এনবিআর ভেঙে দুটি বিভাগ করার সিদ্ধান্ত সাহসী পদক্ষেপ
Published: 13th, May 2025 GMT
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে দুটি নতুন বিভাগ—রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এই সংস্কারের ফলে বাংলাদেশের কর প্রশাসনের আধুনিকীকরণ, রাজস্ব বৃদ্ধি ও ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষ হবে—এমন সম্ভাবনা আছে।
নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন কার্যক্রম আলাদা করার সিদ্ধান্ত ভালো পদক্ষেপ। এটি আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত উত্তম রীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। একটি বিভাগ নীতি প্রণয়ন ও আইন তৈরির কাজে যুক্ত থাকবে, অন্যটি আদায় ও বাস্তবায়নের কাজ করবে—এভাবে দায়িত্ব বণ্টনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও গতিশীলতা বাড়ানো সম্ভব। এই কাঠামো বাংলাদেশের রাজস্বব্যবস্থাকে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও ক্রমবর্ধমান রাজস্ব চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সহায়ক হতে পারে।
তবে এই সংস্কারের সফলতা অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে। বাংলাদেশের সামগ্রিক করব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার দরকার। বাড়াতে হবে করের আওতা। করছাড় কমাতে ও পরোক্ষ করের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা থেকে সরে আসার জন্য জোরালো প্রচেষ্টা নেওয়া উচিত। প্রত্যক্ষ কর, বিশেষ করে আয়করের ভূমিকা বাড়াতে হবে। জনসংখ্যার ধনী অংশ, যারা সঠিকভাবে কর দেয় না, তাদের করের আওতায় আনতে হবে।
করব্যবস্থার মধ্যে দুর্নীতি গুরুত্বসহকারে মোকাবিলা করতে হবে। এর জন্য কঠোর নিয়ম ও বাস্তব প্রয়োগ দরকার। কর আইন, আপিল ব্যবস্থা ও বিচারিক প্রক্রিয়া আধুনিক করতে হবে। এই পদক্ষেপগুলো ছাড়া, এমনকি সেরা পরিকল্পিত কাঠামো থেকেও, ফলাফল আসবে না।
অনুমিত ছিল, এই সংস্কার প্রক্রিয়ার বিরোধিতা হবে। ইতিমধ্যে কিছু বিরোধিতা দেখাও যাচ্ছে। কিছু শুল্ক ও আয়কর কর্মকর্তা নতুন আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রশাসনিক ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। এই প্রতিরোধ নতুন নয়। সংস্কারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কর খাত সবচেয়ে কঠিন খাতগুলোর মধ্যে একটি। অতীতে অভ্যন্তরীণ বিরোধিতা এবং স্বার্থান্বেষীদের কারণে বেশ কয়েকটি সংস্কার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের একটি অংশ সংস্কারের সমর্থক নয়। কারণটা হলো, বর্তমান ব্যবস্থার ফাঁকফোকর থেকে অনেকেই উপকৃত হচ্ছেন। এই চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান না করা হলে এই সংস্কার–পূর্ববর্তী প্রচেষ্টার মতো একই পরিণতির মুখোমুখি হতে পারে।
এ ছাড়া এই নতুন কাঠামো কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে। তাদের সক্রিয় ও অর্থবহ অংশগ্রহণ ছাড়া নতুন ব্যবস্থা ভালোভাবে কাজ করবে না।
বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের রাজস্ব–জিডিপি অনুপাত বিশ্বে অন্যতম সর্বনিম্ন। শক্তিশালী ও ন্যায্য করব্যবস্থা ছাড়া উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন করা সম্ভব হবে না।
এই সংস্কার উদ্যোগকে অবশ্যই স্বাগত; এটি প্রয়োজনীয় ছিল। যদিও এর সফলতা নির্ভর করবে বৃহত্তর করব্যবস্থা সংস্কার, কার্যকর বাস্তবায়ন ও প্রতিরোধের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ওপর।
সেলিম রায়হান: নির্বাহী পরিচালক, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: করব যবস থ এই স স ক র পদক ষ প ব যবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
মৃত্যু যেখানে রমরমা ব্যবসা হয়ে উঠছে
দক্ষিণ কোরিয়ার বন্দর নগরী বুসানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে কফিন। দেশটিতে ভবিষ্যতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিচালকদের প্রশিক্ষণের জন্য এগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যাপক জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের ফলে মৃত্যুর ব্যবসায় ক্রমবর্ধমান সংখ্যক লোক কাজ খুঁজে পাচ্ছে। কারণ দেশটিতে জন্মহার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম এবং জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকের বয়স ৫০ বা তার বেশি।
বুসান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির শিক্ষার্থীরা ঐতিহ্যবাহী কোরিয়ান অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কাপড়ে সাবধানে একটি পুতুল জড়িয়ে, কাপড়টিকে আসল চামড়ার উপর মসৃণ করে, তারপর আলতো করে কফিনে নামিয়ে দিচ্ছিল।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রশাসনের শিক্ষার্থী ২৭ বছর বয়সী জ্যাং জিন-ইয়ং বলেন, “আমাদের সমাজের বয়স বাড়ার সাথে সাথে, আমি ভেবেছিলাম এই ধরণের কাজের চাহিদা আরো বাড়বে।”
আরেক ছাত্র, ২৩ বছর বয়সী ইম সে-জিন তার দাদীর মৃত্যুর পর মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয়।
তিনি বলেন, “তার (দাদীর) অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় আমি দেখেছি পরিচালকরা তাকে শেষ বিদায়ের জন্য কতটা সুন্দরভাবে প্রস্তুত করেছেন। আমি গভীর কৃতজ্ঞ বোধ করছি।”
দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ ক্রমশ একাকী জীবনযাপন করছে এবং নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যাচ্ছে। এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির প্রায় ৪২ শতাংশ এখন একাকী জীবনযাপন করে।
এই পরিসংখ্যান দেশটিতে একটি নতুন পেশার আবির্ভাবকে প্রতিফলিত করছে।
উন্নত দেশগুলির মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। এই ‘একাকী মৃত্যু’-তে সেইসব ব্যক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত যারা আত্মহত্যা করেছেন।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া ব্যবসায়ের একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি কিম ডু-নিয়ন বলেন, তার ২০ বছর বয়সী ক্রমবর্ধমান সংখ্যক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মী রয়েছে।
তিনি বলেন, “মানুষ যখন একসাথে থাকে, তখন তারা জিনিসপত্র ভাগ করে নেয়... এমনকি যদি একজন ব্যক্তি মারা যায়, সেই জিনিসপত্রগুলি থেকে যায়। কিন্তু যখন কেউ একা মারা যায়, তখন সবকিছু পরিষ্কার করতে হবে।”
তবে নিজের পেশা নিয়ে ভয়ও পান কিম।
তিনি বলেন, “আমি ভয় পাচ্ছি। আপনি যতই প্রস্তুতি নিন না কেন, একজন মৃত ব্যক্তির মুখোমুখি হওয়া ভীতিকর।”
ঢাকা/শাহেদ