বনের অসুস্থ হাতির জন্য অন্য রকম ভালোবাসা
Published: 25th, May 2025 GMT
শেরপুরের নালিতাবাড়ী সীমান্তের গারো পাহাড়ের লোকালয়ে গত ১৫ এপ্রিল নেমে আসে ৪০-৪৫টি হাতির দল। সেই দলে ছিল একটি অসুস্থ হাতি। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিল। সামনের ডান পা ফুলে থাকা হাতিটি একসময় দলছুট হয়ে পড়ে। বিষয়টি স্থানীয় একজনের নজরে আসে। তিনি এ নিয়ে বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলেন।
বন্য হাতিটির চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত হয়। ২৭ এপ্রিল থেকে বন বিভাগের কর্মীরা দল বেঁধে এক টিলা থেকে আরেক টিলায় ঘুরে হাতিটিকে খুঁজতে থাকেন। ৩০ এপ্রিল বিকেলে কাটাবাড়ী এলাকার জঙ্গলে হাতিটিকে পাওয়া যায়। তখন খবর দেওয়া হয় গাজীপুর সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন মো.
১ মে সকাল ১০টার দিকে কাটাবাড়ীতে একটি জলাশয়ের ধারে হাতিটিকে ঝিমাতে দেখা যায়। দূর থেকে ট্রানকুইলাইজার বন্দুক দিয়ে অচেতন করা হয়। এরপর শুরু হয় চিকিৎসা। আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে হাতিটির চিকিৎসা।
এই দলে ছিলেন গাজীপুর সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ল্যাব টেকনিশিয়ান আতিকুর রহমান ভূঁইয়া, ভেটেরিনারি সার্জন সাকিব হোসেন, সহকারী মোস্তফা কামাল, শেরপুর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. শাহিন কবির, বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন সরকার, ওয়াইল্ডলাইফ রেঞ্জার মো. আবদুল্লাহ আল আমিন, মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. দেওয়ান আলী এবং সমশ্চুড়া বিট কর্মকর্তা মো. কাউসার হোসেন।
চিকিৎসকেরা বলেন, ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী হাতিটির সামনের ডান পায়ে ধারালো অস্ত্রের পুরোনো ক্ষত ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, দেড় থেকে দুই মাস আগে কেউ বল্লম জাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করেছিল। সেই ক্ষতস্থানে পচন ধরেছিল। ক্ষত পরিষ্কার করে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়, ব্যান্ডেজ করা হয়। পরে বিশেষ ইনজেকশন দিয়ে হাতিটিকে জাগিয়ে তোলা হয়। ২০-২৫ মিনিট পর হাতিটি জঙ্গলের ভেতরে চলে যায়।
অসুস্থ হাতিটি নজরে এসেছিল বন্য প্রাণিপ্রেমী স্থানীয় বাসিন্দা কাঞ্চন মারাকের। তিনি বলেন, গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে তিনি প্রথম অসুস্থ হাতিটিকে দেখেন। তিনি সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন। বিষয়টি বন বিভাগের নজরে আসে। বন বিভাগ দ্রুত অসুস্থ হাতিটির চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়।
দ্বিতীয় দফায় ১৭ মে রাতে আবারও বিশেষজ্ঞ দল মধুটিলা আসে। পরদিন সকালে ছয় ঘণ্টা ঘুরে বড়খোল জঙ্গলে হাতিটির অবস্থান পাওয়া যায়। আবারও অচেতন করে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
চিকিৎসকেরা বলেন, হাতিটির ক্ষতস্থানের ৮০ শতাংশ ভালো। তবে পায়ের ফোলাভাব পুরোপুরি কমেনি। ওষুধ দেওয়া হয়েছে। এরপর ২১ মে দুপুরে বন বিভাগের দল আবারও হাতিটির খোঁজ নেয়। তখন কলাগাছ, ধানসহ বিভিন্ন খাবার দেওয়া হয়। পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত হাতিটির গতিবিধি নজরদারিতে রাখা হবে। প্রয়োজনে আবারও চিকিৎসা দেওয়া হবে।
হাতিটি বল্লমের আঘাতে আহত হয়েছিল জানিয়ে মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. দেওয়ান আলী বলেন, ‘হাতিটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলত। চিকিৎসা দিতে পেরে ভালো লাগছে। এখনো নজরদারিতে রেখেছি। প্রয়োজনে আবারও চিকিৎসা দেওয়া হবে।’
শেরপুরের প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. শাহিন কবির বলেন, অসুস্থ হাতির খবর পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এরপর সীমান্তবর্তী এলাকায় তাকে দুই দফায় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বন্য হাতিকে বনে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার ঘটনা দেশে সম্ভবত এটাই প্রথম।
প্রতিবছরই ধান ও কাঁঠালের মৌসুমে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসে হাতি। এ সময় ফসল রক্ষায় মাঠে থাকা মানুষের সঙ্গে হাতিদের সংঘাত হয়। প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তবে এবার ভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। অসুস্থ হাতির জন্য এগিয়ে এল বন বিভাগ। বনের প্রাণীকে চিকিৎসা দিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে তারা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র কর মকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেমিকার দেখা পেতে বোমা ছুঁড়ে গ্রেপ্তার প্রেমিক
রাগ করে কথা বন্ধ করেছিল প্রেমিকা। রাগ ভাঙিয়ে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে, একটু কথা বলতে ইউটিউব থেকে বোমা তৈরিত কৌশল শিখেছিল প্রেমিক। বোম ফাটার শব্দে যদি প্রেমিকা বেরিয়ে আসে... এই আশায়। এক্সপার্টের মতো বানিয়েও ফেলে বোমা। কিন্তু বোমা ফাটার তীব্র সেই শব্দে আতঙ্কিত হয়ে প্রেমিক ও তার বন্ধুরা পালিয়ে যায় নিজেরাই।
গত ২৮ অক্টোবর, ছট পূজার রাতে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি এক আবাসিক এলাকা গভীর রাতে বোমা বিস্ফোরণের তীব্র আওয়াজে কেঁপে উঠে। বোমা মারার সেই ঘটনা দুষ্কৃতী আক্রমণ ভেবে লেগেছিল রাজনৈতিক রং, তৈরি হয়েছিল আতঙ্ক। হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে খবরের শিরোনাম। স্বাভাবিকভাবেই দুষ্কৃতীদের ধরতে চাপে পড়ে পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু তদন্তে প্রেমিক প্রেমিকার রাগ ভাঙানোর তথ্যে তদন্ত যেন মোড় নিয়েছে আশ্চর্যের এক প্রেমের গল্পে।
আরো পড়ুন:
বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ভারতীয় পাসপোর্টের অবনতি কেন?
জঙ্গি সন্দেহে ভারতে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি ‘মুফতি মাসুদ’
পুলিশ জানায়, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড মালিরবাগান খামারডাঙা এলাকায় একটি বাড়িতে বোমা ছোঁড়া হয়। বাড়িটির দেয়ালে লাগে বোমা, জানালার কাঁচ ভেঙে যায়।
ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ বাড়িটির বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। কিন্তু কোনো সূত্র পাওয়া যায় না। এরপর এলাকার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি সিসিটিভির ফুটেজে একটি বাইকের ছবি দেখে তার সন্ধান শুরু করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মালিরবাগান এলাকায় যেখানে বোমাবাজি হয়েছিল সেখানে এক তরুণীর সঙ্গে চাঁপদানীর স্থানীয় যুবক সাগর মালিকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কে অবনতি হওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে প্রেমিক প্রেমিকার দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছিল না। এর মধ্যেই প্রেমিক বন্ধুদের মারফত জানতে পারে প্রেমিকা অন্য এক যুবকের সঙ্গে মেলামেশা করছে। এদিকে সাগরের ফোন ধরা বন্ধ করে দেয় তরুণী।
কী করে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করা যায় সেটাই ভাবতে থাকে প্রেমিক। এরপরেই বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা করে দেখা করার বুদ্ধি বের করে সাগর। ইউটিউব দেখে বেশ কয়েক ধরনের পটকার উপদান দিয়ে বোমা বানায়। সেটি ফাটানোর পরিকল্পনা করা হয় প্রেমিকার বাড়ির পাশে।
বোমা ফাটার আওয়াজে তরুণী প্রেমিকা যদি বেরিয়ে আসে তাহলে তার সঙ্গে কথা বলবে- এই উদ্দেশ্য নিয়ে ছট পূজার রাতে চার বন্ধু পৌঁছে যায় মালিরবাগান এলাকায়। বোমা ছোঁড়ে একটি বাড়ির দেওয়ালে। এতটাই জোরে শব্দ হয় যে তারা নিজেরাই ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।
এদিকে পুলিশ ওই তরুণীর সঙ্গে সাগরের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে তার খোঁজ শুরু করে। পাশাপাশি বাইকের নম্বর দেখে খোঁজ শুরু করে। সাগর এবং তার বন্ধুদের বাড়ি গিয়ে পুলিশ জানতে পারে যে, তারা ঘটনার পর থেকে আর বাড়িতে থাকছিল না। ঘটনার পর চার বন্ধুই কল্যাণীতে পালিয়ে গিয়েছিল বলে জানতে পারে পুলিশ। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে গতকাল শুক্রবার পুলিশ তাদেরকে ব্যারাকপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আটক সাগর মালিক, প্রিন্স যাদব, প্রণীত পাল, আয়ুস যাদব, চারজনেরই বয়স ১৮-২০ বছর।ইতিমধ্যেই তাদের শ্রীরামপুর আদালতে পেশ করা হয়েছে। আরো জিজ্ঞাসাবাদ জন্য পুলিশ তাদের রিমান্ডে নিয়েছে।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ