নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘প্রতিশোধ নিলে, আমরা কীভাবে ওদের চেয়ে ভালো হলাম’
Published: 11th, May 2025 GMT
‘চলুন, সবার জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করি। সবার জন্য শান্তি বজায় রাখি। এই সুন্দর ভূমি আর কখনোই একে অন্যের দ্বারা নিপীড়নের মুখোমুখি হবে না। বিশ্বের বুকে আর অপমানিত হতে হবে না। মানুষের গৌরবময় অর্জনের সূর্য আর কখনো অস্ত যাবে না।’
কথাগুলো বলেছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। সময়টা ১৯৯৪ সালের ১০ মে। ওই দিন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ম্যান্ডেলা। তাঁর শপথ অনুষ্ঠান বসেছিল রাজধানী প্রিটোরিয়ার ইউনিয়ন ভবনের এম্পিথিয়েটারে। ১৪০টির বেশি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন ওই আয়োজনে। সেখানেই ম্যান্ডেলা এসব কথা বলেন।
নেলসন ম্যান্ডেলার দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়াটা ছিল ঐতিহাসিক ঘটনা। কেননা এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই ও সংগ্রাম করেছেন তিনি। নিপীড়িত মানুষের পক্ষ নেওয়ায় কারাগারে থেকেছেন টানা ২৭ বছর। তাঁর হাত ধরেই দেশটিতে চরম বৈষম্যমূলক বর্ণবাদ আইন বিলোপ হয়েছে। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গরা ফিরে পেয়েছেন দীর্ঘদিনের হারানো অধিকার।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৪৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল ন্যাশনাল পার্টি (এনপি)। দলটি ইউরোপীয় শাসকদের উত্তরসূরিদের হাত ধরে গড়ে উঠেছিল। ১৯৪৮ সালে ক্ষমতায় আসার পরই তারা বর্ণবাদ আইন জারি করে। শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী ছিল এই দল। তাই স্বাভাবিকভাবেই এর ছায়া পড়েছিল চরম নিপীড়নমূলক বর্ণবাদ আইনে।
ক্ষত সারিয়ে তোলার সময় এসেছে। যেসব খাদ আমাদের বিভক্ত করছে, সেগুলো পূরণের মুহূর্ত এসেছে। এখন আমাদের (দেশ) গড়ার সময় এসেছে।–নেলসন ম্যান্ডেলা, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত নেতা।দশকের পর দশক বর্ণবাদ আইনের বিরুদ্ধে লড়াই–সংগ্রামে সোচ্চার ছিল ম্যান্ডেলার দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)। দলটির সংগ্রামের মূল আদর্শ ছিল ‘সাদা-কালো ভেদাভেদ নেই, সব মানুষের সমান অধিকার’। নিষেধাজ্ঞার মুখেও পড়েছিল দলটি। শেষ অবধি ১৯৯৪ সালের ২৭ এপ্রিলের সাধারণ নির্বাচনে এএনসি দুর্দান্তভাবে বিজয়ী হয়। পার্লামেন্টের ৪০০ আসনের মধ্যে এএনসি জয় পায় ২৫২টি আসনে।
এটা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনে এএনসির দুর্দান্ত জয়ে প্রেসিডেন্ট হন নেলসন ম্যান্ডেলা। তখন তাঁর বয়স ৭৭ বছর। ম্যান্ডেলার শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়েই বলতে গেলে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ আইনের বিলোপ হয়।
দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যান্ডেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ ছিল ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন’ কমিটি গঠন করা। ১৯৬০ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত বর্ণবাদী সরকারের আমলের সংঘটিত অপরাধের তদন্ত করা ছিল এর কাজ। অতীতের নৃশংসতা থেকে নিরাময় ও বিভক্ত জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে রয়েছে এটি।
রাজপথ থেকে কারাগারে১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের কুনু গ্রামে নেলসন ম্যান্ডেলার জন্ম। তাঁর পুরো নাম নেলসন রোলিহ্লাহ্লা ম্যান্ডেলা। যদিও দেশবাসী তাঁকে ভালোবেসে ‘মাদিবা’ নামে ডাকে। এর অর্থ ‘জাতির জনক’। রোলিহ্লাহ্লার অর্থ ‘গাছের ডাল ভাঙে যে’ অর্থাৎ ‘দুষ্টু ছেলে’। প্রত্যন্ত গ্রামের ‘দুষ্টু ছেলেটিই’ আজীবন দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই–সংগ্রাম করেছেন। বিশ্বের বর্ণবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।
নেলসন ম্যান্ডেলার দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়াটা ছিল ঐতিহাসিক ঘটনা। কেননা এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই ও সংগ্রাম করেছেন তিনি। নিপীড়িত মানুষের পক্ষ নেওয়ায় কারাগারে থেকেছেন টানা ২৭ বছর। তাঁর হাত ধরেই দেশটিতে চরম বৈষম্যমূলক বর্ণবাদ আইন বিলোপ হয়েছে। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গরা ফিরে পেয়েছেন শত শত বছরের হারানো অধিকার।তরুণ ম্যান্ডেলা ১৯৪৪ সালে যোগ দেন এএনসিতে। দেশটিতে বর্ণবাদ আইন প্রণয়নের আগে থেকেই তিনি এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। রাজপথের পরিচিত মুখ ছিলেন ম্যান্ডেলা। ১৯৬০ সালের ২১ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার শার্পভিল এলাকায় বর্ণবাদ আইনের বিরুদ্ধে রাজপথে নামেন প্রায় সাত হাজার কৃষ্ণাঙ্গ। তাঁদের ওপর নির্বিচার গুলি চালায় পুলিশ। এতে প্রাণ যায় ৬৯ জনের। আহত হন আরও ১৮০ জন।
এই ঘটনা ইতিহাসে ‘শার্পভিল হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। আটক করা হয় ম্যান্ডেলাকে। নিষিদ্ধ করা হয় তাঁর দল এএনসিকে।
এর আগে ১৯৫৬ সালের ৫ ডিসেম্বর দেশজুড়ে পুলিশি অভিযানের সময় গ্রেপ্তার করা হয় ম্যান্ডেলাসহ বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার অনেককে। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে করা হয় মামলা। পরে ১৯৬১ সালের ২৯ মার্চ সেই মামলা থেকে খালাস পান ম্যান্ডেলা। এরপর আত্মগোপনে চলে যান।
রোবেন দ্বীপে এই কারাকক্ষেই দীর্ঘ সময় বন্দী ছিলেন ম্যান্ডেলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ১৯৯৪ স ল
এছাড়াও পড়ুন:
নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘প্রতিশোধ নিলে, আমরা কীভাবে ওদের চেয়ে ভালো হলাম’
‘চলুন, সবার জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করি। সবার জন্য শান্তি বজায় রাখি। এই সুন্দর ভূমি আর কখনোই একে অন্যের দ্বারা নিপীড়নের মুখোমুখি হবে না। বিশ্বের বুকে আর অপমানিত হতে হবে না। মানুষের গৌরবময় অর্জনের সূর্য আর কখনো অস্ত যাবে না।’
কথাগুলো বলেছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। সময়টা ১৯৯৪ সালের ১০ মে। ওই দিন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ম্যান্ডেলা। তাঁর শপথ অনুষ্ঠান বসেছিল রাজধানী প্রিটোরিয়ার ইউনিয়ন ভবনের এম্পিথিয়েটারে। ১৪০টির বেশি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন ওই আয়োজনে। সেখানেই ম্যান্ডেলা এসব কথা বলেন।
নেলসন ম্যান্ডেলার দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়াটা ছিল ঐতিহাসিক ঘটনা। কেননা এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই ও সংগ্রাম করেছেন তিনি। নিপীড়িত মানুষের পক্ষ নেওয়ায় কারাগারে থেকেছেন টানা ২৭ বছর। তাঁর হাত ধরেই দেশটিতে চরম বৈষম্যমূলক বর্ণবাদ আইন বিলোপ হয়েছে। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গরা ফিরে পেয়েছেন দীর্ঘদিনের হারানো অধিকার।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৪৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল ন্যাশনাল পার্টি (এনপি)। দলটি ইউরোপীয় শাসকদের উত্তরসূরিদের হাত ধরে গড়ে উঠেছিল। ১৯৪৮ সালে ক্ষমতায় আসার পরই তারা বর্ণবাদ আইন জারি করে। শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী ছিল এই দল। তাই স্বাভাবিকভাবেই এর ছায়া পড়েছিল চরম নিপীড়নমূলক বর্ণবাদ আইনে।
ক্ষত সারিয়ে তোলার সময় এসেছে। যেসব খাদ আমাদের বিভক্ত করছে, সেগুলো পূরণের মুহূর্ত এসেছে। এখন আমাদের (দেশ) গড়ার সময় এসেছে।–নেলসন ম্যান্ডেলা, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত নেতা।দশকের পর দশক বর্ণবাদ আইনের বিরুদ্ধে লড়াই–সংগ্রামে সোচ্চার ছিল ম্যান্ডেলার দল আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি)। দলটির সংগ্রামের মূল আদর্শ ছিল ‘সাদা-কালো ভেদাভেদ নেই, সব মানুষের সমান অধিকার’। নিষেধাজ্ঞার মুখেও পড়েছিল দলটি। শেষ অবধি ১৯৯৪ সালের ২৭ এপ্রিলের সাধারণ নির্বাচনে এএনসি দুর্দান্তভাবে বিজয়ী হয়। পার্লামেন্টের ৪০০ আসনের মধ্যে এএনসি জয় পায় ২৫২টি আসনে।
এটা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনে এএনসির দুর্দান্ত জয়ে প্রেসিডেন্ট হন নেলসন ম্যান্ডেলা। তখন তাঁর বয়স ৭৭ বছর। ম্যান্ডেলার শপথ নেওয়ার মধ্য দিয়েই বলতে গেলে দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ আইনের বিলোপ হয়।
দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যান্ডেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ ছিল ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন’ কমিটি গঠন করা। ১৯৬০ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত বর্ণবাদী সরকারের আমলের সংঘটিত অপরাধের তদন্ত করা ছিল এর কাজ। অতীতের নৃশংসতা থেকে নিরাময় ও বিভক্ত জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে রয়েছে এটি।
রাজপথ থেকে কারাগারে১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের কুনু গ্রামে নেলসন ম্যান্ডেলার জন্ম। তাঁর পুরো নাম নেলসন রোলিহ্লাহ্লা ম্যান্ডেলা। যদিও দেশবাসী তাঁকে ভালোবেসে ‘মাদিবা’ নামে ডাকে। এর অর্থ ‘জাতির জনক’। রোলিহ্লাহ্লার অর্থ ‘গাছের ডাল ভাঙে যে’ অর্থাৎ ‘দুষ্টু ছেলে’। প্রত্যন্ত গ্রামের ‘দুষ্টু ছেলেটিই’ আজীবন দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই–সংগ্রাম করেছেন। বিশ্বের বর্ণবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।
নেলসন ম্যান্ডেলার দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়াটা ছিল ঐতিহাসিক ঘটনা। কেননা এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন লড়াই ও সংগ্রাম করেছেন তিনি। নিপীড়িত মানুষের পক্ষ নেওয়ায় কারাগারে থেকেছেন টানা ২৭ বছর। তাঁর হাত ধরেই দেশটিতে চরম বৈষম্যমূলক বর্ণবাদ আইন বিলোপ হয়েছে। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গরা ফিরে পেয়েছেন শত শত বছরের হারানো অধিকার।তরুণ ম্যান্ডেলা ১৯৪৪ সালে যোগ দেন এএনসিতে। দেশটিতে বর্ণবাদ আইন প্রণয়নের আগে থেকেই তিনি এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। রাজপথের পরিচিত মুখ ছিলেন ম্যান্ডেলা। ১৯৬০ সালের ২১ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার শার্পভিল এলাকায় বর্ণবাদ আইনের বিরুদ্ধে রাজপথে নামেন প্রায় সাত হাজার কৃষ্ণাঙ্গ। তাঁদের ওপর নির্বিচার গুলি চালায় পুলিশ। এতে প্রাণ যায় ৬৯ জনের। আহত হন আরও ১৮০ জন।
এই ঘটনা ইতিহাসে ‘শার্পভিল হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। আটক করা হয় ম্যান্ডেলাকে। নিষিদ্ধ করা হয় তাঁর দল এএনসিকে।
এর আগে ১৯৫৬ সালের ৫ ডিসেম্বর দেশজুড়ে পুলিশি অভিযানের সময় গ্রেপ্তার করা হয় ম্যান্ডেলাসহ বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার অনেককে। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে করা হয় মামলা। পরে ১৯৬১ সালের ২৯ মার্চ সেই মামলা থেকে খালাস পান ম্যান্ডেলা। এরপর আত্মগোপনে চলে যান।
রোবেন দ্বীপে এই কারাকক্ষেই দীর্ঘ সময় বন্দী ছিলেন ম্যান্ডেলা