চট্টগ্রামে মো. সাহেদ (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে ঘুমন্ত অবস্থায় ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার গভীর রাতে নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। লাশ নিয়ে পালানোর সময় সাহেদের ছোট ভাই মো. জাহেদ ও তার স্ত্রী তাসমিন বিনতে আসলাম ওহিকে আটক করেছে পুলিশ। নিহত সাহেদ রাউজান থানার নোয়াপাড়া হাজি মীর হোসেন সওদাগর বাড়ির মৃত জালাল আহম্মদের ছেলে।

পুলিশ জানায়, এক সময় দুবাই থাকতেন সাহেদ ও জাহেদ। বছরখানেকের ব্যবধানে দু’জনেই দেশে ফেরেন। তাদের বাবা মারা গেছেন। আরেক ভাই মা ও তাঁর পরিবার নিয়ে দুবাই থাকেন। চান্দগাঁও আবাসিক এলাকায় বি-ব্লকের ২ নম্বর সড়কের একটি ভবনের চতুর্থ তলায় সাহেদ, জাহেদ ও তাঁর স্ত্রী তাসমিন থাকতেন। কয়েক মাস আগে সাহেদের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়েছে। জাহেদ ও তাসমিন রাতভর ইয়াবা সেবন করেন আর সারাদিন ঘুমান। ইয়াবায় আসক্তি ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে সাহেদের সঙ্গে তাদের বিরোধ হয়।

পুলিশ আরও জানায়, বুধবার সন্ধ্যার পর বাসায় তিনজন ঝগড়া করেন। জাহেদ ও তার স্ত্রী মিলে বাসার আসবাবও ভাঙচুর করেন। ঝগড়ার পর নিজের কক্ষে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন সাহেদ। গভীর রাতে জাহেদ ও তাঁর স্ত্রী ওই কক্ষে ঢুকে ঘুমন্ত সাহেদকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। পরে জাহেদ একটি অটোরিকশা ডেকে লাশ তুলে প্রথমে আবাসিক এলাকা থেকে বের হন। রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স পেয়ে সেখানে সাহেদের লাশ তুলে নেন। এরপর রাউজানের নোয়াপাড়ার দিকে রওনা দেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে অ্যাম্বুলেন্সচালক কৌশলে বিষয়টি চান্দগাঁও থানাকে জানান। চান্দগাঁও থানা পুলিশ গিয়ে অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে লাশ উদ্ধার করে জাহেদ ও তাঁর স্ত্রী তাসমিনকে গ্রেপ্তার করে।

চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন বলেন, বুধবার রাত দেড়টার দিকে এক অ্যাম্বুলেন্স চালকের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল অভিযানে নামে। নগরের কাপ্তাই রাস্তার মাথার কাছাকাছি এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সটি থামাতে সক্ষম হয় পুলিশ। অ্যাম্বুলেন্স থেকে সাহেদের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার এবং জাহেদ ও তাসমিনকে আটক করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দু’জনই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আটক দু’জনকে মামলার পর আদালতে পাঠানো হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ র ক ঘ ত হত য হত য

এছাড়াও পড়ুন:

সংগঠনকে অভিযুক্ত ও সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দিয়ে ট্রাইব্যুনালের বিধিমালার সংশোধন

ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনকেও অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করার বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কার্যপ্রণালি বিধিমালায় সংশোধন আনা হয়েছে। এত দিন অভিযুক্ত হিসেবে শুধু ব্যক্তিকেই বোঝাত। পাশাপাশি তদন্ত চলাকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রয়োজনে অভিযুক্তকে অথবা সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন, এমন ক্ষমতাও বিধিমালায় রাখা হয়েছে।

‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কার্যপ্রণালি বিধিমালা-২০১০’-এ এ দুটিসহ মোট ৪৪টি সংশোধনী ও সংযোজন এনে গতকাল বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই বিধিমালা এখন ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ কার্যপ্রণালি বিধিমালা ২০১০ (সংশোধন), ২০২৫’ নামে অভিহিত হবে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর ২২ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রণীত ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কার্যপ্রণালি বিধিমালা-২০১০’-এর ৬৬ বিধিতে উল্লিখিত ক্ষমতাবলে ট্রাইব্যুনাল এই সংশোধনী এনেছেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

১০ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল), ১৯৭৩ আইনের সংশোধন এনে অধ্যাদেশ জারি করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেখানে সংগঠনের সংজ্ঞায় সংশোধন আনা হয়। সেই সংশোধন অনুযায়ী, সংগঠন বলতে যেকোনো রাজনৈতিক দলকেও বোঝাবে। পাশাপাশি সংগঠন বলতে রাজনৈতিক দলের অধীনস্থ, সম্পর্কিত বা সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন অথবা গোষ্ঠীকেও বোঝাবে।

আইনের সংশোধনীতে আরও বলা হয়েছিল, এই আইন বা প্রযোজ্য অন্যান্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, যদি ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয় যে কোনো সংগঠন এই আইনের ৩ ধারা উপধারা (২)-এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেছে, আদেশ দিয়েছে, চেষ্টা করেছে, সহায়তা করেছে, উসকানি দিয়েছে, মদদ দিয়েছে, ষড়যন্ত্র করেছে, সহযোগিতা করেছে অথবা অন্য যেকোনোভাবে সেই অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছে, তবে সংগঠনটির কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করার, সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার, এর নিবন্ধন বা লাইসেন্স স্থগিত অথবা বাতিল করার এবং এর সম্পত্তি জব্দ করার ক্ষমতা থাকবে ট্রাইব্যুনালের।

আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ জারির আগে সে দিনই (১০ মে) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। এ অবস্থায় ট্রাইব্যুনালের বিধিমালায়ও সংশোধন আনা হলো।

কার্যবিধি সংশোধনের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে সংগঠনের বিচার এবং শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। সেই বিচারের পদ্ধতি কেমন হবে, সংগঠনের পক্ষ থেকে কে কে ট্রাইব্যুনালে এই বিচারে প্রতিনিধিত্ব করবেন, তার বর্ণনাও এই সংশোধনীতে আনা হয়েছে।

গাজী মোনাওয়ার আরও বলেন, তদন্ত চলাকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কোনো মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, অথবা তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো প্রসিকিউটর যেকোনো অভিযুক্তকে অথবা সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন। গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে ট্রাইব্যুনাল অথবা যেকোনো ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করতে হবে।

এই আইনজীবী আরও বলেন, চিফ প্রসিকিউটর চাইলে একাধিক অভিযুক্তকে একসঙ্গে বিচারের আওতায় আনতে পারবেন। অথবা তাঁদের ভাগ ভাগ করে বিচারের আওতায় আনতে পারবেন। অথবা একাধিক অভিযোগ একই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যদি তদন্তে প্রমাণিত হয়, তাহলে ফরমাল চার্জ দাখিলের মাধ্যমে অনেকগুলো অভিযোগের বিচার একসঙ্গে করতে পারবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ