আগের পর্বআরও পড়ুনঅ্যালবামের নাম ভিআইপি১৬ মিনিট আগে
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বহু ভাষা শিখে যেভাবে মানুষের ভালোবাসা পেলেন তিনি
তুর্কি, সোয়াহিলি, কুর্দিশ, কাজাখ কিংবা জুলু—ভাষা যা-ই হোক না কেন, বাদ সাধে না ইউজি বেলেজার। পথঘাটে ভিন্ন ভাষার-ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে বেশ আলাপচারিতা চালিয়ে নিতে পারেন তিনি। এ সবই বিভিন্ন ভাষা শেখার প্রতি বেলেজার তুমুল আগ্রহ, আর অধ্যবসায়ের ফল। ভিন্ন ভিন্ন ভাষা জেনেই তিনি এখন জনপ্রিয় এক মুখে পরিণত হয়েছেন।
বেলেজা এখন তারুণ্যে। বয়স ২৭ বছর। জাপানি, ইংরেজি, রুশ, জার্মান ও তুর্কি—এই পাঁচটি ভাষায় অনর্গল আলাপ করতে পারেন তিনি। ১০টি ভাষায় কথোপকথন চালিয়ে নিতে পারেন। আর ৪০টির বেশি ভাষার অন্তত কিছু বাক্য হলেও জানেন তিনি। তবে পৃথিবীতে তো হাজারো ভাষা রয়েছে। তাই থেমে থাকতে চান না বেলেজা। নিজের আয়ত্তে আনতে চান আরও অনেক ভাষা।
হাস্যোজ্জ্বল বেলেজাকে প্রায়ই দেখা যায় অস্ট্রিয়ায় ভিয়েনার রাস্তায়। শহরটিতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অভিবাসীর আনাগোনা লেগেই থাকে। ভিন্ন ভাষার এই মানুষগুলোর সঙ্গে আলাপের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন বেলেজা। এমন সব ভিডিও থেকেই জনপ্রিয়তার চূড়ায় পৌঁছেছেন তিনি। ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও ইউটিউবে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা এখন ১ কোটির বেশি।
বেলেজার ভাষা শেখার শুরু ছেলেবেলায়, পরিবার থেকে। তাঁর মা আয়ারল্যান্ডের নাগরিক আর বাবা জাপানের। জাপানের কিয়োটো শহরে বেড়ে ওঠা তাঁর। মা-বাবার কাছ থেকে ইংরেজি, আইরিশ, জাপানি ও স্প্যানিশ ভাষা শিখেছিলেন তিনি। শৈশবের এই শেখা-পড়ায় যুক্ত হয়েছিলেন তাঁর বোনও। ‘ভাষার খেলা’ খেলে সে সময় বড় সময় কাটত দুই ভাইবোনের।
১৬ বছর বয়সে কিছু সময়ের জন্য আয়ারল্যান্ডে পাড়ি জমান বেলেজা। উদ্দেশ্য ছিল মায়ের সংস্কৃতির সঙ্গে বোঝাপড়া। তবে তাঁকে পুরোপুরি আইরিশ হিসেবে মেনে নেননি স্থানীয় লোকজন। তখন দেশটির অভিবাসীদের সঙ্গে মেশা শুরু করেন বেলেজা। পরিচয় হয় লিথুয়ানিয়া ও পোল্যান্ডের মানুষের সঙ্গে। তাঁরা কথা বলেন রুশ ভাষায়। তখনই রুশ ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন বেলেজা।
সে তাড়না থেকে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে গিয়ে কলেজে ভর্তি হন বেলেজা। শেখেন রুশ ভাষা। পরবাসের দিনগুলোতে তিনি শিখে ফেলেন জার্মান, তুর্কি ও সার্বিয়ান ভাষাও। এ সময় জার্মান ভাষা নিয়ে তাঁর মনে আলাদা আগ্রহ সৃষ্টি হয়। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ভিয়েনায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করবেন। ২০২৩ সালে স্নাতকোত্তর শেষ হলেও ভালোবাসার টানে শহরটিতে থেকে যান তিনি।
বেলেজা একসময় চাইতেন জাতিসংঘে কাজ করতে, ইচ্ছা ছিল জাপানি কূটনীতিক হবেন। তবে ভাগ্য তাঁকে সেদিকে নিয়ে যায়নি। তুর্কি বন্ধু সুলাইমানের পরামর্শে ভিডিও বানানো শুরু করেন। প্রথম দিকের ভিডিওগুলো ছিল তুর্কি ও জাপানি সংস্কৃতি নিয়ে। একপর্যায়ে দর্শকদের আগ্রহের কারণে কাজাখস্তানের ভাষা নিয়ে ভিডিও বানানো শুরু করেন তিনি। ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় ওই ভিডিওগুলো।
এই জনপ্রিয়তার কারণে সম্প্রতি বেলেজাকে কাজাখস্তানের পর্যটন দূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এখন তাঁর বিভিন্ন ভিডিওতে পৃষ্ঠপোষকতা করছে ভাষাশিক্ষা অ্যাপ থেকে শুরু করে মুঠোফোন প্রতিষ্ঠান—এমনকি দাঁতের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানও। এতে আয় হচ্ছে অর্থ। এভাবে ভালোবেসে ভাষা শিখে, তা এখন পেশায় পরিণত করেছেন বেলেজা।
বেলেজা ‘জিরো টু ফ্লুয়েন্ট’ নামে ভাষা শেখার একটি প্ল্যাটফর্ম নিয়েও কাজ করছেন। এটি এমনভাবে নকশা করা হচ্ছে, যেন ভাষা শিক্ষা আরও সহজ ও মজাদার হয়। এরই মধ্যে সময় পেলে ছুটে যান ফ্রান্সের প্যারিসে, কাজাখস্তানের আস্তানা বা আলবেনিয়ার তিরানায়। বেলেজার আরও একটি স্বপ্ন আছে। তা হলো বিশ্বভ্রমণে বের হওয়া। ভিডিও মাধ্যমে ভিন্ন সংস্কৃতি ও ভাষা মানুষের কাছে তুলে ধরতে চান তিনি।
বেলেজা বলেন, ‘ভাষা যেমন আমাদের আলাদা করতে পারে, তেমনই একত্রও করতে পারে। ভাষার মাধ্যমে আমি যদি একজন মানুষকেও একটু সামনে আনতে পারি, একটু মূল্যবান বোধ করাতে পারি—সেটিই আমার কাছে সবকিছু।’