জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের অবদমিত মানুষের প্রত্যাশায় বিরাট উল্লম্ফন ঘটিয়েছে। অপ্রত্যাশিত ও আকস্মিকভাবে শেখ হাসিনার পতন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণে মানুষের মধ্যে এমন আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়, যা শুধু ‘রূপকথায় সম্ভব’। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে ‘আলাদিনের প্রদীপ’ নেই। বরং দুর্নীতিতে জেরবার ও খাদের কিনারে থাকা দেশের দায়িত্ব নেওয়াই ছিল বিরাট চ্যালেঞ্জ। প্রধান উপদেষ্টা ড.
এই বক্তব্যের মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন যে শর্তসাপেক্ষ ও নীতিনির্ভর– সে সম্পর্কেও পরিষ্কার ও গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছিলেন। এটাও বলেছিলেন, তাঁর দায়িত্ব গ্রহণ ‘শিক্ষার্থীদের আহ্বানের কারণেই’। এর মধ্য দিয়ে তিনি নিজের জন্য ‘রক্ষাকবচ’ তৈরি করেছিলেন; তখন সেটা দরকারও ছিল।
অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে ‘অতি আশাবাদী’ মানুষের মোহভঙ্গও শুরু হয় উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের মধ্য দিয়ে। উপদেষ্টাদের উল্লেখযোগ্য অংশ রাষ্ট্র পরিচালনায় অনভিজ্ঞ শুধু নন; তাদের অদক্ষতাও স্পষ্ট। তবু জনসাধারণ ও রাজনৈতিক দলগুলো সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি শর্তহীন সমর্থন অব্যাহত রাখে। ওদিকে, ১৬ বছর ধরে সুবিধাভোগী প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ তৈরি করতে থাকে। অনেকেই বিশ্বাস করেন, আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ড. মুহাম্মদ ইউনূস না হলে এই চাপ মোকাবিলা করে সরকার টিকিয়ে রাখা সম্ভব হতো না।
দেশের অভ্যন্তরে রাজধানী থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত ‘মব সন্ত্রাস’ ছড়িয়ে পড়ে। দাবির পর দাবি সামনে এনে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন সংগঠন ও গোষ্ঠী। গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দেয় জুলাই অভ্যুত্থানে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করা বিএনপি ও জামায়াতের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপরতা। এত পক্ষ-বিপক্ষ এবং সুবিধাবাদী ও সুবিধাহারা লোকজনের অতি তৎপরতা সামলানোর মতো দক্ষতা দেশ পরিচালনা ও রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ উপদেষ্টা পরিষদের নেই। ফলে ইতোমধ্যে লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অবস্থা আরও জটিল হয়ে উঠেছে বেকারত্ব বাড়ার কারণে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, গত এক বছরে বেকার বেড়েছে সোয়া ৩ লাখ। বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ৮ থেকে ১০ লাখ। অর্থনীতি সচল রাখা ও কর্মসংস্থানের দিক থেকে দেশের অন্যতম দুটি খাত আবাসন ও গার্মেন্টস থেকে প্রায় পাঁচ লাখ লোক চাকরি হারিয়েছেন; দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি কেন্দ্রীয়ভাবে বন্ধ হওয়াসহ অন্যান্য দাতা সংস্থার অর্থায়ন কমে যাওয়ায় এনজিওতে প্রায় দুই লাখ মানুষ বেকার। সরকার পরিচালনায় অনভিজ্ঞতা, আর্থিক কর্মকাণ্ডে অচলাবস্থা, কর্মসংস্থানে ধস, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, কয়েকজন উপদেষ্টার ‘একান্ত কর্মচারীর’ দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ক্রমাগত বিরোধিতা, ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা মানুষের প্রশাসনিক ও আর্থিক সুবিধা লাভ, সর্বোপরি সরকারের দিক থেকে অবাধ তথ্য সরবরাহ না থাকায় নানা জল্পনা-কল্পনা ডালপালা মেলেছে।
প্রশ্ন হলো, গত আগস্ট থেকে দেশে যা কিছু ঘটেছে, সেগুলো কি খুবই অস্বাভাবিক? এর সহজ উত্তর– না। কিন্তু জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে প্রত্যাশার পারদ যে উচ্চতায় পৌঁছেছে; পান থেকে চুন খসলেই মানুষ মেনে নিতে পারছে না। এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার সুস্পষ্ট পরিকল্পনাও সম্ভবত উপদেষ্টা পরিষদের নেই।
এ কথা বলতেই হবে, ড. ইউনূসের যে আন্তর্জাতিক পরিচিতি ও সমর্থন, সেটা এ মুহূর্তে কোনো জীবিত বাংলাদেশির নেই। তবে দেশের ভেতরে যে বিশৃঙ্খলা ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে ও আগামীতে তৈরির আশঙ্কা রয়েছে, সেগুলোকে উপযুক্তভাবে মোকাবিলায় একজন অভিজ্ঞ রাজনৈতিক অভিভাবক দরকার। যার ব্যাপারে কোনো পক্ষ থেকে আপত্তি আসবে না এবং যিনি রাজনৈতিক ভারসাম্য তৈরির পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারকে লক্ষ্য অর্জনে সর্বোত্তম সহযোগিতা করতে পারবেন। এ মুহূর্তে জীবিত রাজনীতিকদের মধ্যে এমন ব্যক্তি একজনই; একাধিকবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া মিতভাষী মানুষ। এমনকি যারা বিএনপির রাজনীতি করেন না, তারাও প্রতিপক্ষের উত্তেজনাময় বক্তৃতার বিপরীতে খালেদা জিয়ার ধীরস্থির ও শান্ত বক্তব্যকে প্রশংসা করেন। ২০১৩ সালে বাড়ির সামনে বালু ও ময়লাভর্তি ট্রাক রেখে তখনকার সরকার তাঁকে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে দেয়নি। পরে জেলে বন্দি করেছিল। আওয়ামী লীগ তো বটেই; শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবেও খালেদা জিয়াকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে গেছেন। এমনকি তাঁকে চিকিৎসা নিতে বিদেশে যেতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। খালেদা জিয়া নিজের শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও এ ধরনের তীব্র মানসিক চাপ মোকাবিলা করেছেন। কিন্তু জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে মুক্ত হওয়ার পর একটাও বাজে শব্দ উচ্চারণ করেননি শেখ হাসিনা কিংবা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। তাঁর এই অবস্থান আওয়ামী লীগ সমর্থকসহ সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা কুড়িয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি বিদেশ থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেও এসেছেন। এ মুহূর্তে খালেদা জিয়া সম্ভবত দেশের জীবিত রাজনীতিকদের মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে অনেক পরে যোগ দিলেও খালেদা জিয়া অনেক ঝানু রাজনীতিকের চেয়ে নিজেকে প্রজ্ঞাশীল প্রমাণ করেছেন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে। তিনি যে আপসহীন নেত্রীর মর্যাদা লাভ করেন, সেটা ওয়ান-ইলেভেন সরকারের ‘মাইনাস টু থিওরি’ নস্যাতের মধ্য দিয়ে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণ যে সুখী-সমৃদ্ধ অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে; সে দেশ অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎমুখী হবে; ক্ষমতাসীনদের লুটপাটের নয়। সে বাংলাদেশ প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখবে, কিন্তু নতজানু হয়ে নয়। সেই বাংলাদেশ তৈরিতে জাতির ক্রান্তিলগ্নে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, সেটাকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে ঐক্যের প্রতীক হয়ে দেশের রাজনীতিতে অভিভাবকের ভূমিকায় সহায়তা করতে পারেন খালেদা জিয়া। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগের কাজগুলো সুন্দরভাবে সমাধান করতে তাঁর মতো সর্বজনগ্রাহ্য নেতার পরামর্শ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের এখন সবচেয়ে বেশি দরকার।
মোহাম্মদ গোলাম নবী: কলাম লেখক;
প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, রাইট টার্ন
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত গণঅভ য ত থ ন র জন ত ক উপদ ষ ট সরক র র দরক র আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
মব সন্ত্রাস নিয়ে সমাজের আতঙ্ক ও রাষ্ট্রের নীরবতা
গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে গত প্রায় এক বছরে ক্রমবর্ধমান মব ভায়োলেন্স বা মব সন্ত্রাসের ঘটনা গভীর সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকট তৈরি করছে। গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা, অকার্যকর সুশাসন এবং প্রশাসনিক দুর্বলতা আইনহীন ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতির’ জন্ম দিয়েছে, যার সুযোগ নিচ্ছে উগ্রবাদী বিভিন্ন সংঘবদ্ধ উচ্ছৃঙ্খল গোষ্ঠী। বিগত আমলের বিচারহীনতার সংস্কৃতিরই যেন ধারাবাহিকতা এই মব সন্ত্রাস।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত এক বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সহিংস মব হামলায় ১৭৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর বাইরেও নাটক, সিনেমা, বইমেলা, পত্রিকা, ক্রীড়াক্ষেত্র, মাজার ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হয়েছে সংঘবদ্ধ আক্রমণ। এসব মব সন্ত্রাসের লক্ষ্য একটাই, তা হচ্ছে সমাজের প্রগতিশীল ও বহুত্ববাদী মূল্যবোধকে দমন করা, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ ব্যাহত করা।
সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও তার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া যেমন ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের প্রতিচ্ছবি, তেমনি ঢাকায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাকে জুতার মালা পরিয়ে অপমান করার ঘটনাও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও আইনের প্রতি চূড়ান্ত অবজ্ঞার ইঙ্গিত দেয়।
এসব ঘটনার পেছনে শুধু জনরোষ নয়; আছে সংগঠিত উস্কানি ও উদ্দেশ্যমূলক সহিংসতা। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে যখন অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নিজেরাই মব সন্ত্রাসকে কার্যত স্বীকৃতি দিয়ে বসেন। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ‘মব’কে বলেছেন ‘প্রেশার গ্রুপ’, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম মবের কর্মকাণ্ডকে ‘জনতার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
এসব বক্তব্য শুধু দায় এড়ানোর পথ তৈরি করে না, বরং রাষ্ট্রীয়ভাবে নাগরিক সহিংসতাকে অনুমোদন দেওয়ার ইঙ্গিত দেয়– যা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য গভীর উদ্বেগজনক। মবের ‘ন্যায়বিচার’ যদি মেনে নেওয়া হয়, তবে সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা ও আইনের শাসনের প্রয়োজনই-বা থাকে কোথায়?
সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রবণতা হচ্ছে ধর্মের দোহাই দিয়ে মব সন্ত্রাসের ঘটনাগুলো। অসংগত, অসত্য বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্মকে অস্ত্র বানিয়ে গণআক্রমণের যে সংস্কৃতি তৈরি হচ্ছে, তা শুধু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য নয়; গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য এক বড় হুমকি।
আরও একটি বিপজ্জনক প্রবণতা হচ্ছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হুমকি দেওয়া। নাটক-সিনেমা-গান-নৃত্যকে যারা ‘ইসলামবিরোধী’ বলে চিহ্নিত করছে, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় বিভিন্ন হলেও কৌশল প্রায় একই। গত ফেব্রুয়ারিতে খুলনার এক নাট্যোৎসব বন্ধ করে দেওয়া হয় ধর্মীয় সংগঠনের চাপে। একই মাসে মৌলভীবাজারে এক বইমেলায় হামলা চালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় কয়েকজন তরুণ লেখকের বই। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ওপর এই আক্রমণ একটি পরিকল্পিত ‘নীরব দমন নীতি’র অংশ, যেখানে রাষ্ট্র সক্রিয় না হয়ে মৌন সম্মতি জানিয়ে যাচ্ছে।
নারীর প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ, নারীকে অসম্মান করার প্রবণতাও বাড়ছে। তা ছাড়া নারী ক্রীড়াবিদদের ওপর হামলা আরও বেশি প্রকাশ্য ও হিংস্র হয়েছে। লেখক, সাংবাদিক ও ব্লগারদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও আজ সংকটের মুখোমুখি। লেখক, অনুবাদক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রশাসন ঘটনা ঘটার পর আসে, কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত হয় না, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও তা অচল পড়ে থাকে। এমনকি মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তারা প্রায়ই বলেন, ‘ধর্মীয় আবেগে উত্তেজিত হয়ে কিছু লোক এ কাজ করেছে।’ এটি আসলে অপরাধকে আড়াল করা এবং ভবিষ্যতের জন্য আরও বড় সহিংসতার জায়গা তৈরি করা। বিচারহীনতার সংস্কৃতি একদিকে অপরাধীদের উৎসাহিত করে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষকে করে নিরুপায় ও আতঙ্কিত।
এই প্রশ্ন এখন ঘুরেফিরে আসছে, সরকার কি নিজেই এই উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সমঝোতায় আছে? নাকি কোনো রাজনৈতিক স্বার্থে, যেমন নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কৌশল হিসেবে, এই নীরবতা বজায় রাখছে?
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বারবার বাংলাদেশে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে নারী অধিকারের প্রশ্নে এই সহিংসতা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি ও কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশ্বব্যাংক ও ইউএনডিপি সম্প্রতি প্রকাশিত রিপোর্টে বাংলাদেশে সামাজিক সহনশীলতা হ্রাস ও ‘পাবলিক ফিয়ার’ বৃদ্ধির তথ্য এসেছে, যা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতারও জন্য হুমকি।
এই সংকট মোকাবিলায় নাগরিক সমাজ, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল, সংস্কৃতিকর্মী, নারী সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মব সন্ত্রাস, ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর সহিংসতা ও রাষ্ট্রীয় নিষ্ক্রিয়তা মিলে বাংলাদেশ এক নীরব দুর্যোগের দিকে এগোচ্ছে। আজ যদি আমরা চুপ থাকি, আগামীকাল আমাদের সন্তানদের জন্য একটি ভয়ংকর সমাজ রেখে যাব– যেখানে মতপ্রকাশ নেই, নারীর স্বাধীনতা নেই, সংস্কৃতির চর্চা নেই। রাষ্ট্র যদি ব্যর্থ হয়, তবে নাগরিকদের দায়িত্ব সেই শূন্যতা পূরণ করা। কথা বলতে হবে, প্রতিরোধ গড়তে হবে। কারণ নীরবতা মানেই সম্মতি, আর সম্মতি মানেই সহিংসতার অংশীদার হওয়া। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র গঠন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা মুখ থুবড়ে পড়বে।
আহমেদ স্বপন মাহমুদ: কবি ও মানবাধিকারকর্মী