কুমারখালীতে কবর থেকে শহীদের মরদেহ উত্তোলনে পরিবারের বাধা
Published: 22nd, May 2025 GMT
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান চলাকালে পুলিশের গুলিতে শহীদ হাফেজ মোহাম্মদ জুবায়ের আহমদের (১৭) মরদেহ উত্তোলনে বাধা দিয়েছে পরিবার। পরিবারের বাধা ও আবেদনের প্রেক্ষিতে মরদেহ উত্তোলন না করেই ফিরে গেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া কবরস্থানে মরদেহ উত্তোলন করতে গেলে পরিবার আপত্তি জানায়।
নিহত হাফেজ মোহাম্মদ জুবায়ের আহমদ কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া এলাকার কামাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকার একটি মাদরাসার শিক্ষার্থী ছিলেন।
জুবায়েরের বাবা কামাল উদ্দিন বলেন, “গত ৫ আগস্ট বিকেলে আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিল আমার ছেলে হাফেজ মোহাম্মদ জুবায়ের আহমদ। এ সময় পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে গুরুতর আহত হয়। তার পেটে গুলি লেগেছিল। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়।”
তিনি আরো বলেন, “আমার ছেলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে, এটা সবাই জানে। ঘটনাটি তদন্ত করলে এবং ওইসব এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ ও ভিডিও ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করলেই বিষয়টি জানা যাবে। পুলিশের গুলিতে জুবায়ের নিহত হয়েছে, এটা পরিষ্কার। আমার ছেলের মরদেহ উত্তোলন করতে চাই না এবং ময়নাতদন্ত করার দরকার নেই বলে মনে করি। এজন্য মরদেহ উত্তোলন করতে দিইনি। আমার ছেলের হত্যায় যারা জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।” হত্যার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আদালতের নির্দেশে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জুবায়ের আহমদের মরদেহ উত্তোলনের জন্য কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়া কবরস্থানে যান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্যরাসহ সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু মরদেহ উত্তোলনে শহীদ পরিবার আপত্তি জানায়। এ অবস্থায় মরদেহ উত্তোলন না করেই ফিরে যান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদিত্য পাল।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ৫টা ৪৫ মিনিটের দিকে রাজধানীর খিলগাঁও চৌরাস্তায় ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিলেন জুবায়ের। এ সময় তাদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি করে পুলিশ। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয় জুবায়ের। তাকে উদ্ধার করে সরকারি মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৭টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জুবায়ের আহমদের বাবা কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করে আমামি করা হয়।
দায়িত্বরত কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদিত্য পাল বলেন, “মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আদালতের নির্দেশে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত জুবায়ের আহমেদের মরদেহ উত্তোলনের জন্য কবরস্থানে এসেছিলাম। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়ায় মরদেহ উত্তোলন করা হয়নি। বিষয়টি আদালতকে জানানো হবে।”
ঢাকা/কাঞ্চন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ব য় র আহমদ আম র ছ ল পর ব র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষা-গবেষণায় বৈষম্য থাকবে না, এমন শিক্ষাঙ্গন করতে চায় বিএনপি: সালাহ উদ্দিন আহমদ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, তাঁরা শিক্ষাঙ্গনকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চান, যেখানে শিক্ষা ও গবেষণা দুটোই এগিয়ে যাবে, কোনো বৈষম্য থাকবে না। তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠনগুলোকে পরিবেশ সৃষ্টিতে সহযোগিতা করতে হবে।
আজ রোববার সকালে রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে আয়োজিত ‘শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন’ শীর্ষক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালাহ উদ্দিন আহমদ এ কথাগুলো বলেন। সংলাপের আয়োজক তারুণ্যের রাষ্ট্রচিন্তা প্ল্যাটফর্ম।
বাংলাদেশে উন্নত মানের গবেষণার পরিবেশ পেলে মেধাবীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে আবার দেশে ফিরে আসবেন বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে, রাজনীতিবিদেরা যেমন জাতি গঠনে দায়বদ্ধ, তেমনি শিক্ষকেরাও। তবে সহযোগিতা নিতে হবে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠনগুলোর কাছ থেকে। এই তিন ফ্যাক্টর মিলিয়ে রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব হবে। মেধা পাচার কমে আসবে। মেধাবীরা দেশে থাকার পরিবেশ পাবেন। দেশে উন্নত মানের গবেষণার পরিবেশ পেলে মেধাবীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে আবার দেশে ফিরে আসবেন।
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, দেশ থেকে মেধাবীরা বাইরে গেলে আর ফিরে আসেন না। কারণ, গত কয়েক বছরে এমন পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, যাতে মেধাবীরা আর দেশে ফিরে না আসেন। কিন্তু চীন ও ভারতের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মেধাবীরা উন্নত দেশে গিয়ে জ্ঞান নিয়ে নিজ নিজ দেশকে উন্নত করছেন। প্রযুক্তিতে তারা বিশ্বের অন্যতম সেরা দেশে পরিণত হচ্ছে। তাঁরা বিদেশে থেকে যাননি। কিন্তু এখানে সেটা হচ্ছে না।
বাংলাদেশে মাতৃভাষায় মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে বলে মত দেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, এখানে মাতৃভাষায় মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কারণ, শিশু মায়ের কাছ থেকে যে ভাষা শেখে, সেটি ব্যাকরণসহ শেখে না। বিদেশি ভাষা অবশ্যই শিখতে হবে। কিন্তু সেই বিদেশি ভাষা দিয়ে যদি ইতিহাস, গণিত, বিজ্ঞান পড়া হয়, তাহলে মেধার বিকাশটা ঠিকমতো হবে না। এটা মাথায় রাখতে হবে। শুধু ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয় সৃষ্টি করলেই হবে না।
সংলাপে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর পাভেল, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন। সংলাপ সঞ্চালনায় ছিলেন অর্পণ আলোক সংঘের প্রতিষ্ঠাতা বীথিকা বিনতে হোসাইন। সংলাপে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন–সম্পর্কিত প্রশ্ন, মতামত তুলে ধরেন। অতিথিরা সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন। সেরা প্রশ্নকারীদের মধ্যে তিনজনকে পুরস্কৃত করা হয়।