ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধসহ ১২ দফা দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। আজ শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মহাসমাবেশ থেকে এসব দাবি ঘোষণা করেন হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক। 

হেফাজত শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে লাখো মানুষের এ সমাবেশে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন।

১২ দফা দাবির মধ্যে যা আছে-

১.

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও তাদের কোরানবিরোধী প্রতিবেদন অবিলম্বে বাতিল করে আলেম-ওলামাদের পরামর্শক্রমে নারী সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। নারীর সামাজিক উন্নয়নে পশ্চিমা মূল্যবোধ নয় বরং আমাদের নিজস্ব সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আলোকেই বাস্তবমুখী সংস্কারের দিকে যেতে হবে। 

২. সংবিধানের মূলনীতিতে আল্লাহর ওপরে পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন করতে হবে। ধর্মপ্রাণ গণমানুষের ঈমান ও আমল রক্ষার্থে বহুত্ববাদ নামক আত্মঘাতী ধারণা থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে। এছাড়া লিঙ্গ পরিচয়, লিঙ্গ বৈচিত্র্য, লিঙ্গ সমতা, তৃতীয় লিঙ্গ বা থার্ড জেন্ডার ইত্যাদি শব্দের মারপ্যাঁচে, কাউকে বাদ দিয়ে নয়; এমন ধোঁয়াশাপূর্ণ স্লোগানের অন্তরালে এবং অসাম্প্রদায়িক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শব্দের আড়ালে এলজিবিটি ও ট্রান্সজেন্ডারবাদের স্বীকৃতি ও অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে সমাজবিধ্বংসী ধর্মবিরুদ্ধ সমকামীবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠার পাঁয়তারা বন্ধ করতে হবে।

৩. শাপলা চত্বর ও জুলাই গণহত্যার বিচারে গতি আনতে ট্রাইব্যুনালে সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনা ও তার চিহ্নিত দোসরদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

৪. গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করব বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম ও তৎপরতা নিষিদ্ধ করতে হবে।

৫. আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) এর নামে কটূক্তিকারী ও বিষোদ্গার বন্ধে কঠোর আইন করতে হবে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ধর্মীয় অবমাননা সংক্রান্ত শাস্তির আইনি ধারাগুলো বাদ দেওয়ার সুপারিশ বাতিল করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।

৬. চট্টগ্রামে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে শহীদ সাইফুল ইসলাম হত্যার উসকানিদাতা চিন্ময় দাসের জামিন প্রত্যাহারপূর্বক তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে।

৭. ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে সারাদেশে প্রতিবাদী আলেম-ওলামা ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও ইসলামমনা তরুণদের বিরুদ্ধে হওয়া মিথ্যে ও বানোয়াট সব মামলা অতিসত্ত্বর প্রত্যাহার বা নিষ্পত্তি করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। সেই সঙ্গে জঙ্গি নাটক বা জঙ্গি কার্ড খেলে বাংলাদেশকে ইসলামপন্থি ও আলেম-ওলামাদের গত ১৫ বছর যারা নির্যাতন চালিয়েছিল; তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে। 

৮. গাজার মুসলমানদের ওপর অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের চলমান গণহত্যা ও ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে আমাদের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই সরকারকে কূটনৈতিকভাবে আরও উচ্চকণ্ঠ হতে হবে এবং দেশের সর্বস্তরের জনতাকে ইসরায়েলি ভারতীয় পণ্য বয়কট করতে হবে।

৯. ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ। শিক্ষার প্রাথমিক পর্যায়ে থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সবপর্যায়ে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

১০. রাখাইনকে মানবিক করিডর প্রদানে সরকারের সম্মত হওয়া সম্পূর্ণরূপে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আমাদের ভৌগোলিক নিরাপত্তার স্বার্থে এ অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে অবশ্যই অনতিবিলম্বে ফিরে আসতে হবে।

১১. চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে ভিনদেশি মিশনারি অপতৎপরতা ও দৌরাত্ম্য বন্ধে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে বাংলাদেশে ভৌগোলিক ও খণ্ডতায় ও নিরাপত্তাসংকট কমাতে আলেম সমাজের দাওয়াতি কার্যক্রমকে আরও নিরাপদ ও সুযোগ করে দিতে হবে। সেখানে সামরিক নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও বৃদ্ধি করা ছাড়াও পাহাড়ি ও নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক সমঝোতা ও স্থিতিশীলতা বিনির্মাণে রাষ্ট্রীয় তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। 

১২. কাদিয়ানীদের বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। সাধারণ মুসলমানদের ঈমান আকিদা রক্ষার্থে কাদিয়ানীদের অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।

এর আগে আজ সকালে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে মহাসমাবেশ শুরু করে হেফাজতে ইসলাম। সকাল ৯টায় সমাবেশ শুরু হয়ে শেষ হয় দুপুর সোয়া ১টায়।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা বাসে ও পায়ে হেঁটে সমাবেশে আসছেন। সকাল থেকেই কোনো মিছিল আসতে শুরু করে শাহবাগের দিক থেকে, কোনোটি দোয়েল চত্বরের দিক থেকে, আবার কোনোটি আসে নীলক্ষেতের দিক থেকে। সমাবেশে অংশ নিতে আসা নেতাকর্মীদের ভিড়ে ভোর থেকে শাহবাগ ও আশপাশের এলাকায় যান চলাচল সীমিত হয়ে আসে।

বেলা পৌনে ১১টায় শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালিদ মুনসুর জানান, সমাবেশকে ঘিরে সমাবেশস্থল ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ ফোর্স মাঠে আছে। এখনও পর্যন্ত কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।

ৎসরেজমিনে জানা যায়, মৎস্য ভবনে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে। প্রস্তুত আছে জল কামানের গাড়ি। দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট ও শাহবাগ মোড়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, আজকের মহাসমাবেশের মুখ্য দাবি মূলত চারটি। এর মধ্যে প্রধান দাবি হচ্ছে, অনতিবিলম্বে হেফাজত নেতাদের নামে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার। সংগঠনটির হিসাবমতে, সারা দেশে হেফাজত নেতাদের নামে প্রায় ৩০০টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড, ২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফর ঘিরে হত্যাকাণ্ড, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার। এরপর যথাক্রমে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল, সংবিধানের প্রস্তাবনায় আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করা, ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধের দাবিগুলো থাকবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ গণহত য শ হব গ সরক র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

মানবিক করিডরের সিদ্ধান্ত ও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল চায় গণ অধিকার পরিষদ

জুলাই গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। পাশাপাশি অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ (পথনকশা) প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

এ ছাড়া জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়েছে দলটি।

আজ শনিবার ঢাকায় ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশে এক অনুষ্ঠানে গণ অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে এসব দাবি জানানো হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে পেশাজীবীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সহস্রাধিক নেতা–কর্মী গণ অধিকার পরিষদে যোগ দিয়েছেন বলে দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনুষ্ঠানে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান ফুল দিয়ে নতুন নেতাদের বরণ করে নিয়েছেন। এ সময় গণ অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে তিনটি দাবি করা হয়। এগুলো হলো গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার ও জাতীয় সনদ তৈরি করা (সব দলের স্বাক্ষরসহ) এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ (পথনকশা) প্রকাশ করা।

দলটির পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি ও ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। গণ অধিকার পরিষদ কোনো দেশের দালালি মানবে না। গণ অধিকার পরিষদ দেশের জনগণবিরোধী সব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

গণ অধিকারে যোগ দেওয়া এই নেতা–কর্মীদের মধ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) ৩০ জন নেতা রয়েছেন। এর বাইরে ভাসানী অনুসারী পরিষদের বেশ কিছু নেতা–কর্মীও যোগ দিয়েছেন এই দলে। যোগ দেওয়া অন্যদের মধ্যে প্রকৌশলী, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা রয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিতে জুতাপেটা নিয়ে বিতর্ক, ভিডিও ভাইরাল
  • মানবিক করিডরের সিদ্ধান্ত ও নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল চায় গণ অধিকার পরিষদ
  • সারাদেশে ২৩ মে বিক্ষোভ করবে হেফাজত ইসলাম
  • সারাদেশে হেফাজতের বিক্ষোভ ২৩ মে
  • শাপলা চত্বরে গণহত্যার জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার আহ্বান  
  • গণহত্যার বিচারে আরও একটি ট্রাইব্যুনাল হচ্ছে
  • আওয়ামী লীগের সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে: নাহিদ
  • নারীবিষয়ক কমিশন বাতিলসহ সব দাবি না মানলে দেশ অচলের হুঁশিয়ারি হেফাজতের
  • গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে: হাসনাত আবদুল্লাহ