চাঁদ আমাদের নিকটতম মহাজাগতিক প্রতিবেশী। ১৯৬০–এর দশকে চাঁদের বুকে মানুষের পদচিহ্ন পড়ে। বহু শতাব্দী ধরে চাঁদ মামা হিসেবে আমাদের মানবজাতির কল্পনাকে মোহিত করে রেখেছে। প্রাকৃতিকভাবে চাঁদের পৃষ্ঠ রুক্ষ, অসংখ্য খাদ বা ক্রেটারসহ অন্ধকার মারিয়া অঞ্চল রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আগামী দশকের মধ্যেই চন্দ্র আবারও জয়ের জন্য পাল্লা দিচ্ছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যেকোনো সময় চাঁদে মানববসতি তৈরির ঘোষণা দিতে পারেন। আপনার যদি ডাক পড়ে, তখন কী করবেন? সেই পরিপ্রেক্ষিতে জেনে নিন চাঁদের কোন এলাকার কী নাম। প্রয়োজনে চাঁদে গেলে কাজে আসতে পারে।
চাঁদের প্রধান এলাকা বলা হয় মারিয়াকে। ল্যাটিন শব্দ মার থেকে মারিয়া এসেছে, যার অর্থ সমুদ্র। চাঁদের অন্ধকার, মসৃণ অঞ্চলকে মারিয়া বলা হয়। প্রাচীন আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট ব্যাসাল্ট লাভা দিয়ে গঠিত এই এলাকা। চাঁদের সম্মুখভাগ যে দিক পৃথিবীর দিকে থাকে, সেখানে মারিয়ার পরিমাণ বেশি। মার ইম্ব্রিয়াম, মার সেরেনিটাটিস, মার ট্রাঙ্কুইলিটাটিস ও মার ফিকুন্ডেটিটিসসহ বেশ কিছু অংশ পৃথিবী থেকে দেখতে পাই আমরা।
চাঁদের মধ্যে উজ্জ্বল ও উঁচু অঞ্চল দেখা যায়। এসব উচ্চভূমি মূলত অ্যানোর্থোসাইট শিলা দিয়ে গঠিত ও ক্রেটার দ্বারা পরিপূর্ণ। চাঁদের পেছনের দিকের বেশির ভাগ অংশ উচ্চভূমি দিয়ে আবৃত। চাঁদের পৃষ্ঠে অসংখ্য ক্রেটার রয়েছে, যা গ্রহাণু ও উল্কাপিণ্ডের সংঘর্ষ বা আঘাতের ফলে তৈরি হয়েছে। চাঁদের বায়ুমণ্ডল না থাকায় এখানে ক্ষয় বা গঠন খুব ধীরগতিতে হয়। এসব কারণে ক্রেটার কোটি কোটি বছর ধরে অক্ষত থাকে। কিছু উল্লেখযোগ্য ক্রেটার হলো টাইকো, কোপার্নিকাস ও ক্লাভিয়াস।
রাইলস চাঁদের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম। চাঁদের পৃষ্ঠে দীর্ঘ ও সরু গিরিখাতকে রাইলস বলা হয়। এসব মূলত লাভাপ্রবাহ বা টেকটোনিক ফাটলের কারণে তৈরি হয়েছে। হ্যাডলি রাইল ও ভ্যালেস শ্যরটেরি এমনই রাইলস। চাঁদে গেলে আপনি বেশ কিছু পর্বতমালা দেখতে পাবেন। এসব মূলত গ্রহাণুর আঘাত ইম্প্যাক্ট ইজেক্টা ও টেকটোনিক কার্যকলাপের ফলে তৈরি হয়েছে। চন্দ্রবুকে মন্টস অ্যাপেনাইনাস ও মন্টস কার্পাথিয়ানস উল্লেখযোগ্য পর্বতমালা।
চাঁদের পৃষ্ঠে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন দেশ এবং মহাকাশ সংস্থা তাদের যান অবতরণে সাফল্য পেয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের লুনা প্রোগ্রাম ছিল চাঁদে পৌঁছানোর প্রথম প্রচেষ্টা। লুনা ২ চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করা প্রথম মানবসৃষ্ট বস্তু। লুনা–৯ চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে প্রথম ছবি পাঠায়। লুনা–১৬ চাঁদের মাটি পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনে। ১৯৭০ সালে লুনা–১৭ অভিযানে লুনোখোড ১ রোভার প্রথম চাঁদে অবতরণ করে। অন্যদিকে নাসার অ্যাপোলো প্রোগ্রাম ছিল চাঁদে মানব অবতরণের ঐতিহাসিক মিশন। অ্যাপোলো–১১ ১৯৬৯ সালে প্রথম মানবকে চাঁদে অবতরণ করায়। অ্যাপোলো ১২, ১৪, ১৫, ১৬ এবং ১৭ চাঁদে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নমুনা সংগ্রহের জন্য অবতরণ করে। অ্যাপোলো–১৫, ১৬ ও ১৭ মিশনে লুনার রোভিং ভেহিকেল ব্যবহার করা হয়। অ্যাপোলো–১১ মার ট্রাঙ্কুইলিটাটিস এলাকায় অবতরণ করেছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ চন্দ্র অভিযানে বেশ ব্যস্ত। চীনের চ্যাংই প্রোগ্রাম চাঁদে বেশ কয়েকটি সফল অভিযান চালিয়েছে। চ্যাং ই–৩ চাঁদে ইউটু রোভারকে অবতরণ করিয়েছে। চ্যাং ই–৪ চাঁদের পেছনের দিকে অবতরণ করা প্রথম যান। চ্যাং ই–৫ চাঁদের মাটির নমুনা পৃথিবীতে নিয়ে এসেছে। ভারতের চন্দ্রযান প্রোগ্রামের মাধ্যমে চাঁদের কক্ষপথে ও পৃষ্ঠে সফল অভিযান চালিয়েছে। চন্দ্রযান-১ চাঁদের মেরু অঞ্চলে পানির অণুর উপস্থিতি নিশ্চিত করে। চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ল্যান্ডার বিক্রম ও রোভার প্রজ্ঞানকে নিয়ে গেছে।
সূত্র: নাসা
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজার থেকে ওড়ার পর খুলে পড়ল বিমানের চাকা, ঢাকায় জরুরি অবতরণ
কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানের পেছনের চাকা খুলে নিচে পড়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে জরুরি অবতরণ করেছে বিমানটি।
শুক্রবার (১৬ মে) দুপুর ১টা ২০ মিনিটে কক্সবাজার ছেড়ে যাওয়া বিজি ৪৩৬ (ড্যাশ ৮-৪০০) ফ্লাইটে শিশুসহ ৭১ জন যাত্রী এবং চার জন ক্রু ছিলেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) এ বি এম রওশন কবীর এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, উড্ডয়নের পরপরই বিমানের পাইলট ঢাকার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে (এটিসি) জরুরি বার্তা পাঠান এবং জরুরি অবতরণের অনুমতি চান। সঙ্গে সঙ্গে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেওয়া হয় জরুরি অবতরণের প্রস্তুতি। বিমানবন্দরে ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা সতর্ক অবস্থানে ছিল।
এ বি এম রওশন কবীর আরো জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে আকাশে ওড়ার পর পেছনের একটি চাকা খুলে নিচে পড়ে যায়। বিষয়টি জানার পর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের পাশে বিমান বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারিং টিম প্রস্তুত রাখা হয়। ফ্লাইটটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ইমার্জেন্সি’ ঘোষণা করা হয়। বিমানযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা/তারেকুর/রফিক