স্বামীর কাছে ঋণের টাকা পাবেন বলে এক নারীর দুধেল গাভি ধরে নিয়ে গেছেন স্থানীয় এক রাজনীতিক। এর বিচার চাইতে ওই গাভির বাছুর কোলে করে নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকালে আদালতে গেছেন সেই নারী। 

ভুক্তভোগী গৃহবধূ নারগিস আক্তারের বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার শুক্তাগর ইউনিয়নে। তিনি জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরে তার স্বামী এলাকাছাড়া। স্ত্রীর খোঁজ-খবরও রাখছেন না। পোশাক কারখানায় চাকরি করে তিলে তিলে জমানো টাকা দিয়ে সম্প্রতি একটি গাভি কেনেন নারগিস আক্তার। এক মাস আগে সেই গাভির বাছুর হয়েছে। কিন্তু, তার স্বামীর কাছে ২০ হাজার টাকা পাওনা দাবি করে স্থানীয় শুক্তাগড় ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো.

বেলাল খান বুধবার (১৪ মে) সকালে দুধেল গাভিটি ধরে নিয়ে যান। দুধ খেতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বাছুরটি। পরে ওই বাছুরকে কোলে করে নিয়ে আদালতে গেছেন নারগিস। আদালত চত্বরে বসে বোতলে করেই বাছুরটিকে দুধ খাওয়ান তিনি। 

অভিযুক্ত মো. বেলাল খান বলেছেন, নয় বছর আগে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প থেকে নারগিসের স্বামী আবু বকরকে ২০ হাজার টাকা তুলে দিই। তা এখন সুদে-আসলে ৩০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। টাকা না দেওয়ায় আমি তাদের গরু নিয়ে এসেছি। 

তবে, গাভি ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আদালতে কোনো মামলা হয়নি। পরে স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় বাছুরটিকে দুধ খাওয়ানোর জন্য বেলাল খানের বাড়িতে গেছেন নারগিস আক্তার।

ঢাকা/অলোক/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন রগ স

এছাড়াও পড়ুন:

দাবি আদায়ে অনড় আন্দোলনকারীরা

রাজধানীর কাকরাইল মোড় অবরোধ করে গতকাল বৃহস্পতিবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি গণ–অনশনসহ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন তাঁরা। তবে গতকাল রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তাঁদের দাবির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্‌দীন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় কাকরাইল মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষক–শিক্ষার্থী এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সমাবেশ হবে। জুমার নামাজের পর থেকে শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা মিলে গণ–অনশনে বসবেন।

লংমার্চে পুলিশের হামলার বিচার ও আবাসন সমস্যার সমাধানসহ তিন দফা দাবিতে গত বুধবার বেলা দুইটা থেকে কাকরাইল মসজিদের সামনের মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। ব্যস্ততম এই মোড়ে যান চলাচল বন্ধ থাকায় গতকাল সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ওই এলাকার বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট ছিল।

গতকাল রাত সাড়ে ১২টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চলছিল। আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমৃত্যু কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তাঁরা। গতকাল অবস্থান কর্মসূচিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হন। এ ছাড়া আন্দোলনে নতুন করে অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তাও যোগ দেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করার তিন দফা দাবিতে কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা।

ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে তাঁদের লংমার্চ কর্মসূচি ছিল। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লংমার্চ কাকরাইল মসজিদের সামনে পৌঁছালে বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় প্রায় অর্ধশত শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হন বলে আন্দোলনকারীরা জানান। এরপর বেলা দুইটা থেকে কাকরাইল মসজিদের সামনের মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে আসছেন আন্দোলনকারীরা।

তীব্র যানজটে দুর্ভোগ

এদিকে কাকরাইল মসজিদের সামনের মোড় অবরোধ করার কারণে দুই দিন ধরে সেখান দিয়ে কোনো যানবাহন চলছে না। আগের দিনের মতো গতকালও দিনভর কাকরাইল ও আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পল্টন, শাহবাগ, মালিবাগ, বাংলামোটরসহ আশপাশ এলাকায় মানুষ দিনভর ভোগান্তিতে পড়েন। গতকাল দুপুরের পর কাকরাইল ও মৎস্য ভবন হয়ে চলাচল করা পরিবহনগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। অনেকে বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে যান।

ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা জানান, কাকরাইলে সড়ক অবরোধের কারণে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অফিসগামী লোকজনকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। দুপুরের পর থেকে যানজট আরও তীব্র হয়। বিকেলে পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে পড়ে।

ট্রাফিক পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শফিকুল ইসলাম গতকাল দুপুরের পর প্রথম আলোকে বলেন, কাকরাইল মসজিদের সামনের মোড় অবরোধ করায় আশপাশের সড়কে গাড়ির চাপ বেড়েছে। এতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি যানজট তৈরি হয়েছে। ওই সড়কে চলাচলকারী গাড়িগুলোকে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করতে হয়েছে।

রাতেও অবস্থান

বুধবার দুপুর থেকে সড়কে অবস্থান করার পর রাতেও কাকরাইল মসজিদের সামনের মোড় অবরোধ করে রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাতে ওই এলাকায় দায়িত্বে ছিলেন রমনা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল কাদির। তিনি গতকাল সকালে প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীরা রাতভর এখানে অবস্থান করেছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কেউ সড়কে শুয়ে ছিলেন, কেউ বসে ছিলেন।

এদিকে গতকাল সকাল থেকে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে চলমান আন্দোলনে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকায় এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। জামালপুর থেকে আসা মুকুল হোসেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, বুধবার যা হয়েছে, সে জন্য না এসে থাকতে পারছেন না। একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আঘাত সহ্য করতে পারছেন না। এ ছাড়া গতকাল সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা আন্দোলনে যোগ দেন।

সরকারের কোনো প্রতিনিধি আসেননি গতকাল

অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বুধবার রাত ১০টার দিকে দাবিদাওয়ার বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানাতে ঘটনাস্থলে এসেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এ সময় তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে দ্রুতই প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করবেন। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির বিষয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনের বিষয়ে সরকার কথা শুনবে। তবে তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্যের শুরুতে অসন্তোষ জানান শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে বক্তব্য চলাকালে ভিড় থেকে উপদেষ্টাকে লক্ষ্য করে পানির বোতল নিক্ষেপ করা হলে তাঁর মাথায় লাগে।

অবশ্য গতকাল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে সরকারের পক্ষ থেকে কেউ আসেননি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রইছ উদ্‌দীন নতুন কর্মসূচি ঘোষণার সময় বলেন, ‘দুই দিন অতিবাহিত হতে চলছে, কিন্তু সরকারের কর্ণকুহরে আমাদের আওয়াজ পৌঁছাচ্ছে না। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো গ্রিন সিগন্যাল পাইনি। ওনারা (সরকার) আমাদের কথা শুনছেন না, আমাদের কথা শোনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন না।’

দাবি আদায়ে অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ‘হয় দাবি আদায় হবে, না হয় আমরা স্থান ত্যাগ করব না, যতক্ষণ না আমাদের মৃত্যু হয়। যখন আমরা গ্রিন সিগন্যাল পাব, আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে; তাৎক্ষণিক আমরা আমাদের এই কর্মসূচি সমাপ্ত করব।’

এদিকে তথ্য উপদেষ্টার ওপর পানির বোতল নিক্ষেপকারীকে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে ইশতিয়াক হোসাইন নামের একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁকে ধরতে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট অভিযান চালাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ