নিয়োগের তিন সপ্তাহের মাথায় পদত্যাগ করলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অন্তর্বর্তী উপাচার্য অধ্যাপক মো. হযরত আলী। বর্তমানে শিক্ষকদের আন্দোলনে অচলাবস্থার মধ্যে গতকাল বুধবার তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এমনটাই জেনেছেন।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিকে কেন্দ্র করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে সরিয়ে দেয় সরকার। এরপর ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অধ্যাপক মো.

হযরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। ওই সংঘর্ষ ও শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় বিচারিক প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার অভিযোগে শিক্ষকেরা আন্দোলন করছেন। কর্মবিরতির পর এখন প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকেও বিরত থাকার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি। এসব কারণে তিন মাস ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ আছে প্রকৌশল শিক্ষার এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে ৭ হাজার।

আরও পড়ুনকুয়েটের অন্তর্বর্তী উপাচার্য চুয়েটের অধ্যাপক মো. হযরত আলী০১ মে ২০২৫

কুয়েটে তিন মাস আগের সংঘর্ষ ও শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় বিচারিকপ্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এর আগে গত সোমবার প্রশাসনিক ভবনে এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন শিক্ষকেরা। গত রোববার শিক্ষক সমিতি সব ধরনের প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেয়। ৪ মে থেকে শিক্ষকেরা একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা থেকেও বিরত রয়েছেন। শিক্ষকদের অভিযোগ, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না এবং স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত ৫ মে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ও শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক সমিতির দাবির সঙ্গে সংগতি রেখে প্রশাসন কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ পাঠানো হয়।

১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হন। সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা শুরুতে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করলেও পরে তা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পরিণত করেন। তাঁদের আন্দোলনের মুখে সরকার উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। এর কয়েকদিন পরে কুয়েটে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক মো. হযরত আলীকে নিয়োগ দেয় সরকার।

আরও পড়ুনশিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, নেই পরিকল্পিত সমাধান ২১ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ চ র য পদত য গ স ঘর ষ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

গজারিয়ায় পরিবারকে জিম্মি করে অর্ধলক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার একটি বাড়িতে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে স্বর্ণালংকারসহ অর্ধলক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাতরা।

রবিবার (২ নভেম্বর) মধ্যরাত ৩টার দিকে উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি দক্ষিণপাড়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ফজলুল হকের বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে।

আরো পড়ুন:

ভাড়া নেওয়ার কথা বলে বাসায় ঢুকে গৃহবধূকে বেঁধে ডাকাতি

বগুড়ায় বৃদ্ধাকে খুন করে ডাকাতি: গ্রেপ্তার ৪, টাকা উদ্ধার

ভুক্তভোগী সাথী বেগম বলেন, “রাত ১টার দিকে একটি শব্দ পেয়ে আমার ঘুম ভাঙে। সে সময় বিষয়টি সেভাবে আমলে নেইনি। রাত ৩টার দিকে উঠে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়তে বসলে জানালার গ্রিল কেটে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে দুই যুবক। তারা প্রথমে আমাকে, পরে আমার ছেলে সাবিদকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। পরে তারা আমাদের বিল্ডিংয়ের চারটি ফ্ল্যাটের প্রত্যেকটিতে একের পর এক লুট করতে থাকে। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলে এই ডাকাতি।” 

তিনি বলেন, “ডাকতরা নগদ ৩ লাখ টাকা, ৩২ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৯টি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা আমাদের সবাইকে একটি রুমে আটকে রেখে বাহির থেকে তালা লাগিয়ে যায়।”

প্রত্যক্ষদর্শী সাবিদ বলেন, “জানালার গ্রিল কেটে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে দুইজন। পরে ডাকাত দলের আরো ২২-২৩ জন সদস্য বাসার ভেতরে প্রবেশ করে। বাইরে আরো কয়েকজন পাহারায় ছিল। ডাকাত দলের অধিকাংশ সদস্যের মুখে মাস্ক ও গামছা ছিল। তারা অস্ত্রের মুখে আমাকে জিম্মি করে আমাকে দিয়েই অন্যান্য ফ্ল্যাটের দরজা খোলান। আমার চোখের সামনে একের পর এক রুমে ডাকাতি হয়।”

অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ফজলুল হক বলেন, “আমার তিন ছেলে দেশের বাহিরে থাকে। তাদের পাঠানো প্রায় ৩২ ভরি স্বর্ণালংকার, কয়েকদিন আগে ব্যাংক থেকে তোলা নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৯টি মোবাইল সেট লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাতরা। তারা আমাদের পরিবার সম্পর্কে অনেক কিছু জানত। কোন রুমে কী আছে, আমরা কবে ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছি এমনকি বাসায় ওয়াইফাই বন্ধ সবই জানত। আমার ধারণা, স্থানীয় লোক এর সঙ্গে জড়িত। আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দেব।”

ভুক্তভোগীর প্রতিবেশী লাক মিয়া বলেন, “আমরা ভোর ৫টার দিকে বিষয়টি প্রথমে বুঝতে পারি। পরবর্তীতে বাইরে থেকে লক করা রুম খুলে আমরা আটকে থাকা পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করি। তারপর বিষয়টি জানাজানি হয়।”

রবিবার (৩ নভেম্বর) গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, “সকাল ৬টার দিকে দিকে আমি ৯৯৯ থেকে একটি কল পেয়ে এ বিষয়ে জানতে পারি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আমরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি।”

ঢাকা/রতন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ