ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইর) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোং লিমিটেডের (ট্রেক নম্বর-১৭১) স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার নিবন্ধন সনদ বাতিল করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

প্রতিষ্ঠানটির মালিকদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সমন্বিত গ্রাহক হিসাব থেকে বিনিয়োগকারীদের অর্থ লোপাটসহ বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় সার্বিক দিক বিবেচনা করে ব্রোকারেজ হাউজটির স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার নিবন্ধন সনদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

মিউচুয়াল ফান্ড-পাবলিক ইস্যু রুলসের চূড়ান্ত সুপারিশ জমা

ডিএসইতে সূচকের উত্থান, সিএসইতে পতন

সম্প্রতি ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বিএসইসির মার্কেট অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিজ অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন থেকে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

এছাড়া নিবন্ধন সনদ বাতিলের বিষয়টি শাহ মোহাম্মদ সগিরের অ্যান্ড কোং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও অবহিত করা হয়েছে।

এর আগেও ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর ৭০০তম কমিশন সভায় শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোম্পানির ডিপি সনদ স্থগিত করা হয়। ডিপি সনদ স্থগিত করা হয়। সে সময় প্রতিষ্ঠানটির সমন্বিত গ্রহক হিসাবে ঘাটতি পাওয়া যায়। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় বিএসইসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুর কালাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “ডিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোং লিমিটেডের স্টক ব্রোকার ও স্টক ডিলার নিবন্ধন সনদ বাতিল করা হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

অভিযোগ
২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে ডিএসইর সদস্যভুক্ত ১৮৬টি ব্রোকারেজ হাউজের দাখিল করা নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিএসইসি। এতে ১৮টি ব্রোকারেজ হাউজ তাদের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের অর্থ আইন বহির্ভূতভাবে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এর মধ্যে শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোম্পানির সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ঘাটতি পাওয়া গেছে।

পরবর্তীতে ২০২০ সালের পর থেকে মশিহর সিকিউরিটিজ, তামহা সিকিউরিটিজ, ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ, বানকো সিকিউরিটিজ, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস, সাবভ্যালি সিকিউরিটিজ, ডন সিকিউরিটিজ, ইনডিকেট সিকিউরিটিজ, সাদ সিকিউরিটিজ ও শাহ মোহাম্মদ সগির থেকে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম এবং জালিয়াতি ঘটে।

ওই সময়ই সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে রক্ষিত বিনিয়োগকারীদের প্রায় ১৩ কোটি টাকা ঘাটতির জন্য শাহ মোহাম্মদ সগীরের তৎকালীন পরিচালকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর না করা পর্যন্ত ডিএসইর শেয়ারে তাদের ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত অর্জিত ও স্থগিত মুনাফা সংরক্ষণ করে রাখে দেওয়া হয়।

এরপর ২০২২ সালে ২২ মার্চ বিএসইসির জারিকৃত নির্দেশনায়ে ডিএসই ও সিএসই সব ব্রোকারেজ হাউজ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় তদন্ত সাপেক্ষে ১০৮টি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে বড় অঙ্কের ঘাটতি পাওয়া যায়। এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৮৫ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।পরবর্তীতে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে দ্রুত ঘাটতি সমন্বয় করতে বলা হয়। এরপর থেকে অধিকাংশ ব্রোকারেজ হাউজ টাকা সমন্বয় করে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের ঘাটতি এখনো সমন্বয় করেনি। এর মধ্যে শাহ মোহাম্মদ সগির অন্যতম।

এর আগে সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে ঘাটতি পূরণ, শেয়ার হস্তান্তর বা বিক্রির প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করা, সমন্বিত গ্রাহক হিসাবের ওপর প্রচলিত ব্যাংক রেটে চার বছরের সুদ আদায় করে গ্রাহকদের হিসেবে যথাযথভাবে জমাকরণ সাপেক্ষে শাহ মোহাম্মদ সগীরের কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেয় বিএসইসি। আর এ কাজটি তদারকির জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিএসইকে। তখন ডিএসই বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক অর্থিক অবস্থাসহ সমন্বিত গ্রাহকদের হিসাবে আরো সিকিউরিটিজ (শেয়ার) ঘাটতি যাচাই-বাছাই করে সম্প্রতি স্ট্যাটাস রিপোর্ট দাখিল করে। ওই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে দ্রুত ব্রোকারেজ হাউজটির কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছিল বিএসইসি।

বিএসইসির সিদ্ধান্ত
শাহ মোহাম্মদ সগিরের অ্যান্ড কোং লিমিটেড সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর রুলস ৬(১), ৬(২) ও ৭(৩), সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক-ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা, ২০০০ এর বিধি ১১, সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক-ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা, ২০০০ এর দ্বিতীয় তফসিলের আচরণ বিধি ১, ডিপজিটরি (ব্যাবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩ এর প্রবিধান ৩৪ (১) ও (২) লঙ্ঘন করেছে। তাই ওই বিষয়ে ওপর আলোচনা ও সার্বিক বিবেচনাপূর্বক শাহ মোহাম্মদ সগিরের অ্যান্ড কোং লিমিটেডের স্টক ডিলার নিবন্ধন সনদ এবং স্টক ব্রোকার নিবন্ধন সনদ বাতিল করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। উপযুক্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই স্টক ডিলার ও স্টক ব্রোকার নিবন্ধন সনদসমূহ (সনদ নম্বর নিবন্ধন-৩.

১/ডিএসই-১৭১/২০০৯/৩৪৭: ২১.০৬.২০০৯ এবং নিবন্ধন-৩.১/ডিএসই-১৭১/২০০২/৬৪: ০৫.০৫.২০০২) বাতিল করা হলো। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ডিএসইকে অনুরোধ করা হলো।

২০২২ সালের জানুযারি থেকে শাহ মোহাম্মদ সগির অ্যান্ড কোম্পানির সব দায়-দেনাসহ শতভাগ মালিকানা কিনে নিয়েছে সাদ মুসা গ্রুপ। ওই সময় ব্রোকারেজ হাউজটির কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিল এ শিল্পগোষ্ঠী। সমন্বিত গ্রাহক হিসাবে বিনিয়োগকারীদের অর্থ সমন্বয়সহ আরো বেশ কিছু শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে বোকারেজ হাউজটি প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর সে সময় চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে সাদ মুসা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ মহসিনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও চেক প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি অর্থ আত্মসাৎ ও চেক প্রত্যাখ্যানসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সাদ মুসা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ মহসিনকে কারাগারে পাঠান চট্টগ্রামের দ্বিতীয় যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ। তার বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ব্যাংকের (এনবিএল) আগ্রাবাদ শাখার পক্ষ থেকে পাঁচটি চেক প্রত্যাখ্যান মামলা ছিল ২০২০ ও ২০২২ সাল থেকে। ৫ মামলায় মোট টাকার পাওনা দাবির পরিমাণ ছিল ৫৫ কোটি ৯৪ লাখ ৭৫ হাজার ৮০০ টাকা। এই ৫ মামলার প্রতিটিতে এক বছর করে মোট ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে।

এদিকে, গত ১৫ মে করোনাকালীন সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ৪০৪ কোটি টাকা উত্তোলন করে অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে সাদ মুসা গ্রুপের কর্ণধার মুহম্মদ মোহসিনসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ঢাকা/এনটি/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স টক ব র ক র ও র সমন ব ত গ র ব এসইস র র ও স টক ড এসইর পর প র র জন য র অর থ ড এসই

এছাড়াও পড়ুন:

সরকার পুঁজিবাজারের সমস্যা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছে: ড. আনিসুজ্জামান

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও পুঁজিবাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, “সরকার পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কার নিশ্চিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করছে। প্রধান উপদেষ্টা দেশের উন্নয়ন ও সংস্কার তথা পরিবর্তনের জন্য কাজ করছেন। দেশের অর্থনীতি এখন ঘুড়ে দাঁড়াতে শুরু করেছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধসহ অর্থনীতিতে অনেক ইতিবাচক ঘটনা ঘটছে। এসবের প্রভাব শিগগিরই পুঁজিবাজারে পড়বে।”

রবিবার (১৮ মে) রাজধানীর নিকুঞ্জে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) পরিদর্শন করে অংশীজনদেন সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। ডিএসই’র জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। 

সভায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলি আকবর, পুঁজিবাজার সংস্কার বিষয়ক টাস্কফোর্সের সদস্যরা, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্টেকহোল্ডার- ডিবিএ, সিডিবিএল, সিসিবিএল’র প্রতিনিধিরাও সভায় অংশ নেন।

আরো পড়ুন:

এপেক্স ট্যানারির প্রয়াত উদ্যোক্তার শেয়ার হস্তান্তর

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে অংশীজনদের সঙ্গে বিএসইসি’র মতবিনিময়

ড. আনিসুজ্জামান বলেন, “২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হতে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশের উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিদেশিদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে পুঁজিবাজারের শক্ত কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। পুঁজিবাজারকে শক্ত কাঠামোয় গড়ে তুলতে পারলে শিল্পোন্নয়নে পুঁজিসংগ্রহের পথ সহজ হবে।”

তিনি উল্লেখ করেন, “আমাদের অবকাঠামো, মানব সম্পদ ও আর্থিক মূলধন সবই বিদ্যমান। শুধু দেশ প্রেমের মানসিকতায় এগুলোকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হবে।” এক্ষেত্রে তিনি দক্ষিণ কোরিয়া ও ফিলিপাইনসের উদাহরণ দেন।

ড. আনিসুজ্জামান বলেন, “ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তির জন্য বিএসইসি চেষ্টা করছে। পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের সুপারিশের আলোকে খুব দ্রুতই পাবলিক ইস্যু রুলসের সংস্কার করা হবে, যা ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। পুঁজিবাজারে বিদ্যমান যে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা আপনাদের বা বিএসইসি এবং ডিএসইর আওতার মধ্যে আছে সেগুলো আপনারা সমাধান করুন। আর যে বিষয়গুলো আপনাদের আওতার বাইরে সেগুলো সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করুন। আমার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। আমি আপনাদের সব কথাই শুনব এবং বাজার উন্নয়নে যা করা প্রয়োজন তার সবকিছুই করব।”

অনুষ্ঠানের শুরুতেই ডিএসই’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম দেশের পুঁজিবাজারের সামগ্রিক অবস্থা, ডিএসই’র কার্যক্রম এবং পুঁজিবাজারের কাঠামোগত বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের বিভিন্ন কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো- অর্থনীতিতে পুঁজিবাজার ও অর্থবাজারের ভূমিকা মুখোমুখী, নিয়ন্ত্রক সংস্থার স্বাধীনতা, আইপিও প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজেশন ও মূল্যায়ন, কর্পোরেট বন্ড ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের পলিসি ও প্রক্রিয়াসমূহ সহজীকরণ, ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্ট ও ডিসক্লোজারের নির্ভরযোগ্যতা, বাজারের মধ্যস্থতাকারীদের সক্ষমতা ও সুশাসন, ইনসাইডার ট্রেডিং, সার্ভেইল্যান্স ও পুঁজিবাজারের জন্য পলিসি সাপোর্ট, সরকারি সিকিউরিটিজের অধিক সুদের হার, করপোরেট প্রফিট হ্রাস, নেগেটিভ ইক্যুইটি, টাকার অবমূল্যায়ন এবং ম্যানিপুলেটরের ভূমিকা ইত্যাদি।

পুঁজিবাজারের আস্থা বৃদ্ধির জন্য করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, বিও হিসাবের মেইনটেনেন্স ফি ছাড়, ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স মওকুফ, ব্রোকারেজ কমিশনের সর্বোচ্চ হার ০.৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৩৫ শতাংশ করা, ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের তালিকাভুক্ত কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ এক লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত করা এবং লভ্যাংশের উৎসে কর ১০ শতাংশ বা ১৫ শতাংশ চূড়ান্ত করদায় হিসেবে বিবেচনা করা, নেগেটিভ ইক্যুইটির বোঝা থেকে বিনিয়োগকারীদের মুক্ত করা, প্রতি এক লাখ টাকার অগ্রীম আয়কর ৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫ টাকা করা, সিসি একাউন্টের লভ্যাংশ ২৫ শতাংশ ইনভেস্টর প্রটেকশন ফান্ডে জমা রেখে বাকি অংশ ব্রোকারদের ব্যবহার করার সুযোগ দেওয়া, নেগেটিভ ইক্যুইটি ধীরে ধীরে প্রভিশনিং করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নীতি সহায়তা প্রদানের জন্য নিয়ন্ত্রক ও বাজার মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে প্রতিমাসে যৌথ বৈঠক আয়োজন করা, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর ব্যবধান ন্যুনতম ১০ শতাংশ করা, বহুজাতিক ও ভাল মৌলভিত্তি সম্পন্ন দেশীয় কোম্পানি তালিকাভুক্ত করা, পুঁজিবাজারে থেকে অর্থ উত্তোলনের প্রক্রিয়া পরিপূর্ণ ডিজিটালাইজ করা, কপো‍র্রেট বন্ডের ক্ষেত্রে অ্যাসেট ব্যাকড সিকিউরিটিজের আয়কে করমুক্ত করা এবং কোম্পানির ৫০০ কোটি টাকার উপরে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে আইপিও বা বন্ডের মাধ্যমে পুঁজিাবাজার থেকে মূলধন উত্তোলন বাধ্যতামূলক করা।

সরকারের ম্যাক্রো চ্যালেঞ্জগুলো থেকে উত্তোরণে পুঁজিবাজারকে ব্যবহার সম্পর্কে মমিনুল ইসলাম বলেন, সরকারের হাতে থাকা বহুজাতিক ও লাভজনক বেসরকারি কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার, সরকারের হাতে থাকা ব্যাংক, বীমা, বিমানসহ বিভিন্ন কোম্পানি বেসরকারিকরণ করা- যেখানে শর্ত থাকবে যে ২৪ মাসের মধ্যে তা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে, সরকার তার বিভিন্ন প্রাপ্যগুলোকে সিকিউরিটাইজেশন করতে পারে যা পরবর্তীতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা যেতে পারে, সাশ্রয়ী মূল্যে আবাসন নিশ্চিত করার জন্য সরকারি জমিতে আবাসন প্রকল্পসমূহকে রিয়েল স্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টের মাধ্যমে করা যেতে পারে যা বিশ্বখ্যাত ফান্ড ম্যানেজাররা পরিচালনা করবে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য পুঁজিবাজারের মাধ্যমে বন্ড ইস্যু করতে পারে।

পরিশেষে তিনি পুঁজিবাজার সংক্রান্ত পলিসিগত সিদ্ধান্তের নেওয়ার ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জের ন্যূনতম একজন প্রতিনিধি রাখার ব্যাপারে অনুরোধ করেন এবং ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী এ ব্যাপারে সম্মতি জ্ঞাপন করেন।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট অংশীজনগণ বাজার উন্নয়নে ক্যাপিটাল মার্কেট স্টাকচার, এসএমই মার্কেট, এটিবি মার্কেট, বিও একাউন্ট বৃদ্ধি, মার্কেটে পার্টিসিপেন্টের সংখ্যা বৃদ্ধি, ব্যাংকের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পুঁজিবাজারের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো, ক্ষুদ্র জনগোষ্টিকে পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত করা, সিসিবিএল-এর বাস্তবায়ন, পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বয় বৃদ্ধি, দীর্ঘদিনের পুরাতন আইনগুলো যুগোপযোগী করা, ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন রিভিউ করা, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের উন্নতি, তালিকাভুক্তি কোম্পানির কর হার হ্রাস, নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির ট্যাক্স সুবিধা, সরকারি শেয়ার পুঁজিবাজার আনা, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ঋণ সহায়তা, ব্রোকার কমিশন, ফিনান্সিয়াল লিটারেসি, মার্কেট পলিসি, নেগেটিভ ইক্যুইটি এবং সিসি একাউন্টসহ অন্যান্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে অধিকতর শক্তিশালীকরণ এবং পুঁজিবাজার উন্নয়নে গত ১৭ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীকে সভাপতি করে ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. সাদেকুল ইসলাম, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বীমা ও পুঁজিবাজার অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাঈদ কুতুব ও কমিটির সদস্য সচিব বিএসইসি’র কমিশনার ফারজানা লালারুখ।

ঢাকা/এনটি/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে স্থানান্তর শুরু
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের ফরম পূরণ ২০ মে থেকে
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ফাইনাল প্রোগ্রাম, ভর্তির সময় বৃদ্ধি ২১ জুন
  • পুঁজিবাজার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা নিয়ে কথা হয়েছে:  বিএসই
  • বোনাস লভ্যাংশ প্রদানে সম্মতি পায়নি অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স
  • শেয়ারের দর পতন ঠেকাতে সমাধান খুঁজছে সরকার
  • অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে জরুরি সাক্ষাৎ, কী ঘটছে বিএসইসির চেয়ারম্যানের ভাগ্যে?
  • সরকার পুঁজিবাজারের সমস্যা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছে: ড. আনিসুজ্জামান
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ স্নাতকে দ্বৈত ভর্তি, বাতিলের জরুরি নোটিশ