চলমান ভারত-পাকিস্তান সংঘাত প্রভাব ফেলছে বিনোদন দুনিয়াতেও। চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় অনেক প্রযোজকই তাঁদের সিনেমা মুক্তি দিয়ে সংশয়ে আছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দর্শক সিনেমা দেখতে হলে যাবে কি না, তা নিয়েই যত উদ্বেগ। এর মধ্যেই নতুন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন আমির খান। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের

সেই ২০২২ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘লাল সিং চাড্ডা’। এরপর বড় পর্দায় আর দেখা যায়নি আমির খানকে। চলতি বছর ‘সিতারে জমিন পার’ দিয়ে তিন বছর পর ফেরার কথা ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে, বড় পর্দায় আমিরের ফেরা বিলম্বিত হতে পারে।
অনুরাগীরা অপেক্ষা করে ছিলেন তাঁর আসন্ন ছবি ‘সিতারে জমিন পার’-এর মুক্তির জন্য। ৮ মে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল এই ছবির প্রথম ঝলক।

আমির খান। এএফপি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র খ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মায়ের শিক্ষাই বয়ে চলেছি

আমরা অনেক ভাইবোন। দশ বোন, এক ভাই ছিলাম। বড়রা ছোটজনকে দেখাশোনা করতাম। আমি তিন নম্বর, ভাই সবার ছোট। আমার জন্ম ১৯৫৩ সালে। আজকাল ছেলেমেয়েরা যেভাবে মা-বাবার সংশ্রব পায়, আমাদের সময় এমনটা ছিল না। এখনকার বাচ্চাদের মতো মায়ের আহ্লাদ আমরা পাইনি। আমরা খুব প্র্যাকটিক্যাল জীবনযাপন করতাম। নিজের কাজ নিজে করতাম, নিজের পড়া নিজে পড়তাম; বড় সরকারি বাসা সব নিজেদের গোছানো, ঠিকঠাক করা লাগত। সে যুগের মায়েরা যেমন হতেন, আমার মাও তেমনই সবার প্রতি যত্নবান ছিলেন।
আমার মায়ের নাম আনোয়ারা বেগম। মা ছিলেন স্বল্পশিক্ষিত, তেমন আউটগোয়িং ছিলেন না; কিন্তু তাঁর জ্ঞানপ্রজ্ঞা অনেক বেশি ছিল। শিক্ষাকে খুব মূল্য দিতেন। মা আমাদের বিলাসী জীবনের শিক্ষা দেননি, এটা পারিবারিক শিক্ষা। আমার বাসায় এখনও গৃহকর্মের স্থায়ী কোনো সহকারী নেই। এটা আমার মায়ের শিক্ষা, আমার বাবাও খুব ভালো মানুষ ছিলেন। বাবার নাম সালামত উল্লাহ। আমাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর। আব্বা সরকারি চাকরি করতেন, যে কারণে গ্রাম থেকে শহরে চলে আসি। আব্বা ছিলেন এনএসআই কর্মকর্তা। অনেক লোক সমাগম ছিল বাড়িতে। কিন্তু আমরা খুব সাধারণ জীবনযাপন করতাম। অফিসিয়াল গাড়ি কোনোদিন আমাদের ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। সবাই সবার কাজ করত। মায়ের সঙ্গে রান্নাও আমরা করতাম। আমার মনে আছে, আমি বড় হওয়ার পর ঢেঁকিতেও পাড় দিয়েছি।
মা খুব শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের মানুষ ছিলেন। ভালো মনের মানুষ ছিলেন। মা কোনোদিন বোরকা পরেননি, খুব সুন্দর শাড়ি পরতেন। মাথায় সবসময় নরমাল কাপড় দিতেন, কোনো সময় পুরো ঘোমটাও দিতেন না।
আমরা যেহেতু অনেক ভাইবোন, বোন বেশি। সবাই ভাবত, বোনদের বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। লেখাপড়া করে কী হবে! এ জায়গায় মা ছিলেন অটল। মা বলতেন, আগে এমএ পাস কর, তারপর বিয়ে। আমার যে বোন ডাক্তার, তিনি মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ডাক্তার পাত্র আসত, সবাই বলত বিয়ে দিয়ে দাও, এত ভালো ছেলে পরে পাবে না। আমার মা বলতেন, একদম না। আমার মেয়ে মেডিকেল শেষ করে, ইন্টার্নি করবে; এরপর বিয়ে। বিয়ে হলে হবে, না হলে না হবে। সবার বেলায় একই কথা বলতেন। 
আমি চারুকলায় পড়েছি– এ বিষয়েও মায়ের সমর্থন ছিল। কোনো বাধা ছিল না। মামা হাশেম খান; তাঁর বাসায় বেড়াতে এসেছিলাম। মামা শখ করে বাবাকে বললেন, আপনার তো অনেক মেয়ে, একটাকে দেন চারুকলায়। এরপর ভর্তি পরীক্ষা দিলাম, রেজাল্টও ভালো হলো। মা ঢাকায় আসত না তেমন; কিন্তু আমার সঙ্গে সম্পর্কটা সে রকমই ছিল। আমি কিন্তু খুব ঠান্ডা টাইপের ছিলাম। কম কথা বলতাম, এখন একটু বেশি বলি। আমার মা আমার সঙ্গে তাঁর সুখ-দুঃখের কথা বলতেন। আমি ছিলাম ভালো শ্রোতা। যখন বাসায় যেতাম, আমি যেটা পছন্দ করতাম, সেসব রান্না করে রাখতেন। আমি তখন অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ি, সে সময় একটা শিল্পকর্ম করেছি মাকে নিয়ে।
আমিই প্রথম বাসার বাইরে থেকে পড়তে যাই। আমাকে দেখার পর অন্যরাও পড়তে গিয়েছেন। ম্যাট্রিক পাসের পর চারুকলায় ভর্তি হই। তখন থেকে চাকরি শুরু করি। এর পেছনেও মায়ের সাহস ও শিক্ষা কাজ করেছে।
মা খুব অন্যদের খাওয়াতে পছন্দ করতেন; কিন্তু নিজে কী পছন্দ করতেন সেটা তেমন বলতেন না। আমাদের বাড়িতে অনেক গরুর মাংস রান্না হতো এবং আমরা প্রচুর রুটি খেতাম। মা নিজেই 
সব রান্নাবান্না করতেন। আমরা তো অনেক ভাইবোন, সবাই খুব মিলেমিলে থাকতাম, বন্ধুর মতো ছিলাম।
অনেক ভাইবোন থাকলে কোনো একজনকে হয়তো মা-বাবা বেশি ভালোবাসতেন। যেমন আমার ইমিডিয়েট ছোট বোনটিকে আব্বা খুব ভালোবাসতেন। বাবা তাকে অ্যাপ্রোন পরিয়ে বলতেন, তাকে ডাক্তার বানানোর খুব ইচ্ছা ছিল আব্বার। সে ডাক্তার হয়েও ছিল। আমার আরও একটা বোন আছে ডাক্তার, ওকে আলাদাভাবে এমন আদর করত বলে মনে হতো না। আমার মায়ের এসব ছিল না, বলত সবাই সমান। মায়ের ব্যাপার হলো– সবাই পড়াশোনা করবে, যত্ন নেবে, নিজের কাজ নিজে করবে। v
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ