পানিসংকটে চরম দুর্দশায় গাজাবাসী, লবণাক্ত পানি পান করছে শিশুরা
Published: 22nd, May 2025 GMT
নৃশংস হামলার মধ্যে ফিলিস্তিনের গাজায় সীমিত পরিসরে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল। বুধবার উপত্যকাটিতে মাত্র ৯০ ট্রাক ত্রাণ পাঠানোর কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে সেখানে জ্বালানি ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয় জানিয়েছে, দ্রুত জ্বালানি না পেলে চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ গাজায় পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।
গাজার বাসিন্দারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ১৯ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের হামলার সময় শিশুদের লবণাক্ত পানি পান করাচ্ছেন তাঁরা। এতে উপত্যকাটির বাসিন্দাদের কিডনির মারাত্মক সমস্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। রায়েদ আল–জাহারনেহ নামের এক ফিলিস্তিনি বলেন, এই পানি পান করে তাঁদের পেটব্যথা ও ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই।
পানির তীব্র এই সংকটের মধ্যে চলতি মাসের শুরুর দিকে দক্ষিণ গাজার একটি পানি শোধনাগার পরিদর্শন করেন জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের কর্মকর্তা জোনাথন ক্রিকস। তিনি বলেন, বিদ্যুতের অভাবে সেখানে পানির উৎপাদন ৮০ শতাংশ কমে গেছে। এখন পানি উৎপাদনের জন্য জ্বালানির প্রয়োজন। জ্বালানির অভাবে ট্রাকে করে পানি সরবরাহেও বাধা আসছে।
১১ সপ্তাহ অবরোধের পর দিন কয়েক আগে গাজায় সীমিত পরিসরে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয় ইসরায়েল। পরে বুধবার জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানান, ইসরায়েলের অনুমতির তিন দিন পর গাজায় ৯০ ট্রাক ত্রাণ পাঠাতে পেরেছেন তাঁরা। তবে জাতিসংঘের হিসাবে—বর্তমানে উপত্যকাটির মানুষের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে দিনে ৫০০ ট্রাক ত্রাণের প্রয়োজন।
বুধবার গাজায় প্রবেশ করা ট্রাকগুলোয় চিকিৎসা সরঞ্জাম, ময়দা ও পুষ্টিকর বিভিন্ন খাবার রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রমবিষয়ক সমন্বয় দপ্তরের (ওসিএইচএ) মুখপাত্র জেনস লার্ক। তিনি বলেন, এই ত্রাণ সরবরাহের কাজে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে ত্রাণ বিতরণকারী সংগঠনগুলো। নিরাপত্তাহীনতা, ত্রাণ লুট হওয়ার ঝুঁকি ও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবের কারণে এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
এদিকে ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি দিলেও গাজায় জ্বালানি ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। কিছু ট্রাকে পানি থাকলেও সেগুলো এখনো গাজাবাসীর কাছে পৌঁছায়নি। ওসিএইচএ জানিয়েছে, জ্বালানি–সংকটের কারণে পানি ও পয়োনিষ্কাশন–ব্যবস্থায় বড় বাধা এসেছে। উত্তর গাজায় এখন কোনো জ্বালানি নেই। এ কারণে পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
হামলা চলছেই
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে সম্প্রতি ‘অপারেশন গিডেয়নস চ্যারিয়টস’ নামের নতুন অভিযান শুরু করেছে তারা। এর আওতায় উপত্যকাটিতে হামলার ব্যাপকতা বেড়েছে। বৃহস্পতিবারও ইসরায়েলের হামলায় উপত্যকাটিতে ৫১ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে ১৯ মাসে উপত্যকাটিতে নিহত হলেন ৫৩ হাজার ৬৫৫ জন।
তীব্র হামলার মধ্যে বৃহস্পতিবার উত্তর গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকালও উত্তর গাজার ১৪টি এলাকা থেকে তাদের সরে যেতে বলা হয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে হামাস নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যা করা হয়েছে বলে বুধবার জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি হামাসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই।
বৃহস্পতিবার নেতানিয়াহু বলেন, বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলের বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আগের দিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটাল জিউইশ মিউজিয়ামের বাইরে একটি অনুষ্ঠান চলাকালে গুলি করে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মীকে হত্যার পর এমন নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে বুধবার দখল করা পশ্চিম তীরের জেনিন শহরের কাছে পরিদর্শনে যাওয়া বিদেশি কূটনীতিকদের লক্ষ্য করে সতর্কতামূলক গুলি ছুড়েছেন ইসরায়েলি সেনারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কালাস বলেছেন, এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
গাজার ফিলিস্তিনিদের এই সংকটের দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার তিনি বলেছেন, ‘আমার আশা আছে যে আমরা দ্রুত গাজায় যুগান্তকারী সাফল্য পাব। আশা করি, এই যুদ্ধের অবসান হবে এবং সব জিম্মি মুক্তি পাবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।
বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।
বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।
জ্বালানি তেলবিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।
কৃষিপণ্যবিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।
খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।
২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।
চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।
দেশে কেন দাম বেশিবিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।
আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।
দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।