ভারত কেন যুদ্ধ করে পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী বিরোধের সমাধান করতে পারবে না
Published: 20th, May 2025 GMT
সামরিক দিক বিবেচনায় চলতি মাসে অর্ধশতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘর্ষে জড়িয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। এ সংঘাতে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের স্পর্শকাতর বিমানঘাঁটিগুলোর হ্যাঙ্গারে ফাটল এবং রানওয়েতে গর্ত তৈরি করতে সক্ষম হলেও দীর্ঘদিনের শত্রুর সঙ্গে তাদের আকাশযুদ্ধে কিছু যুদ্ধবিমান হারাতে হয়েছে।
তবে কৌশলগত দিক বিবেচনা করলে, যুদ্ধক্ষেত্রের এ ফলাফলটা ভারতের জন্য স্পষ্টত একটি ধাক্কা। কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে উদীয়মান এই দেশ এখন নিজেকে পাকিস্তানের সঙ্গে সমপর্যায়ের অবস্থানে দেখতে পাচ্ছে। সেই পাকিস্তান যেটি আকারে অপেক্ষাকৃত ছোট, শক্তিতে দুর্বল এবং যাকে ভারতীয় কর্মকর্তারা সন্ত্রাসবাদের ‘পৃষ্ঠপোষক’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।
চার দিনের এ সংঘর্ষ আবারও বিশ্বকে মনে করিয়ে দিয়েছে, ভারত তার প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে ৭৮ বছর ধরে চলা সংঘাতের মীমাংসা করতে অক্ষম। সংঘাতপূর্ণ যেকোনো কর্মকাণ্ডই পাকিস্তানকে সুবিধা দেয়। কারণ, ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সংঘাত তাদের অন্যতম জীবনীশক্তি।
দুই দেশের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারকে বিবেচনা করলে, কোনো পক্ষের পূর্ণাঙ্গ সামরিক জয় প্রায় অসম্ভবই বলা চলে।
ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, আমরা ভারতীয়রা যেটির জন্য এত সময় ও শ্রম নষ্ট করছি, তা আসলে কৌশলগত বিভ্রম: পাকিস্তান থেকে হওয়া সন্ত্রাস। তবে এটি একটি বাস্তবতা এবং আমাদের উচিত যতটা সম্ভব দক্ষতার সঙ্গে এটাকে সামাল দেওয়া।’
কীভাবে এ সমস্যার সমাধান করা যায়, সে চিন্তাটি সেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও ভারত বিভক্ত হওয়ার পর থেকেই ভারতীয় নেতাদের মাথায় ঘুরছে। কয়েকজন কূটনীতিক, বিশ্লেষক এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে ভারতের চিরস্থায়ী দুশ্চিন্তার একটি স্পষ্ট চিত্র পাওয়া গেছে।
ভারত ও পাকিস্তান—দুই দেশের মধ্যে একাধিক যুদ্ধ হয়েছে। তাদের বিরোধ মেটাতে কয়েকটি তৎপরতা ব্যর্থ হয়েছে। দুই দেশের সমস্যা ক্রমাগত জটিলতার দিকেই এগিয়েছে।
নয়াদিল্লিতে অবস্থানকারী পশ্চিমা কূটনীতিকদের মতে, ভারত এখন এতটাই কূটনৈতিক শক্তি অর্জন করেছে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে এমনভাবে যুক্ত হয়েছে যে দেশটি তাদের ভাবমূর্তি অনেকটা অক্ষুণ্ন রেখেই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে।কাশ্মীরের পেহেলগামে একটি প্রাণঘাতী হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করে চলতি মাসে পাকিস্তানে হামলা চালায় ভারত। দুই দেশই প্রথমবারের মতো ব্যাপকভাবে ড্রোন এবং অন্য আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করায় উত্তেজনা দ্রুত বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়। পাশাপাশি ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ও সামরিক সমর্থন এবং পাকিস্তানের পক্ষে চীনের অবস্থানের কারণে বিশ্বশক্তির রাজনৈতিক সমীকরণ নতুন মাত্রা পায়।
ভারত ও পাকিস্তান—দুই দেশের নেতারাই ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের ধারণাকে আগলে রেখেছেন। দুই দেশই একে অপরের প্রতি অনমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে থাকে। আর এ কারণে কোনো ধরনের আপস বা শান্তিপূর্ণ উদ্যোগ কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে।
ভারতে হিন্দু-জাতীয়তাবাদী শাসনের উত্থান হওয়ার পর দেখা গেছে যখনই উত্তেজনা তৈরি হয়, তখনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডানপন্থী সমর্থক গোষ্ঠী রক্তপাতের দাবি তোলে।
আর অভ্যন্তরীণ এই চাপের কারণে এবার ভারত ২০০৮ সালের মতো সংযম দেখাতে পারেনি। ওই বছর মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ১৬০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন। তখন ভারত দায়িত্বশীলতা ও সংযমের পরিচয় দিয়েছিল। ওই সময় তারা উপলব্ধি করেছিল, যুদ্ধ ভারতের উত্থানকে থামিয়ে দিতে পারে। আর এ উপলব্ধিটি ছিল প্রতিশোধ নেওয়ার অভ্যন্তরীণ চাপের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার সময় ভারত সরকার পাকিস্তানে সামরিক হামলার পথ নেয়নি। সেই সময় ভারতের লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসী হামলার ভয়াবহতার ওপর সারা বিশ্বের দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত রাখা এবং সন্ত্রাসবাদে মদদদাতা হিসেবে পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে করা। তখন যুদ্ধক্ষেত্রে পাকিস্তানকে সমপর্যায়ের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখাতে চায়নি ভারত।
কাশ্মীরের ডাল লেক এলাকায় ভারতীয় সেনাদের অবস্থান.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফখরুলের কণ্ঠ নকল, সতর্ক করল বিএনপি
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কণ্ঠ নকল করে ভুয়া ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রবিবার এ তথ্য জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে: ফখরুল
ঐক্যের মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই: ফখরুল
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিছু কুচক্রি মহল পুরোনো প্রেস কনফারেন্সের ছবি ও বক্তব্য এডিট করে এবং এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মির্জা ফখরুলের কণ্ঠ নকল করেছে। তারপর তা গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
ভিডিওতে দেখানো হচ্ছে, বিএনপি মহাসচিব আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের এমপি প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করেছেন। বিএনপি বলছে, এই ভিডিও পুরোপুরি বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতেই এই কুচক্রি মহল ভিডিও প্রচার করছে। দেশের মানুষ, দলীয় নেতাকর্মী এবং এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের এ ধরনের এডিট করা ভিডিও দেখে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সতর্ক করেছে বিএনপি।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ