ভারত-পাকিস্তান আজ শনিবার বিকেলে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। উভয় দেশের কর্মকর্তারা তা নিশ্চিত করেছেন। তবে পারমাণবিক শক্তিধর এই দুই দেশ যে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে, তা সবার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কিন্তু কেন? ডোনাল্ড ট্রাম্পই কেন সবার আগে এই ঘোষণা দিলেন?

আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যাঁরা এমন প্রশ্ন করছেন, তাঁদের জন্য একটি সহজ উত্তর আছে। উত্তরটি হতে পারে এমন, যেকোনো বিষয়ে ট্রাম্পই সবার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন, যা তিনি প্রতিদিনই করেন। এটা তাঁর অভ্যাস।

কিন্তু নয়াদিল্লি-ইসলামাবাদের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রই কেন সবার আগে দেবে, তা নিয়ে কিছু প্রশ্ন রয়ে যায়। এই দুই দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কী ধরনের প্রভাব রয়েছে?

আরও পড়ুনভারত–পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে রাজি: ট্রাম্প৪ ঘণ্টা আগে

সবাই জানে, যুদ্ধবিরতির জন্য বহু তরফ থেকে আলোচনা চলছিল। এটাও জানা যে সম্প্রতি যুক্তরাজ্য-ভারত একটি বড় বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। তাই দেশটিও যুদ্ধবিরতিতে যথেষ্ট প্রভাব রেখে থাকতে পারে।

তারপরও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশি অবদান রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও যে বার্তা দিয়েছেন, তা-ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যুদ্ধবিরতিতে দুই দেশের রাজি হওয়ার কথা জানিয়ে আজ এক্স হ্যান্ডলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি, ভারত ও পাকিস্তান অবিলম্বে পুরোপুরি যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। শুভবুদ্ধির ব্যবহার করে দুই পক্ষ এ সিদ্ধান্তে আসায় তাদের অভিনন্দন।’

আরও পড়ুনভারতও নিশ্চিত করল, দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত৩ ঘণ্টা আগে

এর অল্প সময় পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে রুবিও লেখেন, ‘আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি, ভারত ও পাকিস্তান সরকার তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তারা একটি নিরপেক্ষ স্থানে বহুমুখী বিষয়ে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে।’

ট্রাম্প-রুবিওর ঘোষণার পর পাকিস্তান ও ভারতের পক্ষ থেকেও যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার কথা জানানো হয়। দুই দেশই জানায়, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।

পরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি দুই দেশের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার কথা নিশ্চিত করেন।

আরও পড়ুনযুদ্ধবিরতির কথা জানালেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী৪ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

কুরাইশদের আল্লাহ নিরাপত্তা কেন দিলেন

সুরা কুরাইশ পবিত্র কোরআনের ১০৬তম সুরা। এ সুরায় বলা হয়েছে, মক্কার কুরাইশরা শীত ও গ্রীষ্মকালে বাণিজ্য উপলক্ষে দেশ ভ্রমণ করতেন। তাদের আল্লাহ ক্ষুধায় খাদ্য ও ভয়ভীতি থেকে নিরাপত্তা দান করেছেন। তাই তাদের উচিত কাবাগৃহের প্রতিপালকের উপাসনা করা।

 সুরা কুরাইশের অর্থ আবার দেখে নিই:

 পরম করুণাময় পরম দয়াময় আল্লাহর নামে। ১. কুরাইশদের সংহতির জন্য, ২. শীত ও গ্রীষ্মের সফরে তাদের সংহতির জন্য, ৩. তাদের উপাসনা করা উচিত এই কাবাগৃহের প্রতিপালকের, ৪. যিনি তাদের ক্ষুধায় খাদ্য দান করেছেন এবং নিরাপত্তা দান করেছেন ভয়ভীতি থেকে।

সুরা কুরাইশের মূল কথা:

প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে যে কুরাইশরা যাতে বিচ্ছিন্ন না হয়, তাদের ঐক্য ও সংহতি যেন বজায় থাকে।

 দ্বিতীয় আয়াতে শীত ও গ্রীষ্মের সফরেও তাদের সংহতির কথা বলেছেন। ‘রিহলাহ’ শব্দ ব্যবহার করেছেন আল্লাহ। এর অর্থ এমন ভ্রমণ, যাতে বাণিজ্য পণ্য, মালপত্র বহন করা হয়। কুরাইশরা শীতের ও গ্রীষ্ম উভয় সময়েই বাণিজ্য সফর করত। গ্রীষ্মকালে তারা সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের দিকে বাণিজ্য সফর করত। কারণ, এ দুটি শীতপ্রধান দেশ। আর শীতকালে সফর করত দক্ষিণ আরব তথা ইয়েমেনের দিকে। কারণ, সেটি গ্রীষ্মপ্রধান এলাকা।

তৃতীয় আয়াতে বলা হয়েছে, কাবাঘরের চাবি ও কর্তৃত্ব কুরাইশদের হাতে থাকার কারণেই তারা এত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। কুরাইশরা কাবার তত্ত্বাবধায়ক ছিল। তাদের ওপর আল্লাহ যে নিয়ামত দিয়ে রেখেছেন তার প্রতিদানস্বরূপ এই ঘরের রবের ইবাদত তাদের করা উচিত বলে আল্লাহ বলেছেন। অথচ তারা আল্লাহর ঘর কাবার তত্ত্বাবধায়ক থাকলেও আল্লাহর পরিপূর্ণ ইবাদত করত না।

 ইবাদত আসলে দুটি কাজের সংমিশ্রণ। উপাসনা ও দাসত্ব। যেকোনো একটি অনুপস্থিত থাকলে ইবাদত পরিপূর্ণ হয় না।

আরও পড়ুনসুরা কাওসারে তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দুই নামাজের মাঝখানের সময়ে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলা হলো দাসত্ব। আনুষ্ঠানিকভাবে আল্লাহর উপাসনা করা ও উপাসনা বাদে অন্য সব সময়ে আল্লাহর দাসত্ব করাই হলো আল্লাহর ইবাদত করা। তৎকালীন কুরাইশরা উপাসনা ও দাসত্ব দুটিই লঙ্ঘন করেছিল। তারা এক আল্লাহর উপাসনা না করে আরও অনেক কিছুর উপাসনা করত, আল্লাহর দাসত্ব না করে অন্য কিছুর দাসত্ব করত।

 কাবার তত্ত্বাবধায়ক হওয়ায়, নিরাপত্তাসহ সফর ও ব্যবসা করার কারণে তাদের ক্ষুধা বা খাদ্যের সমস্যা বা চিন্তা ছিল না। তার সঙ্গে আল্লাহ বিশেষভাবে তাদের ও আল্লাহর ঘরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন আগের সুরা আল ফিলে। সুরা আল ফিলে আল্লাহ কাবা ধ্বংস করার পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করে দেওয়ার বর্ণনা দেন। তার একটি কারণ কুরাইশদের নিরাপত্তা।

আল্লাহ কুরাইশদের প্রতি তার বিশেষ দুটি নেয়ামতের কথা এখানে স্মরণ করিয়েছেন চতুর্থ ও শেষ আয়াতে। আরবে শীতকালে খাদ্যের তেমন উৎপাদন না থাকায় ক্ষুধার প্রকোপ ছিল। অন্যদিকে গ্রীষ্মকালে খাদ্য থাকায় আর্থিক সংগতিতে বাণিজ্য কাফেলায় চলাচল বৃদ্ধি পেত। তাই তখন ডাকাতির ভয় থাকত।

আরও পড়ুন‘বাকারা’ পবিত্র কোরআনের দ্বিতীয় সুরা০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মক্কায় আসার আগে কুরাইশরা যখন আরবের চারদিকে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে ছিল, তখন তারা অনাহারে মরতে বসেছিল। এখানে আসার পর তাদের জন্য রিজিকের দরজাগুলো খুলে যেতে থাকে। তাদের সপক্ষে ইবরাহিম (আ.) এই বলে দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ, আমি তোমার মর্যাদাশালী ঘরের কাছে একটি পানি ও শস্যহীন উপত্যকায় আমার সন্তানদের একটি অংশের বসতি স্থাপন করিয়েছি, যাতে তারা সালাত কায়েম করতে পারে। কাজেই আপনি লোকদের হৃদয়কে তাদের অনুরাগী করে দিন, তাদের খাবার জন্য ফলমূল দান করুন।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৩৭)

 তাঁর এই প্রার্থনা অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হয়।

 মোটকথা, আরবের অন্যান্য গোত্রের মতো তারাও একটি বংশধারার বিক্ষিপ্ত দল ছিল মাত্র। কিন্তু মক্কায় এই ঘরের চারদিকে একত্র হওয়ার এবং এর সেবকের দায়িত্ব পালন করতে থাকার পর সমগ্র আরবে তারা মর্যাদাশালী হয়ে উঠেছে। সব দিকে তাদের বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে যাওয়া–আসা করছে। তারা যা কিছুই লাভ করেছে, এ ঘরের রবের বদৌলতেই লাভ করেছে। কাজেই তাদের একমাত্র সেই রবেরই ইবাদত করা উচিত।

আরও পড়ুনসুরা ফাতিহার অর্থ ও ফজিলত০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ