ভিয়েতনাম যুদ্ধের সেই বিখ্যাত ‘নাপাম গার্ল’ ছবিটি আসলে কে তুলেছিলেন
Published: 17th, May 2025 GMT
শিশুটির ডান পা সামনে, আরেক পা পেছনে, মাটি থেকে আলগা। হাত দুটি পাখির মতো উড়ে যাওয়ার ভঙ্গিতে আধো-প্রসারিত। আতঙ্ক ও যন্ত্রণায় মুখ ‘হাঁ’ হয়ে আছে, চোখ দুটি প্রায় বন্ধ। সারা শরীরে কোনো কাপড়চোপড় নেই। নাপাম বোমার হামলা থেকে বাঁচতে আরও কয়েকটি শিশু-কিশোরের সঙ্গে দৌড়াচ্ছে ৯ বছর বয়সী ফ্যান থি কিম ফুক। পেছনে কয়েকজন সেনাও রয়েছেন, আছেন দুজন চিত্রগ্রাহকও।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের এই আলোকচিত্র নানা কারণে প্রাতঃস্মরণীয় হয়ে আছে। যুদ্ধের ভয়াবহতার প্রতীকে পরিণত হওয়া এই আলোকচিত্র নিয়ে এখন পর্যন্ত অজস্র লেখালেখি হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে তৈরি হয়েছে একটি প্রামাণ্যচিত্র। এতে দাবি করা হয়েছে, আলোকচিত্রটি অ্যাসোসিয়েট প্রেসের (এপি) তৎকালীন আলোকচিত্রী নিক উত তোলেননি!
‘দ্য স্ট্রিংগার’ নামের এই তথ্যচিত্র গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের সানডেন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখানো হয়। এতে দাবি করা হয়, নিক উতে নয়, আলোকচিত্রটি ক্যামেরাবন্দী করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রচারমাধ্যম এনবিসির গাড়িচালক গুয়েন থান নগে। গাড়ি চালানোর পাশাপাশি তিনি ফ্রিল্যান্সার আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করতেন। ফ্রিল্যান্সার আলোকচিত্রী হিসেবে তিনি এপির কাছে অনেক ছবি বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু এপির কর্মী না হওয়ায় আলোকচিত্রী হিসেবে থান নগের নামের পরিবর্তে নিক উতের নাম ছাপা হয়েছিল।
বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত একটি আলোকচিত্র নিয়ে ‘দ্য স্ট্রিংগার’ প্রামাণ্যচিত্রে এমন দাবি রীতিমতো ঝড় তুলেছে। ১৯৭২ সালের ৮ জুন তোলা ছবিটি পরের বছর ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর বর্ষসেরা পুরস্কার পায়। পরে পুলিৎজার পুরস্কারও জেতে। এর মধ্য দিয়ে উত একজন বরেণ্য ফটোসাংবাদিকে পরিণত হন।
২১ বছর বয়সী নিক উত ১৯৭২ সালে ভিয়েতনামের সাইগন শহরে এপির কার্যালয়ে কাজ করতেন। ৮ জুন দক্ষিণ ভিয়েতনামের ত্রাং ব্যাংয় গ্রামে মার্কিন সেনাদের বোমা হামলার সময় তিনি ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ছিলেন। এত দিন পর্যন্ত মানুষ জেনে এসেছে, ছবিটি তোলার পর তিনি আহত কিম ফুককে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। ফলে প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন কিম ফুক।
‘দ্য টেরর অব ওয়ার’ আলোকচিত্র প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিসকে দেখাচ্ছেন নিক উত, তাঁর বাঁয়ে ফ্যান থি কিম ফুক। ভ্যাটিকানে, ১১ মে ২০২২.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন দেশের প্রথম রাজনৈতিক দল জাসদের রাজনীতি, সংগ্রাম, ত্যাগ, ভাঙন ও লেজুড়বৃত্তিতে ৫৩ বছর
জাসদ তৈরি হওয়ার পটভূমি
১৯৭২ সালের ২০ মে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ, ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের মধ্যে বিবদমান দুই গ্রুপ আলাদা প্যানেল দেয়। নির্বাচন ছিল ৩ জুন। বঙ্গবন্ধুর ভাগনে শেখ ফজলুল হক মনি গ্রুপের পক্ষ থেকে শেখ শহিদুল ইসলামকে ভিপি ও মনিরুল হক চৌধুরীকে জিএস পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, সাবেক ছাত্রনেতা সিরাজুল আলম খানপন্থীরা ভিপি পদে জিনাত আলী ও জিএস পদে মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশকে প্রার্থী দেয়। নির্বাচনে ছাত্রলীগের দুটি প্যানেল হওয়ায়, ভোট ভাগ হয়ে যায়। ফলে, ছাত্র ইউনিয়নের মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহবুব জামান ভিপি ও জিএস পদে বিজয়ী হন। ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগে পালটাপালটি বহিষ্কার হয়। সিরাজুল আলম খানের সমর্থকরা নূরে আলম সিদ্দিকীকে বহিষ্কার করে শরীফ নুরুল আম্বিয়াকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেন। অন্যদিকে শেখ মনির সমর্থকেরা শাজাহান সিরাজকে বহিষ্কার করে ইসমত কাদির গামাকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন। সবশেষে ছাত্রলীগের বিভক্তি চূড়ান্ত হয় জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে।
১৯৭২ সালের ২১-২৩ জুলাই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সিরাজুল আলম খানের সমর্থনপুষ্টরা পলটন ময়দানে সম্মেলনের স্থান ঠিক করে। আর শেখ ফজলুল হক মনির সমর্থক মুজিববাদপন্থীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের স্থান ঘোষণা করে। উভয় গ্রুপ প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ঘোষণা করেন। উভয় গ্রুপই নিশ্চিত ছিল, বঙ্গবন্ধু তাদের সম্মেলনে যাবেন। ২১ জুলাই বঙ্গবন্ধু পলটন ময়দানে না গিয়ে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুজিববাদ পন্থীদের সম্মেলনে যান। তাঁর সেই সিদ্ধান্তে হতবাক হন ছাত্রলীগের সিরাজ গ্রুপের নেতা–কর্মীরা।
মূলত : সেদিনই ছাত্রলীগ চূড়ান্তভাবে বিভক্ত হয়। পল্টনের সম্মেলনে কবি আল–মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয়দের মধ্যে গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর মুজিববাদকে কটাক্ষ করে একটি গান পরিবেশন করেন। গানের একটি লাইন ছিল, ‘একটি টাকা চালের দাম, মুজিববাদের অপর নাম।’(দাসগুপ্ত, স্বপন, ২০২৫)
কে এই সিরাজুল আলম খান ?
জাসদের সুপ্রিম লিডার ছিলেন সিরাজুল আলম খান। পার্টির মধ্যে সবাই তাকে ‘দাদাভাই’ বলে ডাকতেন। ছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’–এর প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৬২ সালে ‘হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন’ রিপোর্টের বিরুদ্ধে ও পাকিস্তানে একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান তৈরির দাবিতে, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র আন্দোলন চলে।
সেই আন্দোলন সিরাজুল আলম খানের মধ্যে ‘স্বাধীনতার বীজ’ বপন করে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তোলেন। আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলে (বর্তমানে সার্জেন্ট জহুরুল হক) স্বাধীনতা আন্দোলনের ‘অঙ্কুর’ সংগঠন হিসেবে সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক, কাজী আরেফ আহমদ ও আবুল কালাম আজাদ মিলে ‘স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস’ নামে বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলেন।
১৯৬৫ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা সিরাজুল আলম খান ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলনের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন।
১৯৭২ সালের ১ নভেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক ও বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকায় জাসদ প্রতিষ্ঠার খবর ছাপা হয়