বাগেরহাটে জালিয়াতির মাধ্যমে ভারতীয় নাগিরককে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার অভিযোগে নির্বাচন কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুরে বাগেরহাট দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. সাইদুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। 

মামলার আসামিরা হলেন, বাগেরহাট সদর উপজেলার তৎকালীন নির্বাচন কর্মকর্তা ও বর্তমান বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার হাওলাদার, চিতলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন ও চিতলমারী উপজেলার আড়ুয়াবর্ণি গ্রামের বাসিন্দা মো.

মোশাররফ হোসেন মোল্লা। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিনকে।

আরো পড়ুন:

খুলনার ১৭ থানায় ৩০৯ মামলা দায়ের

চার দিনের রিমান্ডে মমতাজ

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস না করা সত্ত্বেও ফনি ভূষণ ওরফে মনি মণ্ডল এবং তার ভাই প্রতুল চন্দ্র মণ্ডলকে চিতলমারী থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ ও তা ব্যবহার করে একজনকে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়া হয়। ওই দুইজন ভারতীয় নাগরিক হলেও আড়ুয়াবর্নি গ্রামে থাকা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রির জন্য স্থানীয় মোশাররফ হোসেন মোল্লা তাদের দেশে নিয়ে আসেন এবং ২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করান।

দুদক সূত্র বলছে, ওই আবেদনে নির্ধারিত ফরমে ১৯৪৮ সালের ১ জানুয়ারিতে ফনি ভূষণ মণ্ডল এবং ১৯৫৩ সালের ৪ এপ্রিল প্রতুল মণ্ডলের জন্ম তারিখ উল্লেখ করা হয়। আবেদনের চারদিন পর তাদের দুই ভাইকে জন্ম নিবন্ধন দেন চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন। এরপর ওই জন্মনিবন্ধন দিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেন তারা। যার প্রেক্ষিতে বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে ফনি ভূষণের এর নামে জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করা হয়।

দুদকের অনুসন্ধানে ফনি ভূষণ ওরফে মনি মণ্ডলের নামে সৃষ্ট জাতীয় পরিচয়পত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ফনি ভূষণ ওরফে মনি মণ্ডলের জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি ১৯৪৮ সালে। কিন্তু তার জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি হয় ২০১৭ সালে। যা তার জন্মের ৬৯ বছর পর। নির্ধারিত সময়ে ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার কারণ হিসেবে ভোটার নিবন্ধন ফরমের ৩২ নং ঘরে উল্লেখ করা হয়েছে, চিকিৎসার জন্য এলাকার বাইরে থাকা। ফনি ভূষণ ওরফে মনি মণ্ডলের বাবার নাম মৃত শশধর মণ্ডল দেওয়া হলেও তৈরি করা জাতীয় পরিচয়পত্রে বাবার নাম মৃত রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল। 

ভোটার নিবন্ধন ফরমের ৭ নং ঘরে বাবার মৃত্যু সন দেওয়া হয়েছে ১৯৪৪ সালে। সে অনুযায়ী, পিতার মৃত্যুর ৪ বছর পরে ফনি ভূষণের জন্ম। ফরমে শনাক্তকারী হিসেবে সুষেন মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার করে তার স্বাক্ষর জাল করে শনাক্তকারী হিসেবে দেখানো হয়। আর ফনি ভূষণ ওরফে মনি মণ্ডলের বর্তমান ঠিকানা দেওয়া হয় বাগেরহাট পৌরসভার সোনাতলা গ্রাম। তবে তদন্তকালে দুদক ওই এলাকায় সেই ব্যক্তির কোন অস্তিত পায়নি। 

দুদক বাগেরহাট কার্যালয়ের এডি মো. সাইদুর রহমান জানান, পারস্পরিক যোগসাজশ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে উক্ত ব্যক্তিকে বিধি বহির্ভূতভাবে জাল জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়েছে যা দুদকের অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই দণ্ড বিধির ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা/শহিদুল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য র জন ম

এছাড়াও পড়ুন:

ছিনতাইয়ের সময় জনতার হাতে ধরা, পরে হাসপাতালে পুলিশকে ছুরি মেরে পালাল সেই ছিনতাইকারী

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পুলিশকে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইয়ের ঘটনায় আটক এক ব্যক্তি পালিয়েছেন। তাঁর নাম মো. আকাশ। মঙ্গলবার রাত সোয়া আটটার দিকে হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এদিন বেলা ৩টার দিকে নগরীর বন্দর থানা-পুলিশ তাঁকে হাসপাতালে এনেছিল।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী ইনচার্জ সোহেল রানা বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে আহত পুলিশ সদস্যের নাম জানা যায়নি। তবে তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বন্দর অফিসার্স কলোনির বাইরে এক চীনা নাগরিকের মোবাইল ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়রা দুজনকে আটক করেন। তাঁরা হলেন মো. আকাশ (২৫) ও মো. শাহাদাত (২২)। পিটুনি দিয়ে তাঁদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। ছিনতাইয়ের শিকার চীনা নাগরিকের পায়ে ছুরিকাঘাত করা হয়।

পুলিশের পক্ষ থেকে চীনা নাগরিকের নাম-পরিচয় নিশ্চিত করা হয়নি। আহত আকাশকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁর সঙ্গে এক পুলিশ সদস্য ছিলেন। রাতে সেই পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে হাসপাতাল থেকে আকাশ পালিয়ে যান।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে আকাশ পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনি প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ