দুর্ভিক্ষের গুরুতর ঝুঁকিতে গাজার বাসিন্দারা
Published: 13th, May 2025 GMT
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় বসবাসরত প্রায় ২১ লাখ ফিলিস্তিনি দুর্ভিক্ষের ‘গুরুতর ঝুঁকিতে’ রয়েছে। জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা মূল্যায়ন বিষয়ক সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) এ তথ্য জানিয়েছে।
ইসরায়েলের টানা অবরোধের কারণে ত্রাণ ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না। এর ফলে সেখানকার বাসিন্দারা ‘চরম খাদ্য সংকটের’ মুখোমুখি হচ্ছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংস্থাটি।
আইপিসি মূলত জাতিসংঘ, দাতা সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের সমন্বয়ে পরিচালিত একটি সংস্থা, যাদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহল একটি এলাকায় দুর্ভিক্ষ হতে যাচ্ছে কি-না, তার প্রাথমিক মূল্যায়ন করে থাকে।
সোমবার প্রকাশিত আইপিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে পর থেকেই গাজার খাদ্য পরিস্থিতিতে ‘বড় ধরনের অবনতি’ ঘটেছে। বর্তমানে সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু না হলেও পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে।
এতে বলা হয়েছে যে, ইসরায়েল ও হামাসের দুই মাসের যুদ্ধবিরতিতে গাজায় ‘সাময়িক স্বস্তি’ ফিরেছিল। কিন্তু তাদের মধ্যে নতুন করে বৈরিতা শুরু হওয়ায়য় গাজাবাসীকে পুনরায় উদ্বিগ্ন করে তুলছে। বিশেষ করে, গত মার্চের শুরু থেকে মানবিক সহায়তা প্রবেশে ইসরায়েলের অব্যাহত বাধা পরিস্থিতিতে আরোজটিল করে তুলেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে গাজার প্রায় দুই লাখ ৪৪ হাজার মানুষ ‘তীব্র’ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ অবস্থায় দুর্ভিক্ষের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি রোধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
গত মার্চ মাসের মধ্যভাগ থেকে গাজায় আবারো অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এরপর গত দুই মাস ধরে সেখানে খাদ্য, ওষুধ সহ জরুরি ত্রাণ সহায়তা প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
গাজার সাহায্যকর্মীরা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন,সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আরো বেড়েছে, গুদামগুলৈা খালি ছিল এবং অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের চিকিৎসা করা মানবিক দলগুলোকে একজনের জন্য তৈরি রেশন দুজন রোগীর মধ্যে ভাগ করে নিতে বাধ্য করা হচ্ছিল যাতে উভয় রোগীর বেঁচে থাকার সুযোগ থাকে।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আত্মবিশ্বাসে হাই হিল
আজকের ফ্যাশন জগতে হাই হিল শুধু শৈলী নয়, এক ধরনের অবস্থান জানিয়ে দেওয়া; যেখানে ফ্যাশন আর চিন্তাধারা একসঙ্গে চলে। এ নিয়ে লিখেছেন আশিকা নিগার
হাই হিল শুধু জুতা নয়। এটি এক প্রতীকী মঞ্চ– যেখানে হাঁটে আত্মবিশ্বাস, রুচি ও গ্ল্যামার। নারী যখন হাই হিল পরেন, হাঁটার ছন্দ বদলে যায়। প্রতিটি ধাপ যেন এক নির্ভীক উচ্চারণ। যুগে যুগে ফ্যাশন ও সামাজিক ইতিহাসে হাই হিল তার অবস্থান ধরে রেখেছে, বিতর্ক তৈরি করেছে, আবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে হাই হিল শুধু স্টাইল নয়, বরং এক ধরনের নিজেকে প্রকাশের ভাষা, এক মানসিক জগতে প্রবেশের চাবিকাঠি।
ইতিহাসের পাতা থেকে
শোনার মতোই অদ্ভুত, তবে সত্যি– হাই হিল প্রথমে পুরুষের পায়ে উঠেছিল। পনেরো থেকে ষোলো শতকে পারস্যের সৈন্যরা হাই হিল পরত; যাতে ঘোড়ায় চড়া অবস্থায় পা স্টিরাপে ভালোভাবে স্থির থাকে। এরপর ইউরোপের রাজপরিবারে। বিশেষত ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইয়ের পায়ে দেখা যায় লালতলা হিল, যা তার ক্ষমতা ও আভিজাত্যের প্রতীক ছিল।
সতেরো থেকে আঠারো শতকে ধীরে ধীরে হাই হিলের ফ্যাশন নারীর দিকে স্থানান্তরিত হয়। আধুনিক ফ্যাশনেও লালতলা হিলের জনক ‘ক্রিশ্চিয়ান লুবউটিন’-এর ডিজাইন নারীর রুচি ও ক্ষমতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। মেরিলিন মনরো বলতেন, ‘একজন মেয়েকে সঠিক জুতা দাও, সে দুনিয়া জয় করতে পারবে।’
উচ্চতার চেয়ে বেশি কিছু
হাই হিলের ফ্যাশন শুধু বাহ্যিক রূপের জন্য নয়, বরং এটি এক ধরনের মানসিক অনুভূতির সঙ্গেও জড়িত।
আত্মবিশ্বাস: উচ্চতা কয়েক ইঞ্চি বাড়ালেও, যে সত্যিকারের উচ্চতা হাই হিল দেয় তা হচ্ছে আত্মবিশ্বাস। হাই হিল পরে একজন নারী যখন আয়নায় নিজেকে দেখে বা অফিসে ঢোকে, তখন তার মনে হয় সে নিজের জায়গায় অটল, দৃঢ়, শক্তিশালী। করপোরেট হাউসে কাজ করেন নাফিসা। তিনি বলেন, ‘যেদিন আমি লাল স্টিলেটো পরে নতুন অফিসের দরজায় পা রাখি, মনে হয়েছিল আমি কেবল একজন কর্মী নই– আমি এক অন্যমাত্রার উপস্থিতি। প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সময় মনে হচ্ছিল আমি শুধু কথাই বলছি না, আমার উপস্থিতিও কথা বলছে।’
স্টাইল স্টেটমেন্ট: একজোড়া লাল স্টিলেটো বা কালো ব্লক হিল আপনাকে আলাদা করে চেনে নেয়। পোশাক যতই সাধারণ হোক, হাই হিল আপনাকে মুহূর্তেই ফ্যাশনেবল করে তুলতে পারে।
অভিনয় ও কল্পনা: অনেক নারী মনে করেন, হাই হিল পরে তারা যেন এক অন্য রকম রূপে রূপান্তরিত হন। বলিউড বা হলিউডের কোনো গ্ল্যামারাস চরিত্রে, র্যাম্পের মডেলে বা নিজের কল্পনার রানীতে।
ডিজাইনে বৈচিত্র্য ও অর্থ
সব হাই হিল এক নয়। প্রতিটি ডিজাইন একেক ধরনের মেজাজ আর ব্যক্তিত্ব প্রকাশ করে। ২০২৫ সালের ফ্যাশন ট্রেন্ডে দেখা যাচ্ছে, নিউট্রাল ব্লক হিল বা খোলা স্লিংব্যাক স্টাইল অফিস ও গ্রীষ্মকালীন পোশাকে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। স্যান্ড হিউ, প্যাস্টেল বা রোজ গোল্ড রঙের হিল বেশি চলছে।
স্টিলেটো: চিকন, উঁচু হিল। গ্ল্যামারাস ও নাটকীয় লুক দেয়। পার্টি বা স্পেশাল ইভেন্টের জন্য আদর্শ।
ব্লক হিল: তুলনামূলক বেশি আরামদায়ক এবং অফিস বা দৈনন্দিন ব্যবহারে জনপ্রিয়। স্টাইল ও স্থায়িত্ব দুই-ই মেলে।
কিটেন হিল: ছোট হিল, ক্ল্যাসিক ও সূক্ষ্ম লুকের জন্য। অফিসে বা হালকা অনুষ্ঠানে মানিয়ে যায়।
ওয়েজ হিল: পুরো পায়ের নিচে সমান উঁচু সাপোর্ট, যা বেশি আরামদায়ক কিন্তু একইসঙ্গে ট্রেন্ডি। গ্রীষ্মকালীন ড্রেস বা ক্যাজুয়াল পোশাকের সঙ্গে দারুণ লাগে।
প্ল্যাটফর্ম হিল: সামনের অংশেও একটি পুরু সোল থাকে। ফলে হিলের উচ্চতা তুলনামূলক কম অনুভূত হয়। ফ্যাশনেবল লুক ও দীর্ঘ সময় হিল পরার জন্য উপযুক্ত।
পিপ-টো হিল: সামনের অংশে সামান্য খোলা থাকে, যাতে আঙুল দেখা যায়। গ্রীষ্মকালীন পোশাকের সঙ্গে বা পার্টির জন্য এটি আকর্ষণীয় পছন্দ।
যন্ত্রণার ওপারেই গ্ল্যামার
হাই হিল নিয়ে সবচেয়ে বড় বিতর্ক হলো এর শারীরিক কষ্টের দিকটি। পায়ের আঙুলের ব্যথা, গোড়ালি মচকানো, পিঠের ব্যথা। এ সবকিছু সত্ত্বেও কেন নারী হাই হিল বেছে নেন?
অনেক নারী বলেন, তারা হিল পরে নিজেকে সুন্দর ও আত্মবিশ্বাসী মনে করেন এবং সেটি তাদের কাছে কষ্টের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তবে ফ্যাশন জগতে এখন আরেকটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, সেটি হচ্ছে ‘কমফোর্ট হিল’ বা আরামদায়ক হিল ডিজাইন, যা স্টাইলের সঙ্গে আরামও দেয়। অনেক ব্র্যান্ডই এখন ফ্যাশনের পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও আরামের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
হাই হিল পরার কিছু টিপস
lদীর্ঘসময় হিল পরলে মাঝেমধ্যে বিশ্রাম নিন
lপা ফোলা এড়াতে জেল ইনসোল ব্যবহার করুন
lগ্রীষ্মে পা ঘেমে গেলে অ্যান্টি-স্লিপ প্যাড ব্যবহার করুন
lনতুন হিল পরে বাড়িতে কিছুক্ষণ হাঁটার অভ্যাস করুন
এক জোড়া হিল, এক হাজার গল্প
হাই হিলের ফ্যাশন কোনো একরেখায় বাঁধা নয়। এটি একসঙ্গে ফ্যাশন, ইতিহাস, আত্মবিশ্বাস আর কল্পনার মিশেল। প্রতিটি হিলের ভেতর একেকটা গল্প লুকিয়ে থাকে। কোনোটা প্রথম ডেটের, কোনোটা অফিস প্রমোশনের, কোনোটা হয়তো কেবল নিজের জন্য কেনা ‘নিজেকে ভালো লাগানোর’ উপহার।
জিগাতলার বাটা শোরুমের ম্যানেজার এএসএম সায়েম রাজা বলেন, ‘হাই হিল এখন অফিস, পার্টি থেকে শুরু করে ক্যাজুয়াল ডে আউটেও মানিয়ে যায়। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালীন পোশাকের সঙ্গে এ ধরনের হিল বেশি জনপ্রিয়। বিভিন্ন উচ্চতায় নানা ধরনের হিল বর্তমান সময়ের নারীর ফ্যাশনের অনুষঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে স্লিংব্যাক ওয়েজ, ব্লক হিল স্লিংব্যাক, পয়েন্টি ব্লক হিল, ওয়েজ হিল, হাই ব্লক হিল ট্রেন্ডে আছে।’
রঙের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সাধারণত ন্যুড, ক্রিম, বাটার ইয়েলো বা প্যাস্টেল রঙের হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাই হিলের দাম ১ হাজার ২০০ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়।’ অ্যাপেক্সের জিগাতলা শোরুমের ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এখন যেহেতু গরম চলছে, তাই এ সময়টায় ফ্যাশনের পাশাপাশি আরামের ব্যাপারটাও মাথায় রেখে হাই হিলগুলো তৈরি করা হয়েছে।’
ফ্যাশন ট্রেন্ডে এখন প্রিমিয়াম ব্র্যান্ড মুচিটাই চলছে। এটিতে পেন্সিল হিল, ব্লক হিল, ওয়েজ হিল হয়। ফ্যাশনেবল নারী পেন্সিল হিল বেশি পছন্দ করছেন। তাছাড়া এ সময়ের জন্য ওয়েজ হিলও বেশ চলছে, যা অফিস থেকে শুরু করে সব জায়গায় পরে নারী আরামবোধ করে থাকেন।’
দাম সম্পর্কে আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ক্রেতার চাহিদার ওপর নির্ভর করে হাই হিলের দাম ২ হাজার ৪৯০ থেকে ৩ হাজার ৪৯০ টাকার মধ্যেই বেশি করা হয়।’
আপনার পায়ে থাকা হিল নয়, বরং আপনার ভেতরে থাকা দৃঢ়তা– সেটিই আসল উচ্চতা। কেননা, শেষ পর্যন্ত হাই হিল শুধু উচ্চতা নয়, এটি এক উচ্চারণ– এখানে আমি দৃঢ়, অপ্রতিরোধ্য।
যত্ন
হাই হিল ব্যবহারের পর নরম কাপড় দিয়ে ধুলা মুছে ফেলুন। লেদার হিল হলে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন, আর স্যুয়েড হিলের জন্য ব্যবহার করুন বিশেষ ব্রাশ। জুতা ব্যবহারের পর সরাসরি আলমারিতে না রেখে শু ব্যাগ বা বক্সে সংরক্ষণ করুন। এতে ধুলা-ময়লা কম জমবে এবং স্ক্র্যাচ পড়ার আশঙ্কাও কমে যাবে। দীর্ঘক্ষণ হাই হিল পরলে পায়ে চাপ পড়ে। আরামদায়ক ইনসোল বা হিল কুশন ব্যবহার করলে চাপ কম পড়ে এবং জুতার অভ্যন্তরীণ ক্ষয়ও কম হয়। ভেজা অবস্থায় হাই হিল সংরক্ষণ করলে দুর্গন্ধ ও ছাঁচ পড়তে পারে; যা এড়াতে ভেতরে কাগজ ভরে রোদে নয়, বাতাসে শুকিয়ে নিন।
মডেল: নীলা;
মেকওভার: পারসোনা
জুতা: বাটা
ছবি: ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য