জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯৮৮জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিতে পুনর্বহালের রায়
Published: 27th, May 2025 GMT
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এক যুগেরও বেশি সময় আগে চাকরিচ্যুত ৯৮৮ জন কর্মকর্তা-কর্মীচারীকে পুনর্বহালের রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ এ-সংক্রান্ত আপিল মঞ্জুর করে আজ মঙ্গলবার এ রায় দেন।
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০০৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত ওই ৯৮৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছিলেন। এমএলএসএস থেকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার সমমর্যাদার বিভিন্ন পদে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। উচ্চ আদালতের রায়ের পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১২ সালে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।
ওই ৯৮৮ জনের চাকরিচ্যুতির বিষয়ে ২০১৬ সালের ১৯ মে আপিল বিভাগ রায় দেন। এই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে গত বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আপিল বিভাগে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১ ডিসেম্বর আপিল করার অনুমতি পায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে আজ রায় দেওয়া হয়।
আদালতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন, মো.
রায়ের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপিল বিভাগের রায় অনুযায়ী চাকরিচ্যুত ৯৮৮ জনের মধ্যে যারা জীবিত আছেন, তারা প্রত্যেকেই চাকরিতে পুনর্বহাল হবেন। চাকরিচ্যুতি থেকে পুনর্বহালের দিন পর্যন্ত—এই সময়টাকে অসাধারণ ছুটি হিসেবে গণ্য হবে। এই সময়ে তাঁরা তাঁদের জ্যেষ্ঠতা পাবেন। অর্থাৎ জ্যেষ্ঠতা ক্ষুণ্ন হবে না। চাকরিচ্যুতদের ভোগান্তি ও মানবতার দিক বিবেচনা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে তাদের সুবিধাদির বিষয় নির্ধারণ করার জন্য ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।’
আপিল বিভাগ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আপিল মঞ্জুর করেছেন জানিয়ে অপরপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খায়ের এজাজ মাস্উদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপিল বিভাগের দেওয়া (১৯ মে ২০১৬) রায় বাতিল করা হয়েছে। হাইকোর্টের যে রায়ে তাদের (কর্মকর্তা-কর্মচারী) চাকরি গিয়েছিল, সেটিও বাতিল করা হয়েছে। ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে বলা হয়েছে।’
মামলার পূর্বাপর
আইনজীবীদের তথ্য অনুসারে, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৩ সালের ১৭ নভেম্বর থেকে ২০০৪ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ পান। ওই নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে রাব্বী মিয়া হাইকোর্টে রিট করেন। চূড়ান্ত শুনানির পর ২০০৬ সালের ২২ আগস্ট আদালত রিট (রুল ডিসচার্জ) খারিজ করে রায় দেন। পরে হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চে ওই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন গাজীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম মোজাম্মেল হক। শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে ওই জনবলকে কোনো রকম বিলম্ব ছাড়াই অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে দ্বিতীয় রায়ের বিরুদ্ধে ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আপিল বিভাগে পৃথক আপিল অনুমতির আবেদন (লিভ টু আপিল) করেন। এর শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বরে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের উভয় রায় বাতিল ঘোষণা করে পুনরায় রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। পুনরায় শুনানি নিয়ে ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট কয়েক দফা নির্দেশনাসহ রুল যথাযথ ঘোষণা করেন। পাশাপাশি ২০০৪ সালে কয়েকটি পত্রিকায় দেওয়া বিজ্ঞপ্তির আলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করেন। এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জরুরি সভা আহ্বান করে ২০১২ সালের এপ্রিলে ওই কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করে।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে লিভ টু আপিল করেন সংক্ষুব্ধরা। শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ১৯ মে আপিল বিভাগ পর্যবেক্ষণসহ লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করেন। হাইকোর্টের (২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দেওয়া) রায় বহাল থাকে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং গত বছর পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করে। রিভিউ আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ লিভ মঞ্জুর (আপিল করার অনুমতি) করেন। এর ধারাবাহিকতায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চলতি বছর আপিল করে। এই আপিল মঞ্জুর করে আজ রায় দিলেন আপিল বিভাগ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ য ষ ঠ আইনজ ব চ কর চ য ত আপ ল ব ভ গ ২০১২ স ল কর মকর ত গত বছর র আপ ল সদস য আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র হতে পারে, আশা আসিফ মাহমুদের
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে কাজ চলছে উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেছেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা রয়েছে, যাতে আগামী ৫ আগস্ট ঘোষণাপত্র দেওয়া যায়। সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই রাজনৈতিক ঐকমত্যে আসা প্রয়োজন। সবার মতামতের ভিত্তিতে সরকার জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে চায়। আমরা আশা করছি, আগামী ৫ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ এ কথা বলেন।
নির্বাচন প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনের জন্য যেসব স্টেকহোল্ডার রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত, সবাই যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে নিচ্ছে। এখনো তো সরকারের চূড়ান্ত তারিখ পাইনি আমরা, সবেমাত্র সম্ভাব্য ডেট পেয়েছি, চূড়ান্ত ডেট পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সংস্কার প্রসঙ্গে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। আপনারা জানেন সংস্কার কমিশনগুলো কাজ করছে। সবাই ঐকমত্যে পৌঁছাচ্ছেন। সেই ভিত্তিতে একটা জুলাই চার্টার হবে, কী কী সংস্কার হবে। এর মধ্যে যেগুলো বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো বাস্তবায়ন হবে। ইতিমধ্যে আমরা কাজ করছি। স্থানীয় সরকার বিভাগকে যেসব সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেগুলো আমরা বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। আশা কিছুদিনের মধ্যে হয়তো আপনারা ফলাফল দেখতে পাবেন।’
এ সময় কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. সহিদ উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমানসহ অন্য আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।