ফুসফুসে ক্যান্সারের কারণে সরকারি অর্থ সহায়তার জন্য সমাজসেবা অফিসে আবেদন করেছিলেন মির্জাপুর উপজেলার চিতেশ্বরী গ্রামের ইসমাইল হোসেন। সম্প্রতি চেক নিয়ে তাঁর মেয়ে ইসমত আরা বলেন, তাঁর বাবা চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২২ সালে মারা যান। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৩ মে সমাজসেবা অফিস থেকে চিকিৎসা সহায়তা বাবদ ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বেঁচে থাকতে টাকাটা পেলে কাজে লাগত।
জামুর্কী ইউনিয়নের কড়াইল গ্রামের লুৎফর রহমান তালুকদারের মেয়ে ফাতেমা আক্তারের বাবা ২০২৩ সালে স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে যান। তাঁর চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছিল পরিবার। চিকিৎসার জন্য ২০২৩ সালে সাজসেবা অফিসে আবেদন করেছিলেন তারা। কিন্তু গত বছরের মার্চে বাবা মারা যান জানিয়ে তিনি বলেন, বাবার মৃত্যুর এক বছর পর তারা সরকারি অর্থ সহায়তার চেক পেয়েছেন।
কিডনির সমস্যা, লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের চিকিৎসায় সহায়তা হিসেবে সমাজসেবা দপ্তরের মাধ্যমে সহায়তা দেয় সরকার। কিন্তু আবেদনের পর টাকা পেতে দীর্ঘ সময় লাগছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্থ মিলছে রোগীর মৃত্যুর পর। যখন টাকা হাতে আসছে, তখন তা রোগীর কোনো কাজে আসে না। এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে।
বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১০ জন জটিল রোগীর ক্ষেত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর পর তাদের পরিবারের সদস্যরা পেয়েছেন সরকারি অর্থ সহায়তা। বিপুল সংখ্যক আবেদন যাচাই-বাছাই করে অনুমোদনের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় লেগে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সমাজসেবা অফিস থেকে জানা গেছে, ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকে প্যারালাইজড, জন্মগত হৃদরোগ ও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা দেয় সরকার। আগে মন্ত্রণালয়ে সরাসরি আবেদন করলে এ সহায়তা পাওয়া যেত। ২০২১ সাল থেকে অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। আবেদনের হার্ড কপি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে জমা দেওয়ার পর সেগুলো জেলা সমাজসেবা অফিস হয়ে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে যায়।
জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে নিয়ে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি রয়েছে। সে কমিটি যাচাই-বাছাই শেষে যাদের মনোনীত করে, তারা এ সহায়তা পান। এ প্রক্রিয়া শেষ হতে ১৫ দিন থেকে তিন মাস সময় লাগে। সরকার তিন মাস পর পর এ খাতে অর্থ বরাদ্দ দেয়। যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ আসে, সে তুলনায় অন্তত ২০ গুণ আবেদন জমা হয়।
প্রতি বছর উপজেলায় এভাবে অন্তত ১০০ থেকে ১১০ জন জটিল রোগী অর্থ সহায়তা পান বলে সমাজসেবা কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ৫০ হাজার থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দেওয়া হয়। সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সরকারি আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ করা হয়। এদিন ১০ জন রোগীকে অর্থ দেওয়া হয়েছে। তাদের সবার মৃত্যু হওয়ায় পরিবারের সদস্যরা চেক গ্রহণ করেন। এদিন প্রায় সবাই অশ্রুসিক্ত নয়নে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন। কারণ, যার জন্য এ সহায়তা, তিনিই বেঁচে নেই।
উপজেলার ১০ জনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবেদনের দুই থেকে তিন বছর পর হওয়ার পর আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন তারা। এরই মধ্যে সবাই মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের নামে বরাদ্দ হওয়া চেক পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দিয়েছে সমাজসেবা অফিস। মীর দেওহাটা গ্রামের জুলহাস মিয়ার বাবা মোসলেম উদ্দিন কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০২৩ সালে মারা যান। ২০২২ সালে তাঁর বাবা সহায়তার জন্য আবেদন করেছিলেন। গত ১৩ মে তাঁর পরিবার ৫০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তার চেক পেয়েছে।
একইভাবে উপজেলার পেকুয়া গ্রামের শুকুর আলী, ভড়রা গ্রামের কহিনূর বেগম, ধেরুয়া গ্রামের ফুল খাতুন, কামারপাড়া গ্রামের জাহেদা বেগম, গোড়াই গ্রামের আলমগীর হোসেন, পাকুল্যা গ্রামের ওয়াসিম, বাঁশতৈল গ্রামের সুপিয়াদের নামে বরাদ্দ হয় সহায়তা। তাদের চেক পরিবারের সদস্যদের কাছে দেওয়া হয়েছে।
শফি উদ্দিন মিয়া অ্যান্ড একাব্বর হোসেন টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন বলেন, জটিল রোগের রোগীরা জীবিত থাকতে সহায়তা পেলে অর্থটা সঠিক কাজে ব্যবহার হবে। দ্রুত সহায়তা দিতে কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিপুল সংখ্যক আবেদনের কারণে সহায়তা পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায় বলে জানান উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোবারক হোসেন। তিনি বলেন, জেলার পাশাপাশি উপজেলা কমিটি গঠন, সিভিল সার্জন নির্ভর না হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে এ কাজে যুক্ত করা প্রয়োজন। এতে চিকিৎসা সহায়তা দ্রুত ও অধিকতর মুমূর্ষুদের বাছাই করা সহজ হতো।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র র সদস জট ল র গ সময় ল গ বর দ দ র জন য উপজ ল সরক র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

জুবাইদা রহমানের আপিলের রায় বুধবার

সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমানের আপিল শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী বুধবার (২৮ মে) রায় দেবেন হাইকোর্ট।

সোমবার (২৬ মে) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন।

আদালতে জুবাইদা রহমানের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন ভূঞা।

আরো পড়ুন:

ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে: তারেক রহমান

খালেদা-তারেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা
দুদকের সাবেক ৩ চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

গত ১৪ মে জুবাইদা রহমানকে জামিন দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সাজার বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত।১৩ মে তাকে ৫৮৭ দিনের বিলম্ব মার্জনা করেন হাইকোর্ট।

ঘোষিত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান ও তার মা ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়।

২০০৮ সালে তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

২০২৩ সালের গত ১৩ এপ্রিল তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট তারেক রহমানকে ৯ বছর ও জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।

ঢাকা/এম/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইয়ামালের দর হাঁকাল বার্সা, তরুণ প্রতিভার মূল্য কত?
  • চট্টগ্রাম মেডিকেলে মাতৃমৃত্যু জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি
  • প্রসূতির মৃত্যু কমলেও লক্ষ্যপূরণ বহুদূর
  • চলতি বছর বিশ্বের প্রযুক্তি খাতে ছাঁটাই ৬১ হাজার, আরও হওয়ার আশঙ্কা
  • চার নায়িকার কেউই রাজি হননি, বাঁধন কেন ‘খুফিয়া’ করেছিলেন
  • জুবাইদা রহমানের আপিলের রায় বুধবার
  • বাংলাদেশি মাঙ্গা নিয়ে কপিরাইট দ্বন্দ্ব, জয় পেলেন শান্তনা-শান্তুমা
  • মূল্যস্ফীতির হার বাংলাদেশে কমছে না, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় কমছে কেন
  • জালিয়াতির তথ্য গোপন করে আরেক ব্যাংকে চাকরি