নতুন মামলায় গ্রেপ্তার গান বাংলার তাপস
Published: 7th, May 2025 GMT
ঢাকার পৃথক দুই থানার তিন মামলায় গান বাংলা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কৌশিক হোসেন তাপসসহ চার জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বুধবার (৭ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি.এম.ফারহান ইশতিয়াকের আদালত তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
গ্রেপ্তার দেখানো অপর আসামিরা হলেন, নিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আব্দুস সালাম, সাংবাদিক সিকদার লিটন ও যুব মহিলা লীগ নেত্রী আশা আক্তার।
এর মধ্যে তাপসকে হত্যাচেষ্টা মামলায়, সিকদার লিটন ও আশা আক্তারকে ভাটারা থানার হত্যা মামলায় এবং আব্দুস সালামকে ধানমন্ডি থানার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এরআগে তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। আদালত গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির দিন বুধবার ধার্য করা হয়।
এদিন শুনানিকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালত তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।
তাপসের মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই গুলশানের শাহজাদপুরের কনফিডেন্স টাওয়ারের সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে জব্বার আলী হাওলাদার গুলিবিদ্ধ হন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০৯ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন।
আব্দুস সালামের মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডির সাইন্স ল্যাব এলাকা থেকে জিগাতলা এলাকায় যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন মো.
আশা ও সিকদার লিটনের মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, জুলাই আন্দোলনের সময় ২১ জুলাই রাজধানীর ভাটারা থানাধীন এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হন আসামিরা। তারা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় এতে মো. জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজন আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসাইন্স হাসপাতালে মারা যান জাহাঙ্গীর। এ ঘটনায় ২৪ ফেব্রুয়ারি ভাটারা থানায় একটা হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
ঢাকা/এম/ইভা
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
এনজিওর ফাঁদ পেতে প্রতারণা
পাবনায় এনজিও খুলে সঞ্চয়পত্র ও ডিপিএসের নামে ২৫০ গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক দম্পতির বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের কাছে জামানত নেওয়ার পর লভ্যাংশ না দিয়ে আত্মগোপনে গেছেন তারা। সংশ্লিষ্টদের দাবি, প্রায় ৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।
ওই দম্পতি হলেন আব্দুল কাইয়ুম ও তাঁর স্ত্রী রঞ্জনা খাতুন। তারা পাবনা শহরের দিলালপুরে মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেড নামে এনজিও চালু করে প্রতারণা শুরু করেন। আব্দুল কাইয়ুম নিজেকে এনজিওর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রঞ্জনা চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিতেন। গ্রাহকরা লভ্যাংশের টাকা চাওয়া শুরু করলে টালবাহানা শুরু করেন তারা। তিন মাস ধরে পলাতক রয়েছেন তারা। অফিসও তালাবদ্ধ। টাকা হারিয়ে দিশেহারা অসহায় দরিদ্র নারীরা। এদিকে গ্রাহকের চাপে দিশেহার মাঠকর্মীরা। অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।
প্রতারক দম্পতিকে গ্রেপ্তার ও টাকা ফেরত চেয়ে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগীরা। বুধবার দুপুরে পাবনা প্রেস ক্লাবের সামনে আব্দুল হামিদ সড়কে সমবেত হন তারা। এ সময় বলরামপুর গ্রামের হাশেম আলীর স্ত্রী ময়না খাতুন জানান, তাঁর পরিবারের চারজন সদস্যের নামে এনজিওতে ১৫ লাখ টাকার ডিপিএস করেছিলেন। সেই টাকা নিয়ে পালিয়েছে প্রতারক দম্পতি।
কথা হয় পাবনা পৌর সদরের লাইব্রেরি বাজারের আব্দুল মালেকের স্ত্রী আফসানা খাতুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২৩ লাখ টাকা নিয়ে প্রতারক কাইয়ুম পালিয়েছেন। ফোন বন্ধ। অফিসেও তালা। তাঁকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন টাকা কীভাবে ফিরে পাব, সেই চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছি।
পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন লস্করপুর এলাকার মৃত মনিরুল হকের স্ত্রী রেহেনা খাতুন। কান্নাভেজা চোখে তিনি বলেন, দুই মেয়ের বিয়ের জন্য ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ডিপিএস করেছিলেন। লাভ তো দেয়ইনি, আসল টাকা পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
গ্রাহকরা জানান, ২০১১ সালে পাবনা শহরের দিলালপুরে মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেড নামে একটি এনজিও চালু করে আব্দুল কাইয়ুম-রঞ্জনা দম্পতি। বেশ কিছু নারী মাঠকর্মী নিয়োগ করে গ্রামের অসহায় মানুষকে বেশি লাভ দেওয়ার কথা বলে সঞ্চয় ও ডিপিএস করার নামে টাকা জমা নেন। তাদের কথায় ভুলে গ্রামের সহজ-সরল নারীরা জমানো টাকা লগ্নি করেন এনজিওটিতে। তিন মাস আগে বেশ কয়েকজন গ্রাহকের ডিপিএসের মেয়াদ শেষ হয়। তারা লভ্যাংশসহ আসল টাকা চাইতে গেলে টালবাহানা শুরু করেন কাইয়ুম। গ্রাহকদের কাছে বারবার সময় নিয়েও কাউকেই টাকা দিতে পারেননি। এক পর্যায়ে অফিস তালা দিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন তারা। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ।
এনজিওটির মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন সদর উপজেলার বলরামপুর মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত মোস্তফার স্ত্রী সুলতানা খাতুন। তিনি বলেন, মাঠকর্মী হিসেবে গ্রামে গ্রামে ঘুরে নারীদের বুঝিয়ে টাকা সংগ্রহ করেছেন। তাদের ডিপিএস করিয়েছি। আমার মাধ্যমে ৮০ লাখ টাকা এনজিওতে জমা হয়েছে। এখন মালিক প্রতারণা করে পালিয়ে যাওয়ায় গ্রাহকরা আমার বাড়িতে চড়াও হচ্ছে। টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। এতগুলো টাকা কীভাবে পরিশোধ করব?
একই কায়দায় টাকা সংগ্রহ করেছেন লাইব্রেরি বাজার এলাকার মাঠকর্মী জামিরুল ইসলামের স্ত্রী নীপা আক্তার। তিনি প্রায় ৪০ লাখ টাকা তুলে জমা দিয়েছেন। এখন টাকা ফেরতের সময় আর মালিক কাইয়ুমকে পাচ্ছেন না। স্ত্রীও লাপাত্তা। কোথায় গেছেন কিছুই জানেন না। প্রতারক দম্পতিকে খুঁজে পেতে তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ শোনার পর বিকেলে পাবনা শহরের দিলালপুরে মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে গেলে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। পরে অভিযুক্ত আব্দুল কাইয়ুম ও তাঁর স্ত্রী রঞ্জনা খাতুনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে। মেসেজ পাঠিয়েও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে পাবনার সমাজসেবা বিভাগের উপপরিচালক রাশেদুল কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলেন, এনজিও ব্যুরো, মহিলাবিষয়ক, যুব উন্নয়ন ও সমবায় অধিদপ্তর রেজিস্ট্রেশন দিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেড নামে কোনো এনজিওকে নিবন্ধন দেওয়া হয়নি বলেই জানি। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জানতে পেরেছি এনজিওটি নিবন্ধনহীন। যাচাই না করে অধিক লাভের আশায় বিনিয়োগ করে লোকজন প্রতারিত হয়েছে। এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করা হবে।