প্রতিশ্রুতি দিয়েও শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহে ব্যর্থতার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন বস্ত্র ও পোশাকশিল্প খাতের উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, সরকার যদি শিল্পে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে হাজার হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। তখন সরকার নিজেই এসব কারখানা চালাক, অথবা যেসব বিদেশিকে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হচ্ছে, তাদের হাতে এসব শিল্প তুলে দেওয়া হোক।

গতকাল রোববার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী নেতারা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিটিএমএলইএর শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই, বিসিআই এবং আইসিসি-বাংলাদেশসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক চেম্বারের প্রতিনিধিরা।

দেশে বেকার সংকট বৃদ্ধির কারণে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলন হয়েছিল। তারপরই বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে– স্মরণ করিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, এ সরকারের দায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া। অথচ উল্টো শিল্প বন্ধ করা হচ্ছে; মানুষ নতুন করে বেকার হচ্ছে। একদিকে গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে কারখানা বন্ধ থাকবে; অন্যদিকে ব্যাংকে বেশি সুদ দিতে হবে। আবার এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলনে জাহাজীকরণও বন্ধ। এত কিছুর পর সময়মতো শ্রমিকদের বেতন-ভাতাও দিতে হবে। ব্যর্থ হলে মালিকদের গাড়ি-বাড়ি বিক্রি করে বেতন পরিশোধ করবে সরকার। এমনকি জেলে পাঠানোরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কারখানা বন্ধ থাকলে শ্রমিকদের বসিয়ে রেখে কীভাবে বেতন দেওয়া হবে? 

বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, ‘কভিড মহামারিকালেও শ্রমিকদের বেতন দিয়েছি। আন্দোলনের সময়েও কারখানা বন্ধ রেখে বেতন দিয়েছি। এখন আর পারছি না। নিয়মিত বিল দিচ্ছি, তবুও গ্যাস পাচ্ছি না।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিটিএমএ পরিচালক রাজীব হায়দার, খোরশেদ আলম, বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী, বিটিটিএমএলইএর চেয়ারম্যান হোসেন মাহমুদ, একই সংগঠনের সাবেক চেয়ারম্যান শাহাদৎ হোসেন সোহেল, বিটিএমএ সহসভাপতি সালেউদ জামান খান, পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন, এফবিসিসিআইর সদস্য জাকির হোসেন নয়ন প্রমুখ। 

তীব্র গ্যাস সংকট সমাধানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.

কে. আজাদ, স্কয়ার টেক্সটাইলের চেয়ারম্যান তপন চৌধুরী, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল এবং বিটিএমএর সাবেক সভাপতি মতিন চৌধুরী।

মতিন চৌধুরী সমকালকে জানান, গ্যাস সংকটে দেশের কারখানাগুলোতে কী সংকট চলছে, তা জ্বালানি উপদেষ্টাকে বলা হয়েছে। এতে যে রপ্তানি ব্যাহত হবে– সতর্ক করা হয়েছে সে বিষয়ে। উপদেষ্টা বাস্তব অবস্থা দেখতে সোমবার (আজ) ঢাকার অদূরে আশুলিয়া অঞ্চলে বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শনে যাবেন। এর পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ট এমএ ব যবস য় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অপেক্ষায় আছেন উদ্যোক্তারা: জিইডির প্রতিবেদন

নতুন ব্যবসা চালু করতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অপেক্ষায় আছেন বহু উদ্যোক্তা। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সর্বশেষ মাসিক অর্থনৈতিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

জিইডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আসন্ন নির্বাচন যদি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক গতিপথ ঠিক করে এবং নতুন সরকার এসে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা, আর্থিক ও ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা, জ্বালানি নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ অব্যাহত রাখে, তাহলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ফিরে পাবে।

জিইডির ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় অর্থনীতি নিয়ে সতর্ক আশাবাদ দেখিয়েছে জিইডি। জিইডি বলছে, একদিকে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে স্থায়ী মূল্যস্ফীতি, ব্যবসায়িক আত্মবিশ্বাস ও দুর্বল ব্যাংকিং খাত স্থানীয় চাহিদা ও বেসরকারি বিনিয়োগকে সীমিত করতে পারে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ভালো অবস্থায়

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের অবস্থান আগের তুলনায় ভালো হয়েছে বলে মনে করছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। গত বছরের নভেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। এ ছাড়া প্রবাসী আয়ের ধারাবাহিক প্রবাহ বেড়েছে, যা দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অবস্থান ভালো হওয়ার বড় কারণ।

জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে চলতি বছরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বা বহির্বাণিজ্যের সূচকে অস্থিরতা ছিল। রপ্তানি আয়ের সূচকও ওঠানামা করেছে। বিশেষ করে ২০২৫ সালের এপ্রিল ও জুনে রপ্তানি আয়ে পতন দেখা যায়। তবে অক্টোবরে এই সূচকের অবস্থানে উন্নতি দেখা যায়। তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানির সূচকে বছরের অর্ধেক সময় পর্যন্ত ধীরগতি দেখা গেলেও পরবর্তী সময়ে উন্নতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের নভেম্বরে মোট রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০২৫ সালের অক্টোবরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।

প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে। এর কারণ খাদ্যের দাম স্থিতিশীল হচ্ছে ও সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরীণ সরবরাহের শৃঙ্খলে স্থিতিশীলতা ও আমদানি করা পণ্যের চাপ কম থাকায় চলতি বছরের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরে ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমার বড় কারণ হচ্ছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছে, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরের ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবরে ৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশে নেমে এসেছে।

মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান ৪৭ শতাংশ

খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে চাল। জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান ছিল ৪৭ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরের তুলনায় সামান্য কম। আর মাছ ও মাংসের ভূমিকা ছিল যথাক্রমে ৩৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তবে পর্যাপ্ত মৌসুমি সরবরাহ ভালো থাকায় সবজির দাম কম ছিল। তাই সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমাতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে সবজি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অপেক্ষায় আছেন উদ্যোক্তারা: জিইডির প্রতিবেদন
  • নারায়ণগঞ্জে পানি সরবরাহ খাতে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন 
  • ছাত্র সংসদ নির্বাচন হঠাৎ স্থগিত, উপাচার্যের দপ্তরের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান  
  • সরকার কড়াইল বস্তির বাসিন্দাদের অধিকারের তোয়াক্কা করছে না: জোনায়েদ সাকি
  • মুক্তিযুদ্ধের সরল গল্পের বাইরের গল্প
  • এবার পদ্মা ও মেঘনা কোম্পানিতে ডিজেল ‘গায়েব’, দেড় লাখ লিটার গেল কোথায়
  • ১১ ব্যবসায়ীকে সম্মাননা দিল বিজিএপিএমইএ  
  • পোশাক, ইস্পাত, সারসহ শিল্প খাতে উৎপাদন ৩০–৫০% কমেছে: ঢাকা চেম্বার সভাপতি