কুষ্টিয়ায় বিএটি বাংলাদেশের (বিএটিবি) পাতা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় (গ্রিন লিফ থ্রেশিং প্লান্ট) গত দুই সপ্তাহ ধরে চলমান শ্রমিক অসন্তোষে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে হাজারো কৃষক ও শ্রমিকের জীবিকা; প্রত্যক্ষভাবে এ সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি হলেও পরোক্ষ ক্ষতির মুখে লক্ষাধিক মানুষ। অর্থনীতিবিদ ও খাত বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এর নেতিবাচক প্রভাব গিয়ে পড়বে সামগ্রিকভাবে দেশের কৃষি ও রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতিতে। 
 
সরেজমিন কারখানা থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, মৌসুমি শ্রমিকদের উত্থাপিত দাবি-দাওয়ার ভিত্তিতে চলমান আন্দোলনের কারণে এখন পর্যন্ত বিএটি বাংলাদেশের কারখানার গেট তালাবদ্ধ রয়েছে। কারখানার সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে বেকার বসে আছেন শ্রমিকদের একটি বড় অংশ, যারা কারখানার কাজে যোগদানের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষাও সেরে ফেলেছিলেন। মৌসুমি শ্রমিকদের একাংশের ডাকা আন্দোলনের কারণে কাজে আর যোগদান করা হয়নি তাদের। এ ছাড়া প্রায় ৫০ হাজার কৃষক, যারা বিএটিবি’র সঙ্গে মৌসুম অনুযায়ী চুক্তিবদ্ধ হয়ে জমিতে তামাক চাষ করেছেন, তারা এখন ভয়াবহ আর্থিক অনিশ্চয়তায়– কারখানা বন্ধ হলে, পাতা বিক্রি করবেন কীভাবে? 
 
তামাকের মৌসুমে বিএটি বাংলাদেশের এ কারখানায় মূলত কুষ্টিয়া ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কৃষকদের কাছ থেকে তামাক পাতা সংগ্রহ করে তা প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানির উপযোগী করে তোলা হয়। ২০২৪ সালে শুধু এ কারখানা থেকেই ৮৪৬.

৭৫ কোটি টাকার প্রক্রিয়াজাত তামাক পাতা রপ্তানি করা হয়। এ মৌসুমে, কারখানার কার্যক্রম বন্ধ থাকায়, এখন কৃষকরা জানেন না, কোথায় তাদের ফসল বিক্রি করবেন; অন্যদিকে, বিএটিবি রপ্তানির যে অর্ডার পেয়েছিল, তা আসলেই পূরণ করা সম্ভব হবে কিনা, সেটিও পড়ে গেছে সংকটের মুখে। এতে করে প্রান্তিক মানুষের জীবিকার পাশাপাশি বাইরের বিনিয়োগকারী ও দেশের রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি– সবকিছুতেই অনিশ্চয়তার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

জীবিকার সংকটে পড়ে কৃষকরা ইতোমধ্যে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন, যাতে কারখানাটি দ্রুত খুলে দেওয়া হয়। চিঠিতে তারা লিখেছেন, ‘তামাক বিক্রয়ের এ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, কতিপয় শ্রমিকের আন্দোলনের জন্য কোম্পানির তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণের ফ্যাক্টরি চালু হতে বিলম্বিত হচ্ছে। এর ফলে তামাক বিক্রয় বন্ধ হয়ে গেলে বা ধীরগতির সম্মুখীন হলে আমাদের উৎপাদিত তামাকের গুণগত মান নষ্ট হয়ে গেলে বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হব।’

এ অচলাবস্থা চলতে থাকলে বিএটি বাংলাদেশ ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে, এমন আশঙ্কাও তারা চিঠিতে প্রকাশ করেন। এ চিঠির ব্যাপারে চুনিয়াপাড়া এলাকার একজন তামাকচাষি মো. জিন্নাহ আলি বলেন, “বিএটি বাংলাদেশ ব্যবসা বন্ধ করে দিলে আমরা এই বছরের উৎপাদিত তামাক বিক্রি করতে পারব না। এতে আমরা বিরাট আর্থিক লোকসানের সম্মুখীন হব এবং জীবিকা নির্বাহ করা গুরুতর শঙ্কার মধ্যে পড়ে যাবে। শুধু তাই নয়, আগামী বছরগুলোতেও এর রেশ আমাদের বইতে হবে।” 

শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে সূচনা হয়েছিল মৌসুমি শ্রমিকদের ২২টি দাবি নিয়ে। বিএটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, বেশির ভাগ দাবি ইতোমধ্যে মেনে নেওয়া হয়েছে এবং বাকিগুলো নিয়ে আলোচনা চলছিল। এখন অভিযোগ উঠেছে, আন্দোলনে অংশ নিতে না চাওয়া শ্রমিকদেরও বাধ্য করা হচ্ছে আন্দোলনে যোগ দিতে। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় এক শ্রমিকের সঙ্গে। অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘আমাদের জোর করে নিয়ে আসা হয়েছে। নির্দেশ না মানলে সমস্যা হবে বলে নিয়ে আসা হয়েছে।’

বিএটি বাংলাদেশের এ কারখানায় মৌসুম ভিত্তিতে কাজের জন্য শ্রমিকরা নিয়োগ পান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। চলমান শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে জানতে চাইলে মুমু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জাহিদ চৌধুরী বলেন, ‘জিএলটিপি বন্ধ থাকায় আমাদের বিল পাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় আগামী দিনে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করাও দুরূহ হয়ে পড়েছে। এতে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। এবং প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বও ক্ষতির সম্মুখীন হবে।’

এ কারখানা বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে যেন কুষ্টিয়ার স্থানীয় অর্থনীতিও স্থবির হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে, আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, কুষ্টিয়ার এ শ্রমিক অসন্তোষের নেতিবাচক প্রভাব গিয়ে পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে। এ কারখানার কার্যক্রমের সঙ্গে শুধু তামাক চাষি কিংবা মৌসুমি শ্রমিকরাই নন, সম্পৃক্ত পরিবহন ও লজিস্টিকস খাতও, যা কিনা কারখানা বন্ধ থাকায় ব্যাপক হুমকির মুখে পড়েছে।

কিছু ক্ষেত্রে তামাক খাতের কার্যক্রম নিয়ে বিতর্ক থাকলেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও কৃষিনির্ভর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি অর্জনে এ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এখন হঠাৎ করে এ খাতের গতি স্থবির হয়ে গেলে, তা সরাসরি গিয়ে প্রভাব ফেলবে দেশের রপ্তানি আয়ে ও জাতীয় অর্থনীতিতে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এলটিইউ কর্তৃক দেশের অন্যতম শীর্ষ করদাতা হিসেবে স্বীকৃত বিএটি বাংলাদেশ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও বিভিন্ন ফি বাবদ জাতীয় কোষাগারে জমা দিয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে দেশের বিশাল সংখ্যক মানুষ (প্রায় ১৫ লাখ)। 

বিএটিবি দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বহুজাতিক কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানের আইনি দায়বদ্ধতা, নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে সম্পর্ক ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার জন্য এর পরিচিতি রয়েছে। কিন্তু কুষ্টিয়ার এ অচলাবস্থা এখন দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার অবশ্যই সুরক্ষিত থাকা উচিত। সেই সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে, কোনো আন্দোলন যেন শিল্পকারখানা, কৃষকের আয় বা দেশের রপ্তানি খাতে ধ্বংসাত্মক প্রভাব না ফেলে। 

সম্প্রতি একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিএটি বাংলাদেশ জানায়, ‘শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে, আমরা আন্দোলনরত কর্মীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গঠনমূলক ও উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়েছি, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় একাধিকবার বৈঠকে বসেছি এবং আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে উন্নত সুবিধাও প্রস্তাব করেছি। বিরাজমান শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কুষ্টিয়ার মৌসুমি কারখানার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি, যার ফলে বিএটি বাংলাদেশ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কারখানার কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ায়, তামাক পাতা রপ্তানি হুমকির মুখে পড়েছে; একই সঙ্গে, দেশের বাজারের চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। 

আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, প্রতিবাদী শ্রমিকরা এখন কাজে ফিরে যেতে ইচ্ছুক অন্য শ্রমিকদের হুমকি দিচ্ছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে আন্দোলনটি মৌসুমি শ্রমিকদের সম্মিলিত চাওয়ার পরিবর্তে, কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের দ্বারা পরিচালিত। এ সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে, আমাদের কারখানার কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখতে হতে পারে, যার ফলে শুধু আমাদের ব্যবসায় নয়, সরকারের রাজস্ব আয়েও বড় ধরনের ক্ষতি হবে, যা কারোরই কাম্য নয়।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বন ধ থ ক অন শ চ আম দ র আর থ ক

এছাড়াও পড়ুন:

বরফ গলে মেরু এলাকায় নতুন বাস্তুতন্ত্রের খোঁজ

তাপপ্রবাহ, ওজোন গ্যাসের উপস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর দুই মেরু এলাকার বরফ গলে যাচ্ছে। তবে উত্তর মেরুর আর্কটিক সাগরের গলিত বরফ ভিন্ন ধরনের লুকানো বাস্তুতন্ত্র প্রকাশ করছে। সেখানে ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে পুষ্টিতে রূপান্তরিত করে শৈবালের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে দেখা গেছে। পুরু বরফের নিচে এই প্রক্রিয়া অসম্ভব বলে মনে করা হলেও এখন আর্কটিকের খাদ্যশৃঙ্খল ও বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন শোষণের জন্য এই প্রক্রিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এখন নতুন বাস্তুতন্ত্র জলবায়ুগত সুবিধা দেবে নাকি নতুন অনিশ্চয়তা নিয়ে আসবে, তা নিয়ে গবেষণা করছেন।

আর্কটিক মহাসাগরকে দীর্ঘকাল ধরে হিমায়িত ও প্রাণহীন একটি সীমান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যখন এই অঞ্চলের সমুদ্রের বরফ গলতে শুরু করেছে, তখন পানির নিচ থেকে আশ্চর্যজনক নতুন নতুন সব তথ্য জানা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা দেখছেন, গলিত বরফ আসলে শৈবালের বৃদ্ধি বাড়িয়ে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে উৎসাহিত করতে পারে। এই শৈবালই মহাসাগরের খাদ্যশৃঙ্খলের ভিত্তি তৈরি করে। সেখানকার নতুন পরিবেশ আমাদের গ্রহের সংবেদনশীল জলবায়ু ভারসাম্যের জন্য সহায়ক হবে নাকি ক্ষতিকারক হবে, তা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

জার্মানির আলফ্রেড ওয়েগেনার ইনস্টিটিউট ও কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফল আর্কটিক মহাসাগর সম্পর্কে আমাদের পূর্বের ধারণাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে। কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া পুরু আর্কটিক বরফের নিচে ঘটতে পারে না। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে জীবনের সহায়ক রূপে রূপান্তর করে। এই রূপান্তরের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার জন্য সেখানকার পরিস্থিতিকে খুব চরম বলে মনে করা হতো। নতুন গবেষণা ভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে। মধ্য আর্কটিক বরফের নিচে দেখা গেছে, নাইট্রোজেন ফিক্সেশন বা বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া কেবল ঘটছে তা নয়, বরং এটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বিস্তৃত হতে পারে। অন্যান্য সব সমুদ্রে সাধারণত সায়ানোব্যাকটেরিয়া দেখা গেলেও, আর্কটিকে নন-সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামে পরিচিত একটি ভিন্ন দলের উপস্থিতি দেখা যায়। ভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্রবীভূত জৈব পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে ও নাইট্রোজেন যৌগ মুক্ত করে যা শৈবালকে পুষ্টি জোগায়।

আর্কটিক এলাকাকে একসময় প্রাকৃতিক কার্যকলাপের জন্য খুব অনুর্বর বলে মনে করা হতো। গবেষণায় দেখা গেছে, গলে যাওয়া সমুদ্রের বরফের কিনারা বরাবর নাইট্রোজেনের বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া সবচেয়ে শক্তিশালী। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে সূর্যের আলো, পানি ও পুষ্টির উপাদান মিশে গেছে, যা ব্যাকটেরিয়া ও শৈবাল উভয়ের জন্যই আদর্শ পরিবেশ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আর্কটিকের নাইট্রোজেনচক্র নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হবে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী লিসা ডব্লিউ ভন ফ্রাইসেন বলেন, আর্কটিক মহাসাগরে সহজলভ্য নাইট্রোজেনের পরিমাণ অনুমান করা হয়নি এখনো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে শৈবাল উৎপাদনের সম্ভাবনা কেমন হবে তা এখনো জানা যায়নি। শৈবাল আর্কটিক খাদ্যশৃঙ্খলের জন্য অপরিহার্য। তারা আণুবীক্ষণিক ক্রাস্টেসিয়ানদের খাবার হিসেবে কাজ করে, যা পরবর্তী সময়ে ছোট মাছ এবং সিল ও তিমির মতো বড় শিকারি প্রাণীরা খায়। আরও শৈবাল এই শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করতে পারে, যা সম্ভাব্যভাবে আর্কটিক সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

সাধারণভাবে শৈবাল কেবল সামুদ্রিক প্রাণীদের খাদ্য জোগায় না। তারা সালোকসংশ্লেষণের সময় বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইডও শোষণ করে। যখন শৈবাল মরে যায়, তখন এই কার্বনের কিছু অংশ সমুদ্রের তলদেশে ডুবে যায়। বিজ্ঞানীরা প্রায়শই শৈবালকে প্রাকৃতিক কার্বন সিংক বা মহাসাগরের নিজস্ব ভ্যাকুয়াম ক্লিনার হিসেবে বর্ণনা করেন। নতুন তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া যদি শৈবালের বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তোলে, তবে আর্কটিক মহাসাগর আরও বেশি কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করতে পারবে। বিষয়টি একদিক থেকে জলবায়ুর জন্য সুসংবাদ বলে মনে করা হচ্ছে। শৈবালের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি বৈশ্বিক কার্বন মাত্রাকে সামান্য হলেও প্রশমিত করতে পারে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে জানিয়েছেন, বিষয়টি এত সরল নয়। সামুদ্রিক সিস্টেম অত্যন্ত সংবেদনশীল। অন্যান্য পরিবেশগত পরিবর্তন এই ইতিবাচক প্রভাবকে দুর্বল করে দিতে পারে।

বিজ্ঞানী ল্যাসে রিম্যান বলেন, ফলাফল জলবায়ুর জন্য উপকারী হবে কি না, তা আমরা এখনো জানি না। তবে এটি স্পষ্ট যে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আগামী কয়েক দশকে আর্কটিক মহাসাগরের কী হবে, তা অনুমান করার সময় আমাদের নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াকে সমীকরণে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়তে থাকায়, আর্কটিক পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় প্রায় চার গুণ দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। এই দ্রুত পরিবর্তন কেবল বরফের ওপর নির্ভরশীল প্রজাতিদেরই নয়, বরং মহাসাগর কীভাবে কার্বন সঞ্চয় ও নির্গত করে, তারও পরিবর্তন ঘটায়। নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার ভূমিকা বোঝা গেলে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতের জলবায়ু ধরন সম্পর্কে আরও নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছেন।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আন্দোলনে রাজধানীতে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ যানজট, ডিএমপির দুঃখপ্রকাশ
  • বরফ গলে মেরু এলাকায় নতুন বাস্তুতন্ত্রের খোঁজ