জাপানে কেন বাড়ছে চালের দাম, রসিকতা করে মন্ত্রিত্ব হারালেন কৃষিমন্ত্রী
Published: 22nd, May 2025 GMT
জাপানের কৃষিমন্ত্রী তাকু ইতো এক অনুষ্ঠানে রসিকতা করে বলেছিলেন, তাঁকে কখনো চাল কিনতে হয় না। কারণ, তাঁর সমর্থকেরা তাঁকে অনেক চাল উপহার দেন।
ইতো ভেবেছিলেন, চাল নিয়ে তাঁর এই রসিকতা জাপানের মানুষকে হাসাবে। কিন্তু এই মন্তব্যে হাসি ওঠার বদলে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। আর এই প্রতিক্রিয়ার চাপেই শেষ পর্যন্ত পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন ইতো।
জাপানে কয়েক দশকের মধ্যে জীবনযাত্রার খরচ এখন সবচেয়ে বেশি। এতে মানুষ এমনিতে চাপের মধ্যে আছে। আর মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যয়বৃদ্ধির বড় প্রভাব পড়েছে অন্যতম প্রধান খাদ্যপণ্য চালের ওপর। গত এক বছরে চালের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। আমদানি করা চালের সরবরাহও খুব সীমিত।
গত রোববার স্থানীয় এক তহবিল উত্তোলন অনুষ্ঠানে করা ওই মন্তব্যের জন্য তাকু ইতো দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি একটু বেশিই বলে ফেলেছিলাম।’
বিরোধী দলগুলো ইতোর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার হুমকি দিলে তিনি পদত্যাগ করেন।
ইতোর পদত্যাগ প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সংখ্যালঘু সরকারকে আরও বিপাকে ফেলেছে। ইশিবার সরকারের এমনিতে জনসমর্থনে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে।
জাপানে চাল শুধু খাদ্য নয়, বরং রাজনীতিরও স্পর্শকাতর বিষয়। ইতিহাস বলছে, চালের সংকট নিয়ে ১৯১৮ সালে বেশ বড় দাঙ্গা হয়েছিল। এমনকি এ নিয়ে তৎকালীন সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল।
সুতরাং প্রধানমন্ত্রী ইশিবার জনসমর্থন কমার পেছনে চালের দাম যে বড় একটা কারণ, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
ইয়োকোহামার বাসিন্দা ৩১ বছর বয়সী মেমোরি হিগুচি বিবিসিকে বলেন, রাজনীতিকেরা নিজেরা বাজারে যান না, তাই এসব তাঁরা বুঝতেও পারেন না।
হিগুচি কিছুদিন আগে মা হয়েছেন, তাঁর সাত মাসের একটি সন্তান রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার সুস্থ থাকার জন্য ভালো খাবার দরকার। আর আমার মেয়েও শিগগিরই শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করবে। আমি চাই, সে ভালোভাবে বড় হোক। কিন্তু চালের দাম বাড়তে থাকলে হয়তো আমাকে আর আমার স্বামীকে কম ভাত খেতে হবে।’
চাষ কম, গুণগত মানও খারাপ
জাপানের কৃষি–বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নিশিকাওয়া বলেন, পূর্বাভাসের চেয়েও ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। হয়েছে মাত্র ৬৬ লাখ টনের মতো।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, দাম বাড়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন অন্য খাদ্যদ্রব্যের তুলনায় চালের দাম তুলনামূলক কম ছিল এবং জাপানে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে।
তবে চলতি বছর গরম অতিরিক্ত হওয়ায় উৎপাদিত ধানের মান খারাপ হয়েছে ও উৎপাদনও কমেছে।
ধানচাষে আর লাভ নেই
নিগাতা অঞ্চলের কৃষক ৫৯ বছর বয়সী কোসুকে কাসাহারা বলেন, ধানচাষে এখন আর লাভ হচ্ছে না।
কোসুকে বলেন, ৬০ কেজি ধান উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ ইয়েন। অথচ গত বছর স্থানীয় সমবায় সমিতি এই চাল কিনেছে ১৯ হাজার ইয়েনে।
এই জাপানি কৃষক বলেন, ‘তিন থেকে চার বছর আগেও সরকার চালের উৎপাদন কমাতে আর্থিক প্রণোদনা দিত।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান, ধানচাষ ছেড়ে গম বা সয়াবিন চাষে উৎসাহ দিতে সরকার নানাভাবে ভর্তুকি দিয়েছে।
তরুণ কৃষকেরা এখন জাপানি ধানি মদ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এমন ভিন্ন ধরনের ধান, রাইস ক্র্যাকার্স ও গবাদিপশুর খাবার হিসেবে ব্যবহৃত ধান উৎপাদনে ঝুঁকেছেন। কারণ, জাপানে সাধারণ ধান বা চালের চাহিদা দীর্ঘদিন ধরে কমছিল।
শিনিয়া তাবুচি নামের আরেক কৃষক বলেন, ‘বাজারে কম দামে চাল বিক্রি করতে করতে আমি ক্লান্ত।’
তবে এখন চিত্র পুরোপুরি বদলে গেছে। বর্তমানে ৬০ কেজি ধানের বাজারদর ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ইয়েন।
চালের বাড়তি দাম সাধারণ মানুষের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ালেও বহু বছর ধরে লোকসান দেওয়া কৃষকদের জন্য এটা স্বস্তির খবর।
জাপান সরকারের মজুত রাখা চাল বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। ১৮ মার্চ, সাইতামা এলাকা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মন ত র র জন য সরক র উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইরানের রাজধানী তেহরানে এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থিত সামরিক স্থাপনাগুলোতে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
স্থানীয় সময় রবিবার (১৫ জুন) বিকেলে চালানো এ হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার ডেপুটি হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন।
রবিবার রাতে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন ও সংবাদ সংস্থাগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
ইরানে আবারো হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরো জানিয়েছে, তেহরানে ইসরায়েলের নতুন হামলায় আইআরজিসির তৃতীয় ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মোহসেন বাঘেরিও নিহত হয়েছেন।
এর আগে, শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলের প্রথম হামলায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসির কমান্ডার হোসেইন সালামিসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং অন্তত ছয় জন পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিল ইরান।
রবিবার ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শুক্রবার ও শনিবার ইরানজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় ১২৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ৯০০ জন। হতাহতদের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ জন নারী এবং বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ