না, শুরু হয়নি তদন্তও
এমরানের ভাই মো. ইরফান প্রথম আলোকে বলেন, ও (এমরান) পালিয়ে সোজা বাড়ি চলে আসে। পরে এলাকায় জানাজানি হলে পুলিশ ও কারাগারের লোকজন এসে ধরে নিয়ে যান।
তবে পুলিশ কেন তাঁকে আদালতে না নিয়ে সরাসরি কারাগারে ফেরত পাঠাল—জানতে চাইলে বাকলিয়া থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানায়নি কারা কর্তৃপক্ষ। আমাদের পুলিশও ছিল না।’
কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল করিম বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে কেউ আমাদের জানায়নি। থানায় কোনো মামলা হয়নি।’
বন্দী পালানোর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। নিয়ম অনুযায়ী মামলা না হলে ভবিষ্যতে পালানোর ঘটনা বাড়বে। শামসুল হায়দার সিদ্দিকী, সাবেক উপমহাপরিদর্শক, কারা অধিদপ্তরঘটনার ১০ দিন পর ১০ মে চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক টিপু সুলতান তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সদস্য হিসেবে রয়েছেন কক্সবাজারের জেল সুপার জাবেদ মেহেদী, বান্দরবানের জেলার নাশির আহমেদ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডেপুটি জেলার মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন।
কক্সবাজারের জেল সুপার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখনো চট্টগ্রাম কারাগারে গিয়ে কাজ শুরু করিনি।’
আগের ঘটনায় সাজা
২০২১ সালের ৬ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৬০ ফুট উঁচু দেয়াল টপকে পালিয়ে যান বন্দী ফরহাদ হোসেন। পরে নরসিংদী থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তাঁর এক বছরের সাজা হয়।
গত এপ্রিলেও চট্টগ্রাম আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে পুলিশের হেফাজত থেকে পালিয়ে যান লোহাগাড়া থানার হত্যা মামলার আসামি ইকবাল হোসেন ও সীতাকুণ্ড থানার মাদক মামলার আসামি আনোয়ার হোসেন। দুজনের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে এবং তাঁরা এখন কারাগারে।
কারাগার থেকে বন্দী পালানোর ঘটনায় মামলা না করার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ মাসুদ হাসান বলেন, ‘কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ তবে কেন ফৌজদারি মামলা হয়নি—সে বিষয়ে কোনো উত্তর দেননি তিনি।
কারা অধিদপ্তরের সাবেক উপমহাপরিদর্শক শামসুল হায়দার সিদ্দিকী বলেন, বন্দী পালানোর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। নিয়ম অনুযায়ী মামলা না হলে ভবিষ্যতে পালানোর ঘটনা বাড়বে।
আরও পড়ুনকারাগারে গরু পালনে সরকারি কর্মচারী ও অর্থ ব্যবহার করা যাবে না০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল ন র ঘটন য় অন য য় ঘটন র এমর ন
এছাড়াও পড়ুন:
চার বছরের মধ্যে পাসের হার সর্বনিম্ন, অকৃতকার্যের রেকর্ড
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। একইসঙ্গে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যাও রেকর্ড ছাড়িয়েছে। চলতি বছর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীন স্কুলগুলোতে ৩৯ হাজারেরও বেশি পরীক্ষার্থী ফেল করেছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার ১ হাজার ১৬৪টি স্কুল থেকে ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ১১ হাজার ৮৪৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। অন্যদিকে, অকৃতকার্য হয়েছে ৩৯ হাজার ২০৭ জন। গত বছর অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৯৩৫ জন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ১৫২ জন, ২০২২ সালে ১৮ হাজার ৪৭০ জন এবং ২০২১ সালে ১৪ হাজার ৪৬ জন। ফলে চলতি বছর অকৃতকার্যের সংখ্যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ২০২৫ সালের প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার ফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা যায়।
বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অকৃতকার্যের প্রধান কারণ গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের কারণে পাঠদান ব্যাহত হওয়া। পাশাপাশি এবার উত্তরপত্র মনিটরিংয়ে কঠোরতা অবলম্বন করা হয়েছে। কোয়ানটিটির চেয়ে কোয়ালিটির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বোর্ড কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার আমাদের কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন যাতে আমরা শিক্ষা ব্যবস্থার সঠিক চিত্রটা তুলে আনি। আমরা এবার সে কাজটিই করেছি৷ খাতা খুব গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং করা হয়েছে যাতে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি না থাকে।’’
বোর্ডের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ বছর এক বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এ বছর এক বিষয়ে ২৪ হাজার ৬৬৮ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৭৭০ জন। ২০২৩ সালে ২২ হাজার ৩৯৬ জন, ২০২২ সালে ১৪ হাজার ১৯৪ জন এবং ২০২১ সালে ১২ হাজার ৯৫৬ জন শিক্ষার্থী এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়।
এ বছর পাসের হারেও বড় ধস নেমেছে। পাসের হার ৭২ দশমিক ০৭ শতাংশ। গত বছর ছিল ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০২৩ সালে পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, ২০২২ সালে ৮৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ। চলতি বছর ছাত্রী পাসের হার ৭২ দশমিক ১৯ শতাংশ, যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ছাত্র পাসের হারও ৭১ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আগের বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন।
ঢাকা/রেজাউল//