এই দেশ কখনো সরকারবিহীন ছিল না। এরপরও সঠিক পরিকল্পনার ঘাটতি দেশের সব জায়গায়। কোথায় কারখানা হবে, কোথায় রাস্তা হবে, কোথায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে, কোথায় মাঠ থাকবে, পশুপাখির জন্য অভয়ারণ্য কোথায় হবে—এসব বিষয়ে সঠিক পরিকল্পনা দরকার। দেশের প্রতিটি ইঞ্চি জমি যদি সঠিক পরিকল্পনার আওতায় না আসে, তাহলে নিশ্চিতভাবেই সামনে একটা ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হবে।

নগর–পরিকল্পনাবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) আয়োজিত তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘রাজনীতি এবং পরিকল্পনা’ শীর্ষক অধিবেশনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ অধিবেশন হয়।

কোথায় শিল্পকলকারখানা হবে, কোথায় রাস্তাঘাট হবে, কোথায় স্কুল–মাদ্রাসা হবে, কোথায় খেলাধুলার আয়োজন থাকবে, পশুপাখির জন্য অভয়ারণ্য থাকবে—এসব বিষয় সঠিক পরিকল্পনার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। জোনায়েদ সাকি, প্রধান সমন্বয়কারী, গণসংহতি আন্দোলন

আলোচনায় জামায়াতের আমির শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশটা ছোট, কিন্তু জনসংখ্যা অনেক। এই ছোট দেশটাকে সবাই মিলে দূষিত করে ফেলেছে। নদীমাতৃক দেশে এখন নদীতে হালচাষ হয়। ধান–পাটের চাষ হয়। কিন্তু একসময় তো এমন ছিল না। কেন এমন হলো—এই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘শুধুই কি ভারতের দোষ যে ওখান থেকে পলি নেমে এসে আমাদের নদী ভরাট হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে?’

এই দেশ সরকারবিহীন ছিল না উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, কেউ না কেউ এ দেশ শাসন করেছে। তারা তখন কী করেছে? রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়–প্রশ্রয়ে নদী দখল–দূষণে দেশের কিছু মানুষ জড়িত। তিনি বলেন, ‘আমার কী হবে, আমি কী পাব—এই চিন্তা থেকে আমরা যত দিন বের হয়ে আসতে না পারব, আমরা কিছুই করতে পারব না।’

জনগণের কথা শোনা দরকার

আলোচনায় অংশ নিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, পরিকল্পনা করার আগে জনগণের কথা শোনা দরকার রাজনীতিবিদদের। এ কাজ করার জন্য রাজনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা প্রয়োজন। কারণ, রাজনীতিবিদেরা মনে করেন, শুধু তাঁরা বলবেন, জনগণ শুনবে।

গ্রামের পরিবেশ নষ্ট করে গ্রামকে শহরের পরিণত করতে বিগত সরকারে নেওয়া উদ্যোগের কঠোর সমালোচনা করেন বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, শহরকে বিষাক্ত করার পর এই বিষ তারা গ্রাম পর্যন্ত নিয়ে যেতে চেয়েছিল। গ্রামে নাগরিক সুবিধা কীভাবে বিসৃত করা যায়, সেই চিন্তা করা উচিত।

বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চি জমি যদি পরিকল্পনায় না আসে, তাহলে পুরো দেশটাই একটা ভয়ংকর জায়গায় পরিণত হবে বলে মনে করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, কোথায় শিল্পকলকারখানা হবে, কোথায় রাস্তাঘাট হবে, কোথায় স্কুল–মাদ্রাসা হবে, কোথায় খেলাধুলার আয়োজন থাকবে, পশুপাখির জন্য অভয়ারণ্য থাকবে—এসব বিষয় সঠিক পরিকল্পনার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, শিল্পকলকারখানার অনিবার্য কিছু প্রভাব আছে। সেই প্রভাব পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং নদী–নালাসহ সব প্রাণের ওপর একটা হুমকি সৃষ্টি করে। নানা ব্যাধি সৃষ্টি করে। এমর পরিস্থিতিতে সঠিক পরিকল্পনাই মানুষকে বাঁচাতে পারে।

সমাধানভিত্তিক রাজনীতি

আলোচনায় এবি পার্টি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, মতাদর্শগত ও চিন্তাগত বিভাজন থেকে দূরে সরে এসে দেশের স্বার্থে সমাধানভিত্তিক রাজনীতির দিকে যেতে হবে। ৫ আগস্ট সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে যায়। কেউ কাউকে প্রশ্ন তুলেনি। যখনই অধিকারের প্রশ্ন এসেছে, বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা এসেছে, তখনই সবার দাবি এবং সুর একাকার হয়ে গেছে। একইভাবে এখন জাতীয় রাজনীতিতেও ঐকমত্য তৈরির করার সুযোগ আছে। বেকারত্ব, যানজট দূর করা—এসব বিষয়ে সমাধানভিত্তিক রাজনীতির করার সুযোগ রয়েছে। পরিকল্পনার ক্ষেত্রে মানুষকে সচেতন করা গেলে ভালো ‘ফিডব্যাক’ পাওয়া যাবে।

পরিবেশ ধ্বংস করে নগরায়ণ হওয়ায় এর সুফল বাংলাদেশের মানুষ পাচ্ছে না বলে মনে করেন ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব প্রকৌশলী আশরাফুল আলম। তিনি বলেন, দেশে যেভাবে নগরায়ণ হচ্ছে, তাতে গরিব মানুষ ক্রমাগত আশ্রয়স্থল হারিয়ে ফেলছে। যত উন্নয়ন হচ্ছে, তত জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।

পরিবেশ ধ্বংসের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায়িত না করার পরামর্শ দেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, পরিবেশ ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে নির্বাচনে প্রার্থী করা হবে না—এ বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলকে একমত হতে হবে। এর পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যেকোনো পরিকল্পনায় প্রাণ–প্রকৃতি ও পরিবেশের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন বিআইপির সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। আরও বক্তব্য দেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক র জন য পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবকে নিয়ে বাবুলের গণসংযোগ ও ৩১ দফার লিফলেট

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপ রেখার ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ শহরে  গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব। 

রোববার (২ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি নেতা আবু জাফর আহাম্মেদ বাবুলের নেতৃত্বে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন হাবিবুর রহমান হাবিব।

এদিন আবু জাফর আহাম্মেদ বাবুলের নেতৃত্বে শহরের মন্ডলপাড়া, বাবুরাইল, বেপারীপাড়া, দেওভোগ, আখড়া, জিউস পুকুর, নন্দীপাড়া, বোয়ালিয়া খালসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করা হয়। 

এসময় বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় জনগণ উপস্থিত ছিলেন। লিফলেট বিতরণকালে আবু জাফর আহাম্মেদ বাবুল বাবুরাইলে একটি ক্রীড়া সংগঠনের ক্লাব উদ্বোধন করেন।

এরপর নাসিকের সাবেক প্যানেল মেয়র ওবায়েদ উল্লাহর বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।  লিফলেট বিতরণকালে হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বাবুল ভাই আমার অত্যন্ত প্রিয়।

আমি আশা করি আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সব দিক বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন। জনগণ যাকে চাইবে যার ভেতরে দোষ ত্রুটি নেই এমন লোককে মনোনয়ন দেয়া হবে। 

এবারের নির্বাচনে আমাদের বিরুদ্ধ ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে জনগণকে নিয়ে যিনি পাশ করতে পারবে তাকে মনোনয়ন দেয়া হবে।

বাবুল ভাই আপনাদের নিয়ে কাজ করছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দৃষ্টিতেও আছেন। আশা করি দল তাকে মূল্যায়ন করবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অবিলম্বে গণভোটের দাবি চাকসুর
  • ক্ষমতার লোভে কেউ কেউ ধর্মকে ব্যবহার করছে: আব্দুস সালাম
  • উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
  • ভুল শুধরে জনগণের আস্থা ফেরানোর সুযোগ এই নির্বাচন: আইজিপি
  • ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
  • বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
  • বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবকে নিয়ে বাবুলের গণসংযোগ ও ৩১ দফার লিফলেট
  • ইরান পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরো শক্তিশালী করে পুনর্নির্মাণ করবে
  • জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিতে সংগ্রাম, শপথ যুব সংসদের সদস্যদের
  • বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম