চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার উত্তরপত্র গোপনীয়তার সঙ্গে মূল্যায়ন ও সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। পরীক্ষার উত্তরপত্র পরীক্ষক ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি, শিক্ষার্থী বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যকে দিয়ে মূল্যায়ন করানো যাবে না। এ অপরাধ প্রমাণিত হলে পরীক্ষা পরিচালনা আইনে শাস্তি হবে। এ–সংক্রান্ত চিঠি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। গতকাল সোমবার বোর্ডের এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।

আরও পড়ুনজাপানের মেক্সট বৃত্তি, মাসে ১ লাখ ১৭ হাজার ইয়েন, একাদশ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদেরও সুযোগ০৫ মে ২০২৫

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বোর্ডের পরীক্ষার উত্তরপত্র একটি গোপনীয় বিষয়। এটি প্রধান পরীক্ষক/পরীক্ষকদের কাছে পবিত্র আমানত। পরীক্ষার উত্তরপত্র প্রধান পরীক্ষক বা পরীক্ষক ব্যতীত অন্য কোনো ব্যক্তি, শিক্ষার্থী বা পরিবারের অন্য কোনো সদস্যকে দিয়ে বৃত্ত ভরাট/পূরণ করানো বা মূল্যায়ন করা পরীক্ষা পরিচালনা–সংক্রান্ত ১৯৮০ সনের ৪২ নম্বর আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অপরাধ প্রমাণিত হলে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড কিংবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। এমতাবস্থায় পরীক্ষার উত্তরপত্র গোপনীয়তার সঙ্গে মূল্যায়ন ও সংরক্ষণ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো।

আরও পড়ুনজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ বর্ষের ফরম পূরণের সময় আবার বাড়ল২১ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন য ক ন

এছাড়াও পড়ুন:

অনুপস্থিতি কমাতে প্রয়োজন টেকসই পদক্ষেপ

প্রতিবছরই এসএসসি, এইচএসসিসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। এই অনুপস্থিতি অসুস্থতা কিংবা আকস্মিক দুর্ঘটনার কারণে হলে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু এর কারণ যদি হয় আর্থিক অসচ্ছলতা, বাল্যবিবাহ কিংবা অন্য কোনো সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, সেটা মেনে নেওয়া যায় না।

চলতি বছরে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধানে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের তথ্য নির্ধারিত গুগল ফরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে তারা।

এতে দেখা যায়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছয় হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ২০৩ জনের তথ্য ও কারণ জানা গেছে, যার প্রায় ৪০ শতাংশ ঘটেছে বাল্যবিবাহের কারণে। পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেও তারা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ধারণা করা যায়, নবম শ্রেণিতে নিবন্ধন করার পর থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগের মধ্যবর্তী সময়ে তাদের বিয়ে হওয়ার কারণে তারা পরীক্ষা দিতে পারেনি। এ ছাড়া ৭ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার কারণে। বাকিরা অসুস্থতা, প্রস্তুতি ভালো না থাকাসহ নানা কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।

আরও উদ্বেগের বিষয় হলো অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের ৫১ শতাংশ জানিয়েছে, তারা আর পড়াশোনা করবে না।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে এসেছে, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপস্থিতির হার বেশি। মাঝপথে এসব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকলে কিংবা তারা ছিটকে পড়লে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে তা বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

এসএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধানে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এর মধ্য দিয়ে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকা কিংবা মাঝপথে ঝরে পড়ার কারণটিও আমরা জানতে পারলাম। অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডও অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধান করবে আশা করি। ঢাকা বোর্ড তাদের প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর মূল কাজটি করতে হবে সরকারকেই। পরীক্ষার অনুপস্থিতির সঙ্গে যেহেতু আর্থসামাজিক অবস্থা জড়িত, সেহেতু সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করতে হবে।

জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএর বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ১৮ বছর হওয়ার আগেই। আবার ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী এক হাজার মেয়ের মধ্যে ৭১ জন এক বা একাধিক সন্তানের মা।

সরকারের নীতিনির্ধারকেরা যতই দাবি করুন না কেন বাংলাদেশ মানবসম্পদের বিপুল উন্নতি করেছে, ইউএনএফপিএর প্রতিবেদন তার বিপরীত চিত্রই তুলে ধরে। কোনো দেশের ৫১ শতাংশ মেয়ের ১৮ বছরের আগে বিয়ে হওয়ার অর্থ, তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলা। এ অবস্থায় পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিনই বৈকি। কেবল এসএসসিতে অনুপস্থিতির হার কমিয়ে আনা নয়, মানবসম্পদকে যথাযথ কাজে লাগানোর জন্যও বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করতেই হবে।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পরতে পরতে সমস্যা। সব সরকারই শিক্ষার মূল সমস্যা নিরসন না করে উপরিকাঠামোয় কিছুটা প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। শিক্ষাবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার কোনো কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নিলে পরীক্ষায় অনুপস্থিতির সংখ্যা কমিয়ে আনা অসম্ভব হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাল্যবিবাহের উদ্বেগজনক চিত্র
  • বিয়ের কারণে এসএসসিতে অনুপস্থিতির হার বেশি মানিকগঞ্জ ও মাদারীপুরে
  • অনুপস্থিতি কমাতে প্রয়োজন টেকসই পদক্ষেপ