টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা। কয়েক হাজার কর্মী ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যোগ দিয়েছেন। যাঁরা এলাকায় আছেন, তাঁরাও আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন। এ কারণে বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত গ্রাহকসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে আরইবির বিদ্যুৎ সরবরাহ।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিল আন্দোলনকারী কর্মীরা। এতে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন ছিল ওই সব এলাকার গ্রাহকেরা। এবার বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখে কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন। নিয়মিত সেবা না দিলেও জরুরি সেবা চালু রেখেছে তারা। তবে আজ থেকে জরুরি সেবাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সরকারি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)। এসব সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে দুই দফা দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। এখন সাত দফা দাবিতে ছয় দিন ধরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন তাঁরা। গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, হাজার হাজার কর্মীর স্লোগানে মুখর হয়ে আছে শহীদ মিনার।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এখন পর্যন্ত ২৯ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ৪০ জন সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। ছয় হাজারের বেশি কর্মীকে নিজ এলাকা থেকে দূরের এলাকায় বদলি করা হয়েছে।গতকাল বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জরুরি সেবা চালু রেখে মঙ্গলবার থেকে সারা দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে কর্মবিরতি পালন করা হবে। সমিতিতে অবস্থানরত মিটার রিডাররা মঙ্গলবার সকাল নয়টায় একযোগে রিডিং বই জমা দিয়ে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। জনদুর্ভোগ বা সেবা বিঘ্নিত করে কর্মসূচি পালন করতে চান না তাঁরা। তাই দাবি মেনে নিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তাঁরা বলছেন, অন্যথায় ভবিষ্যতে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন। এতে জনদুর্ভোগ তৈরি হলে এর দায়ভার বিদ্যুৎ বিভাগসহ সরকারকে বহন করতে হবে।
গত বছরের শুরু থেকেই দুই দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা। আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়। একপর্যায়ে তাঁদের একজনের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে গত অক্টোবরে বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেন তাঁরা। এর পর থেকেই কারও কারও বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাসহ বিভিন্ন রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে থাকে আরইবি। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, এখন পর্যন্ত ২৯ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ৪০ জন সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। ছয় হাজারের বেশি কর্মীকে নিজ এলাকা থেকে দূরের এলাকায় বদলি করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র বলছে, এখন যাঁরা আছেন, তাঁদের ডিউটি বেশি দিয়ে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আন্দোলন দীর্ঘায়িত ও অনুপস্থিতির সংখ্যা বেশি হলে, তা আর সম্ভব হবে না।কমিটির প্রতিবেদনের অপেক্ষাআন্দোলনকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটি কয়েক দফা বৈঠক করলেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। এরপর গত বছরের ২৩ অক্টোবর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যমান পল্লী বিদ্যুৎ কাঠামো পর্যালোচনা করে সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন দেবে তারা। গত ২৭ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, এক ও অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন করে আরইবি ও সমিতি একীভূত করতে হবে। তবে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে আপত্তি জানায় বিদ্যুৎ বিভাগ। ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বলা হয়।
বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনে সেবা ব্যাহত হলে বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে। যাঁদের বিরুদ্ধে আগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাঁদের অপরাধ বুঝে শাস্তি লঘু করার বিষয়টি আরইবি চেয়ারম্যানকে দেখতে বলা হয়েছে। ঈদের পর চূড়ান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করার কথা বিশেষজ্ঞ কমিটির। প্রতিবেদন দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশন বলছে, সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে চলমান মামলা প্রত্যাহার ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবিতে গত ২১ জানুয়ারি ও ২৬ এপ্রিল বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে তারা। এর সঙ্গে ২৮ হাজার ৩০৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বাক্ষর জমা দেওয়া হয়। তাদের দাবির মধ্যে আছে, আরইবি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ। এক ও অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরইবি ও পবিস একীভূত করে অন্য বিতরণ সংস্থার মতো পুনর্গঠন। মিটার রিডার, লাইন শ্রমিক ও পোষ্য কর্মীদের চাকরি নিয়মিত করা।
আওয়ামী লীগের সময় থেকেই আইনি পথে আন্দোলনটাকে মোকাবিলা করেনি সরকার। কমিটির প্রতিবেদনের নামে কালক্ষেপণ করা যাবে না। যার পক্ষেই যাক, সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে হবে। এটি না করে ভোক্তাদের জন্য সংকট তৈরি করা হচ্ছে।ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলমগ্রামে ব্যাহত হচ্ছে সেবানেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র বলছে, কয়েক দিন ধরে আন্দোলনের কারণে গ্রাহকেরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার ১৮ জন ঢাকায় আন্দোলনে যোগ দেন। শুক্রবার আরও ৭৭ জন, শনিবার ৩৫ জন, রোববার ৭৬ জন ও সোমবার ৭৮ জন আন্দোলনে যোগ দেন। এ ছাড়া অনেকেই কর্মবিরতিতে রয়েছেন। তাঁরা হাজিরা স্বাক্ষরও দিচ্ছেন না। বেশ কিছু এলাকায় বজ্রপাত ও ঝরে ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা সারানো যাচ্ছে না। কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়নের দক্ষিণ কান্দাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রানা আকন্দ বলেন, তাঁর এলাকায় দুই দিন আগে প্রায় ৫০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র বলছে, চলমান আন্দোলনে পালাক্রমে গিয়ে অংশ নিচ্ছেন এখানকার কর্মীরা। তবে ঢালাও বদলির কারণে কাজের সমস্যা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র বলছে, এখন যাঁরা আছেন, তাঁদের ডিউটি বেশি দিয়ে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আন্দোলন দীর্ঘায়িত ও অনুপস্থিতির সংখ্যা বেশি হলে, তা আর সম্ভব হবে না।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের সময় থেকেই আইনি পথে আন্দোলনটাকে মোকাবিলা করেনি সরকার। কমিটির প্রতিবেদনের নামে কালক্ষেপণ করা যাবে না। যার পক্ষেই যাক, সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে হবে। এটি না করে ভোক্তাদের জন্য সংকট তৈরি করা হচ্ছে।
[তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও প্রতিনিধি, নেত্রকোনা]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব দ য ৎ সরবর হ স ত র বলছ র কর ম র উপদ ষ ট কম ট র এল ক য় সরক র ন করছ
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।
বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।
বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।
জ্বালানি তেলবিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।
কৃষিপণ্যবিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।
খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।
২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।
চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।
দেশে কেন দাম বেশিবিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।
আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।
দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।