Samakal:
2025-05-17@04:28:07 GMT

মেঘের বাড়িতে মা

Published: 16th, May 2025 GMT

মেঘের বাড়িতে মা

এক ছিলাম ছোট্ট আমি। এক ছিল আমার মা। আমরা থাকতাম এক রঙিন পৃথিবীতে। যেখানে সকালের হাওয়ায় মা আমাকে জড়িয়ে ধরতেন, আর রাতে তারা গুনতে গুনতে আমি ঘুমিয়ে পড়তাম মায়ের গানের সুরে।
 হঠাৎ একদিন, মা একদম হালকা হয়ে গেলেন। এতোটাই হালকা যে, এক সকালে দেখি, মা মেঘের সাথে উড়ে গেছেন।
আমি হাত বাড়িয়ে ধরতে চেয়েছিলাম। মা তখন মিষ্টি করে হেসে বলেছিলেন, আমি থাকবো সোনা, তোমার মনের ভেতর। সব সময়। তখন থেকেই, আমি জানি– মা আর আমি এখন দু’জনেই দুই আলাদা বাড়িতে থাকি। আমি মাটির বাড়িতে, আর মা মেঘের বাড়িতে।
মায়ের মেঘের বাড়িটা খুব সুন্দর।
ওখানে নরম মেঘের বিছানা, আলোর চমৎকার ছোট ছোট কারুকার্যময় জানালা, আর তারাভরা ছোট্ট উঠোন।
আমি যখন খুব কাঁদি, মা মেঘের একটা নরম হাত বাড়িয়ে দেন, যাতে আমি তার স্পর্শ টের পাই। কখনও হাওয়ায় ভেসে আসে মায়ের গানের সুর, কখনও কোনো রাত্তিরে দেখি,
তারার ভিড়ে একটা তারা আলাদা করে টিমটিম করে জ্বলছে। আমি জানি, ওই তারাটাই আমার মা। চুপচাপ আমাকে দেখছেন, মিষ্টি করে হাসছেন। মা কখনও কাছে আসেন হালকা বৃষ্টির ভেতর, কখনও রংধনুর ঝলকে, কখনও সন্ধ্যার নরম হাওয়ায় আমার চুলে বিলি কেটে দিতে।
আর আমি, তখন চোখ বন্ধ করে বলি– মা, আমি তোমাকে অনুভব করি।
তুমি আছো।
তুমি সব সময় আছো।
এভাবেই, আমি আর আমার মেঘের বাড়ির মা রোজ নীরবে গল্প করি।
শুধু সেখানে শব্দ থাকে না।
শুধু ভালোবাসার ভেতর দিয়ে।
মায়ের চিঠি 
আমার সোনা,
আজ মেঘের জানালার পাশ থেকে তোমাকে লিখছি। তুমি যখন জানালার ধারে বসে চুপ করে থাকো, আমি দেখতে পাই। তুমি যখন চোখের কোণে অশ্রু লুকাও, আমি মেঘের হাত দিয়ে তোমার গাল মুছে দিই।
জানো, সোনা, মেঘের দেশে আমি খুব ভালো আছি। তারা আর মেঘেরা মিলে আমার জন্য এক দারুণ রংধনুর দোলনা বানিয়ে দিয়েছে।
আমি সেই দোলনায় দুলতে দুলতে তোমার কথা ভাবি। তোমার ছোট্ট ছোট্ট পায়ের ছাপ, তোমার হাসি–সব এই মেঘের ভেতর সুর হয়ে বাজে। আমি শুনতে পাই।
তুমি যখন ছবি আঁকো, আমি দেখি। তুমি যখন কবিতা লেখো, আমি দেখি। তুমি যখন গল্প বলো, আর আনমনে গান করো, আমি তোমার পাশে বসে চুপচাপ শুনি, মাথায় হাত রাখি। আদর করি। সেই আগের মতো।
সোনা, ভেবো না আমি হারিয়ে গেছি।
আমি তোমার মনের সবচেয়ে গোপন ঘরে, তোমার নিঃশ্বাসের সাথে, তোমার স্বপ্নের রঙের কৌটোয় আমি আছি।
সবসময়। চুপিচুপি।
আর মনে রেখো–
যখনই তুমি একলা অনুভব করবে, হাত বাড়ালেই পাবে মেঘের মতো নরম একটা হাত, ভেবে নিও, সেটা তোমার মায়ের।
তোমার প্রতিটি হাসি, প্রতিটি কান্না, প্রতিটি স্বপ্ন– সব আমি মেঘের খামে ভরে চুমু দিয়ে রাখি।
ভালো থেকো সোনা,
আমার প্রাণের টুকরো,
তোমার মায়ের বুকের ভেতর তুমি চিরকাল বেঁচে আছ। বেঁচে থাকবে।
আমার ভালোবাসা নিও,
তোমার মা।
তার পর থেকে, আমি যখনই খুব একা হয়ে যাই, জানালার কাছে গিয়ে বসি।
হাত বাড়িয়ে দিই আকাশের দিকে, মেঘেরা যেন মায়ের মিষ্টি গন্ধ নিয়ে নেমে আসে আমার কাছে।
কখনও হালকা বাতাস আমার চুলে হাত বুলিয়ে দেয়, কখনও অদেখা কণ্ঠে ভেসে আসে অভয় বাণী– ভয় পেয়ো না, আমি তোমার পাশে আছি।
তারপর থেকে, রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আমি মায়ের সঙ্গে কথা বলি মনের ভেতর, খুব গোপনে। জিজ্ঞেস করি– মা, আজ তুমি কেমন আছো?
সঙ্গে সঙ্গেই যেন কান পাতলে পাই মিষ্টি এক হাসির উত্তর–
ভালো আছি, তোমাকে ঘিরেই তো আমার সুখ। আমার আনন্দ। আমার খুশি।
তারপর থেকে, কোনো কঠিন দিন এলে, আমি নিজের বুকের ভেতর হাত রাখি।
আর তখন মনে হয়, মা আমার মনের ভেতর এক টুকরো নরম আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন।
যেখানে আমি চাইলে একটু বিশ্রাম নিতে পারি, একটু কান্না করতে পারি, আবার একটু হাসতেও পারি।
তারপর থেকে, আমি বুঝেছি– মা কখনও হারায় না। মা মিশে থাকেন হাওয়ার গন্ধে, আলোর রেখায়, মন খারাপের বিকেলে আর আনন্দের ঝিকিমিকি চোখে।
তারপর থেকে, আমি আর একা নই। আমি জানি, আমার মা আছেন। আমার গল্পের প্রতিটি অক্ষরে, আমার ছড়ার পঙক্তিতে, আমার স্বপ্নের প্রতিটি রঙে, আমার বুকের ভেতর–
একটা নির্জন, নরম মেঘের বাড়িতে। n

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত রপর থ ক আম র ম

এছাড়াও পড়ুন:

গোল বন্যার ম্যাচে নিষ্প্রভ মেসি, জয়বঞ্চিত মায়ামি

আক্রমণে ঝড় তুলেও কাঙ্ক্ষিত জয় পায়নি লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামি। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে গোলের পর গোলের এক রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে সান হোসে আর্থকোয়েকসের সঙ্গে ৩-৩ গোলে ড্র করেছে তারা। উভয় দলের রক্ষণভাগ কখনও ভেঙে পড়েছে, আবার কখনও দুর্দান্ত ভাবে সামলে নিয়েছে প্রতিপক্ষের ধাক্কা। তবে এই গোলবন্যা ম্যাচেও নিষ্প্রভ ছিলেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা মেসি।

ম্যাচ শুরু হতেই সান হোসের দর্শকরা চমকে উঠলেন। প্রথম মিনিটেই মায়ামির ডিফেন্ডার ম্যাক্সিমিয়ানো ফ্যালকন গোল করে এগিয়ে দেন দলকে। কিন্তু সান হোসের জবাব আসে দ্রুত, মাত্র দুই মিনিট পরেই গোল করেন আরাঙ্গো। শুরুতেই স্কোরলাইন ১-১।

এরপর ম্যাচে রীতিমতো পাল্টাপাল্টি আক্রমণের প্রদর্শনী চলে। ৩৭ মিনিটে বিউ লেরক্সের গোলে সান হোসে এগিয়ে যায় ২-১ ব্যবধানে। তবে বিরতির আগে ৪৪ মিনিটে তাদিও অ্যালেন্ডে সমতা ফেরান (২-২)। অতিরিক্ত সময়ে ইয়ান হার্কস আবারও সান হোসেকে এগিয়ে দেন, ফলে প্রথমার্ধেই দেখা মেলে পাঁচটি গোলের।

আরো পড়ুন:

মায়ামিতে সবচেয়ে বড় হারের স্বাদ পেলেন মেসি

মেসি গোল করলেই জেতে মায়ামি

বিরতির পর বদলি খেলোয়াড় রদ্রিগেজের পাস থেকে আবারও গোল করেন অ্যালেন্ডে। এটি ছিল তার ব্যক্তিগত দ্বিতীয় গোল। ৫২ মিনিটে গোল করে ম্যাচে আবার সমতা ফেরান (৩-৩)। এরপর উভয় দলই সুযোগ তৈরি করলেও আর বল জালে জড়াতে পারেনি।

লিওনেল মেসির পা থেকে জাদু বের হয়নি এদিন। বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি হলেও একবারও গোলের দেখা পাননি তিনি। ফ্রি-কিক, ওপেন প্লে কিংবা ডান পায়ের শট—সবকিছুতেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন সান হোসের গোলরক্ষক দানিয়েল। শেষ মিনিটেও মেসির শটে ডাইভ দিয়ে দলকে রক্ষা করেন এই গোলরক্ষক।

এই ড্রয়ের ফলে ১২ ম্যাচে ইন্টার মায়ামির পয়েন্ট দাঁড়ায় ২২, অবস্থান চতুর্থ। অপরদিকে, সান হোসে ১৩ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে ষোলো নম্বরে। শীর্ষে রয়েছে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে সিনসিনাটি। তাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে ফিলাডেলফিয়া ও কলম্বাস যথাক্রমে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মূকাভিনয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছি
  • লেখকের স্বাধীনতা হরণের ইতিহাস লিখছি
  • গোল বন্যার ম্যাচে নিষ্প্রভ মেসি, জয়বঞ্চিত মায়ামি
  • রক মিউজিকে নতুন সুর
  • বিনয়ী, প্রতিবাদী সাম্যের হত্যা মানতে পারছে না কেউ
  • এই গরমে ডায়রিয়া হলে কী করবেন