নৃশংস হামলার মধ্যে ফিলিস্তিনের গাজায় সীমিত পরিসরে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল। বুধবার উপত্যকাটিতে মাত্র ৯০ ট্রাক ত্রাণ পাঠানোর কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ। তবে সেখানে জ্বালানি ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয় জানিয়েছে, দ্রুত জ্বালানি না পেলে চলতি সপ্তাহের শেষ নাগাদ গাজায় পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।

গাজার বাসিন্দারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, ১৯ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের হামলার সময় শিশুদের লবণাক্ত পানি পান করাচ্ছেন তাঁরা। এতে উপত্যকাটির বাসিন্দাদের কিডনির মারাত্মক সমস্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। রায়েদ আল–জাহারনেহ নামের এক ফিলিস্তিনি বলেন, এই পানি পান করে তাঁদের পেটব্যথা ও ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই।

পানির তীব্র এই সংকটের মধ্যে চলতি মাসের শুরুর দিকে দক্ষিণ গাজার একটি পানি শোধনাগার পরিদর্শন করেন জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের কর্মকর্তা জোনাথন ক্রিকস। তিনি বলেন, বিদ্যুতের অভাবে সেখানে পানির উৎপাদন ৮০ শতাংশ কমে গেছে। এখন পানি উৎপাদনের জন্য জ্বালানির প্রয়োজন। জ্বালানির অভাবে ট্রাকে করে পানি সরবরাহেও বাধা আসছে।

১১ সপ্তাহ অবরোধের পর দিন কয়েক আগে গাজায় সীমিত পরিসরে ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেয় ইসরায়েল। পরে বুধবার জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানান, ইসরায়েলের অনুমতির তিন দিন পর গাজায় ৯০ ট্রাক ত্রাণ পাঠাতে পেরেছেন তাঁরা। তবে জাতিসংঘের হিসাবে—বর্তমানে উপত্যকাটির মানুষের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে দিনে ৫০০ ট্রাক ত্রাণের প্রয়োজন।

বুধবার গাজায় প্রবেশ করা ট্রাকগুলোয় চিকিৎসা সরঞ্জাম, ময়দা ও পুষ্টিকর বিভিন্ন খাবার রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রমবিষয়ক সমন্বয় দপ্তরের (ওসিএইচএ) মুখপাত্র জেনস লার্ক। তিনি বলেন, এই ত্রাণ সরবরাহের কাজে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে ত্রাণ বিতরণকারী সংগঠনগুলো। নিরাপত্তাহীনতা, ত্রাণ লুট হওয়ার ঝুঁকি ও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবের কারণে এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

এদিকে ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি দিলেও গাজায় জ্বালানি ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। কিছু ট্রাকে পানি থাকলেও সেগুলো এখনো গাজাবাসীর কাছে পৌঁছায়নি। ওসিএইচএ জানিয়েছে, জ্বালানি–সংকটের কারণে পানি ও পয়োনিষ্কাশন–ব্যবস্থায় বড় বাধা এসেছে। উত্তর গাজায় এখন কোনো জ্বালানি নেই। এ কারণে পানি সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

হামলা চলছেই

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে সম্প্রতি ‘অপারেশন গিডেয়নস চ্যারিয়টস’ নামের নতুন অভিযান শুরু করেছে তারা। এর আওতায় উপত্যকাটিতে হামলার ব্যাপকতা বেড়েছে। বৃহস্পতিবারও ইসরায়েলের হামলায় উপত্যকাটিতে ৫১ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে ১৯ মাসে উপত্যকাটিতে নিহত হলেন ৫৩ হাজার ৬৫৫ জন।

তীব্র হামলার মধ্যে বৃহস্পতিবার উত্তর গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গতকালও উত্তর গাজার ১৪টি এলাকা থেকে তাদের সরে যেতে বলা হয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে হামাস নেতা মোহাম্মদ সিনওয়ারকে হত্যা করা হয়েছে বলে বুধবার জানিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি হামাসের সাবেক প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ভাই।

বৃহস্পতিবার নেতানিয়াহু বলেন, বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলের বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। আগের দিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ক্যাপিটাল জিউইশ মিউজিয়ামের বাইরে একটি অনুষ্ঠান চলাকালে গুলি করে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মীকে হত্যার পর এমন নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে বুধবার দখল করা পশ্চিম তীরের জেনিন শহরের কাছে পরিদর্শনে যাওয়া বিদেশি কূটনীতিকদের লক্ষ্য করে সতর্কতামূলক গুলি ছুড়েছেন ইসরায়েলি সেনারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কালাস বলেছেন, এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

গাজার ফিলিস্তিনিদের এই সংকটের দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার তিনি বলেছেন, ‘আমার আশা আছে যে আমরা দ্রুত গাজায় যুগান্তকারী সাফল্য পাব। আশা করি, এই যুদ্ধের অবসান হবে এবং সব জিম্মি মুক্তি পাবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র সরবর হ

এছাড়াও পড়ুন:

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ‘মার্চ টু ঢাকা’ বুধবার

সাত দফা দাবিতে বুধবার ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস)। মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এবার বিদ্যুৎ সেবা চালু রেখেই কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

দেশের গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে সরকারি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। এসব সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে দুই দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। এবার সাত দফা দিয়েছেন তাঁরা।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীদের ফ্যাসিবাদী কায়দায় দমন–পীড়নের অভিযোগে আরইবি চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি করেছে পবিস। তা ছাড়া এক ও অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরইবি ও পবিসকে একত্র করে অন্যান্য বিতরণ সংস্থার মতো পুনর্গঠন করার দাবি জানানো হয়েছে।

পবিসের দাবির মধ্যে আরও আছে মিটার রিডার, লাইন শ্রমিক এবং পোষ্য কর্মীদের চাকরি নিয়মিত করা। মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করে চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহাল। হয়রানি ও শাস্তিমূলক আদেশ বাতিল এবং বরখাস্ত ও সংযুক্ত কর্মীদের অবিলম্বে পদায়ন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে চলমান মামলা প্রত্যাহার ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে গত ২১ জানুয়ারি ও ২৬ এপ্রিল দুই দফায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা। এ সময় ২৮ হাজার ৩০৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বাক্ষর জমা দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান হয়নি।

আরইবি ও সমিতি একীভূত করা এবং সমিতির অনিয়মিত কর্মীদের চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে গত বছরের জানুয়ারি থেকে টানা কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন সময় নানা কর্মসূচি পালন করেছেন পবিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একপর্যায়ে চাকরিচ্যুতি ও আটকের প্রতিবাদে ১৭ অক্টোবর দেশের অন্তত ৩৩টি জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেন সমিতির কর্মকর্তা–কর্মচারীরা।

পরে ওই দিন সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করেন তাঁরা। ওই দিন ২৪ জন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর সমিতির কর্মকর্তাদের নামে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে আরইবি। এতে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আরও পড়ুনআরইবির করা মামলা প্রত্যাহার ও চাকরিচ্যুতদের পুনর্বহালের দাবিতে স্মারকলিপি২৪ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাড় ক্ষয়ে যাওয়া রোগ
  • সিলেটে পাঁচ দিন ৩৯ এলাকায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে
  • চার-পাঁচ হাতবদল হওয়াসহ পণ্যের দাম বৃদ্ধির যত কারণ
  • নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
  • পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ‘মার্চ টু ঢাকা’ বুধবার
  • লোডশেডিংয়ে ‘নাকাল’ গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
  • ইবিতে স্থাপিত হবে বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র
  • মসজিদে দাঁড়িয়ে প্রতিজ্ঞা: ভালো হতে চেয়ে হলেন মাদক সম্রাট
  • ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের বৃহৎ খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান কো-অপ