তেল আবিবে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন ইসরায়েলি তরুণী মিয়া শেম। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে হামাস যাঁদের জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গিয়েছিল, তাঁদের একজন তিনি।

২২ বছরের মিয়া সেদিন ইসরায়েলে নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যালে উপস্থিত ছিলেন ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনটির যোদ্ধাদের গুলিতে আহত হন। গুলি তাঁর হাতে লেগেছিল।

হামাসের হাতে বন্দী থাকার সময় মিয়া শেম ধর্ষণের শিকার হওয়ার আতঙ্কে থাকতেন। কিন্তু তাঁকে যে নিজ বাড়িতে এমন ঘটনার শিকার হতে হবে, তা তাঁর কল্পনারও বাইরে ছিল।

হামাসের হামলার দিন ২২ বছরের মিয়া ইসরায়েলে নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যালে উপস্থিত ছিলেন এবং হামাস যোদ্ধাদের গুলিতে আহত হয়েছিলেন। গুলি তাঁর হাতে লেগেছিল।

ইসরায়েলের দৈনিক পত্রিকা হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি মিয়া তেল আবিবের একজন সুপরিচিত ফিটনেস ট্রেইনারের বিরুদ্ধে তাঁকে মাদক দেওয়ার ও ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন। মিয়া এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে মার্চের শেষ দিকে ওই ট্রেইনারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কয়েক সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামাসের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া এক তরুণীর যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া নিয়ে নানা কথা হচ্ছিল। অবশেষে সামনে এসে এ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন মিয়া।

গত শনিবার রাতে মিয়া শেম ইসরায়েলের টেলিভিশন চ্যানেল-১২–তে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি নিজ অ্যাপার্টমেন্টে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি সত্য প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। লুকিয়ে থাকাদের দলে আমি নই।’

মিয়া বলেন, ‘সারা জীবন এটাই আমার সবচেয়ে বড় ভয় ছিল, জিম্মি হওয়ার আগে, জিম্মি থাকার সময়। জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর যেখানে আমার সবচেয়ে নিরাপদ থাকার কথা, সেখানেই আমার সঙ্গে এটা ঘটেছে।’

সারা জীবন এটাই আমার সবচেয়ে বড় ভয় ছিল, জিম্মি হওয়ার আগে, জিম্মি থাকার সময়। জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর যেখানে আমার সবচেয়ে নিরাপদ থাকার কথা, সেখানেই আমার সঙ্গে এটা ঘটল।মিয়া শেম, ইসরায়েলি তরুণী

হামাসের হাতে জিম্মি হওয়ার ৫৫ দিন পর মুক্তি পান মিয়া শেম। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২০২৩ সালের নভেম্বরে প্রথম যুদ্ধবিরতির সময় প্রায় ১০০ জিম্মি মুক্তি দিয়েছিল হামাস। সে সময় আহত মিয়াও মুক্তি পান।

মিয়া বলেন, বাড়ি ফেরার পর ওই ট্রেইনারের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। বিভিন্ন তারকা গ্রাহকের সঙ্গে কাজ করার কারণে ওই প্রশিক্ষকের বেশ নামডাক আছে। প্রশিক্ষকের সঙ্গে তিনটি সেশনের পর তিনি মিয়া শেমকে হলিউডের একজন চলচ্চিত্র প্রযোজকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

মিয়া দাবি করেন, তাঁকে বলা হয়েছিল, তাঁর জীবনের গল্প নিয়ে একটি সিনেমা তৈরি হতে পারে। তিনি বলেন, প্রথমে ওই প্রশিক্ষক একটি হোটেলের লবিতে প্রযোজকের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু তাঁদের সেই সাক্ষাৎ হয়নি। পরে তাঁকে তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে ওই প্রযোজককে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। মিয়া প্রশিক্ষকের ওই প্রস্তাবে রাজি হন।

সেদিনের কথা মনে করে মিয়া আরও বলেন, ওই দিন অ্যাপার্টমেন্টে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুও উপস্থিত ছিলেন। নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর প্রশিক্ষক আসেন। এ সময় প্রযোজকের সঙ্গে গোপন বৈঠক হবে উল্লেখ করে মিয়ার বন্ধুকে চলে যেতে বলেন। বন্ধুও বেরিয়ে যান।

সেদিনের কথা মনে করে মিয়া আরও বলেন, সেদিন তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুও উপস্থিত ছিলেন। নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর ওই প্রশিক্ষক আসেন। তিনি অ্যাপার্টমেন্টে এসে মিয়ার বন্ধুকে চলে যেতে বলেন।

ওই সময়ের পর থেকে মিয়ার স্মৃতি ঝাপসা। তিনি সব ঠিকমতো মনে করতে পারছেন না দাবি করে বলেন, ‘আমার শরীর মনে রেখেছে; এটি সবকিছু অনুভব করতে পেরেছে। কিন্তু আমার সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছে, সেটা আমি জানতাম না। শরীরের অনুভূতির সঙ্গে চেতনার সংযোগ ঘটাতে আমার তিন দিন সময় লেগেছে।’

ওই ঘটনার কয়েক দিন পর মিয়ার পরিবার ও বন্ধুরা খেয়াল করেন তিনি স্বাভাবিক আচরণ করছেন না। এতে তাঁরা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন।

মিয়ার মা কেরেন চ্যানেল-১২–কে বলেন, ‘আমার মেয়ে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছে। সে জিম্মিদশা থেকে খুবই কঠিন শারীরিক ও মানসিক অবস্থা নিয়ে ফিরে এসেছিল। কিন্তু তারপরও তার অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না। এখন আমি তার মধ্যে যে বিধ্বস্ত অবস্থা দেখছি, তাতে আমি সত্যিই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।’

মিয়া যেদিন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করছেন, সেদিন বিকেলের ঘটনা তাঁর আবছা মনে আছে বলে জানান তিনি। এই তরুণী বলেন, প্রশিক্ষক যখন তাঁর কক্ষে প্রবেশ করেন, তখন তিনি বিবস্ত্র ছিলেন। ঘরে তিনি দ্বিতীয় আরেক ব্যক্তির উপস্থিতি টের পেয়েছিলেন।

মিয়ার এক বন্ধু বলেন, সম্ভবত তাঁকে (মিয়া শেম) মাদক দেওয়া হয়েছিল। পরে তিনি পুলিশের কাছে যান এবং পুলিশ তাঁকে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার ব্যক্তিদের পরীক্ষা করা হয়, এমন একটি সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনচুক্তি মেনে ২৪ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস২৪ নভেম্বর ২০২৩

ওই সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিয়ার শরীরে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। মিয়া নিজেও এমন সব চিহ্ন দেখেন, যার ব্যাখ্যা খুঁজছিলেন।

মিয়ার অভিযোগের পর পুলিশ ওই প্রশিক্ষককে গ্রেপ্তার করলেও পরে ছেড়ে দেয়। তবে পুলিশ অভিযোগ তদন্ত করছে।

ওই প্রশিক্ষক অবশ্য মিয়ার সঙ্গে কোনো শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। যদিও পরে তাঁর বক্তব্যে পরিবর্তন এসেছে এবং পলিগ্রাফ পরীক্ষায় কিছু বিষয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর উত্তর দিয়েছেন তিনি। প্রশিক্ষক ওই দিনের পর মিয়াকে যে টেক্সট পাঠিয়েছেন, সেটাও সন্দেহজনক ছিল। তিনি লিখেছেন, ‘কী দারুণ রাত, ওয়াও’।

এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর আরও একজন নারী ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ করেন। নাম প্রকাশ না করে ওই নারী হিব্রু ভাষার একটি দৈনিককে বলেন, ওই প্রশিক্ষক তাঁকে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ অশ্লীল বার্তা পাঠিয়েছেন।

প্রশিক্ষকের আইনজীবী বলেছেন, তাঁর মক্কেল সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করছেন। মক্কেলের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে তিনি আদালতকে একটি ভিডিও দেখিয়েছেন। মিয়ার দাবি করা ধর্ষণের দুই দিন পরের ওই ভিডিওতে মিয়াকে হাসিমুখে প্রশিক্ষকের সঙ্গে শরীরচর্চা করতে দেখা যায়।

আমার মেয়ে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছে। সে জিম্মিদশা থেকে খুবই কঠিন শারীরিক ও মানসিক অবস্থা নিয়ে ফিরে এসেছিল। কিন্তু তারপরও তার অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না। এখন আমি তার যে বিধ্বস্ত অবস্থা দেখছি, তাতে আমি সত্যিই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।কেরেন, মিয়া শেমের মা

সাক্ষাৎকারে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন মিয়া। তিনি বলেছেন, ‘আমার সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছে, সেটা আমি শুরুতে বুঝতে পারিনি।’

মিয়ার এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে কেউ কেউ সমালোচনা করে বলেছেন, রাতারাতি পরিচিতি পেতে তিনি এ কাজ করছেন।

এদিকে হিব্রু ভাষার দৈনিক পত্রিকা মারিভ–এর বরাতে মিডল ইস্ট মনিটরের খবরে বলা হয়, হামাসের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া তরুণী মিয়া শেম স্বীকার করেছেন, তিনি ইসরায়েলের তুলনায় গাজায় অধিক নিরাপদ ও সুরক্ষিত বোধ করেছিলেন।

আরও পড়ুনইসরায়েলের জঘন্য মিথ্যাচার ও হামাসের বিজয় অর্জন২৮ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনজিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া চার নারী সেনা কারা২৫ জানুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অ য প র টম ন ট উপস থ ত ছ ল ন ইসর য় ল র জ ম ম দশ কর ছ ন ই আম র য় র পর ন র পদ র সময় অবস থ করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

ব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন আগামীকাল মঙ্গলবার। ‘বিশ্বের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত এই শহরে প্রথমবার এমন একজন মেয়র পদে নির্বাচিত হতে পারেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির চলতি ধারার একদম বিপরীতমুখী। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর রিপাবলিকান পার্টি এক ‘শ্বেতকায়, খ্রিষ্টান ও রক্ষণশীল’ আমেরিকার কথা বলছেন।

জোহরান মামদানি শ্বেতকায় নন, তিনি বাদামি রঙের দক্ষিণ এশীয়। তিনি খ্রিষ্টান নন, একজন মুসলিম। তিনি অবশ্যই রক্ষণশীল নন, তিনি খোলামেলাভাবে একজন প্রগতিশীল, যিনি নিজেকে সমাজতন্ত্রী বলতে দ্বিধা করেন না।

‘মামদানি একজন ভয়ানক মানুষ’, সাবধান করে বলেছেন অ্যান্ড্রু কুমো, মঙ্গলবারের নির্বাচনে যিনি মামদানির প্রতিদ্বন্দ্বী। সারা জীবন ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য থাকলেও বাছাইপর্বে পরাজিত হয়ে তিনি এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।

ব্যালটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নাম না থাকলেও এই নির্বাচনে তিনি একজন অদৃশ্য প্রার্থী। কুমোর পক্ষ নিয়ে তিনিও এই নির্বাচনের একজন অংশগ্রহণকারী। বড় ব্যবধানে মামদানির বিজয় হলে অনেকেই তা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অনাস্থা হিসেবেই দেখবেন।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিউইয়র্কের আদি বাসিন্দা। তিনি কোনোভাবেই চান না মামদানি এই শহরের মেয়র নির্বাচিত হোন। তাঁর বিবেচনায় মামদানি শুধু একজন পাক্কা কমিউনিস্টই নন, রীতিমতো উন্মাদ। এমন একজনকে নির্বাচিত করা হলে তিনি নিউইয়র্ক সিটির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল আটকে দেবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, মামদানি একজন অবৈধ অভিবাসী। তা প্রমাণিত হলে তাঁকে বহিষ্কার করা হবে। মেয়র নির্বাচিত হয়ে মামদানি যদি অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের চলতি অভিযানে বাধা দেন, তাহলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে, এমন হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।

শহরের প্রতিটি প্রধান কেন্দ্র হেঁটে জনসংযোগ সেরেছেন মামদানি। ৫০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক, যাঁদের অধিকাংশই নবীন, শহরের প্রতিটি বাসায় কড়া নেড়েছেন। টিকটক ও ইউটিউবে তাঁর উপস্থিতি অভূতপূর্ব। মামদানির এই ‘মাঠপর্যায়ের খেলা’ ঠেকাতে কুমো বেছে নিয়েছেন একদিকে ঘৃণা, অন্যদিকে ভীতি।

ট্রাম্পের ব্যাপারে জনরায়

শুধু নিউইয়র্কে নয়, যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আরও অন্তত তিনটি রাজ্যে নির্বাচন হবে আগামীকাল, যার ফলাফল ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের ব্যাপারে একটি রেফারেন্ডাম বা জনরায় হবে ভাবা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ায় গভর্নর পদে নির্বাচন। এই দুই রাজ্যে প্রতিনিধি পরিষদ ও উচ্চ পরিষদেও ভোট গ্রহণ করা হবে। উভয় রাজ্যই ডেমোক্রেটিক রাজনীতির সমর্থক, বা ‘ব্লু স্টেট’। গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই দুই রাজ্যেই ট্রাম্পের হার হয়, কিন্তু ২০১৬ সালের তুলনায় তিনি অনেক ভালো ফল করেন। দেখার বিষয়, দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে এই দুই রাজ্যে ট্রাম্পের জনসমর্থন এখন কোন পর্যায়ে রয়েছে।

এ ছাড়া ক্যালিফোর্নিয়ায় গভর্নর গেভিন ন্যুসাম নির্বাচনী ম্যাপ পরিবর্তনের অনুমতি চেয়ে একটি গণভোটের আয়োজন করেছেন। আগামী বছরের নভেম্বরে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে রিপাবলিকান পার্টি বড় রকমের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে পারে। তা ঠেকাতেই ট্রাম্পের নির্দেশে টেক্সাসের নির্বাচনী ম্যাপ ঢেলে সাজানো হয়েছে, যার ফলে রিপাবলিকান দল কংগ্রেসে আরও পাঁচটি আসন নিজেদের দখলে আনতে সক্ষম হবে ভাবা হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ‘ব্লু স্টেট’ ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর ন্যুসামের নির্দেশে নির্বাচনী ম্যাপ বদলানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার ফলে সেখানে ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য কংগ্রেসে পাঁচটি আসনে বিজয়ের সম্ভাবনা তৈরি হবে।

এই তিনটি নির্বাচনের প্রতিটিতেই ভোটারদের মনে থাকবেন ট্রাম্প, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে আইনি বাধা উপেক্ষা করে বিভিন্ন ডেমোক্রেটিক শহরে অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযানের নামে সেনাসদস্যদের পাঠাচ্ছেন তিনি। যেসব ডেমোক্রেটিক নেতাকে শত্রু মনে করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছেন। কোনো যুক্তি বা কারণ ছাড়াই ২০২৪ সালের নির্বাচনে তাঁর পক্ষে ভোট দেয়নি এমন ডেমোক্রেটিক রাজ্যের কেন্দ্রীয় অনুদান বাতিল করছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়াই একাধিক সরকারি দপ্তর আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করে মাদক পাচার বন্ধের নামে ভেনেজুয়েলার সমুদ্রসীমায় সামরিক হামলা চালাচ্ছেন। আমদানি শুল্কের নামে যে বাণিজ্যযুদ্ধ তিনি শুরু করেছেন, তার ফলে নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যের দাম বাড়া শুরু হয়েছে।

গ্যালপ জানাচ্ছে, ২০২১ সালে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ ধনতন্ত্রের সমর্থক ছিল, তা এখন কমে ৫৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই যে পরিবর্তিত আমেরিকা, ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা সে কথা জানেন না বা জানতে চান না। গাজা প্রশ্নে তাঁদের রক্ষণশীল অবস্থান দলটির প্রতি নবীন প্রজন্মের ভোটারদের অবজ্ঞার জন্ম দিয়েছে।

এসব কার্যকলাপের ফলে সারা দেশে ট্রাম্পের জনসমর্থন কমেছে। অধিকাংশ জনমত জরিপে তাঁর প্রতি সমর্থন ৪২ থেকে ৪৫ শতাংশের বেশি নয়। সাম্প্রতিক সময়ে মাত্র ১০ মাসের মাথায় অন্য আর কোনো প্রেসিডেন্টের জনসমর্থনে এমন ধস নামেনি।

এবারের নির্বাচনে ট্রাম্প কোনো রাজ্যেই ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি প্রচারে আসেননি। এমনকি রিপাবলিকান প্রার্থীদের পক্ষে সরব সমর্থনও জানাননি। এর একটা সম্ভাব্য কারণ, জয়ী হবেন এমন প্রার্থীর সমর্থন দিতেই ট্রাম্প ভালোবাসেন। আগামীকালের নির্বাচনে তেমন সম্ভাবনা কম।

এই নির্বাচন যে ট্রাম্পের ব্যাপারে জনরায়, তার আরেক প্রমাণ নির্বাচনী প্রচারণায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অংশগ্রহণ। ডেমোক্রেটিক পার্টিতে জাতীয় নেতা বলতে তিনিই সবেধন নীলমণি। শনিবার নিউ জার্সির ডেমোক্রেটিক গভর্নর পদপ্রার্থী মাইকি শেরিলকে পাশে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন তিনি। একই দিন ভার্জিনিয়ায় ডেমোক্রেটিক গভর্নর পদপ্রার্থী এবিগেইল স্প্যানবার্গারের পক্ষেও প্রচারণায় অংশ নেন তিনি। উভয় রাজ্যেই ওবামা কঠোর ভাষায় ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেন, ট্রাম্পের কর্তৃত্ববাদী নীতির কারণেই আমেরিকা আজ এক দুঃসময়ের মুখোমুখি।

জনমতে এগিয়ে মামদানি

ওবামা মামদানিকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেননি। তবে তিনি যে মামদানির পাশে আছেন, সে কথাও গোপন রাখেননি। মামদানির ক্যাম্পেইন থেকে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি ওবামা নিজেই ফোন করে জানিয়েছেন, তাঁর (মামদানির) বিজয়ের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তিনি বলেছেন, মামদানির নির্বাচনী প্রচার ‘ইম্প্রেসিভ’ বা নজরে পড়ার মতো।

কুমো ক্যাম্প থেকে অহোরাত্রি তাঁকে ‘কমিউনিস্ট’ ও ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ হিসেবে প্রচার সত্ত্বেও মামদানি যেসব জনমত জরিপে এগিয়ে, তার একটি বড় কারণ মাঠপর্যায়ে তাঁর এই ‘ইম্প্রেসিভ’ প্রচারণা। শহরের প্রতিটি প্রধান কেন্দ্র হেঁটে জনসংযোগ সেরেছেন মামদানি। ৫০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক, যাঁদের অধিকাংশই নবীন, শহরের প্রতিটি বাসায় কড়া নেড়েছেন। টিকটক ও ইউটিউবে তাঁর উপস্থিতি অভূতপূর্ব। মামদানির এই ‘মাঠপর্যায়ের খেলা’ ঠেকাতে কুমো বেছে নিয়েছেন একদিকে ঘৃণা, অন্যদিকে ভীতি। এতে তিনি ফল পাচ্ছেন, গত দুই সপ্তাহে মামদানির সঙ্গে তাঁর ব্যবধান ১০ শতাংশের মতো কমে এসেছে। নিউইয়র্কের চলতি মেয়র নির্বাচন থেকে এরিক অ্যাডামস সরে দাঁড়ানোয় কুমোর লাভ হয়েছে সন্দেহ নেই, তবে এখনো মামদানির সঙ্গে যে ১৬-১৭ পয়েন্টের ব্যবধান রয়েছে, তা অতিক্রম করা কার্যত অসম্ভব, এই মত অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের।

ভূমিধস পরিবর্তন

একটা বিষয় স্পষ্ট। মেয়র নির্বাচনে মামদানি জয়ী হলে তা মার্কিন রাজনীতিতে প্রজন্মগত ও নীতিগত পরিবর্তনের সূচনা করবে। ভূমিধস পরিবর্তন আসবে ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতিতে। মধ্যপন্থী ও ডানঘেঁষা রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে এই দল অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে কম জনপ্রিয়। এই দলে যাঁরা নেতৃত্বে, তাঁদের অধিকাংশই বয়োবৃদ্ধ, করপোরেট আমেরিকার কাছে এদের হাত-পা বাঁধা। ইসরায়েল প্রশ্নে তাদের সমর্থন এখনো আগের মতো নতজানু।

পিউ রিসার্চের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েল প্রশ্নে এখন নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে এমন আমেরিকানের সংখ্যা ৫৩ শতাংশ, যা তিন বছর আগের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। একইভাবে ধনতন্ত্রের প্রতিও আমেরিকানদের সমর্থন নিম্নগামী। গ্যালপ জানাচ্ছে, ২০২১ সালে দেশের ৬০ শতাংশ মানুষ ধনতন্ত্রের সমর্থক ছিল, তা এখন কমে ৫৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এই যে পরিবর্তিত আমেরিকা, ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা সে কথা জানেন না বা জানতে চান না। গাজা প্রশ্নে তাঁদের রক্ষণশীল অবস্থান দলটির প্রতি নবীন প্রজন্মের ভোটারদের অবজ্ঞার জন্ম দিয়েছে।

অন্যদিকে ট্রাম্পের নেতৃত্বে রিপাবলিকান পার্টি খোলামেলাভাবে অভিবাসনবিরোধী, দক্ষিণপন্থী, খ্রিষ্টবাদী ও রক্ষণশীল। চলতি সপ্তাহের নতুন উদ্বাস্তু নীতিতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন শ্বেতকায় ও ইউরোপীয় আশ্রয়প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেবে। এই অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতকায় নাগরিকবৃন্দ, ট্রাম্প প্রশাসনের চোখে যারা সে দেশের সরকারের বৈষম্যের শিকার।

এই প্রতিক্রিয়াশীল রিপাবলিকান পার্টির বিপরীতে একটি আধুনিক ও প্রগতিশীল ডেমোক্রেটিক আন্দোলন গড়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও কংগ্রেস সদস্য ওকাসিও-কর্তেজ ইতিমধ্যে এই আন্দোলনের প্রধান মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন। সবাই মানেন, মামদানির মতো তরুণ ও বুদ্ধিমান নেতৃত্ব এই আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে।

এই সম্ভাবনার কথা খুব স্পষ্ট করে বলেছেন বার্নি স্যান্ডার্স। তাঁর কথায়, এই দেশ করপোরেট আমেরিকার নির্দেশে চলবে, না তার রাজনীতির কেন্দ্রে থাকবে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ—এ মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ‘যদি আমরা দ্বিতীয় পথটি বেছে নিতে চাই, করপোরেট আমেরিকার বদলে সাধারণ মানুষের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিই, তাহলে আমাদের মামদানির পাশে দাঁড়াতে হবে।’

কোন পথ বেছে নেবে নিউইয়র্ক, মঙ্গলবারেই তা নিশ্চিত হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
  • ব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প
  • ‘সাংস্কৃতিক জাগরণেই মুক্তি’
  • যদি ঠিক পথে থাকো, সময় তোমার পক্ষে কাজ করবে: এফ আর খান
  • বিবাহবিচ্ছেদ ও খোরপোষ নিয়ে ক্ষুদ্ধ মাহি
  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স