আবরার ফাহাদের নামে সেতু নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন
Published: 25th, May 2025 GMT
কুষ্টিয়া শহরঘেঁষা গড়াই নদীর ওপর আবরার ফাহাদের নামে সেতু নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। রবিবার (২৫ মে) সকাল ১০টায় শহরের ঘোড়াইঘাট গড়াই চরে এ মানববন্ধন করেন তারা। এতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরা অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘‘স্বাধীনতার পর থেকে গড়াই নদীর ওপরে একটি সেতুর দাবি করছেন এলাকাবাসী। এটি নির্মাণ হলে কয়া, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহ, সাদিপুর ও নন্দলালপুরসহ চারটি ইউনিয়নের কয়েকলাখ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।’’
দ্রুত এখানে সেতু করা না হলে আরো বৃহত্তর আন্দোলন করবেন বলে হুঁশিয়ারি করেন তারা।
আরো পড়ুন:
শীতলক্ষ্যা তৃতীয় সেতুর সংযোগ সড়কে ভাঙন
শিবচরে র্যাব পরিচয়ে প্রতারণা: বরখাস্ত হওয়া সেনা সদস্য আটক
এলাকাবাসীর দাবি, এই সেতুর নাম বুয়েটে নিহত আবরার ফাহাদের নামে বাস্তবায়ন করতে হবে। মানববন্ধনে আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ, বিএনপি এবং জামায়াতের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন।
এলাকাবাসী বলেন, ‘‘পাশে একটা সেতু হয়েছে, যেটা এখানে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এমপি মাহবুব-উল আলম হানিফ বৃহৎ মানুষের কথা চিন্তা করে শুধু নিজেদের সুবিধার্থে সেতুটি হরিপুরের দিকে করেন। ঘোড়াই ঘাটে (এখানে) সেতু হলে খুব সহজে পাবনার সঙ্গেও কুষ্টিয়া শহরের যোগাযোগ স্থাপন হবে। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর উপকার হবে। এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।’’
ঢাকা/কাঞ্চন/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আবর র ফ হ দ র এল ক ব স
এছাড়াও পড়ুন:
রাজধানীর জনবহুল এলাকায় সিগারেট কারখানা, বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি
বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, জলাশয় দখল ও দূষণসহ বিভিন্ন রকমের দূষণে ঢাকা শহরের পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত। এর ওপর যুক্ত হচ্ছে সিগারেটের ক্ষতিকারক রাসায়নিক দূষণ। এই দূষণ রোধে সিগারেট উৎপাদনকারী বহুজাতিক ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির (বিএটিবি) কারখানাটি ঢাকা শহরের আবাসিক এলাকা থেকে সরানোর দাবি তুলেছে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। সরকারকে পরিবেশের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত কারখানাটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি করেছে সংগঠনগুলো।
রাজধানীর সেখানকার বাসিন্দারা দাবি করেন, ঘণবসতিপূর্ণ মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় অবস্থিত বিএটির সিগারেট কারখানা পরিবেশ ও জনস্বাস্থের জন্য মারাত্মক হুমকি। অত্র এলাকা থেকে এ সিগারেট কারখানা দ্রুত অপসারণ করা দরকার। বিশেষ করে, শিশু, নারী, বৃদ্ধদের তামাকের বিষস্ক্রিয়া থেকে রক্ষায় মহাখালী ডিওএইচএস আবাসিক এলাকা থেকে অবিলম্বে সিগারেট কারখানা সরাতে হবে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) গত ১৪ মে এক বিবৃতিতে জানায়, ১৯৬৫ সালে যখন ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় বিএটিবির তামাক কারখানা স্থাপন করা হয়, তখন এটি একটি গ্রামীণ জনপদ ছিল। মূল শহরের অংশ ছিল না। ক্রমান্বয়ে মহাখালী ডিওএইচএস এলাকা ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক ও পর্যায়ক্রমে মিশ্র-আবাসিক এলাকায় পরিণত হয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শিশু লেখাপড়া করে। কিন্তু বিএটির তামাক কারখানা থেকে নির্গত তামাকের রাসায়নিকের কারণে বাতাস দূষিত হচ্ছে, শিশুদের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
সকালে কেন কোমর ব্যথা বাড়ে? করণীয় জেনে নিন
ছিলেন ভিক্ষুক, হয়েছেন চিকিৎসক
তামাক কোম্পানির প্রভাবে ২০২৩ সালে এসে ‘পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা’ সংশোধন করে তামাকসংশ্লিষ্ট শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে লাল শ্রেণির পরিবর্তে কমলা শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে এবং তামাক চাষে ২৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে শূন্য শতাংশ করা হয়েছে। তামাক কোম্পানি ও তাদের অনৈতিক কার্যক্রম সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
বাপা ও পবা বলছে, কারখানা থেকে নির্গত তামাকের হাজার হাজার ক্ষতিকর রাসায়নিক বাতাসকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে চলেছে। প্রাণঘাতী ও পরিবেশ বিধ্বংসী তামাক কারখানা ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএস এলাকার পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। অবিলম্বে এ তামাক কারখানা শহরের অভ্যন্তর থেকে সরানো জরুরি।
বাপার বিবৃতিতে বলা হয়, তামাক চাষ, চারকোনা ঘরে আগুনের তাপে তামাক পাতা শুকানো, কারখানায় বিড়ি-সিগারেট-জর্দা-গুল ইত্যাদি তামাকপণ্য উৎপাদন, তামাক সেবন ও ধূমপান এবং শেষে এগুলোর বর্জ্য সব প্রক্রিয়াতেই পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ক্ষতি করে। তামাক পাতার নিকোটিন ও অন্যান্য রাসায়নিক এবং তামাক চাষে ব্যবহৃত সার ও কীটনাশকের কারণে মাটি, পানি ও বাতাস মারাত্মকভাবে দূষিত হয়। ফলে মাটির উপকারী পোকামাকড়, মাছসহ পানিনির্ভর জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চুল্লিতে আগুনের তাপে কাঁচা তামাক পাতা শুকানোর সময় বাতাসে নিকোটিন ছড়িয়ে বাতাসকে মারাত্মকভাবে দূষিত করে।
তামাকের মধ্যে হাজার হাজার ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান রয়েছে। তামাক কারখানার কারণে মহাখালী ডিওএইচএস এলাকার বাতাসে নিকোটিনসহ ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে এলাকার শিশু-নারী-বৃদ্ধ সবার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এজন্য আবাসিক এলাকা থেকে ক্ষতিকর সিগারেট কারখানা সরানো সময়ের দাবি।
জানা গেছে, তামাক কোম্পানির প্রভাবে ২০২৩ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা সংশোধন করে তামাক শিল্পকে লাল শ্রেণি থেকে কমলা শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা এবং তামাক চাষে ২৫ শতাংশ শুল্ক কমিয়ে শূন্য শতাংশ করা হয়েছে। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শহরের কেন্দ্র থেকে তামাক কারখানা সরিয়ে স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তামাকজাত চাষ, নিয়ন্ত্রণ ও কোম্পানিগুলোকে এ ব্যবসা থেকে দূরে সারানোর বিষয়ে নির্দেশনা দিলেও উল্টো সরকার তামাক পাতার রপ্তানি কমিয়েছে।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করে বেসরকারি সংস্থা এইড ফাউন্ডেশন প্রকল্পের পরিচালক শাগুফতা সুলতানা রাইজিংবিডিকে বলেন, “সংবিধানে পরিবেশ সংরক্ষণ ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের বিষয়টিকে উপেক্ষা করে কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। মহাখালীর বিএটি কারখানা চালু রাখা সংবিধানবিরোধী। একইসঙ্গে আমরা মনে করি কোম্পানিটি এদেশের আইনের প্রতি কোনো ধরনের তোয়াক্কাও করছে না।”
গত ১৮ মে তামাকবিরোধী ও পরিবেশবাদী সংগঠন অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন ও ভার্চুয়াল টক শোর আয়োজন করে
তিনি বলেন, “পরিবেশ রক্ষার্থে এর আগে ঢাকা শহর থেকে অনেক গার্মেন্টস কারখানা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কারখানাগুলো ঢাকার আশেপাশে গড়ে উঠেছে। কিন্তু বিএটি সিগারেট কারখানা কেন সরানো হচ্ছে না, বা কোন কারণে এটিকে রাখা হয়েছে তা এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।?”
কারখানা সরানোর দাবিতে কর্মসূচি
ঘণবসতিপূর্ণ মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় অবস্থিত বিএটির সিগারেট কারখানা সরানোর দবিতে গত ১৮ মে একাধিক তামাকবিরোধী ও পরিবেশবাদী সংগঠন অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন ও ভার্চুয়াল টক শোর আয়োজন করে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে পরিবেশ উপদেষ্টা, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে সংগঠনগুলো তাদের দাবি উপস্থাপন করে।
মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে আমাদের সংবিধানেও স্পষ্ঠভাবে বলা আছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদে ‘জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা’ অংশে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলে গণ্য করবে এবং মদ ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে’।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালের ২৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ‘ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড’ এর এক সভায়, ‘মহাখালীস্থ ট্যোবাকো কারখানা থেকে উদ্ভুত তামাকের গুড়া এবং উহার ঝাঝালো অসহনীয় গন্ধ; বায়ু দূষণ তথা পরিবেশ দূষণ চারপাশের লোকজনের স্বাস্থ্যহানীর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ফ্যাক্টরিটি অন্যত্র স্থান্তর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও রাজধানীর একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকায় তামাক কোম্পানির বহাল তবিয়তে অবস্থান দেখে বোঝা যায় আইন লঙ্ঘনকারী তামাক কোম্পানি জনস্বাস্থ্যকে তোয়াক্কা না করে দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
কর্মসূচিতে বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট, এইড ফাউন্ডেশন, টিসিআরসি, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সহ বিভিন্ন পেশাজীবী, আইনজীবী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবাদী ও তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ