পাইরেসি কবলে ‘বরবাদ’,ব্যবস্থা নিতে গুলশান থানায় নির্মাতা ও প্রযোজক
Published: 1st, April 2025 GMT
ঈদুল ফিতরের দিন মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান অভিনীত ও মেহেদী হাসান হৃদয় পরিচালিত সিনেমা ‘বরবাদ’। যা মুক্তির পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। তবে সিনেমাটি মুক্তির প্রথম দিনেই পাইরেসির শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় গুলশান থানায় হাজির হয়েছিলেন সিনেমার পরিচালক মেহেদি হাসান হৃদয় ও প্রযোজক শাহরিন আক্তার সুমি।
এ বিষয়ে পরিচালক মেহেদি হাসান হৃদয় জানান, ‘বরবাদ’ দেশের ১২০টি হলে চলছে। তবে ঠিক কোন হল থেকে পাইরেসি হয়েছে, তা এখনই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘এক মুহূর্তের পাইরেসি পুরো টিমের পরিশ্রমকে বরবাদ করতে পারে। এটি শুধু আইন বিরুদ্ধ নয়, শিল্পের প্রতিও অবজ্ঞা।’
পাইরেসি ঠেকাতে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ‘বরবাদ’ টিম। তারা বলেন, ‘ইতিমধ্যে অনেকগুলো পাইরেসি ক্লিপ আমাদের নজরে এসেছে, যা চলচ্চিত্রের জন্য অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তাই আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
তারা আরও বলেন, ‘যেকোনো পাইরেসি লিংক বা ভিডিও নজরে এলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
এদিকে ছবি মুক্তির দিনই ‘বরবাদ’ টিমের পক্ষ থেকে দর্শকদের অনুরোধ জানানো হয়, ‘বড় পর্দায় দেখুন, পাইরেসি থেকে বিরত থাকুন, শিল্প ও শিল্পীর সম্মান করুন।’
‘বরবাদ’ একটি রিভেঞ্জ থ্রিলার ঘরানার সিনেমা। যা অ্যাকশনপ্রেমীদের জন্য নির্মিত হয়েছে। এতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন কলকাতার ঈধিকা পাল। আরও আছেন- যীশু সেনগুপ্ত, মিশা সওদাগর, শহীদুজ্জামান সেলিম ও ফজলুর রহমান বাবু।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদ র স ন ম বরব দ
এছাড়াও পড়ুন:
স্রোতের মতো আসা গাড়ি আটকে যায় শুলকবহরে
নগরীর বহদ্দারহাট-শুলকবহর অংশে সড়কের একটি স্থানে এক পাশের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ টিনের ঘেরাও দিয়ে রাখা হয়েছে। ফ্লাইওভার ও নিচের সড়ক দিয়ে স্রোতের মতো গাড়ি চলাচল করছে। মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাটের দিকে যাওয়ার পথে শুলকবহর এলাকার সেই টিনঘেরা অংশে সরু সড়কে গিয়ে গাড়ি আটকে যাচ্ছে। আবার শুলকবহর থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত অর্ধকিলোমিটার জুড়ে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় খালের দুই পাশে রিটেইনিং ওয়াল (দেয়াল) নির্মাণ করার পাশাপাশি তলাও পাকা করা হচ্ছে। এসব কাজ করতে সড়কের বড় একটি অংশে যত্রতত্র ও এলোমেলোভাবে ফেলে রাখা হয়েছে মাটি, ময়লা আবর্জনা ও নির্মাণসামগ্রী। প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত এক্সক্যাভেটর দখল করে রেখেছে সড়কের বড় অংশ। এ কারণে সড়ক এত বেশি সরু হয়ে গেছে যে, যানবাহন চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। দুই স্থানে দিন-রাত যানজট লেগে থাকছে। বেশ কিছুদিন ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মানুষ। এ অবস্থায়ও সড়ক দখল করে কিছু টি স্টল ও ফলের দোকান বসেছে।
বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ, পতেঙ্গা– এ সড়কটি হচ্ছে চট্টগ্রাম নগরীর প্রধান সড়ক। কালুরঘাট সেতু ও শাহ আমানত সেতু থেকে আসা দুটি সড়ক গিয়ে মিলেছে বহদ্দারহাটে, এই সড়কটির সঙ্গে। সড়কটি দিয়ে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত ও শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত চলাচল করা যায়। স্বাভাবিকভাবে সড়কটির ওপর দিন-রাত সমানে যানবাহনের চাপ লেগে থাকে। বহদ্দারহাট এলাকা নগরীর অন্যতম জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকাগুলোর একটি। এখানকার জলাবদ্ধতা নিরসনে শুলকবহর এলাকায় মূল সড়কের পাশ ধরে চশমাখাল ও মির্জাখালে সড়ক কেটে দুটি খালকে সংযুক্ত করতে সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। নগরীর জলাবদ্ধতা প্রকল্পের আওতায় এই সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। আগে এখানে কালভার্ট থাকলেও সেটি এত নিচু ছিল যে, পানি চলাচল ব্যাহত হতো। মূলত সহজে যাতে দুই খাল দিয়ে এ এলাকার পানি নেমে যেতে পারে সে জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে যেসব কাজ করা হচ্ছে, এগুলো খুবই জরুরি। কারণ এই কাজ ছাড়া নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করা যাবে না। কিন্তু যততত্র ময়লা-আবর্জনা, লোহালক্কড় ও যন্ত্রপাতি ফেলে রাখায় সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। সড়ক সরু হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে সড়ক কাদাময় হয়ে উঠছে। এতে পথচারীরা চলাফেরা করতে পারেন না। যানবাহন চলাচলও ব্যাহত হয়। ময়লা-আবর্জনা দ্রুত সরিয়ে নিলে এবং যন্ত্রপাতি ঠিকঠাক মতো রাখা হলে বিদ্যমান সমস্যা কিছুটা হলেও কমে আসবে।
শুলকবহরে সাব কন্ট্রাক্টর হিসেবে সেতুটি নির্মাণের পাশাপাশি আশেপাশে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘সলভার ফাইভ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’। কথা হয় এই প্রতিষ্ঠানের ইঞ্জিনিয়ার মো. নাছির উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি সমকালকে বলেন, ‘বহদ্দারহাট ও মুরাদপুর এলাকায় জলবদ্ধতার বড় একটি কারণ হচ্ছে শুলকবহরে চশমা খাল ও মির্জা খালকে সংযুক্ত করা কালভার্টটি দিয়ে নির্বিঘ্নে পানি চলাচল করতে পারে না। পানি আটকে গিয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তাই একানে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুটি নির্মাণ করতে গিয়ে দেখা গেছে, যেখানে সেতু হবে, সেখানে গ্যাসের বড় পাইপ লাইন। ফলে কাজ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবার সড়ক কেটে খালে রূপ দিয়ে সেখানে সেতু নির্মাণ করতে হচ্ছে। এ কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এরপরও যানবাহন চলাচলে যাতে বড় ধরনের বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য সড়কটিকে ভাগ ভাগ করে কেটে সেতু নির্মাণের উপযোগী করা হচ্ছে।’
বহদ্দহাট থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশ সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এই অংশে খালের বেশিরভাগ অংশে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। তবে শুলকবহরের কিছু অংশ ও বহদ্দারহাট মোড়ে খাল খননের পাশাপাশি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের কাজ চলছে। এজন্য কয়েকটি স্থানে মাটির বাঁধ দেওয়া হয়েছে।
বহদ্দরহাট মোড়ে স্বজন সুপার মার্কেটের সামনে সিটি করপোরেশন নালার ওপর যেসব দোকানপাট ছিল, সেগুলো কিছুদিন আগে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে এখন স্কেভেটর দিয়ে মাটি তুলে নিয়ে খালের তলা পাকা করা হচ্ছে। বুধবার দুপুরে সেখানে স্কেভেটর দিয়ে খালের মাটি অপসারণ করা হচ্ছিল। এ সময় স্কেভটর চালক মো. মানিক বলেন, ‘সড়কের ওপর স্কেভেটর রেখে খালের মাটি তুলতে হচ্ছে। এগুলো আবার খালের পাশে সড়কের একাংশে রাখতে হচ্ছে। এতে সড়ক ছোট হয়ে আসছ। তবে খাল থেকে উত্তোলন করা মাটি দ্রুত সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’
বহদ্দারহাট মোড়ে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাতের বড় একটি কারণ হচ্ছে, সড়ক দখল করে দোকানপাট। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজের মধ্যেও সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে সারি সারি ভাসমান দোকানপাট। এগুলোও সড়ককে সংকুচি করেছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ হিমশিম খেলেও রহস্যজনক কারণে এসব দোকান ভাসমান দোকান অপসারণ করা হচ্ছে না।
এখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল মো. জাহের। তিনি সমকালকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজের কারণে কিছুদিন ধরে বহদ্দারহাট ও আশেপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।’ সড়কে গড়ে উঠা দোকানপাট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সড়ক থেকে দোকানগুলো তুলে দিলে, আবার গড়া হয়। আমরা কী দোকানপাট অপসারণ করব নাকি, যানজাট নিরসন করব?’
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায় বহদ্দারহাট মোড়সহ আশপাশের এলাকা। পানিনিষ্কাশনের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বৃষ্টির পানি আটকে যায় মোড়টিতে। এতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা হয়। এ সমস্যা নিরসনে নালার প্রশস্ততা বাড়ানো এবং এই নালার মাধ্যমে দুটি খালের (চশমা ও মীর্জা খাল) সঙ্গে সংযোগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য নালার ওপর নির্মিত সিটি করপোরেশনের বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। বর্ষার আগেই পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করতে রাত-দিন কাজ চলছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় এ কাজ করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার ব্রিগেড। এখন পর্যন্ত কমবেশি ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
শুধু বহদ্দারহাট নয়, নগরের জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকাগুলোর নালা–নর্দমা ও খালগুলোর সম্প্রসারণ, খনন ও ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ চলছে। এবার বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সিডিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ শুরু করেছে। এতে হালকা বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার সমস্যা থাকবে না বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ভারী বর্ষণ হলে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ ঠেকানো সহজ হবে না বলে মনে করছেন তারা।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে কৌশলে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এবার জলাবদ্ধতা প্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এই তালিকায় বহদ্দরহাটসহ বিভিন্ন এলাকা রয়েছে। এসব এলাকাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ চলছে। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে নগরের বেশির ভাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা সমস্যা অনেকাংশে কমে আসবে।