নিজ অ্যাপার্টমেন্টে ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা জানালেন হামাসের হাতে নিরাপদ ইসরায়েলি তরুণী
Published: 6th, May 2025 GMT
তেল আবিবে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন ইসরায়েলি তরুণী মিয়া শেম। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে হামাস যাঁদের জিম্মি করে গাজায় নিয়ে গিয়েছিল, তাঁদের একজন তিনি।
২২ বছরের মিয়া সেদিন ইসরায়েলে নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যালে উপস্থিত ছিলেন ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনটির যোদ্ধাদের গুলিতে আহত হন। গুলি তাঁর হাতে লেগেছিল।
হামাসের হাতে বন্দী থাকার সময় মিয়া শেম ধর্ষণের শিকার হওয়ার আতঙ্কে থাকতেন। কিন্তু তাঁকে যে নিজ বাড়িতে এমন ঘটনার শিকার হতে হবে, তা তাঁর কল্পনারও বাইরে ছিল।
হামাসের হামলার দিন ২২ বছরের মিয়া ইসরায়েলে নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যালে উপস্থিত ছিলেন এবং হামাস যোদ্ধাদের গুলিতে আহত হয়েছিলেন। গুলি তাঁর হাতে লেগেছিল।ইসরায়েলের দৈনিক পত্রিকা হারেৎজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি মিয়া তেল আবিবের একজন সুপরিচিত ফিটনেস ট্রেইনারের বিরুদ্ধে তাঁকে মাদক দেওয়ার ও ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন। মিয়া এ বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে মার্চের শেষ দিকে ওই ট্রেইনারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হামাসের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া এক তরুণীর যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া নিয়ে নানা কথা হচ্ছিল। অবশেষে সামনে এসে এ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলার সিদ্ধান্ত নেন মিয়া।
গত শনিবার রাতে মিয়া শেম ইসরায়েলের টেলিভিশন চ্যানেল-১২–তে একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি নিজ অ্যাপার্টমেন্টে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি সত্য প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। লুকিয়ে থাকাদের দলে আমি নই।’
মিয়া বলেন, ‘সারা জীবন এটাই আমার সবচেয়ে বড় ভয় ছিল, জিম্মি হওয়ার আগে, জিম্মি থাকার সময়। জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর যেখানে আমার সবচেয়ে নিরাপদ থাকার কথা, সেখানেই আমার সঙ্গে এটা ঘটেছে।’
সারা জীবন এটাই আমার সবচেয়ে বড় ভয় ছিল, জিম্মি হওয়ার আগে, জিম্মি থাকার সময়। জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর যেখানে আমার সবচেয়ে নিরাপদ থাকার কথা, সেখানেই আমার সঙ্গে এটা ঘটল।মিয়া শেম, ইসরায়েলি তরুণীহামাসের হাতে জিম্মি হওয়ার ৫৫ দিন পর মুক্তি পান মিয়া শেম। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২০২৩ সালের নভেম্বরে প্রথম যুদ্ধবিরতির সময় প্রায় ১০০ জিম্মি মুক্তি দিয়েছিল হামাস। সে সময় আহত মিয়াও মুক্তি পান।
মিয়া বলেন, বাড়ি ফেরার পর ওই ট্রেইনারের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। বিভিন্ন তারকা গ্রাহকের সঙ্গে কাজ করার কারণে ওই প্রশিক্ষকের বেশ নামডাক আছে। প্রশিক্ষকের সঙ্গে তিনটি সেশনের পর তিনি মিয়া শেমকে হলিউডের একজন চলচ্চিত্র প্রযোজকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
মিয়া দাবি করেন, তাঁকে বলা হয়েছিল, তাঁর জীবনের গল্প নিয়ে একটি সিনেমা তৈরি হতে পারে। তিনি বলেন, প্রথমে ওই প্রশিক্ষক একটি হোটেলের লবিতে প্রযোজকের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু তাঁদের সেই সাক্ষাৎ হয়নি। পরে তাঁকে তাঁর অ্যাপার্টমেন্টে ওই প্রযোজককে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। মিয়া প্রশিক্ষকের ওই প্রস্তাবে রাজি হন।
সেদিনের কথা মনে করে মিয়া আরও বলেন, ওই দিন অ্যাপার্টমেন্টে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুও উপস্থিত ছিলেন। নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর প্রশিক্ষক আসেন। এ সময় প্রযোজকের সঙ্গে গোপন বৈঠক হবে উল্লেখ করে মিয়ার বন্ধুকে চলে যেতে বলেন। বন্ধুও বেরিয়ে যান।
সেদিনের কথা মনে করে মিয়া আরও বলেন, সেদিন তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুও উপস্থিত ছিলেন। নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর ওই প্রশিক্ষক আসেন। তিনি অ্যাপার্টমেন্টে এসে মিয়ার বন্ধুকে চলে যেতে বলেন।ওই সময়ের পর থেকে মিয়ার স্মৃতি ঝাপসা। তিনি সব ঠিকমতো মনে করতে পারছেন না দাবি করে বলেন, ‘আমার শরীর মনে রেখেছে; এটি সবকিছু অনুভব করতে পেরেছে। কিন্তু আমার সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছে, সেটা আমি জানতাম না। শরীরের অনুভূতির সঙ্গে চেতনার সংযোগ ঘটাতে আমার তিন দিন সময় লেগেছে।’
ওই ঘটনার কয়েক দিন পর মিয়ার পরিবার ও বন্ধুরা খেয়াল করেন তিনি স্বাভাবিক আচরণ করছেন না। এতে তাঁরা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন।
মিয়ার মা কেরেন চ্যানেল-১২–কে বলেন, ‘আমার মেয়ে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছে। সে জিম্মিদশা থেকে খুবই কঠিন শারীরিক ও মানসিক অবস্থা নিয়ে ফিরে এসেছিল। কিন্তু তারপরও তার অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না। এখন আমি তার মধ্যে যে বিধ্বস্ত অবস্থা দেখছি, তাতে আমি সত্যিই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।’
মিয়া যেদিন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করছেন, সেদিন বিকেলের ঘটনা তাঁর আবছা মনে আছে বলে জানান তিনি। এই তরুণী বলেন, প্রশিক্ষক যখন তাঁর কক্ষে প্রবেশ করেন, তখন তিনি বিবস্ত্র ছিলেন। ঘরে তিনি দ্বিতীয় আরেক ব্যক্তির উপস্থিতি টের পেয়েছিলেন।
মিয়ার এক বন্ধু বলেন, সম্ভবত তাঁকে (মিয়া শেম) মাদক দেওয়া হয়েছিল। পরে তিনি পুলিশের কাছে যান এবং পুলিশ তাঁকে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার ব্যক্তিদের পরীক্ষা করা হয়, এমন একটি সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়।
আরও পড়ুনচুক্তি মেনে ২৪ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস২৪ নভেম্বর ২০২৩ওই সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিয়ার শরীরে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। মিয়া নিজেও এমন সব চিহ্ন দেখেন, যার ব্যাখ্যা খুঁজছিলেন।
মিয়ার অভিযোগের পর পুলিশ ওই প্রশিক্ষককে গ্রেপ্তার করলেও পরে ছেড়ে দেয়। তবে পুলিশ অভিযোগ তদন্ত করছে।
ওই প্রশিক্ষক অবশ্য মিয়ার সঙ্গে কোনো শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। যদিও পরে তাঁর বক্তব্যে পরিবর্তন এসেছে এবং পলিগ্রাফ পরীক্ষায় কিছু বিষয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর উত্তর দিয়েছেন তিনি। প্রশিক্ষক ওই দিনের পর মিয়াকে যে টেক্সট পাঠিয়েছেন, সেটাও সন্দেহজনক ছিল। তিনি লিখেছেন, ‘কী দারুণ রাত, ওয়াও’।
এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর আরও একজন নারী ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ করেন। নাম প্রকাশ না করে ওই নারী হিব্রু ভাষার একটি দৈনিককে বলেন, ওই প্রশিক্ষক তাঁকে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ অশ্লীল বার্তা পাঠিয়েছেন।
প্রশিক্ষকের আইনজীবী বলেছেন, তাঁর মক্কেল সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ করছেন। মক্কেলের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে তিনি আদালতকে একটি ভিডিও দেখিয়েছেন। মিয়ার দাবি করা ধর্ষণের দুই দিন পরের ওই ভিডিওতে মিয়াকে হাসিমুখে প্রশিক্ষকের সঙ্গে শরীরচর্চা করতে দেখা যায়।
আমার মেয়ে সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়েছে। সে জিম্মিদশা থেকে খুবই কঠিন শারীরিক ও মানসিক অবস্থা নিয়ে ফিরে এসেছিল। কিন্তু তারপরও তার অবস্থা এতটা খারাপ ছিল না। এখন আমি তার যে বিধ্বস্ত অবস্থা দেখছি, তাতে আমি সত্যিই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি।কেরেন, মিয়া শেমের মাসাক্ষাৎকারে এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন মিয়া। তিনি বলেছেন, ‘আমার সঙ্গে ঠিক কী ঘটেছে, সেটা আমি শুরুতে বুঝতে পারিনি।’
মিয়ার এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে কেউ কেউ সমালোচনা করে বলেছেন, রাতারাতি পরিচিতি পেতে তিনি এ কাজ করছেন।
এদিকে হিব্রু ভাষার দৈনিক পত্রিকা মারিভ–এর বরাতে মিডল ইস্ট মনিটরের খবরে বলা হয়, হামাসের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া তরুণী মিয়া শেম স্বীকার করেছেন, তিনি ইসরায়েলের তুলনায় গাজায় অধিক নিরাপদ ও সুরক্ষিত বোধ করেছিলেন।
আরও পড়ুনইসরায়েলের জঘন্য মিথ্যাচার ও হামাসের বিজয় অর্জন২৮ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনজিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া চার নারী সেনা কারা২৫ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অ য প র টম ন ট উপস থ ত ছ ল ন ইসর য় ল র জ ম ম দশ কর ছ ন ই আম র য় র পর ন র পদ র সময় অবস থ করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি সেবায় প্রতি তিনজনের একজন ঘুষ-দুর্নীতির শিকার
গত এক বছরে সরকারি সেবা গ্রহণ করেছেন এমন নাগরিকের মধ্যে ৩১ দশমিক ৬৭ শতাংশ ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। অর্থাৎ এসব সরকারি সেবা গ্রহণে প্রতি তিনজনের মধ্যে গড়ে একজনকে ঘুষ দিতে হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত সিটিজেন পারসেপশন সার্ভের প্রাথমিক ফলাফলে এ চিত্র উঠে এসেছে। জরিপের ফল প্রকাশ উপলক্ষে আগারগাঁও পরিসংখ্যান ভবনে এদিন সংবাদ সম্মেলন করে বিবিএস। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৬ নম্বর অভীষ্টের ছয়টি সূচক মূল্যায়নের অংশ হিসেবে এ জরিপ পরিচালিত হয়। গত ৬ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এই জরিপে দেশের ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ৮৪ হাজার ৮০৭ প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ অংশ নেন।
জরিপ অনুযায়ী, দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এ প্রতিষ্ঠানে ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ নাগরিক ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এর পর রয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ৬১ দশমিক ৯৪, পাসপোর্ট অফিস ৫৭ দশমিক ৪৫ এবং ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।
জরিপের ফল বলছে, ৮৪ দশমিক ৮১ শতাংশ নাগরিক সন্ধ্যার পর নিজ এলাকায় একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন। তবে এখানে রয়েছে স্পষ্ট লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য। পুরুষের ক্ষেত্রে এ হার ৮৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ, নারীর ক্ষেত্রে ৮০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। শহরাঞ্চলের নিরাপত্তা বোধ ৮৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও গ্রামাঞ্চলের তুলনায় ৮৫ দশমিক ৩০ শতাংশের কিছুটা কম। নিজ বাসায় নিরাপত্তা বোধের ক্ষেত্রে এই হার আরও বেশি– ৯২ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
মতপ্রকাশ ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ
২৭ দশমিক ২৪ শতাংশ নাগরিক মনে করেন, তারা সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে মতপ্রকাশ করতে পারেন। অন্যদিকে, ২১ দশমিক ৯৯ শতাংশ নাগরিক বিশ্বাস করেন, তারা দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে প্রভাব ফেলতে পারেন।
সরকারি স্বাস্থ্যসেবায় আস্থার চিত্র
গত এক বছরে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন ৪৭ দশমিক ১২ শতাংশ নাগরিক। সেবা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবাকে সহজপ্রাপ্য এবং ৮৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ সেবার ব্যয়কে সহনীয় মনে করেন। তবে স্বাস্থ্যসেবার মান ৬৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, স্বাস্থ্যকর্মীদের আচরণ ৬৩ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং সময় দেওয়া ৬৩ দশমিক ১৯ শতাংশ– এসব ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম সন্তুষ্টি দেখা গেছে।
সরকারি শিক্ষায় ইতিবাচক প্রবণতা
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪০ দশমিক ৯৩ শতাংশ নাগরিক জানিয়েছেন, তাদের অন্তত একটি সন্তান সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে। প্রাথমিক স্তরে ৯৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ নাগরিক বিদ্যালয়ে সহজ প্রবেশাধিকার ও ৯২ দশমিক ৬৬ শতাংশ ব্যয়কে সহনীয় বলে মন্তব্য করেন। মাধ্যমিক স্তরে এ হার কিছুটা কম– ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ ও ৮০ দশমিক ৮৬ শতাংশ। শিক্ষার মান বিষয়ে প্রাথমিক স্তরে ৬৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৭১ দশমিক ৮৬ শতাংশ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
অন্যান্য সরকারি সেবার মান
পরিচয়পত্র বা নাগরিক নিবন্ধনের মতো সেবায় ৭৮ দশমিক ১২ শতাংশ নাগরিক সেবার প্রাপ্যতা এবং ৮৬ দশমিক ২৮ শতাংশ ব্যয়কে গ্রহণযোগ্য মনে করেন। তবে কার্যকারিতা ৬২ দশমিক ৬০ শতাংশ, সময়মতো সেবা ৫১ দশমিক ২৮ শতাংশ ও সমআচরণ ৫৬ দশমিক ২৬ শতাংশ– এ তিনটি সূচকে সন্তুষ্টির হার তুলনামূলকভাবে কম।
বিচারপ্রাপ্তি ও বিরোধ নিষ্পত্তি
গত দুই বছরে ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো বিরোধের মুখোমুখি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বিচারপ্রক্রিয়ার আওতায় আসতে পেরেছেন। এর মধ্যে ৪১ দশমিক ৩৪ শতাংশ আনুষ্ঠানিক (আদালত বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী) এবং ৬৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক (কমিউনিটি নেতা বা আইনজীবী) প্রক্রিয়ায় সেবা পেয়েছেন।
বৈষম্য ও হয়রানি
জরিপ অনুযায়ী, গত এক বছরে ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন। নারীদের মধ্যে এই হার ১৯ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং পুরুষদের মধ্যে ১৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। শহরাঞ্চলে বৈষম্যের হার ২২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, যা গ্রামাঞ্চলের ১৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশের চেয়ে বেশি।
জরিপের ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ঘুষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল সবাইকে ঘুষ দিতে হয়। তারপরও জরিপে উঠে এসেছে ৩১ শতাংশ নাগরিককে ঘুষ দিতে হয়। নারীদের কাছে তুলনামূলক ঘুষ কম চাওয়া হয়েছে। তুলনামূলক উচ্চবিত্তরা ঘুষ দেন বেশি। ঘুষ দিয়ে তারা মূলত সেবা কিনে নেন।’
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুর্নীতির তথ্যে হতাশা ব্যক্ত করে উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা তো এখনও দাঁড়াতেই পারেনি, তারপরও তারা দ্বিতীয় অবস্থানে। এটি ভালো কথা নয়। আমার জানামতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সবচেয়ে বেশি ঘুষ বাণিজ্য হয়। সেটি বেশির ভাগই বদলিকে কেন্দ্র করে। এখানে মধ্যস্বত্বভোগী অনেক।’ পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতিও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিনি।