আল্লাহর আইন ও কুরআনের শাসন কায়েমে যুব সমাজের ভূমিকা অপরিসীম : জামাল হোসাইন
Published: 10th, May 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ জামাল হোসাইন বলেন, বাংলাদেশে আল্লাহর আইন ও কোরআনের শাসন কায়েমে যুব সমাজের ভূমিকা অপরিসীম।
প্রতিটা পরিবর্তনের যুব সমাজকে ভূমিকা রাখতে হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের ছায়াতলে এসে যুবকরা হযরত ওমর (রা:) মত নেতৃত্ব দিয়ে সমাজ গঠন করলে বাংলাদেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সিদ্ধিরগঞ্জ উত্তর ও দক্ষিন দুইটি থানার আদর্শ নগর সাংগঠনিক ওয়ার্ডের যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শনিবার বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জ রসূলবাগ আহসানুল একাডেমী মিলনায়তনে এ যুব সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশে সৎ ও যোগ্য খোদাভীরু নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় যুবকদেরকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যুবকদের সমন্বয়ে আগামী দিনে আল্লাহর আইনের সৎ লোকের শাসন কায়েমে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন জামায়াতে ইসলামীর উপর অত্যাচার জুলুম-নিপীড়ন যত বেড়েছে বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে জামায়াতে ইসলামী তত গভীরে পৌঁছে গেছে । একটি সুখী সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য যুবকদেরকে জামায়াতে ইসলামীর ছায়াতলে এসে ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মোঃ সাইদুল হক, মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস, আব্দুস সালাম, শহিদুল ইসলাম ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ব ল দ শ জ ম য ত ইসল ম ন র য়ণগঞ জ আল ল হ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
ওষুধ উদ্ভাবনে জাতীয় স্বার্থেই বিনিয়োগ জরুরি
বাংলাদেশের ওষুধশিল্প সফল ও সম্ভাবনাময় খাতগুলোর একটি। এটি সাশ্রয়ী জেনেরিক ওষুধ তৈরি করে। এগুলো দেশে ও উন্নয়নশীল বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে সেবা দেয়। দেশের ওষুধের চাহিদার ৯৮ শতাংশই মেটায় এই ওষুধশিল্প খাত। ১৫০টিরও বেশি দেশে সাশ্রয়ী জেনেরিক ওষুধ রপ্তানি করে। জেনেরিক উৎপাদন কেন্দ্র থেকে ফার্মাসিউটিক্যাল উদ্ভাবক দেশে পরিণত হওয়ার প্রশ্নে বাংলাদেশ এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে একটি মৌলিক প্রশ্ন উঠে আসছে: বাংলাদেশ কি আসলেই বিশ্ব ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণায় প্রকৃত উদ্ভাবক হতে পারবে?
নতুন ওষুধ তৈরি একটি জটিল প্রক্রিয়া। প্রথমেই প্রি-ক্লিনিক্যাল গবেষণা শুরু হয়। এই গবেষণা ল্যাবরেটরি ও প্রাণীদের ওপর করা হয়। এটি মানুষের ওপর পরীক্ষা করার আগে ওষুধের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা জানা জরুরি। প্রি-ক্লিনিক্যাল ফল ভালো হলে ওষুধ ক্লিনিক্যাল গবেষণায় যায়। এর অনেক ধাপ আছে। প্রথম ধাপের পরীক্ষায় অল্পসংখ্যক সুস্থ মানুষ অংশ নেয়। এখানে মূলত ওষুধের নিরাপত্তা ও সঠিক ডোজ দেখা হয়। এই ধাপ সফল হলে দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় আরও বেশি রোগী অংশ নেয়। এখানে ওষুধের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা আরও ভালোভাবে দেখা হয়। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় অনেক রোগী অংশ নেয়। এখানে ওষুধের কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হয়। পাশাপাশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা হয় এবং অন্য ওষুধের সঙ্গে তুলনা করা হয়। সব ধাপ সফল হলে ওষুধ প্রস্তুতকারক নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অনুমোদনের জন্য আবেদন করে। বাংলাদেশে এই সংস্থা হলো ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
বর্তমানে জেনেরিক ওষুধের ওপর জোর দেওয়ায় মানুষ কম দামে ওষুধ পাচ্ছে। তবে নতুন ওষুধ আবিষ্কারের দিকে মনোযোগ দিলে স্থানীয় স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান হবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আরও বেশি জায়গা করে নেওয়া যাবে। অর্থনীতিতে উন্নতি হবে। বিজ্ঞানী, গবেষক ও টেকনিশিয়ানদের জন্য নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হবে। নতুন ওষুধ তৈরি হলে পেটেন্ট করে দেশ ও বিদেশে বিক্রি করে অনেক আয় করা যাবে। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে বহুমাত্রিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ও মহামারির আশঙ্কা। এ ছাড়া বাড়ছে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, যক্ষ্মা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের মতো রোগের মাত্রা। স্থানীয়ভাবে ওষুধ আবিষ্কার করলে এসব রোগের জন্য বিশেষভাবে ওষুধ তৈরি করা যাবে। এতে মানুষের স্বাস্থ্য ভালো হবে এবং অন্য দেশের ওষুধের ওপর নির্ভরতা কমবে। ওষুধ উদ্ভাবনে বিনিয়োগ শুধু অর্থনৈতিক সুযোগ নয়, নৈতিক দায়িত্বও। কারণ দেশে সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের বোঝা ও ঝুঁকি অনেক বেশি। এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাংলাদেশকে আঞ্চলিক ও বিশ্বনেতা বানাতে পারে। এর জন্য অনেক টাকা ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ দরকার। উন্নত গবেষণাগার ও ডেটা ব্যবস্থাপনার জন্য ভালো অবকাঠামো তৈরি করতেও অনেক খরচ হবে। ওষুধ আবিষ্কারের বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ বিজ্ঞানীর অভাবও একটি বড় সমস্যা। তা ছাড়া জেনেরিক ওষুধের চেয়ে নতুন ওষুধের অনুমোদন প্রক্রিয়া অনেক জটিল।
এত সমস্যা থাকার পরেও বাংলাদেশের কিছু বিশেষ সুযোগ আছে। এ দেশের মানুষের জিনগত বৈচিত্র্য অনেক। এর ফলে রোগের কারণ ও ওষুধের প্রতিক্রিয়ার জিনগত দিক খুঁজে বের করা সহজ হতে পারে– যা ওষুধ তৈরিতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশে ঐতিহ্যবাহী ওষুধের জ্ঞান অনেক পুরোনো। এখানে অনেক ঔষধি গাছ আছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানি, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতা নিতে পারে। এতে অর্থ, প্রযুক্তি ও জ্ঞান পাওয়া যাবে।
ওষুধ উদ্ভাবনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রথমেই দরকার সরকারের শক্তিশালী নীতি ও উদ্যোগ। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নতুন ওষুধ পরীক্ষা ও অনুমোদনের ক্ষমতা বাড়াতে হবে। ওষুধ গবেষণা ও উন্নয়নে সরকারি তহবিল ও অনুদান দিতে হবে। এ খাতে বিনিয়োগকারীদের কর ছাড় দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগার উন্নত করতে এবং বিশেষায়িত গবেষণা ইনস্টিটিউট তৈরি করতে হবে। ওষুধ আবিষ্কারের বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ কর্মী তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করতে হবে। শিল্প ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বাড়াতে হবে। উদ্ভাবনকে উৎসাহিত এবং বিনিয়োগ আকর্ষণে মেধাস্বত্ব সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। ডেটা ব্যবস্থাপনার উন্নতি করতে হবে।
বেসরকারি খাতকে জেনেরিক ওষুধ তৈরির বাইরে নতুন ওষুধ আবিষ্কারের গবেষণায় আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। ওষুধ তৈরি ও বাজারজাতকরণের সুযোগের জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের চেষ্টা করতে হবে। ওষুধ আবিষ্কারের জন্য দক্ষ কর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিশেষে বলতে হয়, উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ শুধু তাদের স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিই অর্জন করবে না, বরং নতুন ওষুধ তৈরির বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টায়ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তহবিল ও অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা থাকলেও দেশের বিশেষ সুযোগ এবং নীতিনির্ধারক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতের সম্মিলিত প্রচেষ্টা বাংলাদেশকে ওষুধ উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ে যেতে পারে।
মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম: জনস্বাস্থ্য
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ