যে কারণে এখন সমালোচনায় কান দেন না দিঘী
Published: 12th, February 2025 GMT
শিশুশিল্পী হিসেবে বড় পর্দায় পা রাখেন অভিনেত্রী প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। বেশ কিছু সিনেমা ও ওটিটি কন্টেন্টে কাজের সুবাদে দর্শর্কে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। এসবের মাঝে কাজ ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মাঝে মধ্যে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাঁকে। তবে সমালোচনায় কখনো কান দেন তিনি। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন সমালোচনা নিয়ে মাথা ঘামানোও উচিত নয়।
দিঘী বলেন, ‘সমালোচনায় কখনো কান দিই না। তবে যদি সামনে পড়ে যায়, তাহলে শোনা উচিত। মাথা ঘামানো উচিত নয়। যখন নতুন ছিলাম, তখন সমালোচনা আমাকে অনেক বেশি হিট করত। এখন কারও সমালোচনা করা ট্রেন্ডি হয়ে গেছে। কাউকে নিয়ে নেতিবাচক কথা বললে মনে করেন, তিনি অনেক বোঝেন। অনেক জানেন। অনেকে আরেকজনকে ছোট করে নিজেকে বড় মনে করেন। তাঁরা শোধরানোর জন্য সমালোচনা করেন না।’
কে ভালো চান আর কে খারাপ চান- তা এখন কিছুটা হলেও বুঝতে পারেন দিঘী। কাজের ক্ষেত্রে নিজের বাবাকে বড় সমালোচক মনে মনে অভিনেত্রী।
দিঘীর ভাষ্য, ‘আমি এটা বুঝতে পারি, কে আমার ভালো কিংবা খারাপ চান। যদি ভুল শোধরানোর কিছু থাকে, তাহলে বাসায় বাবা আছেন, যিনি আমার সবচেয়ে বড় সমালোচক, কখন কোনটা করা উচিত, তিনিই আমাকে বলে দিতে পারবেন। বাদ বাকিগুলো না কানে শুনি, না গায়ে লাগাই।’
বর্তমানে ভ্যালেন্টাইন, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কাজ করছেন। ঈদে তার অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’ মুক্তি পাবে। এখানে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক সিয়াম। এছাড়া নতুন কয়েকটি সিনেমা নিয়েও কথা চলছে বলেও জানান তিনি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
প্রিয় সাইকেলটি চুরি হওয়ায় তিন বোনের মন খারাপ
প্রায় এক মাস আগে রাজধানীর ধানমন্ডির সরকারি অফিসার্স কোয়ার্টারের পঞ্চম তলা থেকে এক সহকারী সচিবের তিন মেয়ের পুরোনো একটি সাইকেল চুরি হয়। এ ঘটনায় মামলা হয় ধানমন্ডি থানায়।
কিন্তু সাইকেলটি এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। চোরও ধরা পড়েনি। প্রিয় সাইকেলটি উদ্ধার না হওয়ায় তিন বোনের মন খুব খারাপ।
সহকারী সচিব শেখ তৈয়েবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পয়লা বৈশাখের আগের দিন দিবাগত রাত তিনটার দিকে এক চোর পঞ্চম তলা থেকে সাইকেলটি চুরি করে নিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে মনঃকষ্টে আছে তিন মেয়ে।
এই কোয়ার্টারে ৭২টি পরিবার বসবাস করে। বাসিন্দাদের অধিকাংশ কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও সহকারী সচিব পদমর্যাদার। সাইকেল চুরির বিষয়টি নিয়ে কোয়ার্টারের প্রতিবেশী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তৈয়েবুর রহমান। পরে মামলা করা হয়। কোয়ার্টারের এক নিরাপত্তারক্ষী বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
তৈয়েবুর রহমান বলেন, ‘আমরা সবাই একমত হই যে কোয়ার্টারে ঢুকে ভবনের প্রধান ফটকের তালা খুলে পাঁচতলায় উঠে দুটি তালা কেটে যে চোর সাইকেল চুরি করতে পারে, সে সাধারণ নয়। তাই মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়।’
তৈয়েবুর রহমান, মামলার বাদী ও ধানমন্ডি থানার পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোয়ার্টারে প্রবেশের পথে একটি পুরোনো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) আছে। কোয়ার্টারের চারপাশে আছে উঁচু দেয়াল। কোয়ার্টারে প্রবেশপথে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তারক্ষী থাকেন। এই প্রবেশপথ থেকে কিছুটা দূরের দেয়াল টপকে একজন চোর কোয়ার্টারের ভেতরে ঢোকে। তার মুখমণ্ডল গামছা দিয়ে ঢাকা ছিল। সে ভবনের প্রবেশফটকের তালা খুলে সিঁড়ি দিয়ে পঞ্চম তলায় ওঠে। ফ্ল্যাটের বাইরে জানালার সঙ্গে দুটি তালা দিয়ে সাইকেলটি আটকানো ছিল। তালা দুটি কেটে সাইকেলটি নিয়ে দেয়াল টপকে চলে যায় চোর।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সাইকেল চুরির ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছেন তাঁরা। তবে সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চোরের সুস্পষ্ট মুখ অবয়ব দেখা যায়নি। তারপরও তাঁরা সাইকেলটি উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
স্মৃতির সাইকেলতৈয়েবুর রহমানের তিন মেয়ে—তনিমা রহমান, অনিমা রহমান ও রাইয়ানা রহমান। তৈয়েবুর রহমান একটি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। তাঁর স্ত্রী গৃহিণী। এই দম্পতির বড় মেয়ে তনিমা উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। মেজ মেয়ে অনিমা উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আর ছোট মেয়ে রাইয়ানা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
ধানমন্ডির সরকারি অফিসার্স কোয়ার্টারের সামনে প্রশস্ত খোলা জায়গা রয়েছে। সেখানে কোয়ার্টারের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করে। কেউ কেউ সাইকেল চালায়।
তনিমা যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, তখন সে দেখত, কোয়ার্টারের সমবয়সীরা বাসার সামনে সাইকেল চালায়। তনিমা বাবার কাছে বায়না ধরে, তাকে একটি সাইকেল কিনে দিতে হবে। পরে মেয়ের জন্য একটি সাইকেল কিনে আনেন তৈয়েবুর রহমান। বাবার সহযোগিতায় তনিমা সাইকেল চালানো শেখে। এরপর একা একাই সাইকেল চালাতে শুরু করে।
তনিমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবার কিনে দেওয়া সেই কালো রঙের সাইকেলের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। গত পয়লা বৈশাখের আগের দিন সাইকেলটি চুরি হওয়ায় আমার মন অনেক খারাপ।’
শুরুতে সাইকেল চালাতে গিয়ে বারবার পড়ে যাওয়া, আবার ওঠাসহ অনেক স্মৃতিচারণা করেন তনিমা। একপর্যায়ে তিনি দক্ষ হয়ে ওঠেন। সেই শৈশব-কৈশোরে বন্ধুদের সঙ্গে বাসার সামনে সাইকেল চালানোর প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দারুণ আনন্দ পেতেন তিনি। সাইকেল নিয়ে এসব স্মৃতি এখন তাঁর মাথায় সারাক্ষণই ঘুরছে বলে জানালেন তিনি।
নবম শ্রেণি পর্যন্ত নিয়মিত সাইকেলটি চালাতেন তনিমা। একই সময় অনিমাও সাইকেলটি চালাত। ফলে সাইকেলটি নিয়ে দুই বোনের অনেক গল্প আছে। আর একদম ছোট বোন রাইয়ানা সম্প্রতি সাইকেল চালানো শিখছিল।
তনিমা প্রথম আলোকে বলল, ‘রাইয়ানা রোজ ঘুমানোর সময় আমাকে বলছে, “আপু, আমাদের সাইকেলটি পাওয়া গেছে?” আমরা তাকে কোনো জবাব দিতে পারছি না। ওর মন সব থেকে বেশে খারাপ। আমি মানতেই পারছি না, পঞ্চম তলায় দুটি তালা লাগানো অবস্থায় আমাদের সাইকেলটি কীভাবে চুরি হয়ে গেল?’
সাইকেলটি দেখে রাখত রাইয়ানাতনিমা-অনিমা বড় হয়ে যাওয়ায় সাইকেলটি আর চালাত না। তাদের ছোট বোন রাইয়ানা সাইকেলটি চালানো শিখছিল। তাই সে-ই সাইকেলটি দেখে রাখত।
পাঁচতলা থেকে সাইকেলটি বাসার সামনের চত্বরে নিয়ে রাইয়ানাকে চালানো শেখাত তনিমা-অনিমা। তনিমা বলেন, ‘রাইয়ানা বাসা থেকে বেরিয়ে সাইকেলের বেলটি বাজাত। সে যখন বেলটি বাজাত, তখন আমি চলে যেতাম শৈশবের দিনগুলোয়। আমিও ছোটবেলায় সাইকেলের বেল বাজাতাম। সাইকেলের গায়ে লেগে থাকা ধুলো মুছে রাখত রাইয়ানা। সাইকেল চুরি হওয়ার পর থেকে তার মন অনেক খারাপ।’
গত সোমবার রাইয়ানাকে নিয়ে তার স্কুলে যাচ্ছিলেন বাবা তৈয়েবুর রহমান। তখন বাসার অদূরে তাঁর মেয়েদের সাইকেলটির মতো একটি সাইকেল দেখতে পান। সাইকেলটি দেখে রাইয়ানা তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিল, তাদের সাইকেলটি পাওয়া গেছে কি না? জবাবে তৈয়েবুর রহমান বলেন, ‘মা, দেখতে একই রকমের হলেও এটি তোমাদের সেই সাইকেল না। এটি অন্য কারও সাইকেল।’
মামলাটির তদারক কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবদুল আলীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইকেলটি চুরি হওয়ার পর থেকে তিন বোনের মন খারাপের ব্যাপারটি আমরা জানি। তাদের বাসায় পুলিশ গিয়ে কথা বলেছে। সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সাইকেলটি উদ্ধার করতে।’
ছোট বোন রাইয়ানার মন ভালো করার জন্য হলেও পুলিশ যেন স্মৃতিবিজড়িত প্রিয় সাইকেলটি উদ্ধারের ব্যবস্থা করে, সেই আকুতি তনিমার।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তারক চন্দ্র শীল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইকেল চুরি হওয়ার পর আমরা বাসাটিতে গিয়ে তিন বোনের সঙ্গে কথা বলেছি। সাইকেলের সঙ্গে তাদের আবেগ জড়িত। আমরা আশা করি, তিন বোনের চুরি হওয়া সাইকেলটি উদ্ধার করে ফেরত দিতে পারব।’