বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগের সমাধান করবে: আমীর খসরু
Published: 13th, May 2025 GMT
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তারা ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগের সমাধান করবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। সোমবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে এএনআই।
সাক্ষাৎকারে আমীর খসরু জানিয়েছেন, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা, কল্যাণ এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত।
তিনি বলেছেন, “ভারত আমাদের প্রতিবেশী। স্পষ্টতই, আমরা সবাই আশা করি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রতিবেশীসুলভ হওয়া উচিত। পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল, পারস্পরিক কল্যাণকর, হস্তক্ষেপ না করা - এগুলো যেকোনো সম্পর্কের ভিত্তি। আমরা চাই সম্পর্কটি স্থায়ী হোক ও সমৃদ্ধ হোক। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আমরা এভাবেই দেখি। উভয়পক্ষেরই সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া, চেষ্টা করা এবং কাজ করা উচিত, যাতে এই সম্পর্কটি আমি যে ভিত্তির কথা বলেছি তার মাধ্যমে টিকে থাকে।”
ভারত ও বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়গুলো আলোচনার টেবিলে আনা প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন.
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগের সমাধান করবে বলেও জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি না উদ্বেগের কোনো কারণ আছে। বাংলাদেশের অগ্রাধিকার হল সমৃদ্ধ, উন্নত দেশ। বিএনপি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, এই ভূমি কখনোই কোনো বিদ্রোহী বা সন্ত্রাসীদের জন্য ব্যবহার করা হবে না। অবশ্যই, উভয়পক্ষ পারস্পরিকভাবে এই ধরনের পরিস্থিতিকে সম্মান করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সবকিছুই পারস্পরিক। প্রতিবেশী সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন সন্ত্রাসী ও কর্মীদের জন্য কোনো পক্ষেরই ব্যবহৃত হওয়া উচিত নয়।”
বিএনপি নেতা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের উদ্বেগের বিষয়েও কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, “কেন এটা ভারতের উদ্বেগের বিষয় হবে, আমি বুঝতে পারছি না। এটা বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণের উদ্বেগের বিষয়। আমার মনে হয় বাংলাদেশিরা এই বিষয়ে অনেক সচেতন। বাংলাদেশ সম্প্রীতির সেরা দেশগুলোর মধ্যে একটি। সংখ্যালঘু, ভাষাগত পার্থক্য এবং সাংস্কৃতিক পার্থক্যের মধ্যে আমাদের চমৎকার সহাবস্থান রয়েছে এবং এটি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ছত্রছায়ায় হয়। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে যারাই বাস করে তারা সমান নাগরিক। আমরা কখনোই ধর্ম, সংস্কৃতি, বা ভাষাগত পার্থক্য নিয়ে বৈষম্য করি না। এটি বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়। ভারত কেন এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হবে? ভারতীয় সংখ্যালঘুদের সাথে কী ঘটবে তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। কারণ সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা ভারত সরকার এবং ভারতীয় রাজনীতিবিদদের কাজ।”
বাংলাদেশে ভারতবিরোধী বক্তব্য সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “রাজনীতিতে প্রভাবমূলক বক্তব্য অস্বাভাবিক নয়। প্রভাবমূলক বক্তব্য উভয় পক্ষেই থাকে। রাজনীতিবিদরা তাদের নিজস্ব নির্বাচনী এলাকার জন্য প্রভাবমূলক বক্তব্য রাখেন। এটি উভয়পক্ষেই ঘটে। প্রভাবমূলক বক্তব্য তো বক্তব্যই। নীতি আরো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রভাবমূলক বক্তব্য উভয়পক্ষের জন্যই ভালো নয়। আমাদের একে অপরের সম্পর্ককে সম্মান করা উচিত। হস্তক্ষেপ না করাই মূল বিষয়।”
বিএনপির এই নেতা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ভালো বাণিজ্য সম্পর্কের জন্য সামগ্রিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত করার উপর জোর দিয়ে বলেন,“যদি আপনার সত্যিই ভালো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক থাকে, তাহলে তা সব ধরণের সম্পর্ক উন্নত করতে এবং এগিয়ে নিতে উৎসাহিত করবে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কও উন্নত করা উচিত।”
ঢাকা/শাহেদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য আম দ র ব এনপ ন করব
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।