নির্মল বায়ু কোনো বিলাসিতা নয়, এটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। এই মুহূর্তে প্রয়োজন একটি বাস্তবমুখী জ্বালানি পরিকল্পনা এবং নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন। জ্বালানি নীতিগুলোতে শুধু রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা না করে পরিবেশগত দিকও বিবেচনা করা উচিত। মানবস্বাস্থ্য, প্রাণপ্রকৃতির সুরক্ষা এবং সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্যই তা দরকার।

‘নির্মল বায়ু নিশ্চিত করতে জ্বালানি নীতির পুনর্বিবেচনা’ শীর্ষক এক পলিসি ব্রেকফাস্টে কথাগুলো বলেন বক্তারা।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) কনফারেন্স হলে এ অনুষ্ঠান হয়। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), (বিআইপি) এবং সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) যৌথভাবে এর আয়োজন করে।

এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক, পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাপসের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে প্রয়োজন একটি বাস্তবমুখী জ্বালানি পরিকল্পনা, নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন।

কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি অর্থায়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিসহ জবাবদিহি ও শক্তিশালী প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘নির্মল বায়ু কোনো বিলাসিতা নয়, এটি আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। জ্বালানি নীতি কেবল মেগাওয়াটের হিসাব নয়, এর ওপর নির্ভর করছে মানবস্বাস্থ্য, প্রাণপ্রকৃতির সুরক্ষা এবং সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ মো.

কামরুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে এর আগে প্রায় সাতটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। প্রতিটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৭০০-১০০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, যার বেশির ভাগই কৃষিজমি ছিল। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র শুধু বায়ুদূষণ করছে না, এগুলো কৃষি ও প্রাণপ্রকৃতির জন্যও ক্ষতিকর।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এবং ভবিষ্যৎ সরকারকে জ্বালানি নীতিসহ অন্য নীতিগুলো প্রণয়নে বিদেশি কনসালট্যান্ট–নির্ভর না হয়ে দেশীয় বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সাহায্য নেওয়া উচিত। পাশাপাশি তিনি জ্বালানি মহাপরিকল্পনা সংশোধনের ওপর জোর দেন।

ঢাকার সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি ও ডেভেলপমেন্ট কো–অপারেশন এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জের ডেপুটি হেড নায়োকা মার্টিনেজ-ব্যাকস্ট্রোম বলেন, অনেক ইউরোপীয় অংশীদার নির্মল ও ন্যায়সংগত জ্বালানি শক্তি রূপান্তরকে সমর্থন করছে। যদি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা যায় এবং সিস্টেমভিত্তিক সমাধান প্রয়োগের সুযোগ সহজলভ্য করা যায়, তবে আরও অনেক অংশীদার এই খাতে আসবে।

ইউএনডিপি বাংলাদেশের গ্রিন গ্রোথ প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট জ্যাকব ফার্ডিনান্ড বলেন, জ্বালানি নীতিগুলোতে শুধু রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা না করে পরিবেশগত দিকও বিবেচনা করা উচিত। জ্বালানির উৎসগুলোর সঙ্গে পরিবেশদূষণ বা বায়ুদূষণ গভীরভাবে সম্পর্কিত। তিনি আরও বলেন, জ্বালানি পরিকল্পনার মাধ্যমে বায়ুদূষণ কমাতে হবে, তবেই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি অনেক জরুরি। আমাদের অনেক আইন ও নীতিমালা আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই, এগুলো বাস্তবায়ন করতে আমাদের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টুলস ডেভেলপমেন্ট করতে হবে। পাশাপাশি গ্রিন ফাইন্যান্স, প্রযুক্তি ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক সমন্বয় বাড়াতে হবে।’

আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘আমরা চাহিদা অনুযায়ী যে পরিমাণ শক্তি উৎপাদন করছি, তার বেশির ভাগই জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উৎপন্ন হচ্ছে। তবে শহরগুলোতে গণপরিবহন বৃদ্ধির পাশাপাশি নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের এই শক্তির চাহিদা কমাতে পারি। এটি আমাদের শহরগুলোর বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’

সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিপিআরডি) প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ‘আমরা যখন পলিসি প্রণয়ন করি, তা শুধু আমাদের দেশের একক চিন্তা করে নয়, এটি বৈশ্বিক উন্নয়নের সংজ্ঞার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রণয়ন করা উচিত।’

পলিসি ব্রেকফাস্টে আলোচক হিসেবে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এম সফিউর রহমান, বাংলাদেশ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নগর–পরিকল্পনাবিদ সানজিদা হক প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড ভ লপম ন ট আম দ র র জন য পর ব শ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আঠারো শতকের সুফি কবি ও সংগীতজ্ঞ সৈয়দ খাজা মীর দর্দ

আবদালি মারাঠিদের উৎপাত ও অত্যাচারে অন্য কবিরা যখন একে একে দিল্লি ছেড়ে লক্ষ্ণৌ চলে গিয়েছিলেন, তখনো প্রিয় শহর দিল্লি ছাড়েননি সৈয়দ খাজা মীর দর্দ (১৭২০-১৭৮৪ খ্রি.), বরং আমৃত্যু সেখানেই থেকে গিয়েছিলেন। লক্ষ্ণৌয়ে অবস্থানকারী কবিদের কাব্যবৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তাঁর কবিতার যে পার্থক্য ছিল, শুধু সে কারণেই তিনি সেই জায়গায় যাননি তা নয়, তাঁর আত্মমর্যাদাবোধ ছিল প্রখর, কারও তারিফ করে কখনো কসিদা লিখেছেন বলে শোনা যায়নি, সর্বোপরি তাঁর জীবনদর্শনও ছিল সমকালিক অন্য কবিদের থেকে আলাদা। মধ্যযুগের যে সময়টায় মীর দর্দের জন্ম, সেই সময় উর্দু সাহিত্যে ‘মীর-সওদার যুগ’ বলে পরিচিত—এই দুই কবি পারস্য কবি খাজা শামসুদ্দিন হাফিজ সিরাজি ও শেখ মোসলেহ উদ্দিন সাদির পথ অনুসরণ করে ফারসি কবিতার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধারাকে উর্দু কবিতার ধারায় যুক্ত করেন এবং সফল হন। মির্জা রফী সওদার চেয়েও সাত বছরের অগ্রজ মীর দর্দ এই সবকিছুই নিবিড়ভাবে লক্ষ করেছেন, পারস্য ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ ভান্ডার থেকে অনেক কিছু গ্রহণও করেছেন, তবু আমাদের ধারণা, পারিবারিক বংশধারার প্রভাবেই তাঁর জীবনদর্শন ও কাব্যচিন্তা শুরু থেকেই ভিন্ন ছিল।

মধ্যযুগের যে সময়টায় মীর দর্দের জন্ম, সেই সময় উর্দু সাহিত্যে ‘মীর-সওদার যুগ’ বলে পরিচিত—এই দুই কবি পারস্য কবি খাজা শামসুদ্দিন হাফিজ সিরাজি ও শেখ মোসলেহ উদ্দিন সাদির পথ অনুসরণ করে ফারসি কবিতার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধারাকে উর্দু কবিতার ধারায় যুক্ত করেন এবং সফল হন।

মাহমুদ আলী খান জামী তাঁর ‘দর্দ কে সো শের’ (প্রকাশকাল: ১৯৫৫ খ্রি., দিল্লি) গ্রন্থে লিখেছেন, খাজা মীর দর্দের দাদা বাদশাহ আলমগীরের শাসনামলে বুখারা থেকে এ দেশে এসেছিলেন, আর বাবা খাজা মাহমুদ নাসির আন্দালিব ছিলেন ‘শায়েরে উর্দু’ এবং ব্যক্তিগত জীবনে একজন সুফি। ভিন্ন মতে, তাঁর বাবার নাম (মাহমুদ নাসির নয়) মুহাম্মদ, আর তিনি উর্দু ভাষার কবি ছিলেন না, ছিলেন ফারসি ভাষার কবি। এঁরা ছিলেন নকশবন্দী ঘরানার পথিকৃৎ খাজা বাহাউদ্দিনের বংশধর ও অনুসারী। সুফি পরম্পরার মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন বলেই মাত্র বাইশ বছর—ভিন্ন মতে, সাতাশ বছর বয়সে জাগতিক মোহ ত্যাগ করে সুফি শুদ্ধাচারী হয়ে ওঠেন দর্দ এবং সুফি তত্ত্বসংক্রান্ত একাধিক বই লেখেন। ফলে তিনি যখন শের ও গজল লেখেন, তখন সেগুলোতে স্বভাবগত কারণেই সুফি মরমি কবিতার সহজগভীর ভাবের ছায়া পড়েছে। নিচে দর্দ কে সো শের বই থেকে—অন্যত্র গজলরূপে গণ্য এবং গীত—প্রথম ৩টি শের পড়লে এ কথার সত্যতা মিলতে পারে :

তোহমতে চন্দ অপনে জিম্মে ধর চলে
জিস লিয়ে আয়ে থে হম সো কর চলে
জিন্দেগি হ্যয় য়া কোই তোফান হ্যয়
হম তো ইস জিনে কে হাথোঁ মে মর চলে
শমা কে মানিন্দ হম ইস বজম মে
চশম নম আয়ে থে দামন তর চলে

অর্থাৎ :

কত অপবাদ বয়ে নিয়ে আমি চলছি
অথচ যে কারণে এসেছি তা–ই করে গেছি
এ কোনো জীবন, নাকি তুফান
তার হাতেই তো আমি মারা যাব
এই সভার প্রদীপ ছিলাম আমি
এখন আমার চোখের জলে আঁচল ভিজে যায়

[অনুবাদ: লেখক]

অল্প বয়স থেকে যিনি এমন ভাবনায় তাড়িত, তাঁর গজলে এই প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। সুফি কবি ও সাধক হিসেবে স্বীকৃত হলেও গজলকার হিসেবে যেরকম গণ্য হননি খাজা মঈন উদ্দিন চিশতি, ঠিক একই কারণেই গজলকার হিসেবে কেউ কেউ তাঁর নাম সমকালের মীর তকী মীর ও মির্জা রফী সওদার কাতারে রাখতে কুণ্ঠিত। অবশ্য এ ক্ষেত্রে খোদ মীর তকী মীরের একটি মন্তব্য আছে, যা অনেকেই উদ্ধৃত করেন, তা হলো: তিনি নাকি আড়াইজন কবিকে সবিশেষ গুরুত্ব দিতেন, যার মধ্যে একজন তিনি নিজে, অন্যজন মির্জা রফী সওদা আর অর্ধজন হলেন খাজা মীর দর্দ।

তাঁর এমন সহজগভীর ভাষার জন্য বোধ হয় বেশ কিছু অনুসারী তৈরি হয়েছিল, যাঁরা নিয়মিত তাঁর মাহফিলে আসতেন। শুধু ভাবশিষ্যরাই নন, সংগীতশাস্ত্রে পারদর্শী খাজা মীর দর্দ মর্যাদার ক্ষেত্রে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন যে তাঁর পাক্ষিক আসরে অনুরাগী হিসেবে কখনো কখনো বাদশাহ শাহ আলমও আসতেন।

শের ও গজলের ক্ষেত্রে মীর তকি মীর শেষমেশ যে উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন সেই জায়গা থেকে বিচার করে তাঁর এই কথাটিকে সদর্থে ধরে নিলে কবিতায় খাজা মীর দর্দের অবদানকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন না করে উপায় নেই। আসলে পারস্য কবিতার ঐতিহ্য ধারণ করে উর্দু গজলে যখন পরবর্তীকালের জনপ্রিয় বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নারীর সঙ্গে আলাপের আবহ তৈরি হচ্ছে, খাজা দর্দ তখন একই উৎস থেকে গ্রহণ করেছিলেন সুফি ঐতিহ্য। সমালোচকদের মতে, তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘দিওয়ান-এ উর্দু’, কিন্তু তাঁর ‘শমা-এ মহফিল’, ‘আহ-এ দর্দ’, ‘দর্দ-এ দিল’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থের প্রাঞ্জল ভাষা ও সুফিহৃদয়ের ভাব সেই সময় ও পরবর্তীকালের কবিদেরকেও প্রভাবিত করেছে। তাঁর একটি অনবদ্য শের হলো: ‘তমান্না তেরি হ্যাঁয় অগর হ্যাঁয় তমান্না/ তেরি আরজু হ্যায় অগর আরজু হ্যায়’ অর্থাৎ, আকাঙ্ক্ষা যদি থাকে, তা তোমারই আকাঙ্ক্ষা/ আশা তোমার জন্য, আদৌ আশা বলে যদি কিছু থাকে’। প্রেমের এমন একনিষ্ঠ নিবেদন খাজা দর্দের শেরেই পাওয়া সম্ভব। নিচে পড়ে নিতে পারি তাঁর আরও একটি জনপ্রিয় শের:

হাজারোঁ খওয়াহিশেঁ অ্যায়সি কে হর খওয়াহিশ পে দম নিকলে
বহুত নিকলে ম্যারে আরমান ল্যাকিন পির ভি কম নিকলে

অর্থাৎ :

এমন হাজার বাসনা আমার, যার প্রতিটি বাসনার জন্য প্রাণ ওষ্ঠাগত
কিছু আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলো বটে; কিন্তু তা খুবই সামান্য

তাঁর এমন সহজগভীর ভাষার জন্য বোধ হয় বেশ কিছু অনুসারী তৈরি হয়েছিল, যাঁরা নিয়মিত তাঁর মাহফিলে আসতেন। শুধু ভাবশিষ্যরাই নন, সংগীতশাস্ত্রে পারদর্শী খাজা মীর দর্দ মর্যাদার ক্ষেত্রে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন যে তাঁর পাক্ষিক আসরে অনুরাগী হিসেবে কখনো কখনো বাদশাহ শাহ আলমও আসতেন।

আরও পড়ুনএকাদশ শতকের সুফি কবি হাকিম সানায়ি গজনভি২৮ আগস্ট ২০২৫

মীর দর্দের এমন উচ্চাসনে পৌঁছার অন্য একটি কারণ হলো, তাঁর জন্মের বহু আগে থেকেই গান শোনা ও তার চর্চা বিষয়ে যে তর্ক-বিতর্ক চলে আসছিল, সে বিষয়ে তাঁর সবিস্তার আলোচনা এবং গানবিষয়ক গান লেখার উদাহরণ। আমাদের অজানা নয়, গান বিষয়ে কওয়ালির প্রতিষ্ঠাতা আমির খসরুর একাধিক বাণী আছে, যেমন: ‘গান হলো আত্মার খোরাক’, ‘দরবেশের কাছে গান হলো ঐশ্বরিক জ্যোতির সমতুল’ ইত্যাদি, আর দর্দ লিখেছেন: ‘অগর ঘিনা নফস কো বড়্কায়ে তো হারাম, অগর দিল কো ইলাহ কি তরফ নরম করে তো হালাল’ অর্থাৎ গান যদি মনকে প্রবৃত্তিতাড়িত হতে উসকে দেয় তাহলে হারাম, আর স্রষ্টামুখী করলে হালাল’। এ বিষয়ে দর্দের যে শের রয়েছে, সেটি আরও সুন্দর :

সামা’ আহলে দিল কো হ্যা সোদমন্দ দর্দ
কে ইস সে নরম হোতা হ্যা পাত্থর কা দিল ভি

অর্থাৎ :

হৃদয়বান মানুষের জন্য গান উপকারী, হে দর্দ
কারণ পাথরের মতো হৃদয়ও তাতে গলে যায়।

উল্লেখ্য যে, গান বিষয়ে আলোচনা করবার সময় এ অঞ্চলের গবেষক ও সুফি-বাউল-ফকিরেরা ইমাম গাজ্জালি, মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি ও আমির খসরুর বইয়ের তথ্যের উল্লেখ করেন, কিন্তু প্রকাশ ও প্রচারের অভাবে কোথাও সৈয়দ খাজা মীর দর্দের কথা পাওয়া যায় না। জাভেদ হুসেন দর্দের কয়েকটি গজল অনুবাদ করতে গিয়ে তার ভূমিকায় লিখেছেন: ‘দর্দ ছিলেন একজন বড় সংগীতজ্ঞ। সুফি সাধনায় সংগীতের ভূমিকা নিয়ে হুরমতে ঘিনা নামে পুস্তিকা লিখেছেন। উর্দু গজলের গীতিময়তা আজ দেখা যায় তাতে দর্দের ভূমিকা ব্যাপক ও গভীর।’ এই পুস্তিকাটি দুর্লভ, ভবিষ্যতে এটি অনূদিত হলে শায়ের ও গজলকার মীর দর্দের পাশাপাশি সংগীতচিন্তক হিসেবে তাঁর পরিচয়টাও আমরা জানতে পারব।

অন্য আলো–য় লিখতে পারেন আপনিও। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধসহ আপনার সৃজনশীল, মননশীল যেকোনো ধরনের লেখা পাঠিয়ে দিন। পাঠাতে পারেন প্রকাশিত লেখার ব্যাপারে মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া।
ই–মেইল: [email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ