নেত্রকোনায় হাওরে মাছ শিকার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এ সময় শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৪০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার সকালে খালিয়াজুরী উপজেলার রসুলপুর গ্রামের পাশে ধনু নদীর ফেরিঘাটে এ ঘটনা ঘটেছে।
এলাকাবাসী জানান, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলার বিভিন্ন জলমহালের মাছ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে লুটপাটের মহাৎসব করছেন স্থানীয়রা। কয়েক দিন ধরে ময়মনসিংহের নান্দাইল, গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল, নেত্রকোনা সদর, আটপাড়া, কেন্দুয়া, মদন ও খালিয়াজুরী উপজেলার হাজারো লোকজন সমাবেত হয়ে হাওরের মাছ লুট করছে। গত এক সপ্তাহে মদন উপজেলার নুরেশ্বর বিল, খালিয়াজুরী উপজেলার কীর্তনখোলা বিল, কারি বিল, উচাবাইদা বিল, হাইলা বিলসহ বেশ কয়েকটি বিলের মাছ লুট করা হয়েছে। প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করেই এমন ঘটনা ঘটছে। যেসব বিলের মাছ লুট হয়েছে, সেগুলোর ইজারা মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা।
অন্যদিনের মতো শনিবার সকালেও খালিয়াজুরী উপজেলার কাঁঠালজান ও মরাগাঙ্গের মাছ লুট করার জন্য ধনু নদীর পারে জমায়েত হয় হাজারো মানুষ। পরে মাছশিকারিরা রসুলপুর ফেরিঘাটের পাশে তাদের পরিবহনের শতাধিক পিকআপ ভ্যান, অটোরিকশা, হ্যান্ড ট্রলি, মোটরসাইকেল রেখে ধনু নদী পার হওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় ফেরিঘাটের লোকজনের সঙ্গে মাছশিকারিদের বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে। উভয়পক্ষের অর্ধশত মানুষ আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন বহিরাগত মাছশিকারিদের শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে  সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট গাড়িতে দেওয়া আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বহিরাগত মাছশিকারিরা ফেরি দিয়ে ধনু নদী পার হওয়ার সময় তাদের গালমন্দ শুরু করে। তারা প্রতিবাদ করায় মারধর করতে থাকে। এ সময় সংঘর্ষ বাধলে হাজারো মানুষ রসুলপুর ফেরিঘাটের দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করে। পরে রসুলপুর গ্রামে বসতবাড়িতে হামলা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আহত একাধিক মাছশিকারি জানান, তারা খবর পেয়ে মাছ ধরার জন্য ধনু নদীর পারে যান। সেখানে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিল। হঠাৎ সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন একত্র হয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সবাইকে মারধর শুরু করে। তারা গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নয়ন ঘোষ জানান, হাসপাতালে ১৫-২০ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তারা মাছ শিকার করতে গিয়ে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন। সব রোগী একসঙ্গে আসায় নাম-পরিচয় সঠিকভাবে জানা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক রোগী আবার প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যাচ্ছেন।
খালিয়াজুরী থানার ডিউটি অফিসার এসআই তোফাজ্জল হোসেনের বরাত দিয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মী মৃণাল কান্তি দেব বলেন, খালিয়াজুরী হাসপাতালে ২০-২৫ জনের মতো চিকিৎসা নিয়েছেন। পুলিশ ৫০ জনকে আটক করেছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে খালিয়াজুরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মকবুল হোসেন জানান, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গাড়ি ভাঙচুর ও আহতদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পুলিশ কাজ করছে। ঘটনাস্থল থেকে কিছু লোককে আটক করে থানায় নেওয়া হয়েছে। পুরো তথ্য দিতে সময় লাগবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল টপ ট উপজ ল র স ঘর ষ ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৫ নেতা গ্রেপ্তার

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন পল্লবী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার সহযোগী মো. রমজান আলী ওরফে সিটু (৪৭), মোহাম্মদপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মো. আলমগীর (৩৫), গুলশান থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রাসেল ওরফে রাসেল আল জোবায়ের (৩০), ঢাকা মহানগর ৬৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান (৪৫) এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত কুমিল্লার মুরাদনগরের সাবেক সংসদ সদস্যের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মো. আবদুল কাদের (৫২)।  

শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে আওয়ামী লীগের নেতা রমজান আলীকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) মিরপুর বিভাগের একটি দল। ডিবি-তেজগাঁও বিভাগের একটি দল ওই দিন রাত রাত ১০টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে। একই দিন সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে মহাখালীর রসুলবাগ এলাকা থেকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা রাসেলকে গ্রেপ্তার করে ডিবি-সাইবার বিভাগের একটি দল। একই দিন রাত ৯টার দিকে ডিবি রমনা বিভাগের একটি আভিযানিক দল ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে থেকে যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসান এবং রাত ১০টার দিকে ঢাকার কলাবাগান থানা এলাকা থেকে আবদুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। তাঁরা সংঘবদ্ধ হয়ে আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করার মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ